#ভুল_বুঝনা_আমায়
[পর্ব – ৯]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
নিলয় আর তার পুরো পরিবারকে আমার বাসায় দেখে আমি একটু অবাক হয়ে গেলাম। এবার আমি তাদের সামনে যেতেই নিলয়ের আম্মু বলল — বাবা আমি তোমার কাছে আসছি।
— জ্বী আন্টি বুঝতে পারছি। কিন্তু আপনি কেন এতো কষ্ট করে আসতে গেলেন? আমাকে বললেই তো আমি নিজেই চলে যেতাম আপনাদের বাসায়।
— আসলে বাবা আমি তোমাকে দাওয়াত করতে আসছি।
— কিসের দাওয়াত?
— নিলয়ের বিয়ে ঠিক করছি। আগামী শুক্রবার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করছি। তোমাদের সবার দাওয়াত।
— এটার জন্য বাসায় না এসে ফোনে বললেই হতো। আর সব থেকে বড় কথা হলো নিলয় তো আমাকে কিছুই বলল না।
— নিলয়কে না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করে ফেলছি। বিয়ের সব কিছু ঠিকঠাক করেই ওঁকে বললাম।
— তা বিয়ে কোথায় ঠিক করলেন আন্টি?
— গোপালগঞ্জ।
গোপালগঞ্জের নাম শুনে বুকের ভিতর টা কেমন যেনো কেপে উঠলো। কারণ গোপালগঞ্জ আমার গ্রামের বাড়ি। আমি চুপচাপ হয়ে গেলাম। আর গোপালগঞ্জ তো আর ছোট কোনো এলাকা না। আমি কেন এসব নিয়ে ভাবছি?
আন্টি বলল — কি হলো বাবা কথা বলছো না কেন তুমি?
— কিছু না আন্টি। আচ্ছা ঠিক আছে বসেন খাবার খেয়ে এক বারে যাবেন ন
— না বাবা আমাদের আরো কিছু কাজ আছে। কেনাকাটাও বাকি আছে এখনো। অন্য একদিন এসে থাকব তোমাদের বাসায়।
— ঠিক আছে আন্টি।
আন্টি আমাদের দাওয়াত দিয়ে চলে গেলেন।
তারপর আমিও আবার অফিসের কাজ বাসায় করতে শুরু করলাম।
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসলো। বিয়েতে বরের সাথে আমাদের সবাইকেই যেতে বলছে। তো সবাই রেডি হয়ে নিলয়ের বাসার দিকে চলে গেলাম। আমরা যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই সবাই কণের বাড়ি যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়ি ছেড়ে দেয়। রাস্তা যতই এগুচ্ছে ততই আমার কাছে কেমন যেনো লাগছে। কতোদিন পরে নিজের গ্রামে যাচ্ছি। কিন্তু পরিবারের কারোর সাথেই দেখা হবেনা। আমি চাই তাদের সাথে যেনো আমার আর কোনো দেখা না হোক। ৪ ঘন্টা পরে আমরা গোপালগঞ্জ পৌছে গেলাম। গাড়ি এবার যতই যাচ্ছে মনে হচ্ছে গাড়ি আমার বাড়ির দিকে যাচ্ছে। সেই পরিচিত রাস্তা। পরিচিত গাছপালা, কিছুক্ষণ পরে দেখি গাড়ি আমার বাসার সামনে গিয়ে দাড়ালো। তখন আমার বুকের ভিতর কেপে উঠলো। তাহলে শেষে আমি আমার বাড়িতে চলে আসলাম? কিন্তু এই বাড়িতে মেয়ে তো শিউলী ছাড়া আর কেউ নাই। তাহলে কি নিলয়ের বিয়ে শিউলীর সাথে হচ্ছে? আমি ভিতরে গেলে তো সবাই সব কিছুই যেনে যাবে। হয়তো বিয়ে টাও ভেঙে যাবে। আমি চাইনা আমার জন্য আর কারোর কোনো ক্ষতি হোক। এমনি আমার জন্য সবাই একবার অনেক কষ্ট পেয়েছে আমি আর চাইনা আমার জন্য আর কারো কোনো ক্ষতি হোক। আমি গাড়ির ভিতরে বসে রইলাম। সবাই গাড়ি থেকে নেমে গেলো। আমি গাড়ি থেকে নামছিনা দেখে নুসরাত আমাকে বলল — কি হলো গাড়ি থেকে নামছ না কেন? আর তখন থেকেই দেখছি তুমি যেনো কিছু একটা নিয়ে চিন্তিত! কি হইছে তোমার বলবে একটু? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
— কিছু হয়নি তুমি যাও আমি আসছি। আমার কিছু কাজ আছে কাজ শেষ করেই চলে আসছি।
— এখন আবার কি কাজ তোমার?
— তুমি যাও প্লিজ আমি আসছি একটু পরেই।
— ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসবে।
এই কথা বলে নুসরাত চলে গেলো। এবার নিলয় চলে আসলো। নিলয় এসে বলল — কিরে তুই এখনো গাড়িতে বসে আছিস কেন?
— আমি একটু পরে আসছি তোরা যা।
— না তোকে ছাড়া আমি ভিতরে যাচ্ছি না। তুই আমার সাথে ভিতরে যেতে হবে। তোকে ছাড়া আমি এক পা ও সামনে যাবোনা।
— দোস্ত প্লিজ যা। আমি পরে আসছি।
— না তুই এখন আয়। কোনো কথা বলবিনা। ফাস্ট আয়। সবাই দাঁড়িয়ে আছে আমাদের জন্য।
কি আর করার। ওর জোরাজোরির কাছে হার মানলাম। তবে এক পা যতই সামনে দিচ্ছি ততই আমার হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে। কি হবে তা ভাবতেই খারাপ লাগছে। আমার জন্য আবার এই বিয়ে টা ভেঙে যাবেনা তো? একটু সামনে যেতেই দেখি আমার ভাবী দাঁড়িয়ে আছে। ভাবীকে দেখে একটু অবাক হলাম। ভাবীকে না বাসা থেকে বের করে দিয়েছে তাহলে ভাবী এখানে কি করে এলো। তাহলে তারা কি আবার ভাবীকে নিয়ে আসছে? যাক ভালোই হলো। তবে ভাবীকে দেখে ইচ্ছে করছে এক দৌড়ে ভাবীর কাছে চলে যাই। কিন্তু আমি নিরুপায়। চাইলেও পারছিনা। এবার বরযাত্রীর সাথে আমি এগুতে থাকি। আমি সবার থেকে নিজেকে আড়ালে রাখার চেষ্টা করছি। হঠাৎ করে ভাবীর চোখ আমার উপরে পড়ে। ভাবী আমাকে ভালো করে চিনতে পারছেনা এতো মানুষের ভিড়ে। ভাবী আমার দিকে অনেক্ষন তাকিয়ে রইলো এবার ভাবী এক দৌড়ে আমার কাছে এসে কান্না করতে করতে বলল — ঈশান ভাই আমার, তুমি এতো দিন কোথায় চিলি?
এই দিকে আমি নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম ভাবী এবার মা-বাবাকে ডাকতে থাকে। অন্যদিকে সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কেউ কিছুই বুঝতে পারছেনা। এরা কি করে আমাকে চিনে। সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
মা-বাবা এক সাথে চলে আসে। বাবা আমাকে দেখেই কান্না করে দিলো আর আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল — বাবা তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস। তোকে বিশ্বাস না করে তোর উপরে অনেক অত্যাচার করছি আমরা। সেদিন তোর কথা আমাদের বিশ্বাস করা উচিৎ ছিলো।
— আমার কাছে ক্ষমা ছেয়ে আমাকে আর ছোট করবেন না। আমাকে আর অপরাধী বানাবেন না।
এবার আম্মু আমার কাছে এসে বলল — বাবা ঈশান আমি তোর সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করছি। তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস বাবা।
— আমি তো একজন দর্শক আপনারা কেন আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছেন? আমি তো অপরাধী।
এমন সময় হঠাৎ করে কেউ আমার পায়ে ধরে কান্না করতে শুরু করে দিলো। তাকিয়ে দেখি শিউলী।
— পা ছাড়ুন।
— না আগে বল তুই আমাকে ক্ষমা করেছিস? আমি তোর সাথে অনেক অন্যায় করছি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে। আমি সেদিন অন্ধ হয়ে গেছিলাম। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে ঈশান।
আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। আমি ভাবীকে বললাম — ভাবী কিছুই বুঝলাম না?
— আমি বলছি,,,
তুমি এই বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পরে আমাকেও এই বাড়ি থেকে বের করে দেয়। কিন্তু আবার কিছুদিন পরেই আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। তারপর আমি সব সত্যি সবার সামনে নিয়ে আসি। আর শিউলীও নিজের ভুল বুঝতে পারে আর সে সব সত্যি কথা মা-বাবার কাছে বলে দেয়। সে সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেই। ও নিজের ভুল বুঝতে পারে। তুমিও ওঁকে ক্ষমা করে দাও ঈশান।
শিউলী এখনো আমার পা ধরে কান্না করছে। আমি শিউলীকে দাঁড় করিয়ে বললাম — আমি তোকে সব সময় নিজের বোনের মতো ভালোবাসতাম। কখনো তোর দিকে খারাপ নজরে তাকাইনি। আর তুই আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার পরিবার থেকে আমাকে ধুরে রাখলি। যে মা-বাবা আমাকে নিয়ে গর্ব করত তাদের কাছে আমাকে খারাপ বানিয়ে দিলি। সবার কাছে আমাকে তুই খারাপ বানিয়ে দিলি। আমি তো তোর কোনো ক্ষতি করিনি। তুই আমার জীবন টাই নষ্ট করে দিয়ে চিলি। পুরো কলেজে আমার নামে মিথ্যে বলে সবার কাছে আমাকে খারাপ বানিয়েছিস৷
— প্লিজ ঈশান আমাকে তুই ক্ষমা করে দে ভাই। আমি জানি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য আমি না তাও তোর কাছে আমি ক্ষমা চাইছি।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে ভাই।
চলবে??
সবাই গঠনমূলক মন্তব্য জানাবেন।