ভুলতে পারব না তোকে পর্ব-২১

0
1101

গল্পঃ ভুলতে_পারব_না_তোকে❤
Part:21
Writer:Unknown Writer

সাগর নিজের ঘরে গিয়ে দেখে নদী চুপচাপ বসে আছে। এটা দেখে সাগর একটা মুচকি হাসল। নদী সাগরের দিকে একবার তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে ফেলে। সাগর নদীর পাশে বসে খাবারটা টেবিলে রেখে নদীর দু গালে হাত নিজের দিক করে মুখ ফিরিয়ে শান্ত চাহনিতে নদীর দিকে তাকায়। সাগর শান্ত গলায় নদীকে বলল
–কিরে নদী এখনো নিচের দিকে তাকিয়ে থাকবি? একবার তো আমার দিকে তাকা? আমার দিকে তাকালে কি তোর চোখ জ্বলে যাবে?
নদী সাগরের চোখে চোখ রাখতে ভয় পাচ্ছে কিন্তু তবুও সাগরের কথা শুনে সাগরের চোখের দিকে চোখ রাখল। সাগর নদীর কপালে একটা চুমু দিল। নদী একটু কেঁপে উঠল তাই নদী সাগরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। সাগর নদীর এমন আচরণে আবারো একটা মুচকি হেসে পাশের টেবিল থেকে খাবার নিয়ে নিজের হাতে ভাত মেখে নদীর মুখের কাছে নিল। এটা দেখে নদী সাগরের হাত থেকে খাবার খেতে লাগল। নদী আর আগের মতো সাগরের সাথে তেমন জুড়াজুড়ি করছে না। নদী সাগরের হাতে খাবার খাচ্ছে আর সাগরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। খাওয়া শেষে সাগর নিজের হাতে নদীর ঠোঁট মুছে নিজের হাত ধুয়ে নদীর পাশে বসে পড়ল। তখনই নদী সাগরের দিকে তাকিয়ে বলল
–স্যার আমি আমার রুমে যাব। আমার এখানে ভালো লাগছে না। আমাকে আপনি যেতে দিন।
–তাতো হবে না ম্যাডাম। আপনি এবার থেকে আমার রুমেই থাকবেন।
–স্যার এটা কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
–আচ্ছা নদী আমাকে একটা কথা বলতো?
–কি কথা?
–তোকে আমি খাওয়ানোর পড়েই দেখছি তোর তেজ আগের থেকে বেড়ে গেছে। এখন মনে হচ্ছে তোকে না খাইয়ালেও পারতাম। জানিস তোর জন্য মায়ের কাছে কত জবাবদিহি আমাকে দিতে হয়েছে?
–তো আমার জন্য খাবার আনলেন কেন স্যার? আমি কি বলেছি আপনাকে আমার জন্য খাবার আনতে? আপনিই তো আমার জন্য খাবার আনলেন।
–হয়েছে হয়েছে। আর তোর মন খারাপ করতে হবে না।
সাগর নদীর হাতটা নিজের হাতের সাথে আবদ্ধ করতে নিলে নদী ব্যথায় আহ্ করে উঠে। সাগর বুঝতে পারল না নদী এমন কেন করল। হঠাৎ সাগরের চোখ পড়ে নদীর হাতের তালুতে। হাতটা একটা কাপড়ের টুকরো দিয়ে মুড়ানো। সাগর চিন্তিত স্বরে নদীকে বলে উঠল
–নদী তোর হাতে এভাবে কাপড় বেঁধে রেখেছিস কেন?
সাগরের কথায় নদী তাড়াতাড়ি নিজের হাতটা লুকিয়ে নিল। সাগরের এবার বেশ সন্দেহ হলো।
–কি হলো নদী বলছিস না কেন?
–না মানে স্যার এমনি। আসলে হাতটা অল্প কেঁটে গিয়েছিল তাই ওড়না দিয়ে হাতটা বাঁধতে হয়েছে।
–কই দেখিতো!
সাগর নদীর হাত দেখতে চাইলে নদী বারণ করে কিন্তু সাগর নদীর কোনো কথা না শুনে নদীর হাত ধরে হাতের কাপড়টা একটান দিয়ে খুলে ফেলে। নদী হাতের ব্যথায় চিৎকার করে উঠে। সাগর নদীর হাতের অবস্থা দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়৷ হাতটা খুব ফুলে আছে সাথে রক্ত পড়ে কেমন কাঁটা জায়গাটা শুকিয়ে আছে। নদী এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। নদীর চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। নদীর কষ্টে সাগরের বুকটাও কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। হঠাৎই সাগরের তখনের কথা মনে পড়ল। এজন্য নদী ব্যথায় চিৎকার করেছিল। অথচ সাগর নদীর হাতের দিকে তখন খেয়ালই করে নি। ভাবতেই সাগরের মনে কেমন অপরাধবোধ কাজ করছে। সাগর তাড়াতাড়ি ড্রয়ার থেকে স্যাবলন মলম বের করে নদীর কাঁটা হাতের জায়গায় স্যাবলন লাগাতে লাগল। নদী স্যাবলনের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে সাগরকে কাঁদতে কাঁদতে বলল
–স্যার আমার হাতটা ভীষণ জ্বলছে। দয়া করে আমার হাতটা ছেড়ে দিন।
–নদী তোর হাতটা এমন বাজে ভাবে কাটল কি করে? দেখে তো মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছে করে তোর হাতে আঘাত করেছে।
–স্যার আপনি এসব কি বলছেন? আসলে রান্না করতে গিয়ে হাতটা পুড়িয়ে ফেলেছি।
–নদী তোর কি আমাকে দেখে বোকা বলে মনে হয়?
–স্যার আমি তা বলি নি।
–তুই যাই বলিস না কেন আমি এটা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারব না তোর হাতটা পুড়ে এমন হয়েছে। আমাকে সত্যি করে বল তোর হাতের অবস্থা এমন হলো কি করে?
সাগরের প্রস্নের উত্তর কি দিবে নদী ভেবে পাচ্ছে না। নদী মনে মনে বলতে লাগল
–আমি এখন স্যারকে কি করে বলব যে আমার হাতের এই হাল উর্মি ম্যাডাম করেছে! যদি একবার স্যার জানে যে উর্মি ম্যাডাম আমার সাথে এমন করেছে তাহলে তো স্যার উর্মি ম্যাডামকে অনেক শাস্তি দিবেন। পরে বাড়িতে প্রচুর অশান্তি হবে। না না না এ আমি কিছুতেই হতে দিব না।
–কি হলো নদী চুপ করে আছিস কেন? বল আমায় তোর হাতের এমন দশা কে করেছে?
–স্যার আপনি বিশ্বাস করুন আমার হাতটা রান্না করতে গিয়েই পুড়ে গেছে।
সাগর বুঝতে পারল নদীকে হাজার বার বললেও নদী সত্যি কথাটা বলবে না। তাই সাগর নদীকে আর কিছু জিজ্ঞেস করল না। নদীর হাতে আলতো করে মলম লাগিয়ে দিল। তারপর সাগর নদীকে শান্ত গলায় বলল
–শুয়ে পড় নদী। রাত অনেক হয়েছে। গুড নাইট।
–স্যার! মা মা মানে কি? আপনি কি আমার সাথে একই বিছানায় শুবেন নাকি?
নদীর কথা শুনে সাগর একটা মুচকি হেসে বলল
–পাগলী মেয়ে একটা। তোর আর আমার কি বিয়ে হয়েছে নাকি যে আমরা এক বিছানায় শুবো? তুই বিছানায় শুয়ে পড়। আমি সোফায় শুয়ে পড়ছি।
–না না না স্যার। তা কি করে হয়? আপনি বিছানায় শুয়ে পড়ুন আমি আমার রুমে চলে যাচ্ছি।
–একদম না। তুই আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবি না।
–তাহলে আমি নিচে শুয়ে পড়ি স্যার। আপনি বিছানায় শুয়ে পড়ুন।
বলেই নদী বিছানা থেকে নামতে নেয় সাগর নদী হাত আলতো করে ধরে বলল
–বললাম তো তুই বিছানায় শুবি। বাকিটা তোর না ভাবলেও চলবে।
–স্যার একটা সত্যি কথা বলবেন?
–তো তোর কি মনে হয় নদী আমি সবসময় মিথ্যে কথা বলি?
–না মানে তা বলি নি স্যার। কথাটা বলি?
–হ্যা বলে ফেল। এতো পারমিশন নেওয়ার কিছু নেই।
–স্যার উর্মি ম্যাডামও তো এই রুমে এই বিছানায় থাকতো। কই তখন তো আপনি এই রুমের সোফায় শুতেন না! উল্টো আমার রুমের মেঝেতে ঘুমাতেন। তাও আমি কতো বারণ করতাম তাও শুনতেন না। তখন আপনি এমন করতেন কেন?
–কারণ টা কি তোর অজানা নদী?
–ইয়ে মানে তা না স্যার। আমি আসলে জানতে চেয়েছিলাম তাই আরকি৷
–উর্মি যখন আমারই রুমে আমারই বিছানায় ঘুমাতো তখন আমার কাছে তা বিষের মতো মনে হতো। আর তুই এখন আমার রুমে আমারই বিছানায় ঘুমাবি এখন আমার কাছে তা অমৃতের মতো মিষ্টি অনুভূতি মনের মধ্যে হতে থাকবে।
সাগরের এমন কথার কোনো মানে বুঝতে পারল না নদী। সাগর তা বুঝতে পেরে একটু হেসে নদীকে বলল
–তোর এতো কিছু না জানলেও চলবে। শুয়ে পড়।
সাগর সোফায় শুয়ে পড়ল। নদীও আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সাগরের বিছানায় শুয়ে পড়ল। নদী মনে মনে বলতে লাগল
–জানি না আমার কপালে কি আছে কিন্তু এইটুকু বুঝতে পারছি খুব বিপদ আসতে চলেছে আমার জীবনে।
.
.
.
সকাল বেলায় সাগর ঘুম থেকে উঠে দেখে নদী রুমে নেই। তাই সাগর নদীকে এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে। ঘরের কোথাও নদীকে সাগর খুঁজে পেল না। সাগর তাই ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখে নদী ঘর ঝাড়ু দিচ্ছে। নদীকে ঘর ঝাড়ু দিতে দেখে সাগরের রাগটা যেন বেড়ে যায়। সাগর মনে মনে বলল
–এই মেয়েটার হাতের এই অবস্থা তারওপর আবার বাড়ির কাজ করছে। নদীকে তো আজ আমি…
সাগর নিচে নেমে এসে নদীকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রহিমা বেগম হাসি মুখে চিৎকার করে বলে উঠলেন
–ওগো তুমি এসেছো!!!!
সাগর তার মায়ের কথা শুনে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল সাগরের বাবা সাজ্জাত চৌধুরী বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করছেন। রহিমা বেগম দৌড়ে তার স্বামীকে জড়িয়ে ধরলেন। অনেক দিন পর তার স্বামীকে দেখে তিনি খুব খুশি। সাজ্জাত সাহেবও তার স্ত্রীর এমন কান্ডে মুচকি হেসে দিলেন। তারপর রহিমা বেগম সাজ্জাত সাহেবকে ছেড়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে বললেন
–ওগো কেমন আছো তুমি?
–ভালো আছি রহিমা। তুমি কেমন আছো?
–যেমনটা তুমি রেখে গিয়েছিলে তেমনটাই আছি।
এদিকে সাগর ও নদী তাদের প্রেম কাহিনী দেখে রীতিমতো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ সাগর নদীর দিকে তাকিয়ে খেয়াল করল নদীর খুশিতে চোখ ঝলমল করছে। নদী দৌড়ে সাজ্জাত সাহেবের কাছে গিয়ে হাসি মুখে বলল
–বড় স্যার আপনি কেমন আছেন?
সাজ্জাত সাহেব নদীকে দেখে ঠিক চিনতে পারল না। তিনি নদীকে শান্ত গলায় বললেন
–কে তুমি?
–বড় স্যার আমি নদী।
–আমি কোনো নদীকে চিনি না। রহিমা এই মেয়ে এখনো এই বাড়িতে পড়ে আছে কেন?
সাজ্জাত সাহেবের কথা শুনে নদীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। যেই লোকটা নদীকে নিজের বাবার মতো আদর স্নেহ করতেন আর সেই কিনা নদীকে বলছে চেনেন না। নদীর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। সাগরও তার বাবার মুখে এমন কথাটা আশা করে নি। তাই সাগর সবার সামনে গিয়েই নদীকে জড়িয়ে ধরে। আর নদী সাগরের বুকে মুখ দিয়ে কাঁদতে থাকে। নদী কাঁদতে কাঁদতে সাগরকে বলল
–স্যার দেখেছেন! বড় স্যার আমাকে চিনতে পারছেন না! আচ্ছা স্যার আমার সাথেই কেন এমন হয়? আমি যাকে বাবার মতো ভালোবাসতাম সেই বড় স্যার আমাকে চিনতে পারছে না।
সাজ্জাত সাহেব বেশ ঝাঁজালো গলায় চিৎকার করে বললেন
–এই মেয়ে তুমি আমার ছেলেকে এইভাবে জড়িয়ে ধরে আছো কেন? ছাড়ো ওকে।
নদী সাজ্জাদ সাহেবের চিৎকার শুনে সাগরকে ছেড়ে দিল। সাজ্জাদ সাহেব এবার সাগরকে রাগী গলায় বলল
–সাগর তুইও বা কেমন? যাকে আমি এই বাড়ির আশ্রিতা করে রেখেছিলাম তাকেই কিনা তুই এভাবে জড়িয়ে ধরে আছিস। আমি রহিমার কাছে সবটা শুনেছি। তুই এতোটা নিচে নামলি কি করে সাগর?

সাজ্জাত সাহেবের কথাগুলোতে সাগরের রাগটা যেন আরো বেড়ে গেল। সাগর রেগে গিয়েই তার বাবাকে বলল
–বেশ করেছি নিচে নেমেছি। নদী এ বাড়ির কোনো আশ্রিতা নয় আর না কোনো কাজের লোক। নদী আমার ভালোবাসা। আমি নদীকে ভালোবাসি। আর বাবা তোমাকে বলি তুমি এভাবে গিরগিটির মতো রঙ পাল্টে ফেললে কি করে? না মানে আমি নদীর মুখে যা শুনেছি তাতে এইটুকু বুঝেছিলাম তুমি ছোট বেলায় নদীকে খুব ভালোবাসতে। নদীকে মেয়ের মতো আদর করতে। তো হঠাৎ তোমার কি হলো বাবা যে তোমার মধ্যে এতোটাই পরিবর্তন চলে এসেছে?
সাগের কথা শুনে সাজ্জাদ সাহেব একটু রাগী গলায় বললেন
–হ্যা এটা ঠিক আমি এই মেয়েকে রাস্তা থেকে তুলে এনে নিজের মেয়ের থেকেও বেশী আদর করতাম। কিন্তু এটা তো আর জানতাম যে এই মেয়ে আমার ছেলের মাথাটা এভাবে নষ্ট করবে!
–বাবা তুমি কিন্তু নদীকে অপমান করছো!
–সাগর তার মানে রহিমা ঠিকই বলেছিল। এই মেয়ের জন্য তুই তোর পরিবারকেও গুরুত্ব দিস না। এই মেয়ের আর এ বাড়িতে থাকা হবে না।
–তাই বুঝি নদী যদি এ বাড়িতে না থাকে তাহলে তো আমাকে এই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে হচ্ছে।
–তাহলে তুই তাই যা সাগর। তোর মতো ছেলে আমাদের দরকার নেই।
নদীর জন্য বাবা ছেলের মধ্যে তর্ক হচ্ছে যা নদীর কাছে একটুও ভালো লাগছে না। নদীর এতক্ষণ চোখের জল ফেললেও এবার মুখ খুলল। নদীর চোখের পানি মুছে সাজ্জাত সাহেবকে শান্ত গলায় বলল
–বড় স্যার আমি আর এই বাড়িতে থাকবো না। আপনাদের মধ্যে আর কোনো অশান্তি হোক তা আমি চাই না। আমি চলে গেলাম। পারলে আপনারা আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
নদী কথাটা বলেই চলে যেতে নিলে সাগর নদীর হাত চেপে ধরে। নদী পিছন ফেরে সাগরের দিকে কান্নাজড়িত চোখে তাকায়। এদিকে রহিমা বেগম সাজ্জাত সাহেবকে ন্যাকা কান্না কেঁদে বলতে লাগল
–ওগো দেখেছো। তোমার ছেলে যে বদলে গেছে আমি বলেছিলাম না। এই মেয়ের জন্য তোমার ছেলে আমাকে আমার মেয়েকেও অপমান করে।
সাজ্জাত সাহেব গম্ভীর গলায় রহিমাকে বলল
–তা তো দেখতেই পারছি রহিমা। ছেলে যে কি পরিমাণ নিচে নেমে গেছে তা তো নিজের চোখেই দেখতে পারছি।
নদী কান্নাজড়িত কন্ঠে সাগরকে বলল
–স্যার আমাকে যেতে দিন। আর আমাকে আটকাবেন না।
সাগর নদীকে কোনো কথা না বলে নদীকে কোলে তুলে নিয়ে সোজা বাড়ির বাইরে চলে গেল। ব্যাপারটা সাজ্জাত সাহেব আর রহিমা বেগমের মাথায় ঢুকল না। তারা বুঝল না নদীকে নিয়ে সাগর কি একেবারেরই চলে গেল! নাকি আবারো সাগর নদীকে নিয়ে এ বাড়িতে ফিরে আসবে।
.
.
.
এদিকে সাগর নদীকে কোলে করে নিয়ে গাড়ির দরজা খুলে নদীকে ড্রাইভিং সিটের পাশে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগল। নদী ব্যাপারটা কিছুই বুঝতে পারল না। নদী ভয় পেয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় সাগরকে বলল
–স্যার আমরা কোথায় যাচ্ছি?
সাগরের মুখে কোনো কথা নেই। সাগর খুব স্পিডে গাড়ি ড্রাইভ করছে। সাগরকে দেখে নদী এখন ভয়ই বেশী পাচ্ছে কারণ সাগর এখন বেশ রেগে আছে। নদী তাও আরেকবার সাহস করে সাগরকে জিজ্ঞেস করল
–স্যার আমরা কোথায় যাচ্ছি?
সাগর এবার নদীর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
–তোকে মেরে ফেলতে নিয়ে যাচ্ছি। আজ তোকে আমি মেরে ফেলব। মরার জন্য তৈরি থাক নদী।
সাগরের কথায় নদী এবার সত্যি ভয় পেতে লাগল। নদী ভয় পাওয়া কন্ঠেই বলে উঠল
–স্যার সত্যি আপনি আমাকে মেরে ফেলবেন? কিন্তু আমি যে মরতে চাই না স্যার।
–মরতে তো তোকে হবেই। আমার কিছু করার নেই।
নদী এবার সত্যি খুব ভয় পেতে লাগল। সাগর গাড়ি থামাল একটা ফ্লেটের সামনে।
সাগর গাড়ি থেমে নেমে নদীকে টেনে নামিয়ে কোলে তুলে উপরে নিয়ে যেতে লাগল। এদিকে নদী ভয় পেয়ে সাগরের শার্ট খামচে ধরে আছে। নদী কাঁপা কাঁপা গলায় সাগরকে বলল
–স্যার আ আ আমাকে কো কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? আমি মরতে চা চাই না। আমাকে মেরে ফেলবেন না।
সাগর নদীকে একটা রুমের মধ্যে নিয়ে গেল। তারপর নদীকে কোল থেকে নামিয়ে বিছানায় বসিয়ে দরজা লক করে চলে যেতে নিলে নদী চিৎকার করে সাগরকে বলল
–স্যার দরজাটা বাইরে থেকে লাগিয়ে দিচ্ছেন কেন? আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
সাগর নদীর দিকে একবার তাকিয়ে দরজাটা ঠাসস করে বাইরে থেকে লক করে চলে গেল। এদিকে নদী ভয় পেয়ে মনে মনে ভাবতে লাগল
–স্যার আসলে কি করতে চাইছে? স্যার কোথায় গেল? আমার ভীষণ ভয় করছে।
.
.
.
বেশ অনেক্ষণ হয়ে গেল কিন্তু সাগরের আসার নাম গন্ধ নেই। নদী সাগরের জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন যে বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েছে তা নদী নিজেও জানে না। হঠাৎ নদী দরজা খুলার শব্দ পেল। নদী সামনে তাকিয়ে দেখল সাগর এসেছে। নদী সাগরকে দেখে শুয়া থেকে উঠে বসল।
সাগর নদীর কাছে এসে নদীর পাশে বসে বলল
–এখানে একটা সাইন করে দে নদী।
নদী পড়াশোনা না করলেও নিজের নামটা লেখতে জানে। কিন্তু নদী বুঝতে পারল না সাগর কিসের সাইন করাতে চাইছে। নদী সাগরকে জিজ্ঞেস করল
–স্যার এখানে কিসের সাইন করব?
সাগর রেগে গিয়ে নদীকে বলল
–কিসের সাইন তোকে এতো কিছু জানতে হবে না। সাইন করতে বলেছি তাড়াতাড়ি সাইন কর।
নদীও ভয় পেয়ে সাগরের দেওয়া কাগজটায় সাইন করে দিল। নদী অসহায় দৃষ্টিতে সাগরের দিকে তাকাল।
সাগর এবার হাসতে লাগল। নদী বুঝতে পারল না সাগর কেন হাসছে। সাগর এমনিতেও প্রচুর সুন্দর। হাসলে সাগরকে আরো সুন্দর লাগে। কিন্তু এখন যে সাগরের হাসি দেখলে নদীকে চলবে না। নদী বেশ অবাক হয়ে বলল
–স্যার আপনি হাসছেন কেন?
সাগর নদীর একদম কাছে এসে নদীর দুই গাল ধরে নদীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
–এবার তুই চাইলেও আমার থেকে দূরে যেতে পারবি না নদী। তোর জন্য যদি পৃথিবীর বিরুদ্ধে আমার লড়াই করতে হয় তাহলে আমি তাই করব। বড্ড ভালোবাসি তোকে নদী। তাই কখনো ভুলতে পারব না তোকে। তোর ভালোবাসায় তুই আমাকে মেরে ফেলেছিস নদী আর তাই আজ আমার ভালোবাসায় আমি তোকে মেরে ফেলব।
সাগরের কথার মানে বুঝল না নদী। শুধু বোকার মতো সাগরের দিকে তাকিয়ে রইল।




#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে