ভুলতে পারব না তোকে পর্ব-১৮+১৯

0
1103

#ভুলতে_পারব_না_তোকে❤
#Part:18
#Writer:Unknown Writer

সাগর নদীকে রুমে নিয়ে গিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। সাগর নদীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই নদী ঘুমিয়ে যায়। সাগর নদীর কপালে চুমু দিয়ে নদীর রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে যেতে নিয়েও উর্মির কথা মনে করে যায় নি। তাই সাগর ছাঁদে গিয়ে দাঁড়ায়। সাগর মনে মনে বলল
–কালই আমি মাকে বলে দিব আমি নদীকে বিয়ে করতে চাই। মা যদি তা না মানে আমি কালই নদীকে নিয়ে বিদেশ চলে যাব।
আজ অনেকদিন পর আমি আমার ভালোবাসাকে পেয়েছি। আমি নদীকে হারাতে চাই না। কিছুতেই হারাতে চাই না।
.
.
.
সাগর রুম থেকে চলে যাওয়ার পর নদী চোখ খুলে উঠে বিছানায় বসে। নদী সাগরের কান্ডগুলো ভেবেই জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে থাকে। সাগরের সেই জোর করে কিস দেওয়া, সাগরের সুইসাইডের পাগলামীগুলো ভাবতেই নদীর গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে। সাগর যে এতোটাও পাগলামো করতে পারে তা নদীর জানা ছিল না। নদী মনে মনে বলল
–স্যার আপনি আমাকে ভালোবাসলেও আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারব না৷ ছাঁদের সেই মুহূর্তে অভিনয় করার জন্য আমাকে আপনি পারলে ক্ষমা করে দিবেন। আপনাকে শান্ত করার এছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিল না। ভালোবাসা বলতে কিছু নেই। আবেগের খেলা নিয়ে আমি বেঁচে থাকতে চাই না। কাছের মানুষও চাইলে প্রচুর আঘাত করতে পারে। তাই আপনার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করা ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই।
.
.
.
সাগর সারা রাত ছাঁদেই কাটিয়ে দেয়। পরেরদিন সকালে নদী ঘরের কাজ করতে নিলে সাগর বাঁধা দেয়।
সাগর নদীকে শান্ত গলায় বলল
–নদী তুই আর এসব কাজ করবি না।
রহিমা বেগম সাগরের কথা পাশ থেকে শুনতে পেরে রেগে সাগরকে বলল
–সাগর এই মেয়ে কাজ না করলে কাজ কে করবে?
–কেন মা নদী কেন কাজ করবে? নিজের ছেলের বউকে দিয়ে বুঝি কাজ করাতে চাও? বাড়িতে তো কতগুলো কাজের লোক আছে। তাহলে নদীকেই কেন সব কাজ করতে হয়?
সাগরের কথায় রহিমা বেগম অবাক হয়ে গেল। স্নেহা ও উর্মিও সাগরের কথায় অবাক। নদী ভাবতেও পারে নি সাগর আজই এমন অঘটন ঘটাবে। নদী তো রীতিমতো ভয়ে কাঁপছে। রহিমা বেগম চিৎকার করে বলল
–সাগর তুই কি বলছিস এসব? এই কাজের মেয়েকে নিজের বউ কেন বলছিস?
–বউ এখনো হয় নি কিন্তু বউ হবে মা। তাই নদীর সাথে এবার থেকে নিজের মেয়ের মতো কথা বলবে। আফটার অল তোমার ছেলের বউ বলে কথা।
–সাগর!!!!
–চিৎকার করে লাভ নেই মা। যা সত্যি তাই বলছি। তুমি যদি আমাদের মেনে না নও তাহলে আমি নদীকে নিয়ে এ বাড়ি থেকে চলে যাব। এখন শুধু আমি না নদীও আমাকে ভালোবাসে।
রহিমা বেগম নদীর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাল। নদী রহিমা বেগমের দৃষ্টিতে ভয়ে কেঁপে উঠল। রহিমা বেগম নদীর কাছে এসে শান্ত গলায় বলল
–নদী তুই কি সাগরকে ভালোবাসিস? সাগর যা বলছে তা কি সত্যি?
নদী কাঁপা কাঁপা গলায় রহিমা বেগমকে বলল
–না বড় ম্যাডাম। আমি স্যারকে কেন ভা ভালোবাসতে যাব। স্যার মিথ্যে ক কথা বলছে।
নদীর কথায় সাগর স্তব্ধ হয়ে যায়। সাগর নদীর কাছে এসে বিচলিত কন্ঠে নদীকে বলল
–নদী তুই এসব কি বলছিস? তুই আমাকে ভালোবাসিস না?
–না আমি আপনাকে ভালোবাসি না স্যার।
–তুই কি আমার সাথে মজা করছিস নদী?
–না স্যার সত্যি আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
সাগর এবার সবার সামনে নদীর গালে নিজের দুই হাত রেখে বলল
–আমার সাথে তুই মজা করছিস আমি জানি নদী। আমি জানি তুই আর যাই হোক আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবি না।
–আমি সত্যি আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি স্যার। আপনাকে কাল ছাঁদ থেকে পড়তে যাওয়া থেকে বাঁচানোর জন্যই আমি আপনাকে মিথ্যে বলি। আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন স্যার।
নদীর এ কথা শুনে রহিমা বেগম সাগরকে জিজ্ঞেস করল
–সাগর তুই ছাঁদ থেকে পড়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলিস তাও আবার এই ফকিন্নি মেয়ের জন্য?
সাগরের মুখে কোনো কথা নেই। সাগরকে আজ পাথরের মূর্তির মতো লাগছে। নদী মাথা নিচু করে আছে। উর্মি আর স্নেহার মুখেও কোনো কথা নেই কারণ তারাও অবাক সাগর নদীর জন্য আত্মহত্যা করতে চেয়েছে।
রহিমা বেগম আবারো সাগরকে জিজ্ঞেস করল
–কি হলো সাগর কথা বলছিস না কেন?
সাগর এবার পাগলের মতো হাসতে লাগল। হাসতে হাসতেই সাগর রহিমা বেগমকে বলল
–মা তোমার ছেলে সাগর পাগল হয়ে গেছে। স্নেহা ঠিকই বলতো মা তোমার ছেলে পাগল হয়ে গেছে। আসলেই দোষ তো আমার এই অবাধ্য মনের। ভালোবেসে ঠকে গেলাম আমি। আমাকে বোকা বানানো হলো।
কথাগুলো বলেই সাগর আবারো হাসতে লাগল। সবার কাছে এখন সাগরকে পাগল বলে মনে হচ্ছে। সাগর হঠাৎই নদীকে ঠাসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। থাপ্পড়টা এতো জোরেই সাগর নদীকে দেয় যার ফলে নদী মাটিতে ছিটকে পড়ে। নদীর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে।সাগর চিৎকার করে নদীকে বলল
–ছলনাময়ী, বিশ্বাসঘাতিনী। আসলেই তোদের মতো ছোটলোকের বাচ্চার মনে কোনো ভালোবাসা নেই। কেন আমাকে তুই ঠকালি? কেন আমাকে কাল বাঁচালি? ভালোই যদি না বাসিস তাহলে কেন কাল আমাকে মরতে দেলি না? বল কেন?
সাগরের চিৎকার শুনে নদীসহ রহিমা বেগম, স্নেহা, উর্মি ভয় পেয়ে যায়। সাগরের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। সাগর আর এক মুহূর্তেও বাড়িতে না থেকে সোজা বাড়ির বাইরে বেরিয়ে যায়। নদী এখানো গালে হাত দিয়ে কাঁদতে থাকে। সাগর গাড়িতে বসে খুব স্পিডে ড্রাইভ করতে লাগল। আজ সাগরের রাগ, কষ্ট, অভিমান যন্ত্রণা সব হচ্ছে। সাগরের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে নিলে সাগর চোখ মুছে নেয়। সাগর মনে মনে বলল
–কেন নদী? কেন তুই আমাকে ঠকালি? কেন তুই বার বার আমার সাথে এমন করিস? আমি মরে যেতাম। কেন বাঁচালি আমাকে? হ্যা আজ ভালোবাসার মানুষকে না পেয়ে নিজেকে শেষ করে দিতেও আমার একটুও খারাপ লাগছে না। তোর দেওয়া এই আঘাতটা আমি মেনে নিতে পারছি না নদী। কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।




#চলবে…..

#ভুলতে_পারব_না_তোকে❤
#Part:19
#Writer:Sabbir Ahmmed

সাগর একসময় গাড়ি আরো স্পিডে চালাতে থাকে। সাগরের গাড়ির সামনে একটা বিশাল বড় ট্রাক আসতে থাকে। একবার সাগরের মন চাইছিল এই ট্রাকের সংঘর্ষে নিজেকে শেষ করে ফেলতে কিন্তু তখনই সাগরের চোখের সামনে নদীর মুখটা ভেসে উঠে। সাগর চাইলেও নিজেকে শেষ করতে পারল না। গাড়ি ব্রেক করে সাগর বেঁচে যায় ঠিকই কিন্তু সাগরের গাড়িটা একটা বড় গাছের সাথে ধাক্কা খায় যার ফলে সাগরের কপাল সামনে থাকা শক্ত বস্তুুতে আঘাত খায়। সাগর কপাল দিয়ে রক্ত ঝাড়ছে ঠিকই কিন্তু সাগর অজ্ঞান হয় নি। সাগর গাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। সাগর কপাল থেকে অঝোরে রক্ত পড়ছে এরই মাঝে লোকজন জড়ো হয়ে যায়। রাস্তায় থাকা লোকজনদের মধ্যে একজন ছেলে সাগরকে বলল
–ভাই আপনার কপাল কেটে রক্ত পড়ছে আপনাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে। নাহলে আপনার অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাবে।
সাগর সেই লোকটার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল
–আমার কিছুই হবে না ভাই। আমি ঠিক আছি।
তখনই ছেলেটা সাগরকে আবারো বলে উঠল
–আপনি এভাবে কি করে এক্সিডেন্টে করলেন ভাই?
–তা আপনার না জানলেও চলবে ভাই।
সাগরের গাড়ির অবস্থা বেহাল হয়ে গেছে। তাই সাগর পকেট থেকে মোবাইল বের করে গাড়ির ড্রাইভারকে বলল আরেকটা গাড়ি নিয়ে এখনি আসতে। গাড়ির ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে এসে সাগরকে দেখে অবাক হয়ে যায়। কারণ সাগরের গাড়িটা ভেঙে প্রায় একাকার আর সাগরের কপাল থেকে রক্ত পড়ছে। ড্রাইভার বিচলিত হয়ে সাগরকে বলল
–স্যার আপনার এ অবস্থা কি করে হলো?
–গাড়িটা এক্সিডেন্ট করেছে চাচা। আমি আর কথা বলতে পারছি না। তাই আমাকে আর প্রস্ন করো না।
–স্যার আপনার এখনি হাসপাতালে যাওয়া প্রয়োজন।
–তার দরকার নেই চাচা আমি ঠিক আছি৷
–স্যার আমি আপনার বাড়ির নুন খেয়েছি আমি। এখন আপনার এই অবস্থায় যদি আমি চুপ করে বসে থাকি তাহলে সেটা অন্যায় হবে স্যার। প্লিজ আপনি হাসপাতালে চলুন।
সাগর আর ড্রাইভারকে না করতে পারল না। হাসপাতালে ডাক্তার সাগরকে চেকআপ করালে সব নরমালই দেখা যায়। শুধু সাগরের বাম কপালে একটু আঘাতটা বেশি পায়। ডাক্তার সাগরকে বেন্ডেজ করে দেয়।
.

[[[গল্পের মাঝে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। কয়েকদিন আগে গল্পের মাঝে বলেছিলাম যে এটাই আমার লাইফের লাষ্ট গল্প। আর পৃথিবীতে থাকবো না। সুইসাইড করতে চাইছিলাম। কিন্তু ভাবি দেখে আর আমাকে সুইসাইড করতে দেয়নি। আর আমাকে অনেক বুঝিয়েছে। হ্যা। আর আমি আমার ভুল বুজতে পারছি যে আমি কত বড় ভুল করতে যাচ্ছিলাম। আর হ্যা আপনাদের ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না আর আমি আবার নতুন করে জীবনটাকে সাজাতে চাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। অতিতের ভুল গুলো শুধরে নতুন জীবন শুরু করতে পারি। আরেকটা কথা black love টা আর দিবো না। এখন থেকে ❤️❤️❤️ চলবে। কেউ আবার মাইন্ড করবেন না। বিশেষ করে আপুরা। 😁😁😁 ]]]

.
.
এদিকে নদী মাটিতে বসে কাঁদছে। রহিমা বেগম রেগে আগুন। উর্মি ও স্নেহাও একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। তারা রেগে আছে। রহিমা বেগম নদীর কাছে এসে নদীর চুলের মুঠি ধরে টেনে তুলে বললেন
–হারামজাদি তোর জন্য আমার ছেলে গতকাল আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। ঐ ফকিন্নির বাচ্চা তোর মধ্যে আমার ছেলে কি এমন পেল যে তুই ভুলিয়ে বালিয়ে আমার ছেলেকে ফাঁসাতে চাস?
নদী কাঁদতে কাঁদতে রহিমা বেগমকে বলল
–বড় ম্যাডাম আমার কোনো দোষ ছিল না। স্যার ইচ্ছে করেই কাল আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। আমার কোনো দোষ নেই বড় ম্যাডাম।
রহিমা বেগম রেগে দাঁতে দাঁত চেপে নদীকে বলল
–তোর কোনো দোষ নেই তাই না?
কথাটা বলেই রহিমা বেগম ঠাসস করে নদীর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল। প্রচুর জোরে থাপ্পড়টা দেওয়ার ফলে নদী মাটিতে ছিটকে পড়ল।
নদী মাটিতে বসে অঝোরে কাঁদতে লাগল। উর্মি নদীর কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলল
–তোর জন্য সাগর ভাইয়া আমার দিকে ফিরেও তাকায় না। কি আছে তোর মধ্যে? না আছে তোর কোনো রূপ আর না আছে তোর কোনো গুন। আর না আছে কোনো টাকা। এক কথায় তুই একটা ভিখারির বাচ্চা। তোর জন্য সাগর ভাইয়া আমাকে অবহেলা করে। শুধু মাত্র তোর জন্য।
উর্মি কথাগুলো বলেই নদীর ডান হাতে নিজের পা সহ হাই হিল দিয়ে চেপে ধরে। নদী ব্যথায় চিৎকার করতে থাকে। নদীর হাত থেকে ইতিমধ্যে রক্ত ঝড়ছে। নদী কাঁদতে কাঁদতে উর্মিকে বলল
–ম্যাডাম আমার হাতে ব্যথা লাগছে। আমার হাত ব্যথায় জ্বলে যাচ্ছে ম্যাডাম। দয়া করে আমার হাত থেকে আপনার পা টা সরান।
কিন্তু নদীর কথায় উর্মি পা সড়াচ্ছে না৷ স্নেহার রক্ত দেখলে ভয় করে তাই স্নেহা উর্মিকে টান দিয়ে সরাল। নদী হাত ছাড়া পেয়ে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখল রক্ত পড়ছে। উর্মি রেগে স্নেহাকে বলল
–স্নেহা এটা তুই কি করলি? আমাকে টেনে আনলি কেন?
স্নেহা ফিসফিসিয়ে উর্মিকে বলল
–আরে এতো অত্যাচার করো না উর্মি আপু। পরে এই মেয়ে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মরে যাবে।
–মরে গেলে যাক তাতে তোর কি?
–আমার কিছু না। তবে পরে পুলিশ কেস হবে। ফাঁসিতে ঝুলতে হবে পরে আমাদের। ব্যাপারটা কি তুমি বুঝতে পারছো?
উর্মি স্নেহার কথা শুনে শান্ত হলো। কিন্তু রহিমা বেগমের যেন রাগ কমছেই না। রহিমা বেগম নদীকে টেনে তুলে রেগে বলল
–তোর আর এই বাড়িতে জায়গা নেই। তোর জন্য আজ আমার ছেলেটার এই অবস্থা। না জানি আমার ছেলেটা আজ কি করে বসে। তুই এই বাড়ি থেকে বের হ হারামজাদি।
নদীর মুখে কোনো কথা নেই। কারণ নদী ব্যথায় রীতিমতো কাঁদছে। রহিমা বেগম নদীর হাত ধরে টেনে সোজা বাড়ির বাইরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দরজা লাগিয়ে দেয়। ধাক্কার ফলে নদী মাটিতে ছিটকে পড়ে। নদী মাটিতে বসে কাঁদতে থাকে। নদী কাঁদতে কাঁদতে মনে মনে বলল
–আমি নিজেও কিছু বুঝতে পারছি না। কোনটা আমার জন্য ঠিক আর কোনটা আমার জন্য ভুল। আজ থেকে এই বাড়ির দরজাও আমার জন্য চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল। জানি না আমি এখন কোথায় যাব। কিন্তু স্যার কোথায় গেলেন? আমার কেন জানি না স্যারের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে। স্যার ঠিক আছে তো?
নদী ভাবছে আর কাঁদছে।
.
.
.
রাত ১০ টায় সাগর বাড়ি ফেরে। রহিমা বেগম সাগরকে এই অবস্থা দেখে ঘাবড়ে যায়। কারণ সাগরের মাথায় বেন্ডেজ। রহিমা বেগম দৌড়ে এসে সাগরের গালে হাত দিয়ে বললেন
–বাবা তোর এই অবস্থা কি করে হলো? তুই ঠিক আছিস তো?
–হ্যা মা আমি ঠিক আছি। আমার কিছু হয় নি।
সাগর আশেপাশে উর্মি ও স্নেহাকে দেখতে পেল। পাশ ফিরে সাগর বাড়ির অন্যান্য কাজের লোকদের দেখতে পেল। কিন্তু কোথাও নদীকে সাগর দেখতে পেল না। সাগরের বুকে কেমন যেন ভয় হতে লাগল৷ সাগর রহিমা বেগমকে চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করল
–মা নদী কোথায়?
রহিমা বেগম বেশ রেগে সাগরকে বলল
–তুই আর ঐ হারামজাদির নাম মুখে আনবি না সাগর। ঐ মেয়ের জন্য তোর আজ এই অবস্থা। ঐ মেয়েকে আমি এই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি।
কথাটা শুনে সাগর যেন আকাশ থেকে পড়ল। সাগরের মনে নদীকে হারানোর ভয়টা যেন আরো দ্বিগুণ হতে লাগল। সাগরের সব কিছু কেমন যেন ওলোট পালোট মনে হতে লাগল। সাগর এক পা দু পা পিছিয়ে রহিমা বেগমকে চিৎকার করে বলল
–না মা এটা তুমি কিছুতেই করতে পারো না। আরে তুমি জানো না মা আমি নদীকে ছাড়া বাঁচব না তাহলে কেন ওকে বাড়ি থেকে তুমি বের করলে?
সাগরের এমন চিৎকারে পুরো বাড়ি কেঁপে উঠল। তারসাথে রহিমা বেগম, স্নেহা, উর্মিও ভয় পেয়ে গেল। সাগর আর এক মুহূর্তেও না দাঁড়িয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। রহিমা বেগম অনেকবার সাগরকে ডাকলেও সাগর না শুনে নদীকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে। সাগর গাড়িতে উঠে নদীকে খুঁজতে লাগল। কিন্তু রাতে নদীকে কোথায় খুঁজবে তা সাগরের অজানা।
সাগর নদীকে পুরো এলাকায়, রাস্তাঘাটের আনাচে কানাচে পাগলের মতো খুঁজতে লাগল কিন্তু নদীকে সাগর কোথাও খুঁজে পেল না। একসময় ক্লান্ত হয়ে সাগর রাস্তার একপাশে গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় মাটিতে বসে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে কপালে হাত দিয়ে চোখের জল ফেলতে থাকে। সাগর নিজে নিজেই আপন মনে বলতে লাগল
–নদী আমাকে ছেড়ে তুই কোথায় চলে গেলি? প্লিজ নদী তুই আমার কাছে ফিরে আয়৷ তোর যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি কি করে বাঁচব।
সাগর কথাগুলো বলেই সাগরের চোখ বেয়ে দু ফোটা চোখের জল গড়িয়ে পড়ল। কিন্তু হঠাৎই সাগরের মনে হলো যে সাগর বাড়ির আশেপাশে ভালো করে খুঁজে দেখে নি। তাই সাগর দেড়ি না করে গাড়িতে উঠে আবারো নিজের বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে গাড়ি চালাতে লাগল। বেশ কিছুক্ষণ পর সাগর বাড়িতে পৌঁছে যায়৷ গাড়ি থেকে নেমেই সাগর বাড়ির আশেপাশে নদীকে খুঁজতে থাকে। যেহেতু সাগরের বাড়ির আশেপাশে ফুলের বাগান, গাছগাছালি আর চারিপাশটা বেশ বড় তাই রাতের আঁধারে নদীকে কিভাবে খুঁজবে সাগর ভাবতে লাগল। একসময় মোবাইলের টর্চ অন করে সাগর নদীকে চারিপাশে খুঁজতে লাগল। খুঁজতে খুঁজতে একসময় সাগর থেমে যায়৷ সাগরের মুখে হাসি ফুটে উঠল। কারণ সাগর দেখতে পেল নদী মাটিতে বসে গাছের সাথে হেলান দিয়ে মাথা নইয়ে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে। সাগর ধীরে ধীরে নদীর কাছে এসে নদীর মাথায় হাত রাখতেই নদী ভয়ে চিৎকার করে উপরে তাকাতে চাইলেও পারল না৷ কারণ সাগরের মোবাইলের টর্চের আলো নদীর চোখে পড়ে। সাগর সেটা বুঝতে পেরে মোবাইলের টর্চটা অফ করে দেয়। সাগর নদীর পাশে মাটিতে বসে হঠাৎই নদীকে জড়িয়ে ধরে৷ নদী প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও পরে নদী বুঝতে পারে এটা সাগর। নদী সাগরের বুকে মুখ দিয়েই কান্না করতে থাকে। সাগর নদীকে জড়িয়ে ধরেই বলল
–তোকে আমি পুরো এলাকা খুঁজে হয়রান হয়ে গেলাম নদী। আর তুই কিনা আমার বাড়ির পাশে বসে লুকিয়ে কান্না করছিলি। জানিস যদি তোকে খুঁজে না পেতাম তাহলে আমি মরে যেতাম।
সাগরের এমন কথায় নদী কান্না থামিয়ে দেয়। নদী সাগরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বলতে লাগল
–আমি মরে গেলে আপনার কি? আমি তো সামান্য আপনার বাড়ির কাজের মেয়ে। কাজের মেয়ের জন্য বুঝি এতো দরদ রাখতে হয়?
নদীর কথায় সাগর রেগে গেল। রাতের আঁধারে সবকিছু অন্ধকার লাগলেও চাঁদের আলোতে নদীর মুখটা আবছা হলেও সাগর দেখতে পারছে। সাগর নদীর কথায় রেগে নদীর গালে ঠাসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। নদী গালে হাত দিয়ে সাগরের দিকে তাকিয়ে কান্না করতে করতে বলল
–স্যার আপনি আমাকে মারলেন? আপনি খুব পঁচা।
সাগর নদীর গাল থেকে হাত ছাড়িয়ে নদীর দুই গালে নিজের হাত রেখে নদীকে বলল
–বাড়ি চল নদী৷ এখানে আর কতক্ষণ বসে থাকবি তুই?
সাগরের কথা শুনে নদী নিজের গাল থেকে সাগরের হাত ছাড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল
–আমাকে বড় ম্যাডাম বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে স্যার৷ আমার ঐ বাড়িতে আর জায়গা নেই৷ আর আমি তো আপনার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছি। আপনাকে ঠকিয়েছি আমি। তাহলে কেন আমাকে আবার বাড়ি ফিরিয়ে নিতে চান আপনি?
সাগর মুচকি হেসে মাথা নিচু করে শান্ত গলায় নদীকে বলল
–তুই আমাকে ঠকাতে পারিস৷ তুই আমাকে ভালো না বাসতে পারিস। তুই আমার সাথে ছলনা করতে পারিস নদী কিন্তু আমি তা পারব নারে। খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছি তোকে।
–আপনাকে আমি ঠকালাম তারপরেও আপনি আমাকে ভালোবাসেন স্যার?
–হ্যা তোকে ভালোবাসি।
–আচ্ছা স্যার ভালোবাসা কাকে বলে? আমি ভালোবাসার মানে ঠিক তেমন বুঝি না। মুর্খ মানুষ আমি। এতো কিছু কি করে বুঝব বলুন?
নদীর কথায় সাগর হাসতে লাগল। হাসতে হাসতেই সাগর বলল
–কখনো কারও প্রেমে পড়েছিস নদী?
–স্যার আমি প্রেম ভালোবাসা তেমন বুঝি না। বুঝলে কি আপনাকে আমি জিজ্ঞেস করতাম!
–ভালোবাসাটা হলো একজন বিশেষ মানুষের জন্য নিজের মনের ভিতরে লুকানো এক অজানা অনুভূতি। প্রেম থেকেই ধীরে ধীরে ভালোবাসার জন্ম হয়। আর একবার যদি সেই মানুষটার প্রতি তোর গভীর মায়া জন্মায় তাহলে তুই বুঝে নিস তুই ভালোবাসার রোগে আক্রান্ত হয়েছিস। ভালোবাসার মানুষের জন্য তুই পৃথিবীর সেরা বেহায়াপনাটাও করতে পারবি। তখন তুই নিজের মধ্যে থাকবি না। সারাদিন তার কথাই তোর বার বার মনে হতে থাকবে। সে কাছে থাকুক বা দূরে তুই শুধু তার কথাই ভাববি।
সাগরের কথা শুনে শুধু নদী কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর নদী শান্ত গলায় সাগরকে বলল
–স্যার আমি তো সারাদিন আপনার কথা মনে করি। আপনার কথা মনেই হলেই আমার বুকের ধুকপুকানিটা দ্বিগুণ হারে বাড়তে থাকে। তাহলে এর মানে কি স্যার?
নদীর এমন কথা শুনে সাগর অবাক হয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে রইল। নদী কিছু বুঝতে পারল না সাগর কেন তার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে। সাগর হঠাৎই আবারো হাসতে লাগল। এই হাসি কষ্টের না সুখের সেটা নদী বুঝতে পারল না। আর সাগর কেনই বা নদীর কথায় হাসছে তাও নদী বুঝতে পারল না। নদী সাগরকে অসহায় স্বরে বলে উঠল
–স্যার আপনি এভাবে হাসছেন কেন? আমি কি কিছু ভুল বলে ফেলেছি। আমার মনে যা হয় আমি তো তাই আপনাকে বললাম।
সাগর মুচকি হেসে নদীর দিকে মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
–নদী তুই কি জানিস তুই কাউকে মারাত্মকভাবে ভালোবাসিস?
সাগরের কথা শুনে নদী অবাক হয়ে বলল
–স্যার আমি তো আপনাকেই ভালোবাসতে পারলাম না। তাহলে আমি আবার কাকে মারাত্মকভাবে ভালোবাসব?
নদীর কথা শুনে সাগর হাসতে লাগল। সাগর হঠাৎ এমনভাবে কেন হাসছে তা নদী বুঝতে পারল না। একসময় নদী দেখল সাগরের চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। নদী সাগরের চোখে জল দেখে সাগরকে জিজ্ঞেস করল
–স্যার আপনি কাঁদছেন কেন?
সাগর নিজের চোখে হাত দিয়ে দেখল সত্যি সাগরের চোখে জল। তাই সাগর তাড়াতাড়ি নিজের চোখের জল মুছে বলল
–কই কাঁদছি? আমি কাঁদছি নাতো নদী। তুই মনে হয় এই রাতের অন্ধকারে একটু বেশি দেখতে পাচ্ছিস।
–না মানে আসলে স্যার চাঁদের আলোয় আপনার চোখটা চিকচিক করছিল তাই মনে হলো আপনি কাঁদছেন।
–আমি আবার কার জন্য কাঁদব নদী?
–না মানে এমনি বললাম স্যার।
–আচ্ছা চল বাসায় চল। এই বাগানের চারিপাশে কত মশা দেখেছিস? আমার হাত পা কামড়ে লাল করে ফেলেছে৷ আর কথা না বারিয়ে চল।
–কিন্তু স্যার বড় ম্যাডাম…
–মা কিছু বলবে না। তুই চল আমার সাথে।
সাগর বসা থেকে উঠে নদীর হাত ধরে টেনে তুলল। সাগর নদীর হাত ধরে বাড়িতে ঢুকার আগেই নদী থেমে যায়। সাগর পিছে ফিরে নদীকে বলল
–কি হলো নদী? তুই আবার দাঁড়িয়ে পড়লি কেন?
–স্যার!!!!
–আমাকে তুই কিছু বলবি নদী?
হঠাৎই নদী সাগরকে অবাক করে দিয়ে সাগরকে জড়িয়ে ধরল। সাগর নদীর কান্ডে অবাক হয়ে থমকে গেল। সাগরও নদীকে জড়িয়ে ধরে নদীকে শান্ত গলায় বলল
–কি হয়েছে তোর নদী? হঠাৎ আমাকে তুই এভাবে জড়িয়ে ধরলি কেন?
নদী সাগরকে জড়িয়ে ধরেই বলল
–আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিবেন স্যার। আমি জানি না আমি এটা কেন করলাম। কিন্তু আমার মন চাইল। আমি আপনাকে ভালোবাসি না তবুও আমি আপনাকে কেন জড়িয়ে ধরে আছি তা আমি জানি না। আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন স্যার।
–নদী তুই কি পাগল হয়ে গেলি?
–হ্যা স্যার আমি পাগল হয়ে গেছি। আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আমি কি করছি নিজেও জানি না। কাজের মেয়ে হয়ে বাড়ির মালিককে এভাবে জড়িয়ে ধরে আছি। আমি জানি এটা অন্যায়। আমি জানি আপনি আমাকে ভালোবাসলেও আমি আপনাকে ভালোবাসি না। কিন্তু তবুও আমার এই পাগল মন বলল আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরতে। আমার মস্তিক অন্য কিছু বললেও আমার মন অন্য কিছু বলছে। আমি তো এটাই জানি না আমি এখন এটা কি করছি।
সাগর নদীর এমন অদ্ভুত কথার মানে বুঝে একটা মুচকি হাসি দিল। সাগর নদীকে মুখে না বললেও মনে মনে বলল
–আমি জানি তুই আমাকে ভালোবাসিস নদী। তাহলে কেন এভাবে মিথ্যে বলছিস৷ আমার তখন এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল আমি ভালোবেসে ঠকে গেছি কিন্তু তোর এই কান্ড যে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে তুই আমাকে ভালোবাসিস।
সাগর নদীকে শান্ত গলায় বলল
–নদী বাসায় যেতে হবে। আমাকে ছাড়বি না? এই অন্ধকারে আর কতক্ষণ আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখবি?
সাগর নদীর কোনো সারা শব্দ পেল না। নদী সাগরকে এখনো জড়িয়ে ধরে আছে। কিন্তু সাগর অনুভব করতে পারল সাগরের বুকে কোনো শীতল পানির ছোঁয়া লাগছে। সাগর নদীকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে দেখল নদী কাঁদছে।
সাগর বিচলিত স্বরে নদীকে বলল
–কি হলো নদী? তুই এভাবে কাঁদছিস কেন?
–আমি পাগল হয়ে গেছি স্যার। তাই কেন জানি না চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।




#চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে