#মনের অন্তরালে
#সুচনা পর্ব
#লেখিকা সাদিয়া জান্নাত সর্মি
I am sorry মেহুল। আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না, ক্ষমা করো আমাকে।রিহানের কথা শুনে পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল আমার। এসব কি বলছে সে?আর মাত্র দুইদিন পর আমাদের বিয়ে আর সে বলছে আমাকে বিয়ে করতে পারবে না।
— তুমি এসব কি বলছো রিহান?আর মাত্র দুইদিন পর আমাদের বিয়ে আর তুমি তো আমাকে ভালোবাসো তাহলে বিয়ে করতে পারবে না কেন?
— মেহুল তোমাকে একটা সত্যি কথা বলা হয়নি।
— কি সত্যি কথা?
— আসলে আমি তোমাকে কখনই মন থেকে ভালোবাসিনি। তোমাকে প্রপোজ করা, তোমার সাথে প্রেম করা এইসব কিছুই একটা ডেয়ার ছিল।
— ডেয়ার মানে?
— আসলে আমার বন্ধুরা সেদিন আমাকে ডেয়ার দিয়েছিল যে সেদিন M নামের যে মেয়েটি প্রথম কলেজে আসবে তার সাথে যেন আমি প্রেম করি আর বিয়ে পর্যন্ত সেটাকে নিয়ে যাই। তোমাকে আমি মন থেকে কখনোই ভালোবাসিনি।
— ডেয়ারের জন্য তুমি আমার জীবনটা নষ্ট করে দিলে? আমি তো তোমাকে মন থেকেই ভালোবেসেছি।ডেয়ার হলেও এতো দিনে তুমি কি আমাকে এতটুকুও ভালোবাসনি?
— না বাসিনি আর কেনই বা ভালো বাসবো তোমাকে?কি যোগ্যতা আছে তোমার আমার ভালবাসা পাওয়ার? না আছে রূপ না আছে কিছু? তোমার মত একটা গাইয়া মেয়ে কে আমি ভালোবাসবো এটা তুমি ভাবছো কি করে?
— এসব কি বলছো তুমি? এতো দিন তো আমার চেহারা নিয়ে কিছু বলোনি তুমি। তাহলে কেন নাটক করেছিলে এতদিন আমার সাথে?
— বললাম তো এটা একটা ডেয়ার ছিল ব্যাস। তোমার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে না। তুমি তোমার লেভেলের কাউকে বিয়ে করে সুখী হও। আমাকে আর disturb করবে না, আসছি বলে ক্যাফে থেকে বেড়িয়ে গেল রিহান।
[আমি সাদিয়া ফারাহ্ মেহুল। এইবার ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়ি। এতক্ষণ যার সাথে কথা বলছিলাম সে আমার হবু বর রিহান তাওহীদ যার সাথে আমার দুইদিন পর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল]
আমি পাথর হয়ে বসে রইলাম।বুক ফেটে কান্না আসছে আমার।কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। বাসায় গিয়ে মা-বাবা কে কি বলবো আমি?আমিই জোর করে মা বাবা কে রিহানের সাথে আমার বিয়ে দিতে রাজি করিয়েছিলাম। এবার তাদের কোন মুখে বলবো যে রিহান আমাকে বিয়ে করবে না।আমিই বা নিজেকে সামলাবো কি করে? জীবনের প্রথম ভালোবাসা রিহান।মন প্রাণ দিয়ে ভালো বেসেছি তাকে।আর সে কিনা আমার মন টা নিয়ে এই ভাবে খেললো। কাঁচের মত ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল আমার মনটাকে। আচ্ছা জীবনে বাহ্যিক সৌন্দর্য টাই কি সব? মনের সৌন্দর্যের কি কোন দাম নেই।আজ যদি আমি শ্যাম বর্ণের না হয়ে সুন্দরী হতাম তাহলে ডেয়ার হলেও রিহান আমাকে বিয়ে করতো। এইসব ভাবছি আর কাঁদছি ক্যাফে তে বসে। বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না।রিহান আমাকে নিয়ে বিয়ের শপিং এ যাবে এই মিথ্যে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছি।এখন কি করবো আমি? এইসব নিয়ে চিন্তা করতেছি তখন ক্যাফের ছেলে টা এসে হাতে বিল ধরিয়ে দিয়ে বলল ২৫০ টাকা হয়েছে। আমি কিছু না বলে বিল দিয়ে ক্যাফে থেকে বেরিয়ে এলাম। মাথায় চিন্তার পাহাড়,, মাকে কি বলবো আমি? জানিনা মা বিষয় টা কিভাবে নেবে।আত্নীয় স্বজন সবাই কে আমাদের বিয়ের কার্ড দেওয়া হয়ে গেছে।এসময় যদি আমার বিয়ে টা ভেঙে যায় তাহলে বাবা হার্ট অ্যাটাক করবে।এই আঘাত বাবা সহ্য করতে পারবে না।ভাই বোন সবার পরে বাবা আমাকেই বেশি ভালোবাসে। আমার কোন কিছু হলে বাবা সহ্য করতে পারে না তাহলে এটা কি করে সহ্য করবে? রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে এইসব ভাবছি আর চোখের পানি ফেলছি।বড় আপু কোচিং থেকে বাসায় ফিরছিল। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে কাঁদতে দেখে ডাকলো।
— কি হয়েছে মেহুল? তুই কাদছিস কেন আর রিহান কোথায়?
— কই আমি কাঁদছি না তো। চোখে পোকা ঢুকেছে তাই পানি পরছে আর রিহানের কথা বলছো? তার একটা এমার্জেন্সি চলে এসেছে তাই ও চলে গেছে।
— ও। তাহলে তুই বাড়ি চল। এখানে থেকে কি করবি,
আপুর সাথে বাসায় এলাম। অনেক কষ্টে নিজের কান্না টা আটকে রেখেছি। বাসায় এসে দেখি ফুপি, খালামনি সবাই এসেছে।হইহুল্লোর করছে সবাই।মা বললো- এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি?
আমি কিছু না বলে রুমে চলে গেলাম।ওয়াশরুমে ঢুকে ঝর্নার নিচে বসে হু হু করে কাঁদতে শুরু করলাম। জীবন টা শেষ হয়ে গেছে আমার। যাকে সবথেকে বেশি ভালোবাসি, ভরসা করি সেই আমাকে এইভাবে ঠকালো।
কতক্ষণ ঝর্নার নিচে বসে ছিলাম জানিনা। আপু কখন থেকে দরজায় ধাক্কা দিয়ে ডাকছে।ভেতর থেকে আমার কোন সাড়া না পেয়ে আপু জোরে জোরে ডাকতে লাগল। কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম। আপু আমার দিকে তাকিয়ে দেখে চোখ লাল হয়ে গেছে আমার। বোঝাই যাচ্ছে খুব কান্না করেছি।
— কি হয়েছে মেহুল? কান্না করেছিস কেন? কেউ কি কিছু বলেছে তোকে?
আপুর কথা শুনে আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। আমি জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম। কাঁদতে কাঁদতেই বললাম-
আমার সব শেষ হয়ে গেছে আপু।রিহান আমাকে বিয়ে করবে না।ও শুধু বন্ধুদের দেওয়া ডেয়ারের জন্য আমার সাথে ভালোবাসার নাটক করেছে। আমার এখন কি হবে আপু?
আমার কথা শুনে আপু কোন উত্তর দিতে পারলো না।ও নিজেই অবাক হয়ে গেছে। একটা ডেয়ারের জন্য কেউ কি করে একজনের জীবন নষ্ট করতে পারে? আমার কান্না দেখে আপুর চোখেও পানি চলে এলো। নিজের বোনের কষ্ট কেউ কি করে সহ্য করতে পারে? তার পর আপু আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
— এসব রিহান কখন বলেছে তোকে?
— ক্যাফে তে বসে।এসব কিছু বলার জন্যই আমাকে ডেকেছিল।
— তাহলে তুই আমাকে তখন মিথ্যে কথা কেন বললি?
— আমার মাথা কাজ করছিল না তখন। আপু প্লীজ বাবা মা কে ম্যানেজ করো তুমি।এ বিয়ে টা তো আর হবে না।তাই বাবা কে বলো তুমি সবকিছু।
— তোর মাথা ঠিকাছে মেহুল? বাবাকে এইসব কিছুই বলা যাবে না।
— তাহলে কি বলবে?
— আমি আগে মাকে সবকিছু বলি। তার পর মা যা বলবে তাই করতে হবে। তুই চোখ মুছে বাইরে আয়। বাড়িভর্তি অনেক মেহমান, কেউ যেন কিছু না বুঝে মেহুল। নাহলে মানুষ কিন্তু বাবাকে কথা শোনাতে ছাড়বে না।
— আচ্ছা ঠিক আছে।
আপু চলে গেল। আমি চোখ মুছে জানালার পাশে বসে পড়লাম। খারাপ লাগছে খুব তাই বাইরে গেলাম না।
আয়াশ ভাইয়ের রুমে বউ সেজে বসে আছি। দু’দিন আগের কথা,,
আপু আমার কাছ থেকে বাইরে গিয়ে মাকে সবকিছু বলে। মা শুনে আহাজারি করে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছিলো আমার জন্য। মায়ের কান্না শুনে ফুপি খালামনি সবাই মায়ের কাছে আসে।বড় ফুপি সবকিছু শুনে মাকে বলে যে,মেহুলের যেদিন বিয়ের হওয়ার কথা ছিল সেদিনই হবে। তবে রিহানের সাথে নয় তার বড় ছেলে আয়াশের সাথে। মা তো তখনি মেনে নিয়েছিল কিন্তু বাবাকে মানাতে একটু কষ্ট হয়েছিল।পরে বাবা মান সম্মানের কথা ভেবে রাজি হয়ে গেছে। আমি রাজি হইনি আয়াশ ভাইকে বিয়ে করতে।কি করে রাজি হই আমি,যাকে সারাজীবন ভাই বলে ডেকেছি তাকে স্বামী হিসেবে কি করে মানবো?রাজি হচ্ছি না দেখে বাবা বলে যে, আমি যদি আয়াশ ভাইকে বিয়ে না করি তাহলে আমি বাবার লাশ দেখবো। একথা শুনে আর না করতে পারিনি আমি।যেদিন রিহানের সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল সেদিনই আয়াশ ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে হলো।
বর্তমানে,
দুঘন্টা থেকে বসে আছি রুমে এখনো আয়াশ ভাই আসেনি। কিছুক্ষণ পর রুমে ঢুকলেন উনি। আমি বিছানা থেকে নেমে যেই ওনাকে সালাম করতে যাবো তখনি উনি আমার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পর মারলেন। থাপ্পর খেয়ে ছলছল চোখে ওনার দিকে তাকালাম। উনি বললেন,
— তোর জন্য আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল। কেন বিয়ে করলি তুই আমাকে? তোকে তো আমি সবসময় বোনের চোখেই দেখতাম।আর তুই কি না। ছিঃ
— দেখুন আয়াশ ভাই আমি আপনাকে বিয়ে করতে,,
— চুপ।আর একটা কথাও বলবি না তুই। আমাকে তুই বিয়ে করেছিস ঠিকই কিন্তু স্ত্রীর মর্যাদা তুই কোনদিনও পাবিনা।বলে হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন উনি।
চলবে..