#মধুরেণ সমাপয়েৎ
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৬
_________________
মাহিদ তুষারের কলার চেপে ধরে বললো,
-“তোর সাহস হয় কি করে ও কে স্পর্শ করার?”
-“ছাড়ুন আমাকে।আপনার এতো সাহস আমাকে থাপ্প*ড় মারেন!”
-“আরো মারবো তোকে।তুই সুরভিকে স্পর্শ করলি কেনো?”
সুরভি মাহিদকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কোনোভাবেই পারছে না।সুরভি আর না পেরে ঠাস করে মাহিদের গালে একটা চ*ড় মারলো।মাহিদ গালে হাত দিয়ে সুরভির দিকে তাকালো।
-“আপনার সাহস হয় কি করে তুষারকে থাপ্প*ড় মারার!ও আমার বয়ফ্রন্ড হয়।এরপরে থেকে ভুলেও ওর গায়ে হাত দেওয়ার সাহস করবেন না।”
মাহিদ অবাক হয়ে বললো,
-“ও তোমার বয়ফ্রেন্ড?”
-“হ্যাঁ।”
-“তুমি মজা করছো আমার সাথে?”
-“আপনার সাথে মজা করার কোনো কারণ নেই মি.মাহিদ।ও আমাকে ভালোবাসে আর আমিও ও-কে ভালোবাসি।”
মাহিদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
-“একটু ওয়েট করতে পারলে না আমার জন্য সুরভি!”
পাশে থেকে তুষার বললো,
-“এইসব ঢং বাদ দিয়ে যান এখান থেকে।ও বললো না ও আমাকে ভালোবাসে!”
মাহিদ চোখ রাঙিয়ে তুষারের দিকে তাকালো।তুষার শুকনো ঢোল গিলে সেখান থেকে চলে গেল।সুরভি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে মাহিদ বললো,
-“কিছু বলছো না যে?”
-“যা বলার তা তো বলেই দিলাম।”
-“একটা জিনিস কি জানো সুরভি!নিজের ভালোবাসার মানুষ অন্য কাউকে ভালোবাসছে এটা দেখার মতো জঘন্য অনুভূতি আর কোনোটা হতে পারে না।”
মাহিদ কথাগুলো বলে সুরভির সামনে থেকে চলে গেল।সুরভি অবাক হয়ে বললো,
-“মি.মাহিদ আমাকে ভালোবাসে?
_____
গাড়িতে উঠতে গেলে মনোয়ার সাহেব এসে মাহিদের সামনে দাঁড়ায়।
-“কি হয়েছে বাবা?”
-“তুমি তুষারকে কেনো চ*ড় মেরেছো?”
মাহিদ তার পাশে তাকিয়ে দেখলো কিছুটা দূরে তুষার দাঁড়িয়ে আছে।মাহিদ চোয়াল শক্ত করে বললো,
-“ও-কে চ*ড় মেরেছি বেশ করেছি।”
মনোয়ার সাহেবকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মাহিদ গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট করলো।আকিব মাহিদের চোখ-মুখ দেখে বললো,
-“মাহিদ তুই কি ঠিক আছিস?তোর ভালো না লাগলে আমি ড্রাইভ করি!”
-“আমি ঠিক আছি।”
________________
তুষার ড্রাইভ করছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।সে আজ বেশ খুশি সুরভি তার জালে ফেঁসে গেছে।
গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে মাহিদের বলা কথাগুলো ভাবছে সুরভি।হঠাৎ করে তার মনে হলো সে তো মাহিদের সামনে বলেছে তুষার তার বয়ফ্রেন্ড আর তুষারও সেখানে উপস্থিত ছিল।সুরভি সোজা হয়ে বসে বললো,
-“তুষার আমি মি.মাহিদের সামনে যে কথাগুলো বলেছি সেগুলো আবার সত্যি ভেবে বসিস না।”
তুষার গাড়ি চালাতে চালাতে হঠাৎ ব্রেক কষলো।যার কারণে সবাই কিছুটা ধাক্কা খেলো।তুষার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সুরভির দিকে তাকিয়ে বললো,
-“কি বললি তুই?তুই ওইসব মিথ্যা বলেছিস?”
সুরভি কিছু বলার আগেই নিশা বললো,
-“ওই তুই কি পাগল নাকি?এভাবে কেউ ব্রেক কষে?”
-“তুই চুপ থাক নিশা।সুরভি তুই কি বললি আবার বল?”
সুরভি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো,
-“এক কথা কত বার বলবো?আমি তোকে ভালোবাসি না তুষার।আমি ওইসব শুধুমাত্র মাহিদের সামনে বলেছি যাতে উনি আমার থেকে দূরে থাকেন।”
তুষার আর কিছু বললো না।সে চোয়াল শক্ত করে গাড়ি চালানো শুরু করলো!
_________
মাহিদ বাড়িতে এসে তার রুমে বসে আছে মোবাইলটা হাতে নিয়ে।সেখানে সুরভির ছবি দেখতে ব্যস্ত সে।ছবিটা আলতো করে ছুঁয়ে বললো,
-“এমনটা কেনো করলে সুরভি?তুমি কি আমাকে এক বিন্দুও ভালোবাসোনি!তবে কেনো যেন তোমার বলা কথাগুলো আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।”
-“ভাইয়া দরজাটা খোল।কতো রাতে হয়ে গেছে।খাবি কখন তুই?”
দরজা বাইরে থেকে কথাগুলো বললো মাইশা।মাহিদ নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে দরজাটা খুলে বললো,
-“আমি কিছু খাবো না।”
-“সবাই তোর জন্য ওয়েট করছে ভাইয়া।”
-“কি?এখনো কেউ খায়নি?”
-“না।”
মাহিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাইশার সাথে নিচে গেলো।নিচে গিয়ে দেখলো আকিবও উপস্থিত সেখানে।
-“আকিব তুই কখন আসলি?”
-“আঙ্কেল আমাকে কল করে আসতে বললো।আমি তোর রুমেই যাচ্ছিলাম কিন্তু আমাকে জোর করে খেতে বসিয়ে দিয়েছে।”
মাহিদ মৃদু হেসে আকিবের পাশে বসে বললো,
-“ভালোই হয়েছে।বেশি করে খা।”
-“তোমার কি হয়েছে মাহিদ?”
মনোয়ার সাহেবের কথায় মাহিদ কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লো।সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“কিছুই হয়নি বাবা।এমনি শরীরটা ভালো লাগছিল না।”
-“আকিব আজকে তোমার সাথেই থাকবে।”
মাহিদ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।তারপরে সবাই একসাথে খেয়ে নিলো।সবাই খাওয়া শেষ হতে যার যার মতো রুমে চলে গেল।মাহিদ তার রুমে গিয়ে দেখলো পানির বোতল খালি।
-“আকিব তুই থাক আমি বোতলে পানি ভরে নিয়ে আসি।”
-“আচ্ছা যা।”
মাহিদ নিচে যেতেই দেখলো রাবেয়া বেগম বোতলে পানি ভরছেন।মাহিদের হাতে পানির বোতল দেখতে সেটা নিয়ে তিনি পানি ভরতে শুরু করলেন।হঠাৎ করে তিনি বললেন,
-“সুরভির সাথে ঝগড়া হয়েছে তাই-না?”
মাহিদ অবাক হয়ে রাবেয়া বেগমের দিকে তাকালো।কারণ রাবেয়া বেগমের তো কিছু জানার কথা না।রাবেয়া বেগম বোতলে পানি ভরা শেষ করে মাহিদের কাঁধে হাত রেখে বললো,
-“কি ভাবছিস আমি জেনেছি কিভাবে!মা’রা সন্তানের মুখ দেখলেই সব বুঝতে পারে বাবা।”
মাহিদ’ রাবেয়া বেগমকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“মা সুরভি তুষারকে ভালোবাসে।”
-“তোকে কে বললো?”
-“ও নিজেই বলেছে আমাকে।”
রাবেয়া বেগম মাহিদকে তার সামনে দাঁড়া করিয়ে বললেন,
-“দেখ বাবা,তুই সেদিন ওভাবে বিয়েটা ভেঙেছিলি হয়তো সেই কারণেই ও তোকে এই কথা বলেছে।কারণ আমার জানা মতে সুরভি তুষারকে নিজের ভাইয়ের চোখেই দেখে।দুইদিনে তো আর সম্পর্ক পাল্টে যায় না তাই-না!”
রাবেয়া বেগম কথাগুলো বলে মৃদু হেসে চলে গেলেন।
-“আসলেই তো।ও হয়তো আমাকে মিথ্যা বলেছে।আমারও ওর কথাগুলো বিশ্বাস হচ্ছিল না।মা তুমি আমার সব সমস্যার মুশকিল আসান।”
মাহিদের কথা শুনে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে উচ্চস্বরে হেসে দিলেন রাবেয়া বেগম।
__________
সুরভি তার রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখতে ব্যস্ত।তার মাথায় শুধু মাহিদের বলা কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে।
-“মি.মাহিদ যদি আমাকে ভালোই বাসেন তাহলে সেদিন বিয়েটা কেনো ভাঙ্গলেন?আমার মাথায় তো কিছুই আসছে না।আমি উনার সামনে তুষারকে নিজের বয়ফ্রেন্ড বলে কোনো ভুল করলাম না তো!”
হঠাৎ করে সুরভির চোখে টর্চ লাইটের আলো পড়তে সে নিচের দিকে তাকালো।সে নিচে তাকাতেই হতবাক হয়ে গেল।কারণ তার বাড়ির নিচে মাহিদ দাঁড়িয়ে আছে। ল্যাম্পপোস্টের আলোতে বেশ ভালোভাবেই মাহিদের মুখ দেখা যাচ্ছে।সুরভি নিচে তাকাতেই মাহিদ হাত নাড়লো।
-“উনি এখানে কি করছেন?এই লোকের কি সমস্যা!”
মাহিদ আবার হাত নাড়িয়ে সুরভিকে নিচে নামতে ইশারা করলো।সুরভি চোখ রাঙিয়ে মাথা নাড়িয়ে নিষেধ করলো।মাহিদ দুই হাত জুড়ে প্লিজ বলার ভঙ্গি করলে সুরভির কিছুটা খারাপ লাগে।তারপরে সে হাত দিয়ে ইশারা করে সে নিচে নামছে।মাহিদের মুখে হাসি ফুটলো।সুরভি নিচে এসে মাহিদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
-“এভাবে তাকালে তো আমারও ভয় করে তাই-না!”
-“আপনি এতো রাতে এখানে কি করছেন মি.মাহিদ?”
-“মি.মাহিদ না শুধু মাহিদ বলো না প্লিজ।”
-“দেখুন আমি যা জিজ্ঞেস করেছি সেটা বলুন।”
-“একটু আগে প্লিজ বলায় তো নিচে নামলে।তাহলে এখনো শুধু মাহিদ বলে ডাকো না!”
সুরভি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“আচ্ছা ঠিক আছে।আপনি এখানে কি করছেন মাহিদ?”
-“আপনি না বলে তুমি……”
এটুকু বলে মাহিদ থেমে গেল।কারণ সুরভি চোখ রাঙিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
-“এভাবে তাকাতে হবে না।পুরোটা তো বলিনি।”
-“আপনি কি এই রাতের বেলা মজা করতে এসেছেন এখানে?”
-“না তোমাকে একটা কথা জানাতে এসেছি।আর একটা জিনিসও দিতে এসেছি।”
-“কি কথা?আর কি জিনিস দিবেন?”
-“তোমাকে এটাই জানাতে এসেছি যে তুমি যে সকালে আমাকে বললে তুষার তোমার বয়ফ্রেন্ড এটা আমি বিশ্বাস করিনি।আর যেটা দিতে এসেছি…..”
মাহিদ এটুকু বলে সুরভি দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিল।সুরভি অবাক হয়ে বললো,
-“এতে কি আছে?”
মাহিদ জোর করে সুরভিকে প্যাকেটটা ধরিয়ে দিয়ে বললো,
-“আমি গেলে খুলে দেখো।আর হ্যাঁ এরপরে থেকে আমাকে আর কোনো মিথ্যা কথা বলো না।তোমার এই একটা মিথ্যা কথার জন্য আমাকে তীব্র যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় সুরভি।
#চলবে____