#মধুরেণ সমাপয়েৎ
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৩
_________________
বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে মাহিদ।তার মুখে আনন্দের হাসি।
-তুমি যতই রাগ দেখাও না কেনো!তোমার মনে ঠিকই আমার জন্য অনুভূতি আছে।নাহলে কখনোই তুমি আমার দেওয়া ফুলের তোড়া গ্রহণ করতে না।”
“কার ভাবনায় মগ্ন হয়ে আছিস মাহিদ?”
মাহিদ রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো আকিব দাঁড়িয়ে আছে।আকিবকে দেখে শোয়া থেকে উঠে বসে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মাহিদ।মাহিদের এমন অবস্থা দেখে উচ্চশব্দে হেসে দিলো আকিব।মাহিদের পাশে এসে বসে বললো,
-“কিরে চমকে গেলি নাকি?”
মাহিদ আকিবকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“তুই কখন এসেছিস?আমাকে তো কিছুই জানালি না।”
আকিব মাহিদের পিঠে একটা কিল দিয়ে বললো,
-“সারপ্রাইজ দিলাম বুঝিস না।অবশ্য এখন আমি নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গিয়েছে।”
মাহিদ আকিবকে ছেড়ে বললো,
-“কেনো?তোর আবার কি হয়েছে?”
-“আরে আমি তো ভাবলাম তোর বিয়ে মিস হয়েছে তো কি হয়েছে!বৌভাতে জমিয়ে মজা করবো।কিন্তু তোদের বাড়িতে আসতেই শুনলাম তুই নাকি বিয়েই করিসনি।কিন্তু বিয়ে না করার কারণটা কি?”
-“অনেক কাহিনী আছে আকিব।ধীরে ধীরে জানতে পারবি।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে।তবে আমি এবার একেবারে চলে এসেছি।আর যাবো না।”
-“ওয়াও!এটা তো গ্রেট নিউজ।”
-“তা ওই তানিমার কি খবর?ও কি এখনো ওমনই আছে।”
তানিমার নাম শুনতেই মাহিদের মেজাজটা বিগড়ে গেলো।দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,
-“ওর নাম আমার সামনে নিস না আকিব।বিরক্ত লাগে আমার।”
-“ওকে ব্রো।নিচে চল এখন।ফুফা-ফুফির সাথেও একটু গল্প করি।কত বছর পরে আসলাম!”
-“তুই যা।আমাকে দেখলে তাদের মুড অফ হয়ে যায়।বুঝতেই তো পারছিস বিয়েটা ভেঙে দিয়েছি এভাবে।”
-“আরে চল তো কিছু হবে না।”
আকিব জোর করে মাহিদকে নিচে নিয়ে গেল।মনোয়ার সাহেব মাহিদকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-“সারাদিন কি কিছু খাওয়া হয়েছে?শুনলাম সকালে না খেয়েই বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছো।আর অফিসেও নাকি লাঞ্চ করো নাই।”
মনোয়ার সাহেবের কথায় আশ্চর্য হয়ে গেল মাহিদ।তার মুখে হাসি ফুটলো।মাহিদকে চুপ থাকতে দেখে মনোয়ার সাহেব আবার বললেন,
-“মুখে কথা নেই কেনো?কথা বলা ভুলে গেলে নাকি?”
মাহিদ আমতা আমতা করে বললো,
-“আজকে সারাদিনে শুধু দুই কাপ কফি খেয়েছি।”
মনোয়ার সাহেব চোখ রাঙিয়ে মাহিদের দিকে তাকালো।রাবেয়া বেগম সবার জন্য নাস্তা আনতে আনতে বললেন,
“দুই কাপ কফিতে কি পেট ভরে?তোর এখন এইসব তেলেভাজা খাওয়ার দরকার নেই।আমার সাথে আয় আমি ভাত দিতেছি।”
মাহিদ রাবেয়া বেগমের সাথে ডাইনিং রুমে গেলো।বারেয়া বেগম ভাত বেড়ে দিয়ে চলে যেতে গেলে মাহিদ রাবেয়া বেগমের হাত টেনে ধরলো।রাবেয়া বেগম মাহিদের দিকে ঘুরে তাকালেন।মাহিদ রাবেয়া বেগমকে নিয়ে এসে চেয়ারে বসিয়ে তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো,
-“মা,সুরভিই তোমাদের বউমা হবে।শুধু আমাকে একটু সময় দেও।সত্যিটা প্রমাণ করতে না পারলে সুরভির আর আমার কখনোই শান্তিময় সংসার হবে না।আর তাছাড়া কেউ একজন চায় না আমাদের বিয়েটা হোক।তাকেও তো খুঁজে বের করতে হবে।”
-“কিসের প্রমাণের কথা বলছিস তুই?কি হয়েছে তোর?আর কে চায় না তোর আর সুভি মায়ের বিয়ে হোক?”
-“আপাতত যা বললাম সেটাই শুনে রাখো।বাবাকেও বুঝিয়ে বলো।জানোই তো ছোটবেলা থেকেই বাবাকে ভয় পাই।”
রাবেয়া বেগম মাহিদের কপালে চুমু দিয়ে মৃদু হেসে বললেন,
-“তুই যে সুরভিকেই আমার বউমা করবি এটা শুনেই খুশি হলাম।তাও যা করবি সাবধানে করিস বাবা।”
মাহিদের মুখেও হাসি ফুটলো।আড়াল থেকে সব কথা শুনে মনোয়ার সাহেবের মুখেও হাসি ফুটলো।তবে তার মুখে চিন্তার ছাপ বিদ্যমান।
__________
-“কি খবর তোর সুভি?”
সুরভি আর নিশা বসে বসে গল্প করছিলো এমন সময় তুষারের কণ্ঠ কানে আসতে দুজনেই সেদিকে তাকিয়ে দেখলো ও দাঁড়িয়ে আছে।
-“হ্যাঁ আমি ঠিক আছি।”
-“একদিনেই ঠিক হয়ে গেলি?”
নিশা কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো,
-“তা তুই কি চাস না ও ঠিক থাকুক?”
-“দেখ নিশা আমি তোর সাথে কথা বলতেছি না।”
-“আমি যখন এখানে উপস্থিত আছি তখন তো আমি জবাব দিবোই।”
তুষার কিছু বলতে যাবে তার আগে সুরভি বললো,
-“তোরা দুজনে থাম।আমার ভালো লাগছে না এইসব।”
নিশা মুখ ভেঙচি কেটে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো।তুষার শান্ত কণ্ঠে বললো,
-“সুভি তোর সাথে আমার জরুরি কিছু কথা ছিল।”
-“আমি এখন কোনো জরুরি কথা শোনার মুডে নেই তুষার।যা বলবি পরে বলিস।”
তুষার চোয়াল শক্ত করে চলে গেলো।তুষার যেতে নিশা বললো,
-“ওর থেকে দূরে থাকবি তো!ওর হাবভাব ভালো লাগে না আমার।”
-“ওর কথা বাদ দে তো।চল আমরা আমাদের আড্ডায় মেতে উঠি।
_
_
_
_
_
-“ম্যাম নিউজটা কি ভাইরাল করে দিবো?”
-“না!সঠিক সময় ওটার প্রয়োগ করবো।এখনো সবটা হাতের মুঠোয় আনার সুযোগ আছে আমার।”
কথাগুলো বলে অদ্ভুত ভাবে হাসলো তানিমা।
__________
-“ওই ভাইয়া উঠো।আজকে বিকালে আমরা সবাই পিকনিকে যাবো।”
মাহিদ চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসে বললো,
-“কিসের পিকনিক?”
-“ফ্যামিলি পিকনিক।”
-“কই আমি তো কিছু জানতাম না।আর পিকনিকে যাবো বিকেলে তোর এতো সকালে ডাকা লাগবে কেনো?”
-“তোর সাথে সবাই রাগ করে ছিলাম বলে তোকে জানানো হয়নি।আর এখন না জানালে প্যাকিং করবি কিভাবে!তাই সকাল সকাল ডাক দিলাম।
মাহিদ মাইশার মাথায় একটা চাটি মেরে বললো,
-“আসতে আমার রাগ করণী!”
-“আহ্!ব্যথা লাগছে আমার।”
-“ভালো হয়েছে।”
মাইশাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মাহিদ ফ্রেশ হতে গেলো।ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতে মনোয়ার সাহেব মাহিদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,
-“ওখানে কিন্তু সুরভি মাও থাকবে।তুমি আবার কিছু করে বসো না।”
সুরভির নাম শুনতেই মাহিদ মুচকি হাসলো।যা মনোয়ার সাহেবের চোখ এড়ায়নি।
-“তোমার এই হাসির কারণ কি?”
-“বাবা তুমি নিশ্চিত থাকো।আমি কিছুই করবো না।”
মনোয়ার সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাহিদের সামনে থেকে চলে গেলেন।
-“মিস.সুরভি!আমাদের আবার দেখা হতে চলেছে।”
–
–
–
–
-“অসম্ভব!আমি এই পিকনিকে যাবো না।”
-“দেখ মা।খালি তো মাহিদ না বাকি সবাই তো থাকবে।চল মা।”
-“আম্মু তুমি আমাকে এভাবে রাজি করাচ্ছো এই পিকনিকে যেতে?তুমি কি সব ভুলে গেলে?”
বশির সাহেব এসে সাহেরা বেগমের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন,
-“আমরা কেউ কিছু ভুলিনি।তোমার মাও না,আর আমিও না।ওখানে গেলে তোমার ভালোই লাগবে।”
নিশা সুরভির কাঁধে হাত রেখে বললো,
-“আঙ্কেল-আন্টি ঠিকই বলতেছেন।চল না সুভি।আমরাও তো যাবো।”
তুষার এসে সুরভির সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“আমি তো যাবো সুভি।আর আমি থাকতে তোর কোনো চিন্তা নেই।”
-“আমি নিজের খেয়াল রাখতে জানি তুষার।তোর আমাকে নিয়ে এতো মাথা ঘামানোর দরকার নেই।”
সুরভি কথাগুলো বলে সিঁড়ি দিয়ে উঠে চলে যেতে গিয়ে থেমে গেলো।তারপরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে পিছনে ফিরে বললো,
-“আমি যাবো।”
সুরভির কথায় সবার মুখে হাসি ফুটলো।সুরভিও মৃদু হেসে তার রুমের দিকে চলে গেল।
|||||||||||||
-“তোমাদের হলো?দেরি হয়ে যাচ্ছে তো আমাদের।”
মাইশা তার ব্যাগ নিয়ে এসে গাড়িতে উঠিয়ে বললো,
-“কি রে ভাইয়া,তোর এতো তাড়া কিসের বল তো!”
-“তোর এতো কিছু জানতে হবে কেনো?আর আকিব কই?”
-“আমি এখানে।”
মাহিদ তার পিছনে তাকিয়ে দেখলো আকিব দাঁড়িয়ে আছে।মাহিদ আকিবের কাছে গিয়ে বললো,
-“কি রে মামা-মামি আসলো না?”
-“আরে বলিস না।দুজনের ঝগড়া হয়েছে।মা গিয়েছে নানাবাড়ি আর বাবা গিয়েছে দাদাবাড়ি।”
আকিবের কথা শুনে মাহিদ আর মাইশা দুজনে হেসে দিলো।সঙ্গে আকিবও হেসে দিলো।মনোয়ার সাহেব আর রাবেয়া বেগম বাইরে আসতে সবাই একসাথে রওয়ানা দিল।মাহিদ গাড়ি ড্রাইভ করছে।তার পাশের সিটে আকিব।তবে আকিবের চোখ লুকিং গ্লাসের দিকে।সে সেখান থেকে মাইশাকে দেখতে ব্যস্ত।
_________
-“আমি বুঝলাম না।দুদিনের জন্য এতোদূরে যাওয়ার কি দরকার?”
নিশার কথায় বিরক্ত হয়ে তুষার বললো,
-“তোর এতো সমস্যা হলে আসলি কেনো?”
নিশা কিছু বলতে যাবে।তাকে থামিয়ে সুরভি বললো,
-“ও কি তোর কথা শুনে আসবে?এতো মেয়েদের কথায় কান না দিয়ে ড্রাইভ কর ঠিকভাবে।”
-“আমাকে এতো তেজ দেখাচ্ছিস!ওয়েট কর সুভি।একবার তোকে নিজের করে পাই।তখন বুঝবি আমি কে!”
তুষার কথাগুলো মনে মনে বললো।
#চলবে____