#ভুল
#jannat_Nur
আজকে সিকদার বাড়িতে বিচার বসেছে! বিচারটা বসেছে সিকদার বাড়ির বড় বউ সুফিয়া বেগমের নামে। সুফিয়া বেগমের স্বামী আমিরুল ইসলাম বছরের বেশিরভাগ সময় আমেরিকায় থাকে। সেখানে তার বিজনেস আছে সে কারণে বেশিরভাগ সময় আমেরিকার থাকতে হয়। আমিরুল ইসলামের বাড়িটা হলো মফস্বল শহরে! তার বাড়িকে সবাই সিকদার বাড়ি হিসেবেই চেনে। এই সিকদার বাড়ির বড় ছেলে আমিরুল ইসলাম, তার স্ত্রী সুফিয়া বেগম এবং একমাত্র ছেলে সিরাত ইসলাম। সিরাতের বয়স তিন বছর, সে তার এই বয়সটায় বাবাকে তেমন কাছে পায়নি। ছয় মাস পর পর আমিরুল ইসলাম তার বাড়িতে ফিরে। আমিরুল ইসলামের চার ভাই দুই বোন! বোনদের বিয়ে হওয়া সত্ত্বেও একজন বোন জামাই নিয়ে বাবার বাড়িতেই থাকে। সুফিয়া বেগম বাড়ির বড় বউ হওয়ায় সংসারের সমস্ত দায়িত্ব তার উপরে! বেশিরভাগ সংসারের কাজ তাকে করতে হয়। কাজের মানুষ দুই এক জন আছে কিন্তু রান্নাবান্না সুফিয়া বেগম নিজের হাতে সামলায়। আরো যে তিনটা বউ আছে তারা সবসময় কোন কাজ করে না। আমিনুল ইসলামের বাবা বেঁচে নেই মা অনেক বয়স্ক! শাশুড়ির সেবা যত্ন সুফিয়া বেগম নিজের হাতেই করেন। অন্যান্য বউয়েরা শাশুড়ীর ধারে কাছে আসে না।
এখন মূল কথায় আসা যাক, আজকে যে এ বাড়িতে সুফিয়া বেগমের নামে বিচার বসেছে! সেটার মূল কারণ হলো এই বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষে বলতেছে সুফিয়া বেগমের চরিত্র ভালো নয়। স্বামী দেশের বাহিরে থাকে রাত্রে তার রুমে পরপুরুষ এসে রাত কাটায়! এটা নিজের চোখে দেখেছে আমিরুল ইসলামের ছোট বোনের জামাই রফিক মিয়া। তার সামনে নাকি সুফিয়া বেগমের রুম থেকে কেউ বের হয়ে গিয়েছে। সুফিয়া বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলতেছে এটা একদম মিথ্যা আমি কখনো কারো সাথে অবৈধ সম্পর্ক করিনি, কেউ আমার রুমে আসেনি! কেন কি কারণে দুলাভাই আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে আমি জানিনা। তখন আমিরুল ইসলামের ছোট বোন রুমা আক্তার বললেন,
ভাবী আমার স্বামী কেন আপনার নামে মিথ্যা অপবাদ দিবে? যখন আপনার রুম থেকে ওই লোকটা বের হয়ে যায় আমার স্বামী আমাকে সঙ্গে সঙ্গে ডেকে তুলে নিয়ে আসে, আমিও তাকে দেখতে পারি পেছন দিক থেকে। এটা মিথ্যা নয় আর তখন মেজো ভাই আর সেজু ভাইদেরও আমরা ডাক দেই তাইনা রে ভাই?
আমিরুল ইসলামের দুই ভাই বোনের কথার সাথে সম্মতি জানিয়ে বলল, হ্যাঁ রুমা আমাদেরকে ডাক দিয়েছে কিন্তু আমরা ওঠার পর লোকটা অনেক দূরে চলে যায়! আমরা হালকা দেখতে পাই কিন্তু চিনতে পারিনি অন্ধকার ছিল বিদায়, ওই বড় রাস্তার মোড়ে লোকটা দৌড়ে উঠে যায়! তাকে ধরতে পারলে সবকিছু জানা যেত। এখন তো ভাবী স্বীকার করতে চাইবে না হাতে নাতে ধরলে তখন আর কথা বলার মুখ থাকতো না।
সবার একই কথা শুনে বিচারকরা বললেন তোমাদের বড় ভাইকে এটা জানানো হোক, তাকে ছাড়া আমরা কি বিচার করব! তার স্ত্রী সেই ভালো বুঝবে কি করা যায়। আমিরুলকে বাংলাদেশে আসতে বল, এমন চরিত্রের স্ত্রীকে নিয়ে কোন স্বামী সংসার করবে বলে আমাদের মনে হয়না। কোনকিছুর অভাব নেই যে মহিলার সে মহিলা পর পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়ায়! এমন স্ত্রীকে নিয়ে কোনো স্বামী সংসার করবে না, চেয়ারম্যান মোতালেব হোসেন এ কথাগুলো বললেন।
সুফিয়া বেগম এত বড় অপবাদ সহ্য করতে পারছে না। সে সবার সামনে হাতজোড় করে বলছে, আপনারা আমাকে এত বড় অপবাদ দিবেন না। আমি জানি আমি নির্দোষ, আমি কোন পাপ করিনি! আমার দ্বারা অন্যায় হয়নি, কেন আমার ননদ ননদের জামাই এবং দেবররা এ কথা বলছে আমি বুঝতে পারতাছি না। আমি কি অপরাধ করেছি নিজেই জানিনা, তারা কেন এত বড় শাস্তি দিচ্ছে আমাকে। আমার স্বামী যদি এ কথা শুনতে পারে সে আমাকে তালাক দিয়ে দিবে! আমি কোথায় যাব আমার মা-বাবা বেঁচে নেই, যাবার মত জায়গা নেই। আমার এই বয়সে এসে এত বড় অপবাদ শুনতে হবে ভাবতে পারিনি।
সুফিয়া বেগমের কান্না কারো মন গলাতে পারেনি। এলাকার সবাই বলাবলি করছে আমিরুল ইসলামের স্ত্রী পর পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়েছে। বাড়ির সবাই এবং আশেপাশের মানুষ সুফিয়া বেগমের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। তাকে রান্নাটা করতে দিচ্ছে না তার দেবরের বউয়েরা। নিজের রুমে ছেলে সিরাতকে নিয়ে শুয়ে সুফিয়া বেগম ভাবছে, তার ননদের জামাই রফিক মিয়া এটা ষড়যন্ত্র করছে। কারণ হলো এ বাড়িতে রফিক মিয়া আসার পর থেকে রফিক মিয়ার কুদৃষ্টি ছিল সুফিয়া বেগমের উপর। তাকে দেখলে মনে হতো চোখ দিয়ে গিলে ফেলবে সম্ভব হলে। সুফিয়া বেগম নিজেকে সামলে চলাফেরা করতো রফিক মিয়া সামনে। কিছুদিন আগে রফিক মিয়া সুফিয়া বেগমের রুমে আসে! সুফিয়া বেগম আলমারিতে কাপড় গুছিয়ে রাখছিল, তখন রফিক নিয়ে সুফিয়া বেগমের রুমে আসে, সুফিয়া বেগমের হাত ধরে ফেলে। সুফিয়া বেগম অবাক হয়ে যায়! বলে আপনি এটা কি করছেন কেন আপনি আমার হাত ধরলেন? এক্ষুনি আমার হাত ছাড়ুন।
রফিক মিয়ার উত্তর ছিল ভাবী আপনাকে আমার ভালো লাগে!এই বাড়িতে আসার পর থেকে আপনাকে দেখে আমি চোখ ফেরাতে পারি না। আপনার ননদ রুমার চেয়ে আপনাকে আমার বেশি পছন্দ। আমি নিজের মনকে অনেক বুঝাইতে চাইছি কিন্তু আপনাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারছি না।
সুফিয়া বেগম হাত ঝাটকা মেরে ছাড়িয়ে নেয়, আর বলে আপনি এখনি আমার রুম থেকে চলে যান! এগুলো কি বলছেন? আমি আপনার বড় ভাবী, আমার সাথে এরকম করবেন না তাহলে কিন্তু আমি রুমাকে বলে দেবো।
রফিক মিয়া বলে ভাবী প্লিজ আপনি বুঝতে চেষ্টা করেন। আপনাকে আমার ভালো লাগে আপনি চাইলে আপনাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে পারবো, আর এখন তো কোন প্রবলেম নেই ভাইয়া ব্যবসার কাজে আমেরিকা থাকবে! ছয় মাস পর পর আসে আপনি চাইলেই আমি রাতে আপনার রুমে আসতে পারি। সিরাত তো বাচ্চা মানুষ ঘুমিয়ে যায়, আমি আসলে সে বুঝবেনা।
সুফিয়া বেগমের আর সহ্য হয়নি, সহ্যের সীমা অতিক্রম করে ফেলছে রফিক মিয়া। সঙ্গে সঙ্গে সুফিয়া বেগম রফিক মিয়া গালে থাপ্পড় মেরে দেয়। রফিক মিয়া অপমানিত হয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়! সেই প্রতিশোধ নিতেই হয়তো এত বড় নাটক সাজিয়েছে রফিক মিয়া।
সুফিয়া বেগম ভাবছে আমিরুল ইসলামের কাছে ফোন দিয়ে সমস্ত ঘটনা বলবে, তখনই কল দিলে সে। দুইবার রিং হবার পর রিসিভ করছে আমিরুল ইসলাম! কল রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে আমিরুল ইসলাম সুফিয়া বেগমকে যা ইচ্ছে তাই গালাগাল শুরু করে দিয়েছে। সুফিয়া বেগম বুঝতে পারছে না সে স্বামীকে কিভাবে শান্ত করবে। তাহলে তারা কি আগেই বলে দিয়েছে আজকের এই ঘটনার কথা। আমিরুল ইসলামকে সুফিয়া বেগম বুঝাতে চাচ্ছে তার ভাইবোন যা বলছে তা ভুল, কিন্তু আমিরুল ইসলাম সুফিয়া বেগমের কথা শুনতে চাচ্ছে না। শুধুই একই কথা বলছে তোর মত অসভ্য অপবিত্র মেয়েকে নিয়ে আমি কখনোই সংসার করবো না। তোকে আমি বিশ্বাস করেছিলাম তুই আমার বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছিস! ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম, বিয়ের দশ বছর সন্তান হয়নি তোর! অনেকে বলেছিল তোকে রেখে বিয়ে করতে আমার বংশ রক্ষা করতে। আমি বলেছিলাম দরকার নেই যাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি তাকে নিয়ে সংসার করবো, যদি সন্তান না হয় ভাইয়ের ছেলেমেয়েদের নিজের সন্তানের মত দেখব। সবসময় আমি তোর পক্ষে সাপোর্ট করতাম, এখন কি ভাবছিস তুই এত বড় জঘন্য কাজ করার পর আমি তোর পক্ষ নেবো? তোকে নিয়ে সংসার করবো, আমি মরে গেলেও সেটা করব না। আমি বাংলাদেশে চলে আসতেছি কয়েকদিনের মধ্যে, তুই প্রস্তুত থাক তোকে আমি ডিভোর্স দেবো! তুই আমাকে মেরে ফেলছিস বিশ্বাস ভঙ্গ করে।
সুফিয়া বেগম বলল প্লিজ তুমি আমার কথা শুনো, আমি কিছু করিনি তোমার কি মনে হয় আমি এরকম মেয়ে! আমি তোমাকে আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। তুমি আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছো সেই বিশ্বাসের মর্যাদা আমি আমার জীবন থাকতেও অক্ষুণ্ণ করবো না। তোমার বোনের জামাই আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে, তার খারাপ নজর ছিল আমার দিকে! আমি তার প্রস্তাবে রাজি হয়নি তাই সে আমার নামে এরকম দুর্নাম ছড়াচ্ছে! সে আমাকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিল।
চুপ কর তুই, আমি কোন কথা শুনতে চাই না! শুধু আমার বোন জামাই নয় তোর রুম থেকে একজন বের হয়েছে সেটা আমার বোন দেখেছে এবং আমার ভাইদের যখন ডাকছে সেই লোকটাকে দেখতে পাইছে দৌড়ে চলে যাচ্ছে। সবাই কেন তোর নামে মিথ্যা কথা বলবে।
কথাগুলো বলে আমিরুল ইসলাম ফোন রেখে দিল। সোফিয়া বেগম অঝোরে কান্না করছে, মনে পড়ে গেল সেই বিয়ের আগের কথা। গরিব ঘরের মেয়ে ছিল সুফিয়া বেগম ক্লাস টেনে পড়ার সময় পরিচয় হয় আমিরুল ইসলামের সাথে! তাকে পছন্দ করে বিয়ে করে আমিরুল ইসলাম। আমিরুল ইসলামের পরিবার মেনে নিতে চায়নি, সে তার বাবার সাথে অনেক যুদ্ধ করে বিয়ে করে। বিয়ের কয়েক বছর পার হবার পরও যখন সুফিয়া বেগমের বাচ্চা হয় না! তখন সুফিয়া বেগমের শ্বশুর শাশুড়ি বলেছিল আমিরুল ইসলামকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে। সে তাদেরকে বলে দিয়েছিল এ জীবন থাকতে অন্য কাউকে সে বিয়ে করতে পারবেন না। অনেক চিকিৎসার পর তাদের একমাত্র ছেলে সিরাতের জন্ম হয় বিয়ের ১০ বছর পরে। এখন তাদের সুখের সংসার! এই সুখের সংসারে আগুন দিচ্ছে রফিক মিয়া। সুফিয়া বেগম এটা সিওর যদি অন্য লোকেরা কোন পুরুষ মানুষকে এই বাসা থেকে বের হতে দেখতে পেয়ে থাকে! তাহলে সে নাটকটা সাজিয়েছে রফিক মিয়া। কারণ সুফিয়া বেগম জানে সে পবিত্র কারো সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক নেই। কান্না করছে আর আল্লাহকে ডাকছে যেন তার স্বামী এসে তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে না দেয়।
চলবে….