#ভুল_বুঝনা_আমায়
[পর্ব – ৮]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
হাসপাতালের সামনে যেতেই আমার বুকের ভিতর টা কাপতে শুরু করে দিলো। খুব ভয় লাগছে। আমি হাসপাতালের ভিতরে যেতেই দেখলাম আংকেল আর আন্টি দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাড়াতাড়ি করে আংকেলের কাছে গিয়ে বললাম — আংকেল নুসরাতের কি হয়েছে?
আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে আংকেল ঠাস করে আমার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। আমি হতবাক হয়ে আংকেলের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
আংকেল আমাকে বলল — সব কিছুই তোমার জন্য হইছে। আমার মেয়ের যদি আজ কিছু হয়ে যেতো? নিজেকে খুব মহান ভাবো তাইনা?
আমি মাথা নিচু করে আংকেলের কথা গুলো শুনলাম শুধু কিছু বললাম না। আংকেল আবার বলল — ঈশান নুসরাত আমার এক মাত্র মেয়ে। আমি নুসরাত কে অনেক ভালোবাসি। তুমি নুসরাত কে ভালোবাসো আমাকে বললে কি আমি তোমাদের কিছু বলতাম? তোমার মতো ছেলে পাওয়া তো আমার মেয়ের জন্য ভাগ্য।
— আংকেল।
— দেখো ঈশান আমার মেয়ে কাকে পেলে সুখে থাকবে আমি সেটাই চাই। আমার মেয়েকে আমি তোমার হাতে তুলে দিতে চাই আসা করি তুমি আমার কথা রাখবে।
এমন সময় একটা নার্স এসে বলল — রোগীর জ্ঞান ফিরছে আপনারা চাইলে দেখা করে আসতে পারেন।
আংকেল আমাকে বলল — যাও বাবা আমার মেয়ের সাথে দেখা করে আসো।
আমি আর কোনো কথা না বলে নুসরাতের কেবিনের দিকে চলে গেলাম। কেবিনের ভিতরে যেতেই নুসরাত আমাকে দেখে নিজের মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আমি নুসরাতের কাছে গিয়ে কান্না মাখা গলায় বললাম — এসবের মানে কি নুসরাত? তোমার যদি কিছু হয়ে যেতো তখন কি হতো?
— তুমি তো খুসি হতে আর কি? তুমি তো এটাই চাইছো যাতে আমি মরে যাই।
— একদম চুপ। এসব কথা আর কখনো বলবেনা।
— কেন?
— কারণ আমিও তোমাকে ভালোবাসি।
— সত্যি?
— হুম।
নুসরাত এবার ঈশান কে জড়িয়ে ধরে। ঈশান ও নুসরাতকে জড়িয়ে ধরে খুব শক্ত করে। এমন সময় আংকেল আন্টি ভিতরে চলে আসে। আংকেল আন্টি আসার শব্দ শুনে দুজনেই লজ্জা পেয়ে যায়া। ঈশান লজ্জা পেয়ে কেবিন থেকেই বেরিয়ে গেলো। পরের দিন নুসরাতকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলো। নুসরাত আর আমাকে এক সাথে বসিয়ে রেখে আংকেল বলল — বাবা ঈশান তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।
— কি কথা আংকেল?
— আমি তোমার আর নুসরাতের বিয়ে টা দিয়ে দিতে চাইছি। আমি চাই তোমরা বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করো।
— আংকেল আর কয়েক মাস পরে আমাদের পরিক্ষা। এখন বিয়ে করা কি ঠিক হবে? এতে আমাদের পড়াশোনার ক্ষতি হবে।
ঠিক আছে তাহলে তোমাদের পরিক্ষার পরেই তোমাদের বিয়ে হবে।
আমি নুসরাতের দিকে তাকাতেই নুসরাত একটা মুচকি হাসি দিলো। আমি রুমে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পরে নুসরাত আমার রুমে চলে আসে।
— তুমি এই সময় এখানে?
— আসতে মানা নাকি? এই রুমে তো কিছুদিন পরে আমিও থাকবো।
— থাকবে। সেটা কিছুদিন পরে এখন না। এখন নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
— না একটা দাও।
— কি দেবো?
— বুঝেনা। কিস দাও।
এবার আমি নুসরাতের কপালে একটা চুমু দিলাম। দেখতে দেখতে আমাদের পরিক্ষা চলে আসলো। খুব ভালো ভাবেই পরিক্ষা দিলাম দুজনেই। পরিক্ষার রেজাল্ট ও খুব ভালো হয়েছে আমাদের।
আংকেল আমার কাছে এসে বলল — ঈশান এবার তোমাদের বিয়ে টা দিয়ে দিতে চাই।
— আপনি যেটা ভালো বোঝেন।
— তুমি কি তোমার পরিবার কে জানাবে?
— আংকেল এখন আমার পরিবার বলতে শুধুই আপনারা আছেন। আমার অন্য কোনো পরিবার নেই। তো আর কাওকে জানানোর প্রয়োজন মনে করিনা। যে পরিবার আমাকে অবিশ্বাস করে বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করছে তারা আমার কিসের পরিবার?
— ঠিক আছে বাবা। তাহলে আগামীকাল বিয়ে কাজ শুরু করি।
— ঠিক আছে আংকেল।
— পরের দিন কোনো ঝামেলা ছাড়াই আমার আর নুসরাতের বিয়ে হয়ে যায়। তেমন বড় করে অনুষ্ঠান করা হয়নি। নাহলে আমার সকল পাঠক/পাঠিকাদের ইনভাইট করতাম। যাইহোক। বিয়ের সব কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলো। বিয়েতে শুধুই আমার আর নুসরাতের কয়েকজন বন্ধু আসছে। নিলয় ও আসছে। ভালোই ভালোই বিয়ে টা হলো। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেলো। বাসর ঘরে নতুন বউ অপেক্ষা করছে আমার জন্য। আর এই দিকে আমার বন্ধুরা আমাকে যেতেই দিচ্ছেনা। আল্লায় ভালো জানেন আমার কপালে কি আছে আজ? ভালোবাসা নাকি দুঃখ! নিলয়কে বললাম — দেখ ভাই তোরা তো জানিস নুসরাত কতোটা রাগী। এতো লেট করলে আমার খবর আছে।
— বুঝতে পারছি বউ পেয়ে এখন বন্ধুদের ভুলে গেলি?
— আরে দূর কি বলিস? আসলে রাত তো অনেক হচ্ছে।
— ঠিক আছে চল তোকে দিয়ে আসি।
এবার ওরা আমার সাথে আমার বাসর ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। দরজার মধ্যে হালকা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেলো। আমার বন্ধুরা এক ধাক্কা দিয়ে আমাকে বাসর ঘরের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে বাহিরে দরজা বন্ধ করে দিলো। আমিও ভিতর থেকে দরজার লক লাগিয়ে দিলাম। কারণ এই গুলোর উপরে আমার কোনো বিশ্বাস নেই। খাটের সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। শুনেছি বাসর ঘরে নাকি বউ এসে বর কে সালাম করে এখন দেখি আমার বউ এখনো খাটের উপরে বসে আছে। আমি খাটের কাছে গিয়ে বললাম — এই তুমি আমাকে সালাম করলে না কেন?
নুসরাত নিজে নিজে তার ঘোমটা সরিয়ে আমার পাঞ্জাবীর কলার ধরে বললে — তুই এতোক্ষণ কোথায় চিলি? কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করে বসে আছি আমি।
— বর কে কেউ তুই করে বলে? ছি আবার বরের কলার ধরে আছে।
— তোকে আজ আমি খু*ন করে ফেলবো।
— আল্লাহ বাচাও এই আমি কাকে বিয়ে করলাম। বাসর রাতে হাসবেন্ডকে মারতে চায়।
এবার নুসরাত রুমে লাইট অফ করে দিলো। লাইট অফ করার পরে বুঝলাম কি কোন মারার কথা বলছে। হ বিলাই মারা🙈। বাসর রাত কি আর বলব? দুজনেই মেতে ছিলাম ভালোবাসায়। হারিয়ে গিয়েছিলাম ভালোবাসার অন্য এক দুনিয়ায়। কিছুক্ষণ পরে নুসরাত আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। আমিও ঘুমিয়ে যাই। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি নুসরাত নেই। চোখে অনেক ঘুম তাই আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। একটু পরে কারো ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো। তাকিয়ে দেখি নুসরাত।
— আর কতো ঘুমাবে তুমি?
— রাতে তো ঘুমাতে দাও নি এখনো কি ঘুমাতে দিবে না?
— আর ঘুমাতে হবে না উঠো উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও।
নুসরাতের হাত ধরে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে আসলাম। নুসরাতের কপালে এটা চুমু দিয়ে বললাম — দুজনে এক সাথে আবার গোসল করবো।
— কিহ?
— বুঝোনাই?
— শয়তান।
এই কথা বলে নুসরাত আমার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে রুন থেকে বাহিরে চলে গেলো। আমিও উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। খাবার খাওয়ার জন্য চলে গেলাম। খাবার শুরু করবো এমন সময় আংকেল বলল। থুক্কু উনি তো এখন আমার শ্বশুর। শ্বশুর যে আংকেল বললে পাবলিক কি বলবে?
— ঈশান, আমার বয়েস হয়েছে আমি চাই এবার আমার অফিস টা তুমি সামলাও।
— আমি কি পারবো একা এতো বড় অফিস সামলাতে?
— তুমিই পারবে আমার অফিস সামলাতে।
— ঠিক আছে।
— এখন অফিসে জইন করতে হবে না কিছুদিন যাক তারপর অফিসে জইন হবে।
— ঠিক আছে আংকেল।
নুসরাত রাগী ভাবে তাকিয়ে বলল — ওটা তোমার আংকেল না শ্বশুর হবে। আর শ্বশুর কে আব্বু বলবে ঠিক আছে?
— আচ্ছা ঠিক আছে।
খুব ভালো ভাবেই কেটে গেলো আমাদের কিছুদিন। নুসরাতের সাথে অনেক ঘুরাঘুরি করলাম। আমি অফিসের কাজে জইন করলাম। আব্বু আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন অফিসের বস হিসেবে। দেখতে দেখতে কয়েকমাস কেটে গেলো। হঠাৎ করে আমার বন্ধু নিলয় আমাকে ফোন করে বলল সে আমাদের বাসায় এসেছে। তো আমি অফিসের কাজ শেষ করে বাসায় চলে গেলাম।
বাসায় গিয়ে দেখি নিলয় আর তার পুরো পরিবার আমার বাসায় এসে বসে আছে। আমি সবাইকে দেখে একটু অবাক হলাম।
চলবে??