#মধুরেণ সমাপয়েৎ
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০২
_________________
মাহিদ চলে যেতে বশির সাহেবের মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটলেও তিনি কিছুটা চিন্তিত হলেন।
-“তুমি যতটা সহজ সবটা ভাবছো,সবটা কি ততোটা সহজ হবে মাহিদ!”
সুরভি তার রুমের বিছানায় সাহেরা বেগমের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে।দুজনের মাঝে নিরবতা।
-“আচ্ছা আম্মু,আব্বু কেনো উনাকে আমাদের বাড়িতে আসতে দিলো?”
-“আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না মা।”
-“মাহিদ কিছু জরুরি কথা বলার জন্য এসেছিল।”
বশির সাহেবের কথায় সুরভি শোয়া থেকে উঠে বসে বললো,
-“উনার সাথে তোমার কিসের জরুরি কথা আব্বু?”
-“এইসব তোর এখন না জানলেও চলবে।আর আমি সবদিক বুঝেই যে কোনো সিদ্ধান্ত নিবো।আপাতত ভার্সিটি খুললে তুই ভার্সিটিতে যাওয়া শুরু কর মা।”
সাহেরা বেগম কিছুটা ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললেন,
-“তুমি ওই ছেলেকে এই বাড়িতে আসতে দিলে কেনো?তারপরে এখন এসে এইসব বলছো সুভিকে!”
-“আমি তো খারাপ কিছু বলিনি।ও কেনো চার দেয়ালের মাঝে নিজেকে লুকিয়ে রাখবে?আমি যেন ভার্সিটি খুললে ভার্সিটিতে যেতে দেখি।”
বশির সাহেব কথাগুলো বলে সুরভির রুম থেকে চলে গেলেন।সাহেরা বেগম সুরভির দিকে তাকিয়ে দেখলেন সে তার মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে কিছু একটা করছে।সাহেরা বেগম গিয়ে সুরভির কাঁধে হাত রাখলেন।
-“আব্বু ঠিকই বলেছে আম্মু।আমি ভার্সিটিতে যাবো।তবে তার আগে নিশার সাথে আমার কথা বলা লাগবে।”
সুরভির কথা শুনে সাহেরা বেগমের মুখে হাসি ফুটলো।উনি আর কিছু না বলে সুরভির রুম থেকে চলে গেলেন।নিশাকে কল করার সাথে সাথে সে কল রিসিভ করে বললো,
-“সুভি তুই ঠিক আছিস?”
-“এতোক্ষণে তোর এটা জিজ্ঞেস করার কথা মনে পড়লো?”
-“কালকে কি থেকে কি হয়ে গেলো!আমি তোর কাছে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু আম্মু বারণ করেছিল।তার জন্যই বাসায় চলে আসছি।”
সুরভি দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
-“কালকের কথা বাদ দে।আর আমাদের বাড়িতে চলে আয়।আজকের দিনটা একটু আনন্দে কাটাতে চাই।”
-“তুই শিওর?”
-“অবশ্যই।দেরি না করে তাড়াতাড়ি চলে আয়।আম্মুকে বলতেছি তোর পছন্দের খাবার রান্না করতে।”
নিশা কিছুক্ষণ সুরভির কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করলো।আনমনে বললো,
-“আচ্ছা আসতেছি আমি।”
সুরভি কলটা কেটে সাহেরা বেগমকে গিয়ে নিশার পছন্দের খাবার রান্না করতে বললো।
_______________________
অফিসের চেয়ারে চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে বসে আছে মাহিদ।তার নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।নিজের মনের সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করে সময় পাড় করতেছে সে।
-“স্যার,তানিমা ম্যাডাম এসেছেন।”
তানিমা নামটা শুনতেই চোখ খুলে তাকালো মাহিদ।বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে স্বাভাবিক ভাবে বসে বললো,
-“পাঠিয়ে দেও।আর কে আসলো না আসলো সেটা জানানোর কাজ তোমার না রবিন।এটা এখন থেকে খেয়াল রাখবে।”
মাথা হেলিয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়ে চলে গেল ম্যানেজার রবিন।রবিন চলে যেতেই মাহিদের কেবিনে প্রবেশ করলো তানিমা।মাহিদকে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখে মৃদু হেসে তানিমা বললো,
-“আমি এসেছি শুনেও মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছো!”
তানিমার কণ্ঠ কানে আসতেই মাহিদের মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠলো।মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-“তুই কোনো ভি.আই.পি গেস্ট না যে তুই এসেছিস শুনে আমি আমার সব কাজ বন্ধ করে দিবো!”
তানিমার হাসি নিমিষেই মিলিয়ে গেল।কিছুটা কাঁদো সুরে বললো,
-“এখনো এই অ্যাটিটিউড রয়ে গেল।”
-“এইসব তামাশা বাদ দিয়ে কি জন্য এসেছিস সেটা বল।তোর তো খুশি হওয়ার কথা বিয়েটা আমি নিজেই না করে চলে এসেছি।”
-“আমি তো জানতাম তুমি আমার কথা না রেখে পারবে না।”
-“ভুল ধারণা থেকে যত তাড়াতাড়ি বের হতে পারিস তোর জন্য ততই ভালো হবে তানিমা।আমি তোর জন্য না সুরভির ভালো জন্য এই কাজটা করতে বাধ্য হয়েছি।কারণ আমার কাছে এখন কোনো প্রমাণ নেই।”
-“সুরভির নামটা জাস্ট নিও না আমার সামনে।”
-“ওর নাম তো আমি একবার না হাজার বার নিবো।কারণ শুধু নামটা না এই নামের সম্পূর্ণ মানুষটাই আমার জীবনে খুবই স্পেশাল।”
-“ওইসব এখন বাদ দেও।তুমি আর ওই সুরভিকে পাবে না।তাই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাও।আর না হয় তুমি তো জানো সুরভির সাথে কতটা খারাপ হতে পারে!আর তার উপরে তোমার নামের সাথেও কি জড়িয়ে আছে!”
-“আমার নামের সাথে যাই জড়িয়ে থাকুক।তা নিয়ে আমি ভয় পাই না।আমার একমাত্র ভয় সুরভিকে নিয়ে।আমি চাই না আমার জন্য ওর কোনো বিপদ হোক।আর তোকে বিয়ে করবো!মরে গেলেও না।তুই যদি ভেবে থাকিস সুরভির সাথে বিয়েটা ভেঙে দিয়ে এখন তোকে বিয়ে করবো।তাহলে এটা তোর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা।”
তানিমা কিছু বলতে যাবে তাকে থামিয়ে দিয়ে মাহিদ বললো,
-“আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না তোর।এখান থেকে চলে যা।তোকে দেখলেও এখন আমার ঘৃণা হয়।”
তানিমা রাগে আর কষ্টে মাহিদের ক্যাবিন থেকে বের হয়ে চলে গেল।তানিমা বের হয়ে যেতেই মাহিদ তার হাতে মুথো করে চোয়াল শক্ত করে ফেললো।তার চোখ কাঁচের জানালার বাহিরের আকাশের দিকে।
-“তোমাকে দেখার আগে শূন্য ছিলাম।তোমাকে দেখার পরে মহাশূন্য হয়ে গিয়েছি সুরভি।”
_________
-“সুভি তুই আসলেই ঠিক আছিস তো?”
তেঁতুল টক দিয়ে ফুচকা মুখে দিয়ে চোখ বন্ধ করে মুখটা কুঁচকে ফুচকা খাওয়ায় ব্যস্ত সুরভি।নিশার কথাটায় কিছুটা অস্বস্তি হলেও সে নিজেকে ঠিক রেখে বললো,
-“আমি ঠিক আছি নিশু।আর তুই বারবার এসব জিজ্ঞেস করা বন্ধ কর।নাহলে তোর কান কিন্তু আর কানের জায়গায় থাকবে না।”
-“যাক তোর থ্রেট দেওয়া শুনে বুঝে গেলাম আসলেই তুই ঠিক আছিস।”
ফুচকা মুখে ঢুকিয়ে সুরভির দিকে তাকালো নিশা।সে দেখলো সুরভির মুখে মলিন হাসি।
-“আমি জানি তুই ভালো নেই সুভি।ভালো আছিস দেখানোর বৃথা চেষ্টা করছিস।”
নিশা মনে মনে কথাগুলো বলায় তা আর সুরভির কান পর্যন্ত পৌঁছালো না।
||||||||||||||||||||||||||
অফিস থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে হঠাৎ গাড়ি থামালো মাহিদ।তার মুখে মৃদু হাসি।
-“তোমার দেখা যে এতো তাড়াতাড়ি পাবো তা ভাবতেই পারিনি।”
গাড়ি থেকে নেমে গোলাপ ফুলের একটা তোড়া কিনলো মাহিদ।
-“জানি তুমি হয়তো রাগান্বিত হবে আমাকে দেখে,তবে আমার তো বেশ লাগে তোমার রাগী মুখখানা দেখতে।”
মাহিদ সুরভির সামনে গিয়ে দাঁঁড়ানো ফুলের তোড়াটা পিঠের পিছনে বা হাতে ধরে।মাহিদকে দেখে বিষম খাওয়ার অবস্থা সুরভির।মাহিদ তাড়াতাড়ি করে এক গ্লাস পানি এনে সুরভির সামনে ধরলো।সুরভি কেশেই চলেছে কিন্তু মাহিদের থেকে পানির গ্লাস নিচ্ছে না।মাহিদ কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
-“রাগ সাইডে রাখো।আগে নিজের প্রাণ বাঁচাও।”
সুরভি মাহিদের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে পানি গ্লাসটা নিয়ে পুরো গ্লাস নিমিষেই খালি করে ফেললো।নিশা নিরব দর্শকের ন্যায় সবকিছু দেখে যাচ্ছে।সুরভি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললো,
-“আপনি এখানে কেনো এসেছেন?”
মাহিদ একবার চারিপাশে চোখ বুলিয়ে বললো,
-“আমার জানা মতে এটা পাব্লিক প্লেস।এখানে যে কেউ আসতে পারে।”
-“নিশা তোর খাওয়া শেষ হলে চল নাহলে আমি চলে যাচ্ছি।”
সুরভি চলে যেতে নিলে মাহিদ তড়িঘড়ি করে বললো,
-“কিন্তু আমি তো তোমার জন্য এসেছি।”
-“আমার সাথে আপনার কিসের দরকার?”
সুরভির সাথে তাল মিলিয়ে নিশা বললো,
-“হ্যাঁ।ওর সাথে কিসের দরকার আপনার?”
-“নিশা ম্যাডাম এই বিষয়ে আপনার না জানলেও চলবে।আর সুরভি……”
এটুকু বলে থামলো মাহিদ।সুরভি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।মাহিদ খানিকটা মাথা হেলিয়ে দিয়ে বললো,
-“এভাবে তাকিয়ো না,আমার তো হার্টবিট বেড়ে যায়।প্রেমিক পুরুষ বলে কথা!”
-“দেখুন মি.মাহিদ,আপনার এইসব আজেবাজে কথা শোনার আমার কোনো ইচ্ছা নেই।আপনি দয়া করে আমার সামনে আসা বন্ধ করুন।”
-“সেটা তো হবে না।আমি তো তোমার সামনে আসবোই।”
সুরভি আর কিছু না বলে নিশার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে গেলে মাহিদ সুরভির ব্যাগের ফিতা টেনে ধরলো।সুরভি বেশ অবাক হয়ে পিছনে তাকালো।মাহিদ তার পিছন থেকে ফুলের তোড়াটা সামনে এনে বললো,
-“এটা না নিয়েই চলে যাবে?”
সুরভি দেখলো মাহিদের হাতে হলুদ গোলাপের তোড়া।যা সুরভির সবচেয়ে পছন্দের ফুল।ফুলগুলো ফিরিয়ে দিতে না চাইলেও মাহিদের থেকে কোনো জিনিস সে নিতে চায় না।
-“আপনার জিনিস আপনার কাছেই রাখুন।”
-“তা তো হবে না।এটা তোমার উদ্দেশ্যে কিনেছি আমি।তাই এটা তোমার জিনিস।”
মাহিদ কথাগুলো বলে ফুলের তোড়াটা সুরভির দুই হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল।সুরভি ফুলের তোড়াটা ফেলে দিতে গিয়েও পারলো না।একেই তার প্রিয় ফুল আবার তার উপর অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে।তাই সে ফুলগুলোকে নিজের কাছে রেখে দিল।
-“কি রে সুরভি!ফুলগুলো নিয়ে যাবি নাকি?”
-“ফেলে দিতে মন চাচ্ছে না।আচ্ছা চল এখন বাসায় যাই সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে।”
-“আচ্ছা চল একটা রিক্সা নেই।তোকে তোর বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে আমি তারপরে বাড়িতে যাবো।”
-“ওটা হচ্ছে না।তুই আজকে আমার বাড়িতে থাকবি।তুই কিসের বেস্টফ্রেন্ড যে আমাকে এই অবস্থায় একা রেখে চলে যাবি!”
-“আচ্ছা হয়েছে।তোদের বাড়িতেই যাবো চল সুভি মা।”
-“এই তুই আমাকে মা বললি কেনো?তোর মতো বুড়ি একটা মেয়ে আমার মেয়ে হয় কি করে!”
দুজনে একসাথে হেসে দিলো।
#চলবে____