ভুল বুঝনা আমায় পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0
1734

#ভুল_বুঝনা_আমায়
[১০ ও শেষ পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

শিউলীর চোখের পানি দেখে খুব খারাপ লাগছে। কেউ যখন নিজের ভুল বুঝতে পারে তখন তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিৎ। আমি এবার শিয়লীর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম — ঠিক আছে তোকে আমি ক্ষমা করে দিলাম।

এবার শিউলী আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। আমি শিউলীর মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে বললাম — পাগলি এই ভাবে আর কান্না করতে হবেনা।

এবার আমার বাবা আমার কাছে এসে বলল — বাবা তোকে আমি কতো যায়গায় খুঁজেছি কিন্তু কোথাও তোর খোঁজ পাইনি। বাবা তোকে আর আমরা হারাতে চাইনা। তুই এবার থেকে আমাদের কাছেই থাকবি।

— সরি বাবা সেটা সম্ভব না। তোমাদের উপরে আমার আর কোনো রাগ অভিমান নেই। কিন্তু এখানে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। কারণ তোমরা যখন আমাকে অবহেলা করছিলে। তোমাদের অবহেলার শিকার হয়ে যখন আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাই তখন আমি নতুন একটা পরিবার পাই। যেখানে আমি তোমাদের নিজের ছেলে হওয়ার পরেও আমার কথা বিশ্বাস করলেনা সেখানে একটা পরিবার আমাকে চিনেনা জানেনা তারা আমাকে তাদের পরিবারের একজন করে নিতেছে। একটা দিন তো আমার খোঁজ নাওনি। কেমন আছে ছেলেটা। এসব বলছি আর আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। তখন আমার কাধের উপরে হাত রাখলো নুসরাতের বাবা। আমি তাকে দেখিয়ে আমার বাবাকে বললাম — দেখো এই মানুষ টাকে উনি আমাকে কখনো দেখেও নি। কিন্তু তিনি শুধুই আমার কথা শুনে আমাকে বিশ্বাস করে তাদের বাসায় থাকতে দিয়েছে। পড়াশোনা করিয়েছে। বাবার মতো স্নেহ করছে। কখনো কোনো কিছুর জন্য আমাকে নিষেধ করেনি। সব থেকে আসল কথা কি জানো বাবা উনি ওনার সব থেকে মুল্যবান সম্পদ ওনার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিয়েছে। আমি এবার নুসরাতকে সবার সামনে নিয়ে আসলাম। নুসরাতের সাথে আমার মা-বাবার পরিচয় করিয়ে দিলাম। নুসরাত এবার সবাইকে সালাম করলো। এবার আমার কাকা কাকি আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল — ঈশান আমাদের তুমি ক্ষমা করে দিয় বাবা। সেদিন তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করছি।

— না তোমাদের কোনো দোষ আমি দেইনা। আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে আমাকে আর ছোট করবেন না। কিন্তু আমার এটাই বেশি খারাপ লাগছে যে তোমাদের সামনে আমি ছোট থেকে এতো বড় হলাম তোমরা আমাকে চিনতে পারলেনা। আমার শুধুই এই একটা কষ্ট।

আমার এসব কথা শুনে সবার চোখে পানি। এবার আমি সামনের দিকে তাকাতেই দেখি স্নেহা দাঁড়িয়ে আছে। স্নেহাকে দেখে অনেক খারাপ লাগছে। কি মেয়েটা কি হয়ে গেলো। চোখের নিচে কালো দাগ বসে গেছে। আগের থেকে অনে রোগা হয়ে গেছে। দেখেই মনে হয় সব সময় কান্না করে। চোখ লাল হয়ে আছে।

স্নেহা,কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে এবার ধিরে ধিরে আমার কাছে আসতে থাকে। আমার কাছে এসেই আমার পায়ে ধরে কান্না করতে শুরু করে। কেনো জানি স্নেহার কান্না আমি সহ্য করতে পারছিনা।

স্নেহা আমাকে বলল — ঈশান আমি তোমাকে এতো দিনেও চিনতে পারিনি। তোমাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি। তোমার গায়ে হাত তুলছি। তোমাকে অবিশ্বাস করছি। তোমার কথা শুনতে চাইনি। ঈশান যেদিন আমি আসল ঘটনা জানতে পারি তখন ইচ্ছে করছিলো নিজের গলায় ধড়ি বেধে মরে যেতে। কিন্তু আমি সেটাও পারিনি শুধুই বেচে আছি তোমার কাছে ক্ষমা চাইব বলে। একটা মানুষকে আমি কতটা কষ্ট দিলাম। তোমার খারাপ সময় আমি তোমার পাশে না থেকে তোমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি। বার বার তোমার একটি কথা আমার মনে পড়ছে সেটা ছিল। প্লিহ স্নেহা আমার কথা টা একটু শুনো। কিন্তু আমি সেদিন তোমার কোনো কথা শুনতে চাইনি। আমাকে ক্ষমা করে দাও ঈশান।

আনার ভাবী আমার কাছে এসে বলল — ভাই স্নেহা প্রতিদিন এই বাড়িতে এসে তোমার কথা জিজ্ঞেস করে। মেয়েটা সব সময় কান্না করে। শুধুই তোমার জন্য। তুমি ওঁকে ক্ষমা করে দাও। ও নিজের ভুল বুঝতে পারছে।

— আমি ক্ষমা করে দিলাম। কারোর উপরে আমার কোনো রাগ নেই।

স্নেহা বলল — ঈশান আমাকে কি আর একটি বার তোমার জীবনে নিবে?

— সেটা আর সম্ভব না স্নেহা। তোমার প্রতি একটা সময় আমার ভালোবাসা ছিলো। এখনো কোনো ভালোবাসা নেই তোমার জন্য। আমি এখন অন্য কারো। আর তাকে নিয়ে আমি অনেক ভালো আছি। আর সব থেকে বড় কথা আমি বিবাহিত।

আমার কথা শুনে স্নেহার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। স্নেহা আমাকে বলল — আমি নিজের দোষে তোমাকে হারিয়ে ফেলছি।

স্নেহা এবার নুসরাতের কাছে গিয়ে বলল — বোন ঈশানকে কখনো কোনো কষ্ট দিয়না ও খুব ভালো ছেলে।

স্নেহা আমার হাত ধরে নুসরাতের হাতের উপরে দিয়ে স্নেহা কান্না করতে করতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।

নিলয় আমার কাছে এসে বলল — ঈশান চল।

— চল মানে কোথায় যাবি?

— এখানে আমার বিয়ে করা সম্ভব না। যে তোকে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিছে সেই মেয়েকে আমি বিয়ে করতে পারবোনা দোস্ত।

— একদম চুপ তুই এখানেই বিয়ে করবি। আর সব থেকে বড় কথা শিউলী আমার বোন।আমি থাকতে আমার বোনকে বিয়ে না করে তুই এখান থেকে যেতেও পারবিনা। আর ও তো নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে আমিও ক্ষমা করে দিয়েছি। তাহলে তোর আপত্তি কিসের? তুই এই বিয়ে করবি এটাই আমার শেষ কথা।

নিলয় আর আমাকে না করতে পারেনি। নিলয় বিয়ে করার জন্য রাজি হয়ে গেলো। নুসরাতের মা-বাবার সাথে আমার মা-বাবার পরিচয় করিয়ে দিলাম। সবার সব ভুল ভেঙে গেলো। ভালো ভাবে বিয়ের কাজ শেষ হয়ে গেলো। এবার কণে বিদায় দেওয়ার পালা। শিউলীকে নিলয়ের হাতে তুলে দিয়ে বললাম — তুই আমার বোনকে দেখে রাখবি। ও যেনো কখনো কোনো কষ্ট না পায়।

শিউলী আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। এবার শিউলীকে গাড়িতে উঠেয়ে দিলাম। আমার মা-বাবা আমার কাছে এসে বলল — তুই কি চলে যাবি ঈশান?

— হুম। এখানে তো আমি অতিথি হয়ে এসেছি। আমাকে তো চলে যেতেই হবে।

— বাবা তোকে পেয়ে আমরা আবার হারিয়ে ফেললাম?

— আমি তো অনেক আগেই হারিয়ে গেছি। তখন তো আমার খোঁজ নাওনি। যাইহোক ভালো থেকো তোমরা।

— বাবা তুই কি এখনো আমাদের উপরে রেগে আছিস?

— আমার আর কোনো রাগ কারোর উপরে নেই। আসি আল্লাহ হাফেজ। ভাবীর থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম।

এই কথা বলে আমি গাড়িতে উঠে বসে পড়লাম। এবার আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি আমার মা-বাবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলো। নুসরাত এবার আমার মা-বাবার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো।

আমার আম্মু নুসরাতের মাথায় হাত ভুলতে ভুলতে বলল — দোয়া করি মা সুখে থেকো। আমার ছেলেটার খেয়াল রেখো।

— দোয়া করবেন মা।

তারপর নুসরাত ও চলে আসলো। ওহ একটা কথা বলা হয়নি আমার দাদি মারা গেছে। আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার কিছুদিন পরেই আমার দাদি মারা যায়।

এবার আমরা সবাই ঢাকা ফিরে আসলাম। তারপর অনেক দিন কেটে গেলো। আমি কাজ করছি হঠাৎ করে আমার ফোন বেজে উঠলো ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি নুসরাত কল দিয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি করে ফোন রিসিভ করলাম।

— নুসরাত বলো।

— একটা খুশির খবর আছে।

— কি সেটা?

— লজ্জা লাগছে খুব?

— আরে বলো।

— তুমি বাবা হতে চলছ।

নুসরাত এই কথা বলে ফোন কেটে দিলো। নুসরাতের মুখে এই কথা শুনে আমিতো মহা খুশি। মিষ্টি কিনে অফিসের সবাইকে খাইয়ে দিলাম। আমিও তাড়াতাড়ি করে বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে দেখি আমার মা-বাবা ও চলে আসছে। তাদের দেখে আমি আরো বেশি খুশি হয়ে গেলাম। আব্বু আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম।

তাদের জিজ্ঞেস করলাম — তোমরা কখন আসলে?

— এইতো কিছুক্ষণ আগেই আসলাম খুশির খবর শুনে কি আর বাড়িতে থাকা যায়? তাই তোর মাকে নিয়ে চলে আসলাম।

— খুব ভালো করছো। ভাবী আসেনি?

— না বাসাতো খালি হয়ে যাবে তাই নিয়ে আসিনি। এখন তুই আর বউমা আমাদের বাসায় চল।

— যাবো আব্বু। অবশ্যই যাবো।

তারপর আমি নুসরাত আমাদের বাড়িতে চলে গেলাম। আমাদের একটা কন্যা সন্তান হয়েছে। খুব মিষ্টি দেখতে। ধিরে ধিরে আমার মেয়ে ও বড় হতে থাকে। এরপর থেকে আমাদের পরিবারে আর কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি। খুব ভালো ভাবেই চলতে থাকে আমাদের জীবন। হাসিখুশি একটা পরিবার হয়ে উঠে। আর গল্প টা এখানেই শেষ করে দিচ্ছি।

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে