#ভুল ৪র্থ পর্ব
#jannat_Nur
সিরাত এত পরিমাণে কান্না করছিল আমিরুল ইসলাম তাকে সামলাতে পারছে না। ছেলেকে নিয়ে এসে কি ভুল করল এটাই ভাবতেছে আমিরুল ইসলাম। আপাতত দু-তিন বছর তার ভাইয়ের বউদের কাছে সিরাতকে রেখে আসা উচিত ছিল এমনটাই বসে বসে ভাবছিল আমিরুল। তখন দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো, দরজা খুলে দেখে তার বন্ধু সাবের আহমেদ বয়স্ক একজন মহিলাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাবের আহমেদ মহিলার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো আমিরুলকে।
বলেছিলি না সিরাতের জন্য একজন আয়া দেখে আনতে, এই আন্টিকে নিয়ে আসলাম! আন্টিটা অনেক যত্ন সহকারে বাচ্চা লালন পালন করে।
আমিরুল ইসলাম মহিলা দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকলেন বয়স হবে ৫০ এর উপরে এই মহিলা কি ঠিকমতো বাচ্চা সামলাতে পারবে! আমিরুল ইসলামের তাকানো দেখে মহিলাটি বলল….
I[ understand you may think I’m old and I can’t handle your son well don’t worry I’ll do my duty properly My name is Lily Biden May I meet you]
বুঝেছি তুমি হয়তো ভাবতে পারো আমি বুড়ো হয়ে গেছি, আমি তোমার ছেলেকে ভালোভাবে সামলাতে পারব না, ভেবো না আমি আমার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারব। আমরা কি পরিচিত হতে পারি? আমার নাম লিলি বাইডেন।
আমিনুল ইসলাম মহিলার কথা শুনে সন্তুষ্ট হলেন! মহিলার কথায় তার দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি ফুটে উঠেছে। আমিরুল ইসলামকে মুগ্ধ করেছে লিলি বাইডেনের ব্যবহার। লিলি বাইডেনের সাথে পরিচিত হয়ে সিরাতকে তার কোলে তুলে দিলেন আমিরুল ইসলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই সিরাতের কান্না থেমে গেল পরম যত্নে সিরাতকে খাবার খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন আয়া। এই তিন দিনে বাবা হয়ে যা করতে পারেনি আমিরুল ইসলাম, তা এই মহিলা কিছুক্ষণের মধ্যে করে ফেললেন। আমিরুল ইসলাম বুঝতে পারলো মেয়েরা হলো মায়ের জাত তাদের বয়স যতই হোক তাদের ভিতরে মায়ের মমতাটা সবসময় অটুট থাকে! যা দিয়ে তারা বাচ্চাদের বশ করতে পারে। পুরুষ মানুষ চাইলেও তা পারে না সে যত চেষ্টাই করুক।
সময় চলতে থাকলো সময়ের গতিতে, আমিরুল ইসলাম ব্যস্ত হয়ে পড়ল তার বিজনেস নিয়ে। সিরাতের দেখাশোনা ভালোভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে লিলি বাইডেন। এদিকে সুফিয়া বেগম পাগল প্রায় হয়ে এয়ারপোর্টের চারদিকে ঘোরাঘুরি করে আর সবাইকে অনুরোধ করে তাকে আমেরিকা নিয়ে যেতে। এখানে সেখানে ঘোরাঘুরি আর বাচ্চা ছেলে দেখলে তাদেরকে কোলে নিতে চাওয়া এভাবেই কাটছিল সুফিয়া বেগমের জীবন। মানুষের কাছ থেকে চেয়ে খেয়ে কোনো রকম জীবনটা বাঁচিয়ে রাখে সে। মানুষের চোখে সে পাগল হলেও তার মাথার ভিতর একটাই ভাবনা সে যেভাবেই হোক আমেরিকায় যাবে, তার ছেলেকে নিয়ে আসবে।
এভাবেই তিন বছর কেটে গেল, আমিরুল ইসলাম পণ করেছে সে বাংলাদেশের ফিরবেন না। আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করবে। ভাইবোনদের মায়ের সাথে ফোনে কথা হয়, তার মা অনেক বার বলছে বাংলাদেশে আসতে সে আসেনি। এখন সিরাতের বয়স ৬ বছর তাকে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে! স্কুলে নিয়ে যাওয়া আসা করে লিলি বাইডেন। পরম মমতায় মায়ের স্নেহ দিয়ে সিরাতকে বড় করে তুলছে লিলি বাইডেন। হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়ে লিলি বাইডেন, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার দুজন ছেলে মেয়ে ছিল তারা এসে নিয়ে যায় তাদের মাকে। আবার দুশ্চিন্তা গ্রাস করে আমিরুল ইসলামকে ছেলেকে দেখাশোনা করার মত নির্ভরযোগ্য মানুষ পাওয়া মুস্কিল। লিলি বাইডেন যেভাবে সিরাতকে আগলে রেখেছিল সেভাবে আগলে রাখার মত বিশ্বাসযোগ্য মানুষ কোথায় পাবে। লিলি বাইডেনের কাছে হেল্প চাইলো আমিরুল ইসলাম, তার বাসায় গিয়ে বলল আন্টি আপনার সাথে চেনা চেনা ভালো কেউ থাকে তাহলে তাকে আমার ছেলের জন্য এনে দেন। লিলি বাইডেন এর মেয়ে তার মাকে বলল, তার একজন বান্ধবী আছে পাকিস্তানি সেও আয়ার কাজ করে তাকে বলে দেখতে পারে। আমিরুল ইসলাম লিলি বাইডেনের মেয়েকে তার ফোন নাম্বার দিয়ে আসে যোগাযোগ করার জন্য। পরের দিন লিনি বাইডেনের মেয়ে সারলি বাইডেন তার ফ্রেন্ড হুমায়রাকে নিয়ে আমিরুল ইসলামের ফ্ল্যাটে আসে।
আমিরুল ইসলাম বলেছিল সন্ধ্যা সময় আসলে তাদের দেখা হবে। সারলি বাইডেন সে কথা মত হুমায়রাকে নিয়ে সন্ধ্যা সময় আসে আমিরুল ইসলামের ফ্ল্যাটে। হুমায়রাকে দেখে আমিরুল ইসলামের কিছুটা অপছন্দ হয়। কারণ হুমাইরা দেখতে সুন্দরী এবং ইয়াং। এমন একটা মেয়েকে একা বাসায় রাখতে নিজের কাছে সংকোচ বোধ হচ্ছে! বাট সিরাতের জন্য তো রাখতে হবে। লিলি বাইডেন অনেক বিশস্ত ছিল তার মেয়ে যখন বলছে হুমায়রাও ভালো হতে পারে। এটা ভেবে আমিরুল ইসলাম হুমায়রাকে রাখবেন বলে মনস্থির করলেন। হুমায়রার সাথে টুকটাক পরিচয় হলো আমিরুল ইসলামের। হুমায়রা বাংলা বলতে পারে অনেকটা, সে তার জীবনের কিছু দুঃখজনক ঘটনা বললেন আমিরুল ইসলামের সাথে।
পাকিস্তানের পেশোয়ারের মেয়ে আমি, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। তারপর আমার ফেসবুকে রিলেশন হয় আমেরিকার নিউ জার্সি শহরেরই পাকিস্তানি বংশদ্ভূত রিদওয়ান রনির সাথে। তার প্রেমের টানে আমি আমেরিকায় চলে আসি, এবং আমরা বিয়ে করি। বিয়ের দুই বছরের পর থেকে বুঝতে পারি রিদওয়ান রনি বদলে যেতে থাকে, আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে থাকে। ভালবাসার মানুষ যখন বদলে যায় তখন তার সাথে সংসার করা যায় না।
ভালোবাসার মানুষ যখন বদলে যায় তখন তার সাথে সংসার করা যায় না, এই কথাটা আমিরুল ইসলামের বুকের ভেতর লাগলো। সে তো কত ভালোবেসে সুফিয়াকে বিয়ে করেছিল, সে কি করলো তাকে ধোকা দিয়ে পর পুরুষের সাথে রাত কাটালো! তাইতো তার সাথে সংসার করতে পারলো না সে। এটা ভাবতে ভাবতে আমিরুলের চোখের কোনে পানি চলে আসলো।
হুমায়রা সেটা খেয়াল করে বললেন আপনার কি কোন অতীত মনে করিয়ে দিলাম? তাহলে আমি আই এম স্যরি।
আরে না না, কোন অতীত মনে হয়নি! আপনি বলতে থাকুন, আপনার কথা শুনে কষ্ট লাগলো তাই এমনটা হয়েছে।
হুমায়রা আবার বলতে শুরু করল, আমি আমার দেশ ছেড়ে বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে তার কাছে চলে আসি। তার বদলে যাওয়া, আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করা সেটা আমার সহ্য হয়নি! সে আমার গায়ে হাত তুলতো মারধর করতো। তাই আমাদের ডিভোর্স হয়।
আপনি কি আর পাকিস্তান ফিরে যেতে চাননি?
না আমি আর কিভাবে দেশে ফিরে যাব, বাবা-মাকে কষ্ট দিয়ে চলে আসছি এখন যদি স্বামী ভালো হতো তাকে নিয়ে যেতাম সেটা অন্য কথা ছিল, তাই আর যাওয়া হয়নি।
আমিরুল ইসলাম ভাবছেন এ দুনিয়ায় অনেকেরই অনেক কষ্ট আছে সবার কষ্টই বুকে চাপা দেওয়া। হুমায়রা কথাবার্তা ব্যবহার সবকিছুই ভালো ছিল! আমিরুল ইসলাম প্রথম কিছুটা চিন্তাই ছিল এখন সে ভাবছে না মেয়েটা তো ভালোই তাকে নিয়ে শুধু শুধু চিন্তা করা হয়েছে। কিন্তু আমিরুল ইসলাম সবসময় মেয়েদের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলে। সে এটাই ভাবে যাকে এত ভালবেসে বিয়ে করে এত বছর সংসার করার পরেও তার সাথে প্রতারণা করেছে আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারবে না এ জীবনে। কিন্তু হুমায়রার প্ল্যান ছিল অন্য কিছু। যখন প্রথম সে আমিরুল ইসলামের বাসাতে আসে তখনই তার মনে হয় আমিরুল ইসলামকে সে যদি হাত করতে পারে সে অনেক টাকার মালিক হয়ে যাবে। কারণ আমিরুল ইসলামের ফ্যামিলিতে আর কেউ নেই, শুধু একটি মাত্র সন্তান। সিরাতকে সে অনেক ভালোবাসা দেখায় আমিরুল ইসলামের সামনে। প্রকৃতপক্ষে হুমায়রা ভালো মেয়ে না। যে ঘটনা আমিরুল ইসলামের কাছে সে বলছিল সেটা আংশিক সত্য আর বেশিরভাগ বানোয়াট। হুমায়রা পাকিস্তান থেকে আমেরিকাতে চলে আসে কোটিপতি হবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে। রিদওয়ান রনি নামে কোন ছেলের সাথে তার প্রেম ভালোবাসাটা বিয়ে হয়নি। সে তার এক বন্ধুর সাথে মা-বাবাকে না জানিয়ে আমেরিকাতে চলে আসে, সেই বন্ধুর সাথে তার শারীরিক সম্পর্ক ছিল। তারপর আমেরিকা এসে এদেশের এক সিটিজেনকে বিয়ে করে তার টাকা পয়সা সব কিছু নিজের নামে করে নিয়ে সেই লোককে নারী নির্যাতন মামলা দিয়ে ডিভোর্স নিয়ে নেয়। তার নেশাই হল পুরুষ মানুষদেরকে আসক্ত করে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া সে কারণেই আয়ার কাজটা বেছে নিয়েছে। যখন তার বান্ধবীর কাছ থেকে জানতে পারে আমিরুল ইসলামের বাসায় তার মা আগে আয়ার কাজ করতো এখন তার মা করতে পারবেনা! আমিরুল ইসলাম সম্পর্কে জেনে শুনে হুমাইরা তার বাসায় যেতে রাজি হয়। এবং আমিরুল ইসলাম ইম্প্রেস করতে সুন্দর করে মনগড়া কাহিনী বলে। আর লিলি বাইডেনের মেয়েও জানতো না হুমায়রা বাজে স্বভাবের মানুষ। এক জায়গায় ঘুরতে গিয়ে সারলি বাইডেনের সাথে হুমায়রার পরিচয় হয়, সেখান থেকে হুমায়রা সারলির সাথে ফ্রেন্ডশিপ করে।
প্রায় এক বছর ধরে হুমায়রা আমিরুল ইসলামের বাসায় আছে,কখনো আমিরুল ইসলামের সাথে তেমন বেশি কথাবার্তা বলতে পারেনি। আমিরুল ইসলাম সবসময় হুমায়রাকে এড়িয়ে চলে, দরকার ব্যাতিত হুমায়রার সাথে কথা বলে না। হুমায়রা তার প্ল্যান সাকসেসফুল না করতে পেরে তার বয়ফ্রেন্ড এডামকে বললেন আমি তো পারতেছি না এই লোকটাকে হাতের মুঠোয় নিতে! আমার কোন প্ল্যান কাজে লাগছে না, একে বশ করতে পারছি না। তুমি একটা প্ল্যান করো যেন এই লোকটাকে ঘায়েল করতে পারি।
এডাম হুমায়রাকে বলল তার সাথে পার্কে দেখা করতে! হুমায়রা সিরাতকে ছাড়া যেতে পারবে না তাই সিরাতকে সাথে নিয়ে পার্কে গেল এডামের সাথে দেখা করতে। এডাম হুমায়রাকে বলল, সোজা পথে যখন মিস্টার পথে আসছে না, তার জন্য তো বাঁকা পথ বেছে নিতেই হয়। হুমায়রা জানতে চাইলো কি করতে হবে তাড়াতাড়ি বল, আমি বেশি সময় থাকতে পারবো না। সিরাতের বয়স সাত বছর সিরাত তাদের সব কথায় বুঝতে পারবে। সিরাতকে দেখে এখন এডাম বলল তুমি এই বাচ্চাকে সাথে নিয়ে আসছ কেন এ সব শুনে তার বাবাকে বলে দেবে। হুমায়রা সিরাতকে বলল সিরাত বাবা তুমি ওখানে গিয়ে বস দেখো বাচ্চারা খেলা করছে তাদের সাথে একটু খেলা করো, আমরা একটু পার্সোনাল কথা বলব। সিরাত হুমায়রার কথা মত দুইটা বাচ্চা বসে ছিল তাদের কাছে গেল। আর এই ফাঁকে এডাম হুমায়রাকে প্ল্যান মোতাবেক কাজ করার জন্য বলে দিল, হুমায়রা বলল ঠিক আছে আমি তাই করবো। এডাম হুমাইরার হাতে নেশা জাতীয় একটা মেডিসিন দিয়ে বলল, এটা ঠিক ভাবে খাইয়ে দিও তারপরে কাজ হয়ে যাবে। তুমি যা করতে চাও তাই করতে পারবে, ঠিক আছে তাহলে আমি এখন যাচ্ছি বলে হুমায়রার কাছ থেকে এডাম বিদায় নিল।
চলবে….
#ভুল ৫ম পর্ব
#jannat_Nur
হুমায়রা নেশা জাতীয় মেডিসিন হাতে পেয়ে ভাবতে থাকলো সোজা পথে যখন কাজ হয়নি অবশেষে আঙ্গুল বাঁকা করতেই হলো মিস্টার আমিরুল! এখন দেখবে কিভাবে আমার হাত থেকে তুমি রক্ষা পাও। হুমায়রা মেডিসিনটা খুব যত্ন করে রেখে দিল।
রাতে যখন আমিরুল ইসলাম বাসায় আসছে হুমায়রা তার সামনে উপস্থিত হয়েছে খুব সাজসজ্জা করে। আমিরুল ইসলাম তাকিয়ে দেখে আজ হুমায়রা অনেক সাজগোজ করেছে। আমিরুল ইসলাম দ্বিতীয় বার তার দিকে না তাকিয়ে সোজাসুজি ড্রয়িং রুমে চলে গিয়ে টিভি অন করে নিউজ দেখছিল। হুমায়রা আমিরুলের কাছে এসে বসলো।
হুমায়রাকে কাছে বসতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, সিরাত কি ঘুমিয়ে গেছে?
না সিরাত এখন পড়তেছে।
আচ্ছা আপনি তাকে একটু নিয়ে আসেন আমার কাছে।
হুমায়রা গিয়ে সিরাতকে নিয়ে আসলো, আমিরুল ইসলাম সিরাতকে বসিয়ে কপালে চুমু দিয়ে জিজ্ঞেস করল আব্বু তোমার লেখাপড়া কেমন চলছে! ভালোভাবে লেখাপড়া করছো তো?
ইয়েস পাপা আমি ভালোভাবে পড়াশোনা করছি!
তুমি বলেছিলে আমাকে স্পোর্টস হোন্ডা কিনে দিবে, এখনো কিনে দিচ্ছ না কেন।
আরে বাবা তোমাকে এখন হোন্ডা কিনে দিলে চালাতে পারবেনা, তোমার বয়স কত মাত্র সাত বছর। বড় হও তখন স্পোর্টস হোন্ডা কিনে দেবো! এখন তোমাকে খেলনা হোন্ডা কিনে দিয়েছি সেটাই আপাতত চালাও।
না আমার খেলনা হোন্ডা চাইনা, স্পোর্টস হোন্ডা এখনি লাগবে, আমি বড় হয়ে গেছি।
ছেলের এমন আবদার দেখে আমিরুল ইসলাম অবাক হয়ে যাচ্ছে! তাকে কোনরকম বুঝিয়ে শান্ত করে পড়ার টেবিলে পাঠিয়ে দিল আমিরুল ইসলাম। তারপর হুমায়রাকে বলল ডিনার রেডি করতে, হুমায়রা ডিনার রেডি করতে না যেয়ে আমিরুল ইসলামের খুব কাছে এসে বসলো। আমিরুল ইসলাম বুঝতে পারছে না আজ কেন এরকম করছে এই মেয়ে। এক বছরের বেশি সময় ধরে সে তার বাসায় আছে কখনো এমন করেনি, আজকে হুমায়রার আচরণ অস্বাভাবিক লাগছে আমিরুল ইসলামের কাছে। মাত্রা অতিরিক্ত সাজগোজ করেছে হুমায়রা, কেন এত সাজগোজ করছে বুঝতে পারছেনা আমিরুল ইসলাম, তাই সে হুমায়রাকে বলল আপনি আমার কাছে বসলেন কেন? আর এত সাজগোজ করেছেন আপনি কি কোথাও যাবেন, কোথাও পার্টি আছে?
না সেজেছি আপনার জন্য, আমার কাছে আপনি খুব স্পেশাল মানুষ। আচ্ছা আমাকে কি আপনার ভালো লাগেনা? আপনি কেন আমাকে সবসময় ইগনোর করে চলেন। আপনি এই বয়সে স্ত্রী ছাড়া আছেন, আমি একজন সুন্দরী যুবতী মেয়ে আপনি কি করে পারেন আমাকে ইগনোর করে চলতে।
হুমায়রা আপনি আমার সাথে এরকম কথা বলবেন না! আপনি আমার ছেলেকে দেখাশোনা করেন আমি আপনাকে সম্মান করি, আপনার সাথে আমার এটুকু সম্পর্ক এর বাহিরে আমি আর কোন কিছুই ভাবি না। আপনি সুন্দর হোন আর যাই হোন সেটা অন্যের চোখে হতে পারেন! আমার চোখে আপনি শুধু আমার ছেলের আয়া আমি এটুকুই ভাবি।
আমিরুল ইসলামের কথা শুনে হুমায়রার মেজাজ এত পরিমানের খারাপ হয়েছে, তার ইচ্ছে করতেছে আমিরুল ইসলামকে এখনই গলা টিপে মেরে ফেলতে। এটা কি রকম পুরুষ মানুষ এত সুন্দরী একজন মেয়ে একই বাসায় থেকে তার দিকে তাকায় না! তাকে কেউ ইগনোর করে চলে সেটা ভাবতেই নিজেকে নিজের কাছে ছোট লাগছে হুমায়রার। কত পুরুষ তাকে দেখে পাওয়ার আশায় ছটফট করে তার সাথে কথা বলার জন্য পাগল হয়ে থাকে, এই একমাত্র পুরুষ যে কি না তাকে দেখলে ইগনোর করে চলে।
মনে মনে ভাবছে হুমায়রা যেভাবে হোক তোমার এই দম্ভ আমি শেষ করে ছাড়বো মিস্টার আমিরুল। তুমি আমাকে এখনো চেনা নাই ভাবছো সহজ-সরল কিন্তু আমার চাল যদি তুমি দেখো তখনই অবাক হবে।
হুমায়রা খাবার রেডি করতে গেল, কিছুক্ষণ পর আমিরুল ইসলামকে ডাক দিল খাবার খাওয়ার জন্য। ডাইনিং টেবিলে এসে বসলো আমিরুল ইসলাম। তাকে সবকিছু রেডি করে দিয়ে হুমায়রা চলে গেল সিরাতের কাছে। আমিরুল ইসলাম ফেরার আগে সিরাতকে রাতের খাবার খাইয়ে ফেলেছিল হুমায়রা। ঘন্টাখানেক পর সিরাতকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে হুমায়রা আমিরুল ইসলামের রুমে গেল। রুমে গিয়ে দেখে আমিরুল সেখানে নেই, ব্যালকনিতে ইজি চেয়ারে বসে ঘুমিয়ে আছে। হুমায়রা সেটা দেখে একটু মুচকি হাসলো মেডিসিনটা কাজ শুরু করে দিয়েছে। হুমায়রা আমিরুল ইসলামের কাছে গিয়ে তার হাতে ধরে বললেন, আপনি এখানে ঘুমিয়ে আছেন কেন বেডরুমে চলেন। ঘুম চোখে আমিরুল ইসলামের কেমন যেন মাতাল মাতাল লাগছিল! সে চোখ মেলে তাকাতে পারছে না আস্তে করে বলল আমার মাথাটা কেমন ঘুরছে, আমি রুমে যেয়ে শোয়ার মত শক্তি পাচ্ছি না। খাবার খাওয়ার পর কেন জানি কেমন লাগছে।
হুমায়রা বলল সমস্যা নেই, আসেন আমি আপনাকে হেল্প করি, এটা বলেই হুমায়রা আমিরুল ইসলামকে ধরে দাঁড় করালেন। তারপর ধীরে ধীরে তার রুমের দিকে নিয়ে আসলেন, বিছানায় শোয়া মাত্রই আমিরুল ইসলাম চোখ বন্ধ করে ফেলছে! তার মাথাটা ভীষণ ঘোরাচ্ছিল। এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল হুমায়রা।আমিরুল ইসলামের সাথে ঘনিষ্ঠ কিছু ছবি তুলে নিলো তার ফোনে। তারপর আমিরুল ইসলামের পাশে শুয়ে পরলো হুমায়রা।
হুমায়রা সবসময় সিরাতের সাথে ঘুমাতো, আজকে যখন ছিলাম সজাগ হয়ে দেখে বিছানায় হুমায়রা নেই, দরজা খোলা। সিরাত বিছানা থেকে নেমে হুমায়রাকে ডাকছিল আন্টি আন্টি বলে। কিন্তু হুমায়রার কোন সারা শব্দ না পেয়ে সিরাত তার বাবার রুমের দিকে আসলো। আমিরুল ইসলামের দরজার সামনে এসে ডাক দিল সিরাত! তখন আমিরুল ইসলামের ঘুম ভেঙে গেল, সে সজাগ হয়ে অবাক হয়ে দেখে হুমায়রা তাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে। এটা দেখে সে তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠলো। হুমায়রার ঘুম ভেঙে গেল, সে বলল কি হয়েছে এমন করে লাফ দিয়ে উঠলেন কেন?
আপনি? আপনি আমার বিছানায়, ছিঃ ছিঃ, কি করছেন আপনি এটা। আপনি কেন আমার বিছানায় ঘুমাইছেন আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে? তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নামুন। সিরাত দরজার ওপাশে ডাকতেছে সে কি ভাববে আপনি আমার রুমে।
মিস্টার এত উতলা হবেন না, আপনি দুধে ধোয়া তুলসী পাতা না, সাধু সাজার কোন দরকার নেই। আপনার ছেলে ছোট এখনো বুঝে না রাতে আমরা কি করেছি! তাকে বলে দেবো তোমার আব্বুর শরীরটা খারাপ ছিল তাই এখানে এসেছি।
আমিরুল ইসলাম চিৎকার করে বলল অসভ্য মেয়ে আবার দাঁত বের করে হাসছে! আপনার লজ্জা লাগছে না এগুলো বলতে।
না মিস্টার আমার কেন লজ্জা লাগবে, আপনি আমাকে বলছেন স্ত্রীর মর্যাদা দিবেন বিয়ে করবেন। এটা বলেই তো আপনি আমাকে আপনার রুমে নিয়ে আসছেন।
হোয়াট, আমি আপনাকে নিয়ে আসছি? আপনি কি বলছেন, এত বড় মিথ্যা অপবাদ দিবেন না।
আমি আপনাকে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছি না, আপনি খাবার খাওয়ার পর ব্যালকনিতে বসে ছিলেন! আমি যখন সিরাতকে ঘুম পাড়িয়ে আপনার রুমে আসছি আপনি রুমে নেই, দেখি ব্যালকনিতে বসে আছেন। আমি আপনার কাছে যাবার পর আপনি বলছেন আমাকে রুমে নিয়ে চলো আমার মাথাটা কেমন ঘুরাচ্ছে! আপনি হয়তো কাল নেশা করে আসছিলেন, তাই রাতের কথা ভুলে গেছেন।
আমি কখনো নেশা করি না এই অভ্যাস আমার নেই! আপনি যে এতদিন ধরে আমার বাসায় আসছেন কখনো দেখছেন আমি নেশা করছি।
আপনি নেশা করছেন না করেননি সেটা আপনার ব্যাপার, আপনি তো আবোল তাবোল বলছিলেন আমি যখন আপনাকে রুমে নিয়ে আসলাম। আপনি বললেন আপনাকে ধরে শুইয়ে দিতে। আমি শুইয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছিলাম আপনি আমাকে যেতে দেন নাই, জোর করে জড়িয়ে ধরছেন! আর যা করার সবই তো করলেন সারারাত।
আমিরুল ইসলাম হুমায়রার কথা শুনে এত আশ্চর্য হচ্ছে ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। সে এই মেয়েকে জড়িয়ে ধরবে অসম্ভব। সিরাত আবার তার বাবাকে ডাকছে। হুমায়রা গিয়ে দরজা খুলে দিল, সিরাত তার বাবার কোলে এসে বসেছে। হুমায়রা বলছে আমি ব্রেকফাস্টে রেডি করি, খেয়ে তুমি স্কুলে যাবে। আমিরুল ইসলামের মুখে কোন কথা নেই কি বলছে হুমায়রা এগুলো। সে শারীরিক সম্পর্ক করছে তাও আবার নিজের ইচ্ছাতে সেটা কি করে হয়। বাবাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে সিরাত বলল,
পাপা তোমার কি হয়েছে তুমি এভাবে মন খারাপ করে বসে আছো কেন? তোমার কি শরীর খারাপ।
না আব্বু আমার কিছু হয়নি, একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছিলাম তাই এভাবে বসে আছি।
আন্টি তো আজকে রাতে আমার সঙ্গে ছিল না সে তোমার সঙ্গে ছিল কেন?
আমিরুল ইসলাম ছেলের প্রশ্নে মনমরা হয়ে গেল, ছেলেকে সে কি উত্তর দিবে। তখন হুমায়রা এসে বলল তোমার আব্বুর শরীর খারাপ ছিল তাই তোমার আব্বুর সেবা-যত্ন করেছি আজকে রাতে বুঝেছ বাবু। এখন তুমি ফ্রেশ হতে যাও, ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নাও স্কুলে যেতে হবে।
সিরাত ফ্রেশ হবার জন্য তার বাবার রুম থেকে বের হলে হুমায়রা রাতের তোলা পিকগুলো আমিরুল ইসলামকে দেখালো।
এই দেখুন আপনি কিভাবে আমার সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় ছিলেন, আমি মিথ্যে বলছি নাকি পিকচার দেখলেই বুঝবেন।
আমিরুল ইসলামের মুখে কোন কথা নেই মনে হচ্ছে সে হুমায়রা ফাঁদে আটকা পড়ে গেছে। কি করবে এখন আমিরুল ইসলামের মাথায় কোন বুদ্ধি আসতেছে না। তাকে চুপ দেখে হুমায়রা বলল কিছু তো বলেন এভাবে চুপ করে থাকলে হবে।
আপনি কি চান আমার কাছে, কেন এভাবে আপনি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য ষড়যন্ত্র করলেন।আমি এটা জানি আপনার কোন মতলব আছে তার জন্য আপনি আমাকে কাল খাবারের সাথে কিছু খাইয়ে ছিলেন, সেটা এখন বুঝতে পারছি।
আমিরুল ইসলামের কথা শুনে হুমায়রা বলল,মিস্টার তুমি যাই বুঝতে পারো না কেন একটা কথা কিন্তু বুঝতে পারোনি, আমি তোমাকে পছন্দ করি অনেক বেশি পছন্দ করি! যেদিন থেকে তোমার বাসায় এসেছি আমার স্বপ্ন আমি তোমার হবো। কিন্তু তুমি তো আমার দিকে ফিরেও তাকালে না তাই আমাকে এমন একটা ষড়যন্ত্র করতে হলো! না হলে কখনোই এমনটা করতাম না। তুমি নিজেই আমাকে এমন করতে বাধ্য করলে। নিজ থেকে তুমি আমার হলে না, তাই আমিই তোমার হলাম।
চুপ করবেন আপনি, আজকে আমার বাসা থেকে বের হয়ে যাবেন! আপনাকে আমার ছেলেরা আয়া হিসাবে আমি আর রাখবো না।
ওকে ডার্লিং আয়া হিসেবে না রাখো তোমার ছেলের মা হিসেবে আমি তো তোমার বাসায় থাকবো।
সেটা কখনোই না আপনার মত এমন জঘন্য চরিত্রের মেয়েকে আমি বিয়ে করবো সেটা কি করে ভাবলেন। যে মেয়ের দিকে আমি ফিরে তাকাইনি সে হবে আমার স্ত্রী, মেয়েদের আমি ঘৃণা করি তারা যে কোন সময় যে কোন কাজ করতে পারে! এদের কোন বিবেক নেই। আপনি কত টাকা চান বলেন আমি চেক লিখে দিচ্ছি, প্লিজ তারপর আপনি আমার বাসা থেকে চলে যান! ঝামেলা করবেন না।
হুমায়রা খুব জোরে হেসে উঠলো বলল, আমি পরে আপনার সাথে কথা বলছি! এখন সিরাতের স্কুলের টাইম হয়ে গেছে তাকে স্কুলে রেখে আসছি, এটা বলে হুমায়রা সিরাতকে নিয়ে স্কুলে চলে গেল।
আমিরুল ইসলাম বিছানা থেকে নেমে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালো! ভাবছে মেয়ে মানুষ আসলেই শয়তানের হাড্ডি হয় এ মেয়েকে আমি ভালো মনে করছিলাম। আচ্ছা আমি লিলি বাইডেনের মেয়েকে কল করি সে কেন এমন একটা মেয়েকে আমার ছেলের জন্য আয়া হিসাবে এনে দিল।
মিস্টার আমিরুল কি মনে করে আপনি আমাকে কল করছেন, কল রিসিভ করে আমিরুল ইসলামকে জিজ্ঞেস করলেন লিলি বাইডেনের মেয়ে।
আপনি যে মেয়েকে আমার বাসায় আয়া করে দিয়ে গিয়েছেন, সে কত বড় জঘন্য কাজ করেছে জানেন আপনি? সে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করেছে এখন তাকে বিয়ে করতে বলে।
লিলি বাইডেনের মেয়ে এটা শুনে বলছে এখন আমি আপনার বাসায় আসতেছি হুমায়রার সাথে কথা বলব, সে কেন এমন করবে আপনি যদি কিছু না করে থাকেন।
আপনি বিশ্বাস করেন তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই তার দিকে আমি ফিরেও তাকাইনি কখনো। সে আমার বাসায় ছিল আমার ছেলের আয়া হিসেবে আমি সেই নজরেই তাকে দেখতাম। কিন্তু সে আজকে যা করেছে তা বলার মত না আপনি আসেন বিস্তারিত বলবো।
চলবে….