#ভুলতে_পারব_না_তোকে❤
#Part:05
#Writer: Unknown Writer
সাগর অতিতের ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে এলো কারও কান্নার শব্দে। সাগর দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে দেখল নদী পা পিছলে সিড়িতে পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেয়ে কাঁদছে।
সাগর সিড়িতে নেমে গিয়ে নদীর কাছে গেল তারপর হঠাৎই সাগর নদীকে কোলে তুলে নিল। সাগর নদীকে কোলে তুলেছে দেখে নদী অবাক চোখে সাগরের দিকে তাকিয়ে থাকে। নদী অবাক হয়ে সাগরকে বলল
–স্যার আপনি আমাকে কোলে তুলেছেন কেন? কেউ যদি একবার আপনাকে আর আমাকে এভাবে দেখে ফেলে তাহলে আমার যে আর রক্ষা থাকবে না স্যার। আমাকে আপনি নিচে নামিয়ে দিন স্যার। আমি একটু চেষ্টা করলেই নিজে নিজে হাঁটতে পারব।
–চুপ। একদম চুপ করে থাকবি।
সাগর নদীকে কোলে করে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে নদীকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলল
–পা পিছলে পড়ে গেলি কি করে নদী?
–স্যার আমি তাড়াহুড়ো করে নিচে নামতে গিয়ে পড়ে যাই। আমার পায়ে খুব ব্যথা করছে। এ্যা এ্যা এ্যা৷
নদী বাচ্চাদের মতো কাঁদতে লাগল। সাগর নদীর কান্না দেখে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারল না৷ সাগর ড্রয়ার থেকে আবারো স্যাভলন, মলম, বেন্ডেজ বের করে নদীর পায়ে হাত দিতে গেলে নদী বিচলিত হয়ে সাগরকে বলে উঠল
–এমা স্যার ছিহ্ ছিহ্ ছিহ্। আমার মতো একটা কাজের মেয়ের পায়ে মালিক হাত দিবে এটা ঠিক না স্যার। আমি নিজের পায়ে নিজে মলম লাগাতে পারব। আপনাকে কষ্ট করে আমার পায়ে মলম লাগাতে হবে না।
সাগর রাগী গলায় নদীকে বলল
–তুই আমার মুখের উপর কথা বলিস! তোর সাহস তো কম নয় নদী। আমাকে আমার কাজে বাঁধা দিলে তোর কি হাল করব তুই বুঝতে পারছিস?
সাগরের ধমক শুনে নদী ভয়ে চুপসে গেল। সাগর নদীর পা নিজের হাটুর উপর রেখে নদীর পায়ের সালোয়ারে সরাতে গেলে নদী চেচিয়ে বলে উঠল
–স্যার না। স্যার দয়া করে এমন কাজ করবেন না। আমি একদম ঠিক আছি স্যার। পা পিছলে সিড়িতে পড়ে গেছি ঠিকই কিন্তুু এতোটাও ব্যথা পাই নি।
সাগর এবার বিরক্তি স্বরে নদীকে বলল
–তুই কি আমাকে তোর পায়ে মলমটাও লাগাতে দিবি না নদী? এতো কথা বলছিস কেন? যেমন ভাব দেখাচ্ছিস মনে হয় এখনি আমি তোর সর্বনাশ করে ফেলব! চুপচাপ বসে থাক। নাহলে তোর যতটুকু পা ভেঙেছে তার থেকে আরো বেশি তোর পা আমি ভেঙে ফেলব। এরপর মাকে গিয়ে বলব তুই ইচ্ছে করে তোর পায়ের এই অবস্থা করেছিস যাতে তুই কোনো কাজ কর্ম না করতে পারিস।
সাগরের কথা শুনে নদী ভয়ে ঢুক গিলতে লাগল। নদী সাগরকে আর কিছু বলল না। মাথানিচু করে রইল৷ সাগর নদীর সালোয়ার উপরে সরিয়ে দেখল সিড়িতে পড়ে গিয়ে নদীর পা কেটে রক্ত পড়ছে। সাগর তুলোর মধ্যে স্যাভলন দিয়ে নদীর পায়ের রক্ত মুছতে গেলে নদী স্যাভলনের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে আহ্ বলে চিৎকার করে উঠে। নদীর চোখ দিয়ে টুপটাপ পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে। সাগর নদীর পায়ে স্যাভলন দিচ্ছে আর নদীর দিকে তাকিয়ে দেখল নদী কাঁদছে। এটা দেখে সাগর নদীকে বলল
–এইটুকু স্যাভলনের জ্বালাই সহ্য করতে পারিস না। তাহলে এতো অত্যাচার কি করে সহ্য করিস তুই নদী?
সাগরের কথায় নদী সাগরের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তারপর নদী সাগরকে শান্ত গলায় বলল
–গরীবদের জ্বালা বুকের গভীরে থাকে স্যার৷ যেই জ্বালায় কষ্ট পেলেও মুখ ফুটে প্রকাশ করা যায় না৷ কিন্তুু শরীরের ব্যথার জ্বালা লুকাতে চাইলেও লুকাতে পারা যায় না স্যার। নিজের অজান্তেই যন্ত্রণাগুলো বুকের কষ্টের সাথে বেরিয়ে যায়।
নদীর কথা শুনে সাগর স্তব্ধ হয়ে যায়। সাগর নদীকে বলল
–এত কষ্ট মনে লুকিয়ে রাখিস কি করে নদী?
–জানি না স্যার।
নদীর এবার ধ্যান ফিরল ও কাকে কি বলছে। নদী এবার আমতা আমতা করে সাগরকে বলল
–স্যার আমি আসলে এতক্ষণ মজা করছিলাম। আমি খেয়ালই করি নি। আসলে আমার মাথাটা না মাঝে মাঝে কাজ করে নাতো তাই কি বলতে কি বলেছি আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন স্যার।
সাগর নদীর দিকে এক অদ্ভুত চাহনিতে তাকিয়ে আছে। নদী এবার নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে খেয়াল করে দেখল সাগর নদীর পায়ে বেন্ডেজ করে দিয়েছে। নদী অবাক হয়ে সাগরকে বলল
–স্যার আমার পায়ে বেন্ডেজ কি করে এলো?
–তুই তোর মধ্যে ছিলি না নদী। তাই তুই বুঝতে পারছিস না।
–স্যার আমি এখন যাই একটু পরেই বড় ম্যাডাম এসে পড়বে। তখন কিন্তুু কেলেংকারী হয়ে যাবে।
নদী বসা থেকে উঠতে নিল কিন্তুু পারল না। এটা দেখে সাগর নদীকে বলল
–তোর এখন উঠার লাগবে। তুই এখন শুয়ে থাক।
— কিন্তুু স্যার বড় ম্যাডাম তো এখনি এসে পড়বে তখন যদি দেখে আমি আপনার রুমে তাহলে আমাকে বড় ম্যাডাম মেরেই ফেলবে।
–মা আর স্নেহা আসতে আসতে রাত হবে। তুই চিন্তা করিস না। এখন একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর।
— কিন্তুু স্যার আমি আপনার খাটে ঘুমাবো? এতো নরম বিছানায় ঘুমানো যে আমার অভ্যাস নেই স্যার৷
–অভ্যাস নেই তো অভ্যাস করে ফেললি।
–মানে কি স্যার?
–কিছু না৷ তুই এখন শুয়ে পড়। আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
–স্যার আমি আপনার বিছানায় শুবো না।
–কেন শুবি না?
–কারণ এটা ঠিক না।
সাগর এবার রেগে গিয়ে নদীর দু বাহু ধরে টেনে নদীকে বিছানায় শুয়িয়ে দিল। নদী সাগরের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সাগর নদীর একদম কাছাকাছি চলে এসেছে। দুজন দুজনের চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
।
।
।
।
#চলবে……
#ভুলতে_পারব_না_তোকে❤
#Part:06
#Writer: Unknown Writer
সাগর নদীর এতো কাছে এসে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে ব্যাপারটা নদীর কাছে অসস্থি হতে লাগল। নদী দুই হাত দিয়ে সাগরের বুকে হাত দিয়ে সাগরকে দূরে সরিয়ে দেয়। সাগরের এবার ধ্যান ফিরল যে ও এতক্ষণ নদীর দিকে তাকিয়ে ছিল। সাগর মনে মনে বলল
–হঠাৎ আমার কি হলো? কি হচ্ছেটা কি আমার সাথে? নদীর কাছাকাছি গেলে আমি নিজের মধ্যে কেন থাকি না? কেন আমি নিজেকেই হারিয়ে ফেলি? না নদী আমাকে খারাপ ভাববে। আমি নদীর কাছে আর নিজেকে ছোট করতে পারব না।
সাগর নদীর দিকে একনজর তাকিয়ে দেখল নদী অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে সুয়ে আছে। সাগর নদীর সাথে কোনো কথা না বলে নদীর জন্য খাবার আনতে চলে যায়। সাগর রুম থেকে চলে যাওয়ার পর নদী মনে মনে বলল
–স্যার আমার সাথেই কেন এমন করে? স্যার কি বুঝতে পারে না আমি এই বাড়ির কাজের মেয়ে। তাহলে আমার প্রতি কেন স্যারের এতো মায়া? কেন আমার প্রতিই স্যার এতো খেয়াল রাখেন। কিন্তুু এইটা ঠিক স্যার যেমনই হোক না কেন কিন্তুু মন থেকে স্যার খুব ভালো।
সাগর নদীর জন্য খাবার নিয়ে রুমে আসে। খাবারের বাটিটা টেবিলে রেখেই নদীর হাত ধরে একটান দিয়ে নদীকে শুয়া থেকে উঠে বসায়। সাগর হঠাৎ এমন করায় নদী ভয় পেয়ে যায়। নদী বোকার মতো সাগরের দিকে তাকিয়ে থাকে।নদী কাঁপা কাঁপা গলায় সাগরকে বলল
–স্যা স্যার এ এভাবে আমাকে আপনি উঠালেন! আমাকে বললেই হতো আমি উঠে যেতাম। আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
সাগর রাগী গলায় নদীকে বলল
–এতো ভয় পাওয়ার কি আছে নদী? আমিতো শুধু তোকে বিছানা থেকে টেনে তুললাম।
এবার চুপচাপ খাবারটা খেয়ে আমাকে উদ্ধার কর।
সাগর নদীর হাতে খাবারের বাটিটা ধরিয়ে দিল৷ তারপর সাগর নদীর পাশে বসল। নদী এই প্রথম খাবারের বাটি হাতে নিয়ে নিজেই বুঝতে পারল না যে এটা ওর খাবার কিনা। নদী সাগরকে জিজ্ঞেস করল
–স্যার এটা কার খাবার?
–কেন এটা তো তোর খাবার৷ আমি তো তোর জন্যই খাবারটা নিয়ে আসলাম।
–কিন্তুু স্যার এতো দামি প্লেটে তারওপর আবার পোলাও মাংস! আমি তো এসব খাবার খাই না স্যার। আমি তো সবসময় ডাল আর ভাত খাই।
সাগর এবার একটু হেসে নদীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
–তুই আগে কি খেতি আর না খেতি তা আমার জানার বিষয় নয়। এখন আমি তোর জন্য যেই খাবারটা এনেছি এটাই তোর খেতে হবে।
সাগরের কথা শুনে নদীর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল৷ কারণ নদী এর আগে কখনো এমন খাবার খায় নি। সাগর নদীর কান্না দেখে নদীকে জিজ্ঞেস করল
–কি হলো তুই এভাবে কাদছিস কেন নদী? তোর আবার কি হলো?
নদী চোখ মুছতে মুছতে বলল
–কিছু হয় নি স্যার। এমনি চোখে পানি চলে এসেছে।
নদী খাবারে হাত দিতে নিলে আহ্ করে চিৎকার করে উঠে। সাগর সাথে সাথে নদীর হাত ধরে দেখল নদীর হাতে ফোস্কা পড়া৷ সাগর এতক্ষণে মনেই ছিল না যে নদী অনেকগুলো কাপড় কেচে হাতের বেহাল দশা করে রেখেছে৷ সাগর নদীর হাত থেকে খাবারটা এক পাশে রেখে নদীর হাতটা একটা বাটির পানিতে ধুয়ে দিল। তারপর খাবারটা সাগর নিজের হাতে নিয়ে মেখে নদীকে বলল
–এবার হা করতো দেখি।
নদী সাগরের এমন কথায় অবাক হয়ে যায়৷ নদী সাগরকে অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করল
–স্যার আপনি আমাকে খাইয়ে দিবেন! এটা কি করে হয়! না না না। আমি নিজে নিজেই খেতে পারব।
সাগর নদীকে এবার রেগে বলল
–মারব টেনে এক চড়। হা করতে বলেছি হা কর। এতো কথা কিসের?
সাগরের রাগ দেখে নদী ভয়ে ভয়ে হা করল। তারপর সাগর নদীকে খাবার খাইয়ে দিতে লাগল। নদী খাবার খাচ্ছে আর চোখের জল ফেলছে। নদীকে এভাবে নিঃশব্দে কাঁদতে দেখে সাগর নদীকে জিজ্ঞেস করল
–কি হলো নদী! তুই এভাবে কাঁদছিস কেন? আমি কি তোকে বেশি বকে ফেললাম?
–স্যার আমাকে এভাবে কেউ খাইয়ে দেয় নি। ছোটবেলায় মা খাইয়ে দিত কিন্তুু আমি এই বাড়িতে আসার পর আমাকে কেউ খাইয়ে দেয় নি। কেউ না।
নদীর কথা শুনে সাগর কি বলবে বুঝতে পারল না৷ কিন্তুু নদীর কষ্ট দেখে সাগরও খুব কষ্ট পেল। কিন্তুু সাগর সেই কষ্ট প্রকাশ করল না। সাগর নদীকে ধমক দিয়ে বলল
–চুপ। একদম চুপ। খাওয়ার সময় এতো কথা কিসের হুম? তোর হাতে ফোস্কা পড়েছে তাই আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি। এটাকে আবার বেশি কিছু ভাববি না।
নদী সাগরের কথা শুনে কান্না থামিয়ে চুপচাপ খেতে লাগল। আর মনে মনে নদী বলতে লাগল
–আপনি এই আমাকে অপমান করেন তো এই আবার আমার খেয়াল রাখেন। আপনার কোনোকিছুই আমি বুঝতে পারি না স্যার৷ কিন্তুু আপনিই একমাত্র ব্যক্তি যাকে আমি ভয় পেলেও চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারি। আপনি যদি আমাকে কখনো নিজের হাতে মেরেও ফেলেন তাতেও আমার কোনো আপত্তি থাকবে না।
সাগর নদীকে খাইয়ে দেওয়ার পর নদীর মুখ নিজের হাত দিয়ে মুছে দেয়। নদীর ঠোঁট মুছতে গিয়ে সাগর কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। কিন্তুু তাও নিজের চোখ বন্ধ করে সাগর নদীর ঠোঁট মুছে দেয়। নদী বুঝতে পারল না সাগর কেন তার চোখ বন্ধ করে রেখেছে। সাগর নিজের চোখ খুলে নদীকে বলল
–এবার শুয়ে পড়।
সাগর নিজের হাত ধুয়ে বিছানার একপাশে বসে রইল। নদী শুয়ে চোখ বন্ধ করতেই সাগর নদীকে আবারো একটান দিয়ে শুয়া থেকে উঠাল। নদী এবার সাগরকে বলল
–স্যার আমি কি কিছু ভুল করেছি?
–না কোনো ভুলই তুই করিস নি। কিন্তুু আমাকে একটা কথা বলতো! আমি বিদেশ যাওয়ার আগে তোকে এই বাসায় কখনো দেখি নি। আট বছর পর যখন আমি বাড়িতে ফিরলাম তখন তোকে দেখলাম। আচ্ছা আমার মা-বাবা তোকে পেলো টা কোথায়?
সাগরের কথা শুনে নদী থমকে গেল। নদীর অতীত মনে পড়তে লাগল। যা নদীর জন্য খুবই দুঃখজনক। নদী সাগরকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
–আটবছর আগে তখন আমার বয়স ১১ বছর। আমি মা-বাবার সাথে খুব সুখেই ছিলাম। আমরা তিনবোন ছিলাম। আমিই ছিলাম পরিবারের বড় মেয়ে। আমরা গরীব হলেও আমাদের পরিবারটা সুখী ছিল। আমার বাবা কৃষিকাজ করত তা দিয়ে আমাদের সংসার চলত। কিন্তুু….
–কিন্তুু কি?
–আমার বাবা যাদের ফসলে কৃষিকাজ করতেন তারা আমার বাবাকে এই চাকরি থেকে বের করে নতুন কৃষক রাখেন। আমার বাবা তাদের অনেক হাতে পায়ে ধরেন কিন্তুু কেউ শুনল না। শেষে আমাদের পরিবারে নেমে এলো অভাব। আমাদের না খেয়ে জীবন যাপন করতে হতো। দিনে একবেলাও আমরা খেতে পারতাম না। কিন্তুু একদিন আমি বাধ্য হয়ে রাস্তায় ভিক্ষা করতে নেমে যাই। মেইন রোডে ভিক্ষা করতে গিয়ে একটা বড় কালো গাড়ির সামনে দাড়াই। গাড়ির ভিতরে আপনার বাবা মানে বড় স্যারেকে দেখতে পেয়ে তার কাছে কয়টা টাকা ভিক্ষা চাই। উনি আমাকে দেখে মুচকি হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। সেইসময় আমার বাবা আমাকে বাসায় না পেয়ে খুঁজতে লাগলেন। একসময় আমার বাবা আমাকে মেইন রোডে পেয়েও যায়। আমার বাবা দেখতে পেলেন আমি বড় স্যারের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছি ঠিক সেই সময় বড় স্যার বাবাকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন আমি বাবার কে হই? বাবা বড় স্যারকে বলল আমি বাবার মেয়ে হই। বাবা বড় স্যারকে দেখে বুঝতে পেরেছিলেন উনি খুব বড়লোক তাই বাবা বড়স্যারের কাছে টাকা সাহায্য চাইলে বড় স্যার টাকার বিনিময়ে আমাকে তার সাথে নিয়ে যেতে চান। বাবার হাতে বিশ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে বড় স্যার আমাকে কিনে নিতে চায়। কারণ বড় স্যার আমাকে নিজের মেয়ের মতো মানুষ করতে চায়। বাবা প্রথমে রাজি না হলেও টাকার লোভে রাজী হয়ে যায়। আমি সেই সময় আমার পরিবারকে ছেড়ে যেতে রাজী হয় নি। সেই সময় খুব কান্না করেছিলাম আমি। আমাকে শেষ বারের মতো আমার মায়ের কাছে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। আমি মাকে বলেছিলাম মা আমি তোমার সাথে থাকব। আমি উনার সাথে যাবো না। কিন্তুু মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন ভালো থাকিস মা। তুই ঐখানে সুখী থাকবি। আমি কখনো ভাবতেও পারি নি আমার নিজের মাও আমাকে পর করে দিবে। নিজের বোন দুটোকেও শেষ বারের মতো জড়িয়ে ধরেছিলাম। তারপর আমাকে বড় স্যার এই বাড়িতে নিয়ে এসে নিজের মেয়ের মতো মানুষ করতে লাগলেন। কিন্তুু বড় ম্যাডাম আর স্নেহা আপামনি আমাকে একদমই সহ্য করতে পারতেন না। যখন বড় স্যার ব্যবসার কাজে বিদেশ চলে যান তখন থেকে আমি এই বাড়ির আশ্রিতা থেকে কাজের লোক হয়ে যাই।
কথাগুলো বলেই নদী কাঁদতে লাগল। নদীর কষ্ট দেখে সাগরের বুকটাও কষ্টে শেষ হয়ে যেতে লাগল।
।
নদীর কষ্ট আর সহ্য করতে না পেরে সাগর নদীকে একটান দিয়ে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিল। নদী কাঁদছে তাই নদীর কোনোকিছুতেই খেয়াল নেই। নদীও সাগরকে জড়িয়ে ধরল। নদী সাগরকে কাঁদতে কাঁদতে বলল
–স্যার কেন আমার সাথেই এমন হয় বলতে পারেন? কেন সবাই আমাকেই কষ্ট দেয়? কেউ আমাকে ভালোবাসে না স্যার। কেউ ভালোবাসে না আমাকে। এই পৃথিবীতে এক জীবন্ত লাশ হয়ে আমি বেঁচে আছি। আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে স্যার। মরে যেতে ইচ্ছে করে।
সাগর নদীর মাথায় হাত বুলিয়ে ধমক দিয়ে বলল
–চুপ।একদম চুপ। মরার কথা বললে এক চড় দিয়ে তোর সব কয়টা দাঁত আমি ফেলে দিব।
নদী সাগরকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল
–তাহলে কার জন্য বেঁচে থাকব আমি স্যার? আমাকে কেউ ভালোবাসে না।
সাগর এবার একটু আনমনে হয়ে বলে উঠল
–কেউ তোকে ভালোবাসুক আর না বাসুক আমি তোকে…
এইটুকু বলে সাগর থেমে গেল। তারপর সাগর আবারো নদীকে বলল
–তুই কারও জন্য নয়। নিজের জন্য বাঁচবি নদী। তোকে নিজের জন্য বাঁচতে হবে।
সাগর নদীকে এখনো জড়িয়ে ধরে রেখেছে আর নদী সাগরের বুকে মুখ রেখে চোখের জল ফেলে সাগরের শার্ট ভিজিয়ে ফেলছে। কিন্তুু হঠাৎই কেউ সাগর বলে চিৎকার করে উঠল। চিৎকারটা প্রচন্ড জোরে করা হয়৷ সাগর নদীকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে পেছন ফিরে দেখল সাগরের মা রহিমা বেগম ও সাগরের বোন স্নেহা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। স্নেহা একটা মুখ ভেংচি দিল। আর সাগরের মা রহিমা বেগম রক্তলাল চোখে সাগর ও নদীর দিকে তাকিয়ে আছে।
সাগর বিছানায় বসা থেকে উঠে রহিমা বেগমের সামনে গিয়ে বলল
–মা তোমরা কখন এলে? মা আসলে তুমি যা দেখেছো তা ঠিক না। আসলে নদী সিড়ি থেকে পা পিছলে পড়ে পায়ে খুব ব্যথা পেয়েছিল তাই আমি ওকে আমার রুমে এনে বেন্ডেজ করে দিয়েছি।
রহিমা বেগম সাগরের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রহিমা বেগম সাগরকে কিছু না বলে সোজা সাগরের হাত ধরে টেনে পাশের রুমে নিয়ে গিয়ে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিল৷ সাগর তার মায়ের এমন কান্ড কিছুতেই বুঝল না৷ সাগর বুঝতে পারল না তার মা হঠাৎ তাকে রুমের ভিতরে রেখে বাইরে কেন দরজাটা লাগিয়ে দিল। সাগর মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে গিয়েই সাগরের মনে অজানা ভয় গ্রাস করল। সাগর মনে মনে বলল
–তার মানে কি মা নদীর উপরে অত্যাচার করতে আমাকে এভাবে রুমে বন্ধী করে দিল! না এটা হতে পারে না। মা নদীর সাথে এতো বড় অন্যায় কিছুতেই করতে পারে না।
সাগর দরজায় ক্রমাগত ধাক্কাতে লাগল। আর চিৎকার করে বলতে লাগল
–মা নদীর কোনো দোষ নেই। ওকে তোমরা কষ্ট দিও না৷ মা আমার কথাটা তো শুনো। মা দরজাটা খুলো। মা!!!!!!!!
সাগর চিৎকার করছে আর দরজা ধাক্কাছে একসময় সাগর পাশের টেবিলটায় খুব জুরে লাথি মারে।
তারপর সাগর নিজের মাথার চুলগুলো টেনে নিজে ছিড়তে থাকে।
এদিকে নদী ভীষণ ভয় পাচ্ছে। রহিমা বেগম সাগরকে দরজায় তালা দিয়ে আবার সাগরের রুমে ফিরে আসে। স্নেহাও রহিমা বেগমের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। নদী ভয় পাচ্ছে আর ঢুক গিলছে। নদীর চোখ দিয়ে ক্রমাগত চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে। নদী কাঁপা কাঁপা গলায় রহিমা বেগমকে বলল
–বড় ম্যাডাম বিশ্বাস করুন আসলে আমি পায়ে ব্যথা পেয়েছিলাম তাই….
নদীকে বলতে না দিয়ে রহিমা বেগম নদীর কাছে এসে নদীর চুলের মুঠি ধরে বিছানা থেকে নামিয়ে দাঁড় করিয়ে বলল
–তাই তুই আমার ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আমার ভালো ছেলের মাথাটা চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে চেয়েছিলিস হারামজাদি।
রহিমা বেগম নদীর চুল ধরায় নদীর চুলে প্রচন্ড ব্যথা করছে। তারসাথে তো পায়ে ব্যথা আছেই যে নদী ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারছে না। নদী কাঁদতে কাঁদতে বলল
–বড় ম্যাডাম বিশ্বাস করুন আসলে আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে কান্না চলে এসেছিল তাই আমার কান্না থামাতে স্যার আমাকে সান্তনা দেওয়ার জন্য জড়িয়ে ধরেছিল। আর কিছু নয় বড় ম্যাডাম।
রহিমা বেগম ঠাসস করে নদীর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। নদী ছিটকে মাটিতে পড়ে যায়। নদী মাটিতে পড়ে গিয়ে পায়ে আরও ব্যথা পায় যার ফলে নদী আরো শব্দ করে কাঁদতে থাকে। রহিমা বেগম স্নেহাকে বলল
–স্নেহা মামুনি!!
স্নেহা একটা ডাইনি হাসি দিয়ে বলল
–হ্যা মা বলো।
–যাতো রান্নাঘর থেকে খুন্তি গরম করে নিয়ে আয় তো।
–এইতো মা এক্ষনি নিয়ে আসছি।
এই কথা শুনার পর নদী ভয়ে মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে একদম দেয়ালে কাছে পিঠ ঠেকে যায়। নদী দুই হাত জোর করে কাঁদতে কাঁদতে রহিমা বেগমকে বলল
–বড় ম্যাডাম গো আর কোনোদিন আমি স্যারের কাছ থেকে কোনো সাহায্য নিব না। স্যারের আশেপাশেও যাবো না। আমাকে ক্ষমা করে দিন না বড় ম্যাডাম।
রহিমা বেগম দাঁত কটমট করে নদীর কাছে এসে মাটিতে নদীর সামনে বসে নদীর চুলের মুঠি ধরে বলল
–সেটা তোর আমার ছেলেকে জড়িয়ে ধরার আগে মনে ছিল না হারামজাদি? চাকরানি হয়ে রাজরানি হওয়ার স্বপ্ন দেখিস?
তোর স্বপ্ন আজ আমি বের করব।
স্নেহা হাতে গরম খুন্তি নিয়ে দৌড়ে এসে রহিমা বেগমের কাছে এসে বলল
–মা এই নাও গরম খুন্তি।
রহিমা বেগম স্নেহার হাত থেকে গরম খুন্তিটা নিজের হাতে নিয়ে এক রাক্ষসীর মতো হাসতে লাগল৷ নদী ভয়ে চোখের জল ফেলতে লাগল। নদীর আত্মা কাঁপছে। রহিমা বেগম স্নেহাকে বলল
–এই ফকিন্নির বাচ্চার দুই হাত চেপে ধরতো স্নেহা।
স্নেহাও নদীকে টেনে দেয়ালের কাছ থেকে সামনে এনে দুই হাত চেপে ধরল। নদী চিৎকার করে বলতে লাগল
–ছেড়ে দিন আমাকে স্নেহা আপামনি। ও বড় ম্যাডাম আমি আর এমন ভুল করব না। আমাকে দয়া করে ক্ষমা করে দিন৷
কিন্তুু রহিমা বেগম নদীর কোনো কথা শুনল না। নদীর পিঠে গরম খুন্তি লাগিয়ে দিল। নদী চিৎকার করে কান্না করতে লাগল। ঐদিকে পাশের রুম থেকে নদীর কান্নার আওয়াজ শুনে সাগরের বুকের ভিতরটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। সাগর নিরবে চোখের জল ফেলছে আর দরজা ধাক্কাচ্ছে। কিন্তুু সাগরের দরজা কেউ খুলছে না। একসময় সাগর বাধ্য হয়ে ঘরের দরজা লাথি দিয়ে ভেঙে ফেলল।
।
।
।
।
#চলবে……….