#ভোরের শিশির
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৮
হামিম আমার চিৎকারে লাফিয়ে উঠে শোয়া থেকে।উনি উঠার সাথে সাথে আমিও খাট থেকে নেমে নিচে দাঁড়াই।উনি ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠে,,,
“এভাবে চিৎকার কেন করলে?”
আমি উনার কথার কোন উওর না দিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি দরজা লাগানো।দরজা ত আমি তখন ভালো করেই লাগিয়েছি তারপরও উনি ভিতরে আসল কীভাবে?
“কী হল এভাবে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো কেন?বলবা ত কেন ওভাবে চিৎকার করলে?”
“আ আপনি এখানে কী কীভাবে এলেন?”(আমতা আমতা করে)
” উড়ে এসেছি।”(মজা করে)
“মজা করছেন না নাকি সত্যি?দে দেখুন মজা করলে একদম মজা ক করেবেন না বলে দিচ্ছি,সত্যি ক করে বলুন আ আপনি মানুষ না জ্বীন?”
আমার শেষের কথাটা শুনে উনি বড়বড় চোখ করে তাকায় আমার দিকে।উনি আমার কথায় এতটাই অবাক হয়েছে চোখ যেন বেরিয়ে আসবে।
“আ আমি আপনাকে ভয় পাই না একদমই,তা তাড়াতাড়ি বলুন আপনি কে?কীভাবে এই ঘরে এলেন?নয়ত ভা ভালো হবে না।”
“একটা থাপ্পড় দিয়ে না সব দাঁত ফেলে দিব,যে কয়টা দাঁত পোকা খাইছে সেসব দাঁতও পড়ে যাবে থাপ্পড় দিলে।”
উনার কথাশুনে আমার হাত আপনা আপনি বাম গালে চলে যায়।যাহ বাবা এটা উনি জানল কেমনে?কথা বলার সময়ও ত ঐ দাঁতগুলো দেখা যায় না।তবে উনি জানল কেমনে?আল্লা এটা নিশ্চয়ই কোন জ্বীন,ভূত হবে।
“আল্লাহ বাঁচাও,ভূত।”
কথাটা চিৎকার করে বলেই একটা দৌড় দিয়ে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলি।আর আরেক দৌড়ে একদম নিচে চলে যাই।আর নিচে এসে দেখি আমার সামনে মলি,কিন্তু আমরা ত বাড়িতে না।এটা ত অন্য একটা বাড়ি এই বাড়িতে মলি এলো কীভাবে?কিন্তু সেসব প্রশ্ন গুরুত্ব না দিয়ে আমি মলিকে জাপ্টে ধরি।
“আপামনি কী হইছে আপনে এইভাবে চিল্লাইতাছেন কেন?”
আমি মলিকে ভয়ে ভয়ে বলে উঠি।
“মলি ভূ ভূত আছে আমার ঘরে।দ দরজা বন্ধ থাকার পরও ভি ভিতরে চলে গে গেছে।”
আমার কথাশুনে মলি ঠকঠক করে কাঁপা কাঁপি শুরু করে দিছে।
“আআ আপামনি হাছা কইছেন আপনে ভূত আছে।মা মাস খানিক আগে আমারেও দেখা দিছিল সাদা একটা ভূ ভূত।”
মলির কথা শুনে আমার এবার বেশি ভয় করছে।আমাদের কথার মাঝেই হামিম রূপি সেই ভূত নিচে নেমে আসে।একদম আমার সামনে দাঁড়ায় বুকে হাত গুজে।আমার উনাকে আমার এত সামনে দেখে আমি উল্টো দৌড় দেই।কিন্তু বেশিদূর যেতে পারি নি,তার আগেই উনি আমাকে কোলে তুলে নেয়।হঠাৎ এরকম হওয়াতে আমি আরো বেশি ভয় পেয়ে যাই।
“মলি বাঁচাও আ আমাকে ভূ ভূত।”
আমার কথাশুনে মলিও জোড়ে ভূত বলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।আমি চোখ বড়বড় করে একবার মলির দিকে তাকাই ত একবার হামিম রূপি ভূতটার দিকে তাকাই।উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমাকে কোল থেকে নামায়,আমি দৌড় দিতে গেলে আমার হাতটা ধরে রাখে।আমি হাত মোচড়া মুচড়ি করছি ছাড়াবার জন্য কিন্তু একটা ভূতের কাছে আমার শক্তি নগন্য।উনি পকেট থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে কাউকে ফোন লাগায়।সেটা দেখে আমি আরো বেশি অবাক হয়ে যাই।ভূত কী ফোনও চালায়?ডিজিটাল বাংলাদেশে কী ডিজিটাল ভূতেরও উৎপত্তি হল নাকি?
আমি এসব ভাবছি আর উনি এর মাঝেই ফোনটা রেখে আমাকে আবারও কোলে তুলে নেয়।আমি কোল থেকে নামার জন্য ধস্তাধস্তি করে চলেছি কিন্তু নামতে পারছি না।উনি ঘরে এসে আমাকে খাটে বসিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
“দেখুন আ আমি কিন্তু কো কোন ভূতের কোন ক্ষতি করি নাই।আমাকে ছে ছেড়ে দেন প্লিজ,আর আমার জামাইটাকেও ফি ফিরিয়ে দেন প্লিজ।!
” জামাই?”
“আ আমার জামাইয়ের রূপ ধরে আসছেন,নি নিশ্চয়ই আমার একমাত্র ডাইনোসর জা জামাইটাকে কোথাও রেখে এসেছেন?নয়ত আ আমি এত চিৎকার করলাম উনি এলো না কে কেন?প্লিজ আমার জা জামাইকে ফিরাইয়া দেন।”
“চুপ একদম চুপ,স্টুপিট কোথাকার।ভূত বলতে কিছু নেই,তাই এমন বোকা বোকা কথা আরেকবার বললে এমন থাপ্পড় দিব যে ভূত বলতে কোন ওয়ার্ড আছে সেটাই ভুলে যাবে।আমাকে তোমার কোন এঙ্গেলে ভূত মনে হয় হুম?এন্সার মি চুপ করে থাকবা না।”
উনার ধমকে আমি এবার ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ফেলি।উনি হকচকিয়ে উঠে আমার কান্নার আওয়াজে।
“সারু কেঁদো না,আর ধমক দিব না।তুমি শান্ত হও কেঁদো না।”(শান্ত হয়ে)
সারু শব্দটা শুনে মনের ভিতর কেমন যেন একটা ভালো লাগা কাজ করল।আমি কান্না ভুলে উনার দিকে ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে আছি।আর উনি আমার চোখের পানি মুছে দেয়।
“তুমি এমন বোকাবোকা কথা বলছিলে তার জন্যই ত এভাবে ধমক দিতে হল আমার।আর তোমাকে কাঁদতে হল।আমি কোন জ্বীন কিংবা ভূত নই আমি হামিম তোমার একমাত্র স্বামি।আর রুমে আসার জন্য কী ভূত হতে হয় নাকি?বারান্দা আর এক্সট্রা চাবি আছে কী করতে হুম!”
“আল্লাহ বলুন।”
উনি মুচকি হেঁসে বলে উঠে।
“আল্লাহ।”
“হাতটা দিন আপনার।”
“হাত দিয়ে কী করবা?”
“দিন ত।”
তারপর উনি হাত দিলে আমি উনার নখে চাপ দিয়ে ধরি।উনি ব্যাথায় আউচ করে উঠে,আর আমি বিশ্বজয় করা হাসিতে মেতে উঠি।আমি এখন শিয়োর উনি কোন জ্বীন,ভূত নয় আমার একমাত্র স্বামী উনি।
“ব্যাথা দিলা কেন?”
“হি হি হি,ব্যাথা পেলেন বলেই ত শিয়োর হলাম আপনি কোন জ্বীন কিংবা ভূত নন।”
“মানেহ?”
“মানে হল ছোট থাকতে মামার বাসায় গেলে নানু বলত,ভূত/জ্বীন ধরলে নাকি হাতের নখে চাপ দিলে ব্যাথা পায় না।তাই সেই টেকনিকটাই এখন ব্যাবহার করলাম।”
উনি আমার মাথায় একটা ঠুয়া মেরে বলে উঠে,,,
“পাবনার পলাতক পাগল একটা।”
আমি উনার কথায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠি।
“এই আপনি কাকে পাবনার পাগল বলছেন হ্যাঁ?ঘুসি দিয়ে না একদম নাক বোঁচা করে ফেলব।”
“তুমি পাবনার পাগল,আর দেও একটা ঘুসি দেখি তেমার কত শক্তি।”
উনার কথাশুনে দমে যাই,কারন যতই হোক কেউ তাকে মারতে বললে মারা যায় না।তাই আমি চুপ করে বসে আছি,কিন্তু হঠাৎ করেই মনে পড়ে যায় উনি ত আমার উপরে ছিল তখন।কিন্তু কেন তখন ওভাবে শুয়ে ছিল?
“এই মিয়া আপনি তখন আমার উপরে শুয়ে ছিলেন কেন?কোন কু মতলবে তখন এমন করছেন হুম?”
“দেখছিলাম তোমার কয়টা দাঁত পোকায় খেয়েছে।এই তুমি না একজন ডাক্তার!ডাক্তার হয়ে নিজের দাঁতের এ হাল কেন?”
“দেখুন একদম দাঁত নিয়ে কথা বলবেন না?আমার দাঁত যথেষ্ট সুন্দর ঠিক আছে!”
“সেটা ত দেখতেই পারছি।”
“দেৎ আপনার সাথে কথা বলে কোন ফায়দা নাই,যান এই ঘর থেকে ঘুমাব আমি।আপনার সাথে কথা বললেই কথা বাড়বে।আর রাত পার হয়ে সকাল হয়ে যাবে।”
“আমি এই ঘর থেকে কোথাও যাচ্ছি না,আমি আজ থেকে তোমার সাথে একই রুমে থাকব।”
“খেলব না থুক্কু থাকব না আমি আপনার সাথে,বের হন এই ঘর থেকে।”
উনি আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে কিছুটা ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে দেয়।আর উনি আমার পাশে শুয়ে পিছন থেকে এক হাতে আমার গলা আরেক হাত পেটে রেখে শুয়ে পড়ে।উনার ছোঁয়ায় কেঁপে উঠি আমি,আর উনি মুচকি হেঁসে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে।
আমি উনার আলতো ছোঁয়ায় একদম ফ্রিজড হয়ে যাই।কী হল এটা?কী করল এটা?
#চলবে,,,