#ভোরের শিশির
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৫
সেদিন রাতে আমি বাবা আর ভাইয়া ঐ লোকটার বাড়িতেই ছিলাম।আমি উনার মার সাথে শুয়ে ছিলাম আর বাবা,ভাইয়া অরা ঐ ছেলেটার সাথে পাশের রুমে শুয়েছিল।মহিলাটিকে ঔষধ খাইয়ে দেয়ার পর তিনি ঘুমিয়ে পড়েন।আর আমি উনার মাথায় পানি দিয়ে,জলপট্টি দিয়েছি সারারাত।আমার সজাগ থাকার অভ্যাস আছে তাই জেগে থাকতে কোন সমস্যা হয় নি।সকালে উনি সজাগ হয় আর উনার মাথার কাছে আমাকে বসে থাকতে দেখে খুব অবাক হয়।
“তুমি এখনও যাও নি!”
“এইত এখনই চলে যাব,সকাল হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম।তা আপনি এখন কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি মা,তোমাকে খুব কষ্ট দিলাম।আমার ছেলেটাও না একটা পাগল জানো!একটু জ্বর হল কী হল না তোমাকে এভাবে তুলে নিয়ে এলো।আমি বারবার না করেছি একটা মেয়েকে এতরাতে নিয়ে আসার দরকার নেই।কিন্তু কে শুনে কার কথা!”
“আরে আন্টি কোন সমস্যা নাই,উনি যা করেছে একদম ঠিক করেছে।উনার জায়গায় আমি থাকলে আমিও এটাই করতাম।কারন কোন সন্তানই তার বাবা মায়ের কষ্ট শয্য করতে পারে না।আর আমি ত একজন ডাক্তার আমার দায়িত্বই হল রোগীর সেবা করা।”
উনি এবার আমার গালে হাত দিয়ে বলে,,,
“তুমি খুব ভালো,খুব মিষ্টি,এমন একটা মেয়ে আমার হামিমের জন্য খুব দরকার।যখন আমি থাকব না তখন যাতে সে হামিমকে আগলে রাখতে পারে।”
উনার কথাশুনে আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম,তাই কোনমতে উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে মুচকি হেঁসে চলে এলাম ঘর থেকে।আর পাশের রুমে উঁকি দিয়ে দেখি ভাইয়া নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে আর বাবা রুমে নেই।তাই বাইরে চলে আসি বাবাকে খুঁজতে আর এসে দেখি রাতের ছেলেটা রান্না ঘরে কী যেন করছে।আমি কৌতূহলি হয়ে উনার কাছে গিয়ে দাঁড়াই।উনি আমাকে দেখে মুচকি হাসেন,আর এক বাটি গরুর মাংস আমার দিকে এগিয়ে দেয়।
“খেয়ে দেখুন ত একটু সবকিছু ঠিক আছে কী না?আসলে মার জন্য পাক করেছি তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
আমি ত এখন অবধি ফ্রেশই হলাম না,আর উনি বলছে গরুর মাংস খেতে!এখন যদি বলি ফ্রেশ হই নি তবে ত ভাববে মেয়েটা খাচ্চর।এত বেলা হওয়ার পরও নাকি ফ্রেশ হয় নি।না বাবা থাক এটা বলে কাজ নেই।
“না মানে আমি গরুর মাংস খাই না,এলার্জি আছে।”
আল্লাহ মাফ করো সকাল সকাল একটা মিথ্যা কথা বলে ফেললাম।
“ওহহ ঠিক আছে,সমস্যা নাই।”
“আপনাদের বাড়িতে আর কেউ থাকে না!”
“হুম থাকে ত,আমি মা আর কিছু সার্ভেন্ট।”
“সার্ভেন্ট থাকতে আপনি রান্না করছেন?”
“আসলে মা ওদের হাতের রান্না পছন্দ করেন না।তাই আমাকেই করতে হয় মার জন্য রান্না।
“ওহহ!”
এরপর বেশ কিছুক্ষন দুজনেই নিরবতা পালন করি। তারপর হঠাৎ করে উনার মার সেই কথাটা কানে বাজে,”এমন একটা মেয়ে আমার হামিমের জন্য খুব দরকার।”মানে উনিই কী সে,যেদিন আমাকে ধাক্কা দিয়ে সবার সামনে ফেলে দিয়েছিল।তনয় স্যারও ত সেই লোকটার নাম হামিমই বলেছিল।কথাটা মাথায় আসতেই মুহুর্তেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।কিন্তু আমি যতটা সম্ভব নিজেকে কন্টোল করার চেষ্টা চালিয়ে উনাকে প্রশ্ন করলাম।
“আচ্ছা আপনার নাম কী?আর কী কাজ করেন আপনি?”
“ওপস সরি এতক্ষণ ধরে দুজন একসাথে আছি অথচ আমার নামটাই আপনাকে বলা হয় নি।আমি হামিম একজন ডিটেকটিভ।”
এইবার আমি শিয়োর এই বেটায়ই সেদিন আমাকে ফেলে দিয়েছিল।আর ভাব নিয়ে আমাকে না ধরে তার ফোন নিয়ে চলে এসেছিল।দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা তোকে।কথাটা বলেই আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখি একে শায়েস্তা করার মত কিছু পাই কী না।তারপর চোখ যায় ময়দার বয়ামে,আমি তৎক্ষনাৎ সেটা নিয়ে উনার উপরে ডেলে দেই।
“শোধ নিলাম,সেদিন হসপিটালে ফেলে দেয়ার জন্য।”
কথাটা বলে ভৌ দৌড় দেই।আর বাবা,ভাইয়ার কাছে চলে আসি।আর খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠি,,,
“ইস্ একটা পিক তুলে নিলে মন্দ হত না,পুরা সাদা ভূত হয়ে গেছে ময়দা দিয়ে।”
কথাটা বলে আবারও হাসিতে মেতে উঠি।
অন্যদিকে হামিম এটার জন্য মোটেও প্রস্তত ছিল না।হামিম স্ট্যাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে ওভাবেই,সে বুঝার চেষ্টা করছে যে এই মুহুর্তে ঠিক কী হল তার সাথে।আর যখন বুঝতে পারল তখন রেগে গেলো খুব।
“ভূতততততততত।”
এত জোরে কারো গলা পেয়ে হামিম আশেপাশে তাকিয়ে দেখে মলি ফ্লোরে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে।সেটা দেখে হামিম এক গ্লাস পানি নিয়ে মলির সামনে গিয়ে চোখে,মুখে পানি ছিটায়।একটু পর মলির জ্ঞান ফিরে আর চোখের সামনে হামিমকে এই অবস্থায় দেখে আবারও চিৎকার করে জ্ঞান হারায়।হামিম বেচারা পড়েছে ঝামেলায়,তাই হামিম তার ঘরে চলে গেলো ফ্রেশ হতে,তারপর মলির কাছে যাবে।আর আদিয়াকে পড়ে দেখে নিবে সে এমনটা মনস্থির করে।
____________________________________
সেদিন আমরা হামিম আর উনার মার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়িতে চলে আসি।হামিম আমাকে কিছু বলে নি সেদিন সাথে বাবা আর ভাইয়া ছিল বলে।তবে আমি এখন মনে মনে খুব বেশি খুশি।কারন প্রতিশোধ নিতে পেরেছি আমি।এরপর কেটে যায় আরো দুই দিন,এই দুই দিনে আহমেদ কোম্পানির অনেক শ্রমিক মারা গেছে,কেউ কোমায় আছে আর কেউ সুস্থ হয়েছে।এসবে মনটা বড্ড বেশি ভার হয়ে আছে।
একদিন হসপিটালে একটা মিটিং ডাকা হয়,যেখানে হসপিটালের কয়েকজন ডাক্তার সহ আমিও সেখানে ছিলাম।মিটিং শেষ করে বের হয়ে আমার চেম্বারের দিকেই যাচ্ছিলাম।কিন্তু চেম্বারের সামনে হামিমকে দেখে ঘাবড়ে যাই।আর উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করি,এখন উনিও যদি প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আসে!তবে ত পুরো হসপিটালের সামনে আবারও আমার মান সম্মান নিয়ে টানাটানি পড়বে।কথাটা ভেবে হাঁটার স্পিড বারিয়ে দেই,কিন্তু বেশিদূর যেতে পারি নি।তার আগেই পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠে,,,
“এত ভীতু হয়ে ডাক্তার হলেন কীভাবে?”
কথাটায় কেমন অপমান বোধ হল আমার,তাই রেগে পিছন ফিরে আঙুল তুলে কিছু বলার জন্য তাকাতেই থমকে যাই।কারন উনি আমার দিকে খুব রেগে তাকিয়ে আছে।উনি যেভাবে রেগে আছে তাতে উনার কাছে আমার রাগ কিছুই না।
“কী সব হাওয়া ফুস!”
“——-”
“কথা কেন বলছেন না মিস আদিয়া!আপনি যে ভীতু সেটা কী আবার প্রমান করার জন্য এভাবে ঘুটিয়ে রয়েছেন হুম!”
আমি এবার কয়েক পা পিছিয়ে যাই আর রেগে বলি।
“আপনার মত ডাইনোসর,বজ্জাত বেটাকে ভয় পেতে আমার বয়েই গেছে।”
কথাটা বলেই আবারও দৌড় লাগাই।আর উনি পিছন থেকে বোকার মত তাকিয়ে রইল।
এরপর কেটে যায় আরো পনেরো দিন,এই কদিনে হামিমের সাথে আমার বহুবার দেখা হয়েছে হসপিটালে।উনি আহমেদ কোম্পানির সেই কেসটার তদন্ত করার জন্য মাঝেমধ্যেই হসপিটালে আসতেন এটা ওটা জানার জন্য।আর দুজন সামনাসামনি পড়লে দুজন এমন ভাব ধরতাম যেন কেউ কাউকে চিনিই না।
ভালোই কাটছিল দিন কিন্তু হঠাৎ একদিন হসপিটাল থেকে বাড়িতে এসে দেখি সেই আন্টিটা মানেহ হামিমের মা আমার বাড়িতে।উনাকে দেখে যতটা না অবাক হয়েছি তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছি উনার সাথে হামিমকে দেখে।
“আসসালামু আলাইকুম আন্টি।কেমন আছেন আপনি?”
“ওয়ালাইকুম সালাম।আমি ভালো আছি মা,কিন্তু তোমার সাথে অভিমান করেছি।”
“কেন আন্টি?আমি কী কিছু করেছি?”
“তুমি ত সেদিনের পর আর আমার সাথে দেখা করতেই গেলে না।হামিমকে কতবার বলেছি তোমাকে নিয়ে যেতে কিন্তু তুমি নাকি খুব ব্যস্ত তাই আসতে পারবে না।তাই আমিই চলে এসেছি তোমার সাথে দেখা করতে।”
“খুব ভালো করেছেন আন্টি।আপনি একটু বসুন আমি চেন্জ করে আসছি।”
“কথাটা বলেই আমি হামিমের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে চলে আসি।আর ফ্রেশ হয়ে জামা চেন্জ করে নিচে নেমে আসি।আর আসার পর যে কথাটা শুনি সেটা শোনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না একদমই।
#চলবে,,,