#ভুল_বুঝনা_আমায়
[পর্ব – ৬]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
সকালে তাড়াতাড়ি করে আমি ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যাবো এমন সময় আংকেল বলল — ঈশান এই ফোন আমি তোমার জন্য নিয়েছি। এটা রাখো। আর ভিতরে একটা সিম আছে। কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবে আমার নাম্বার সেভ করা আছে।
— ধন্যবাদ আংকেল।
— ধন্যবাদ দিতে হবেনা বাবা। তাহলে যাও। সাবধানে যাবে।
আমি সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়বো পাশে তাকিয়ে দেখি নুসরাত মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। নুসরাতকে বিদায় বলে বেরিয়ে পড়লাম। রেল স্টেশনে গিয়ে ট্রেনে টিকেট কেটে ট্রেনে উঠে গেলাম। ৪ ঘন্টার মধ্যে আমি নিজের গ্রামে পৌছে গেলাম। একটা রিকশা নিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে কলেজে পৌছে গেলাম। রিকশা থেকে নামতেই আমার বন্ধু তুহিন আমাকে দেখে এগিয়ে আসে।
তুহিন আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল — কিরে এতো দিন কোথায় চিলি তুই? আর তোর ফোন কেন বন্ধ? তোর কোনো খোঁজ খবর নেই।
— আসলে দোস্ত আমার ফোন হারিয়ে গেছে তাই কারো সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারিনি।
— এতো দিন কোথায় চিলি সেটা তো বল আগে।
এবাত আমি তুহিন কে সব ঘটনা খুলে বললাম। তুহিন আমার কথা শুনে বলল — যাক ভালোই হলো। এখন কি এখানে এক বারে চলে আসলি নাকি?
— নারে আজকেই আমার চলে যাবো। কলেজে আসলাম কিছু কাজ ছিলো।
— কি কাজ?
— আসলে ছাড়পত্র নিতে আসছি। ঢাকা কলেজে ভর্তি হবো। তাই কলেজ থেকে ছাড়পত্র নিতে আসলাম।
— বুঝলাম।
— দোস্ত বাড়িতে সবাই কেমন আছে? মা,বাবা, ভাবী? আর দাদি?
— দোস্ত তোকে কি আর বলবো। তুই বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পরে তোর ভাবীকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে।
তুহিনের মুখে এই কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।
আমি তুহিন কে বললাম — কি বলছিস এসব? ভাবীকে কেন বাসা থেকে বের করে দিবে?
— সবাই বলছে তোর ভাবী নাকি তোকে বাসা থেকে পালিয়ে যেতে বলছে। আর তার সাথে নাকি তোর খারাপ সম্পর্ক ছিলো। তাই সবাই ভাবীকে অপমান করে বাসা থেকে বের করে দিছে। উনি এখন তার বাপের বাড়িতে থাকে।
তুহিনের কথা শুনে আমার চোখের পানি বের হয়ে গেলো। আমার জন্য আমার ভাবীকে বাসা থেকে বের করে দিলো৷ কোনো দোষ না করেও আমার ভাবীকে বাড়ি ছাড়া হতে হলো। ভাবীর জন্য খুব খারাপ লাগছে।
তুহিন বলল — কি আর করার আছে বল? কান্না করে কি করবি। তোর বাসায় যাবি নাকি?
— না ভাই বাসায় যাওয়ার ইচ্ছে টা মরে গেছে। চল কলেজের ভিতরে যাই। আচ্ছা স্নেহা কেমন আছে দোস্ত আছে?
— স্নেহা তো ভালো আছে। সব সময় হাসিখুশি ভাবে থাকে। মনে হয় তোকে ভুলেই গেছে।
আমি আর কোনো কথা বললাম না। সোজা কলেজের ভিতরে চলে গেলাম। ছাড়পত্র নিয়ে অফিস রুম থেকে বের হবো এমন সময় দেখি স্নেহা একটা ছেলের সাথে কথা বলছে। স্নেহাকে অন্য একটা ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে খুব খারাপ লাগছিলো। স্নেহার সাথে কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। তাই ভাবলাম ওর সাথে একটু কথা বলে আসি। তাই স্নেহার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম –স্নেহা কেমন আছো?
স্নেহা আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিজের মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আমি আবার স্নেহা বলে ডাক দিলাম। স্নেহা বলল — আমি কোনো দর্শক এর সাথে কথা বলতে চাইনা। আপনি আমার সামনে থেকে চলে যান। আপনার মুখ দেখতেও আমার খারাপ লাগে এখন।
আমি কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা। অঝোরে চোখের পানি পড়ছে। তুহিন আমার কাছে এসে বলল — এখানে দাঁড়িয়ে আর কতো অপমান সহ্য করবি তুই? চল এখান থেকে।
তুহিন আমাকে টেনে নিয়ে চলে গেলো। এমন সময় আমার ফোন বেজে উঠলো। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি নুসরাত কল দিয়েছে। চোখের পানি মুছে ফোন রিসিভ করলাম।
নুসরাত বলল — সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে হইছে তো?
— হুম।
— আসবেন কখন?
— একটু পরেই চলে আসবো।
–খাওয়া দাওয়া করছেন?
— হুম। আচ্ছা বাসায় আসলে কথা হবে ফোন রাখি।
— হুম সাবধানে আসবেন।
এই কথা বলে নুসরাত ফোন কেটে দিলো। আমি তুহিনের থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। ৪ ঘন্টার মধ্যে ঢাকা পৌছে গেলাম। তারপর একটা রিকশা নিয়ে বাসার সামনে চলে গেলাম। বাসার সামনে গিয়ে দরজার কলিং বেলে চাপ দিতেই আন্টি এসে দরজা খুলে দিলো।
— বাবা ওখানে সব ঠিকঠাক আছে তো?
— আন্টি আমার শরীর টা খুব ক্লান্ত হয়ে আছে। আমার একটু রেস্ট করা দরকার।
— আচ্ছা বাবা যাও তুমি রেস্ট নাও।
তারপর আমি রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। রাতের খাবার খাওয়ার জন্য নুসরাত আমাকে ডাকতে আসলো।
— উঠুন এবার। খাবার তো খেতে হবে নাকি?
— আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা। আপনারা খেয়ে নিন।
— সবাই আপনার অপেক্ষা করে বসে আছে। আসুন।
— আচ্ছা ঠিক আছে আপনি যান আমি আসছি।
— ওকে তাড়াতাড়ি আসবেন।
আমি হাত মুখ ধুয়ে খাবার খেতে চলে গেলাম। সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে সোফায় এসে বসলো। আমিও বসলাম। আমাকে আংকেল বলল — ঈশান ওখানে কোনো সমস্যা হয়নি তো? তোমার বাসায় গিয়ে ছিলে?
— না আংকেল। ওখানে একটা সমস্যা হয়ে গেছে। আমার জন্য আমার ভাবীকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে।
— কি বলছো তুমি?
— হুম আংকেল। আমার কাছে খুব খারাপ লাগছে। আমার ভাবী তো কোনো অন্যায় করেনি। আমার ভাবীকে কেন বিনাদোষে বাসা থেকে বের হতে হলো? সব আমার জন্য হলো।
— বাবা নিজেকে দোষ দিয়না। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন যাও ঘুমিয়ে পড়ো। কাল নুসরাতের সাথে কলেজে যাবে। নুসরাত তোমাকে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করিয়ে দিবে।
— আপনাদের কি বলে যে ধন্যবাদ দেবো সেটার ভাষা আমার জানা নেই। আমি তো ভাবছি আমার পড়াশোনা এখানেই শেষ হয়ে যাবে।
— বোকা ছেলে। আমি তো তোমার বাবার মতো। বাবাকে ধন্যবাদ দিতে হয় নাকি? এখন রুমি চলে যাও।
তারপর আমি নিজের রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে খাটের উপরে বসতেই নুসরাত আমাকে বলল — আসতে পারি?
— হুম আসুন।
— স্নেহার সাথে দেখা হইছে?
— হুম। (মন খারাপ করে বললাম)
–ওহ, তো কথা হইছে?
— না।
— কেন?
এবার আমি নুসরাতের কাছে সব কিছু বললাম। নুসরাত আমার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো। একটু পরে নুসরাত চলে গেলো। আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিলাম। তারপর আমি আর নুসরাত নাস্তা করে আংকেল আন্টির থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। রাস্তায় গিয়ে দেখি কোনো গাড়ি নেই। অনেক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পরে একটা রিকশা দেখতে পেলাম। রিকশার মধ্যে আগে নুসরাত উঠে বসে। নুসরাতের পাশে বসতে আমার কাছে কেমন যেনো লাগছে। তাই নুসরাত আর আমার মাঝে একটু গ্যাপ করে বসলাম। এমন ভাবে বসে আছি যে কিছুর সাথে ধাক্কা খেলেই আমি নিচে পড়ে যাবো। আমার এমন অবস্থা দেখে নুসরাত মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। নুসরাত এবার বলল — ঠিক করে বসুন। আবার রিকশা থেকে পড়ে যেতে পারেন।
— না আমি ঠিক আছি।
এই কথা বলে চুপচাপ হয়ে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা কলেজের কাছে পৌছে গেলাম। নুসরাত আমাকে নিয়ে সোজা অফিস রুমে নিয়ে গেলো। ভর্তির সব কাজ শেষ করে নুসরাত ক্লাসে চলে যায়। আসলে স্যার নুসরাতকে ক্লাসে চলে যেতে বলছে। আমাকে অফিসেই বসে থাকতে বলল। স্যার আমাকে নিয়ে ক্লাসে যাবে আর সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে। একটু পর স্যার আমাকে নিয়ে ক্লাসের দিকে চলে গেলো। আমি ক্লাসের ভিতরে যেতেই আমার দিকে সবাই তাকিয়ে রইলো। যেনো তারা একটা ভুত দেখতে পারছে তাদের চোখে সামনে।
চলবে?