ভুলতে পারব না তোকে পর্ব-১৭

0
1043

#ভুলতে_পারব_না_তোকে❤
#Part:17
#Writer:Unknown Writer

সাগর নদীকে কোলে করে ছাঁদে নিয়ে গেল। ছাঁদে নদীকে সাগর কোল থেকে নামিয়ে দিল। নদী যেন এবার বাঁচল। নদী সাগরকে বলল
–স্যার আপনি তো আমাকে মারলেন না তাহলে যে বললেন আপনি আমাকে মারবেন! কই ছাঁদ থেকে তো ফেলে দিলেন না!
নদীর কথায় সাগর হাসতে লাগল। আর নদী অবাক হয়ে সাগরের হাসি দেখতে লাগল।
নদী মনে মনে বলল
–স্যার এভাবে হাসছেন কেন?
পাগল হয়ে গেলো নাকি? স্যারের ঘাড়ে কি ভূত চেপেছে? আমার ঘাড় মটকে দিলে কি হবে!
সাগর নদীর বোকার মতো তাকিয়ে থাকা দেখে নদীকে জিজ্ঞেস করল
–কিরে নদী তুই আবার কোন দুনিয়ায় চলে গেলি? এবার তো বাস্তবতায় ফিরে আয়।
সাগরের কথায় নদীর ধ্যান ভাঙল। নদী আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল রাতের আকাশে ছোট ছোট তারা দেখা যাচ্ছে। আর তার একপাশে বড় একটা চাঁদ উঠেছে। নদী চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইল৷ নদী সাগরকে খুশি মনে বলল
–স্যার দেখুন আকাশে চাঁদ উঠেছে। কত সুন্দর চাঁদটা তাই না?
সাগর নদীর কথায় মুচকি হাসি দিয়ে নদীকে বলল
–হ্যা নদী আকাশের চাঁদটা সত্যি খুব সুন্দর। কিন্তু আকাশের চাঁদের থেকে তুই আমার কাছে বেশি সুন্দর।
সাগরের কথায় নদী সাগরের দিকে অবাক হয়ে তাকাল। সাগর আবারো নদীকে বলল
–দেখ নদী চাঁদের পাশাপাশি আকাশে কত তারাদের খেলা চলছে। তারারা কত সুন্দর ঝলমল করছে।
নদী সাগরের কথায় তারাদের দিকে তাকাতে লাগল। নদী একটু হাসি দিয়ে সাগরকে বলল
–স্যার ঐ দেখুন ঐ তারাটা একটু বড় বাকি তারাদের থেকে।
নদী বাচ্চাদের মতো সাগরকে তারা দেখাচ্ছে আর সাগর নদীকে দেখছে।
এবার নদীর হঠাৎ ভয় হতে লাগল। নদী সাগরের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে বলল
–স্যার আপনি তো আমাকে মেরে ফেলতে এনেছেন। তাহলে আকাশের চাঁদ তারা কেন দেখাচ্ছেন?
–চাঁদ তারা গুলো এজন্যই দেখাচ্ছি যে আমিও একদিন ঐ আকাশে চলে যাব তারা হয়ে। তখন তুই আমাকে ঐ তারার মাঝে কেঁদে কেঁদে খুঁজে বেড়াবি।
সাগরের কথায় নদীর ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়। নদী কাঁপা কাঁপা গলায় সাগরকে বলল
–মা মানে কি স্যার? আ আপনি আকাশে চলে যাবেন মানে?
নদীর কথায় সাগর এক রহস্যময় হাসি হাসতে লাগল। সাগর নদীর কাছে এসে নদীকে কোমড় জড়িয়ে ধরে নদীর চোখে চোখ রেখে বলল
–একবার কি আমাকে ভালোবাসা যায় না নদী?
সাগর হঠাৎই এভাবে কোমড় জড়িয়ে ধরায় নদী ভয়ে কেঁপে উঠে। নদী সাগরকে ভয় পেয়ে বলল
–স্যার আমাকে ছেড়ে দিন। আমি রুমে যাব। আমার এখানে একদমই ভালো লাগছে না। দয়া করে আমাকে আপনি ছেড়ে দিন।

[[[ বন্ধুরা এটাই হয়তো আমার জীবনের শেষ গল্প। এর পর থেকে আর কোনোদিন গল্প পাবেন না। এই গল্পটা শেষ করে হারিয়ে যাবো আপনাদের থেকে চিরদিনের জন্য। Profile এর পাশে সবুজ বাতি টাও আর জ্বলবে না কোনোদিন। হারিয়ে যাবো আপনাদের থেকে। 😥😥😥। ]]]

নদীর কথায় সাগরের খুব রাগ হতে লাগল। সাগর হঠাৎই নদীকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিল। নদী কিছুটা ছিটকে দূরে পড়ে। আরেকটু হলেই মাটিতে পড়ে যেত৷ কিন্তু নদী নিজেকে সামলে নেয়। সাগর চিৎকার করে নদীকে বলল
–একটা কথা আর কতবার বলবি তুই? বল আর কতবার বলবি? আরে এতো মেয়ে থাকতে তোকেই কেন আমি ভালোবাসলাম? আর সেই তুই কেন আমাকে এভাবে বার বার ফিরিয়ে দিচ্ছিস বলতে পারিস?
–আপনি কেন বুঝতে পারছেন না স্যার আমার মতো একটা কাজের মেয়ে আপনার মতো একজন সুদর্শন ধনী পরিবারের ছেলের ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়। কতবার বলব আমি আপনাকে? আর আপনার এই ভালোবাসা কয়দিনই বা টিকে থাকবে? আমার এই ভালোবাসা চাই না স্যার। যেই ভালোবাসায় কিছুদিন মন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে ছুঁড়ে ডাস্টবিনে ফেলা দেওয়া হয়৷
–তোর মনে হচ্ছে আমি তোর সাথে ভালোবাসার অভিনয় করছি? আমার ভালোবাসার কথাগুলো তোর কাছে বার বারই নাটক মনে হচ্ছে?
–হ্যা স্যার আমার প্রতি আপনার এই অতিরিক্ত দরদগুলো এখন আমার নাটক ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না৷
–তোর কি এটাই শেষ কথা?
–হ্যা আমার এটাই শেষ কথা।
সাগর নদীর কথায় একটা হাসি দিল। তারপর ছাদের কিনারা যেতে লাগল। ছাদের কিনারায় কোনো রেলিং নেই তাই সাগর কিনারার আরো কাছে যেতে লাগল। নদীর সাগরের এই কান্ড দেখে অবাক হয়ে যায়৷ নদী প্রথমে ভেবেছিল সাগর নদীকে ভয় দেখানোর জন্য এমন করছে কিন্তু পড়ে নদী আরো অবাক হয়ে যায়। সাগর ছাঁদের একদম কিনারায় এক পা বাড়াতেই নদী দৌড়ে সাগরকে একটান দিয়ে জড়িয়ে ধরে। নদী কান্না কান্না করতে করতে সাগরকে বলল
–স্যার আপনি এসব কি করতে যাচ্ছিলেন? আপনি আত্মহত্যা করতে চাইছিলেন স্যার?
–যে জীবনে ভালোবাসা নেই। সে জীবন রেখে কি লাভ?
নদী সাগরকে ঠাসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দিল। সাগর কখনো ভাবতেও পারে নি নদী সাগরের গালে থাপ্পড় মারবে। সাগর গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে রইল। নদী রেগে চিৎকার করে সাগরকে বলল
–আমাকে এতো ভালোবাসতে আপনাকে কে বলেছিল? আমি বলেছিলাম আপনাকে ভালোবাসতে? এতোই ভালোবাসেন যে আমার জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিচ্ছেন? আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন স্যার?
–হ্যা হ্যা হ্যা আমি তোকে ভালোবেসে পাগল হয়ে গেছি। নিজের অজান্তেই আমি তোকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। আর সেটা যদি হয় আমার অপরাধ তাহলে আমি সেই অপরাধে আর বেঁচে থাকতে চাই না।
–এতো এতো মেয়ে থাকতে কেন আমাকেই ভালোবাসলেন স্যার? আপনার বাড়ির কাজের মেয়েকেই কেন ভালোবাসলেন আপনি? আমি তো দেখতে তেমন সুন্দরী না যে আমাকে ভালোবাসতে হবে।
–মন কি কারও কথা শুনে নদী৷ এতে আমার কোনো হাত নেই। আমার মন বার বার শুধু তোকে চেয়েছে৷ তোর থেকেও হাজার সুন্দরী মেয়ে আমাকে এনে দিলেও আমার মন শুধু তোকেই চাইবে। যেদিন আমি তোকে এই বাড়িতে প্রথম দেখিছিলাম সেদিনই আমার তোর সাথে দুষ্টুমি করতে মন চাইছিল। অদ্ভুত বিষয় আমি আজ পরযন্ত কোনো মেয়ের দিকেও ফিরে তাকায় নি। আর সেই তুই নদী আমার মনে ঢুকে গেলি। এখন আমি নিজে হাজার চাইলেও তোকে এই মন থেকে মুছতে পারছি না আর না পারছি ভুলতে। কি করে তোকে ভুলতে পারব আমি বলতে পারিস নদী? আমার যে তোকে ছাড়া অন্য কোনো মেয়েকেই ভালো লাগে না। আচ্ছা আমি যদি মরে যাই তাহলো তো তোকে ভুলতে পারা সম্ভব। তাই না নদী?
সাগরের কথা শুনে নদী কেঁদে দিল। কাঁদতে কাঁদতে নদী মাটিতে বসে পড়ল। আজ নদীর মন বলছে সাগরকে ভালোবাসতে। হ্যা এই ভালোবাসায় কোনো খুঁত নেই। নদী এমন কাউকে জীবনে পেয়েছে যা নদী কখনো স্বপ্নেও ভাবে নি। এই ভালোবাসা যে নিখুঁত ভালোবাসা।
নদী মাটিতে বসে কাঁদছে দেখে সাগরও নদীর কাছে মাটিতে বসে নদীর এক গালে হাত দিয়ে নদীকে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করল
–কাঁদছিস কেন তুই নদী?
নদী সাগরের দিকে কান্নাজড়িত চোখে তাকিয়ে বলল
–এতো ভালোবাসা কেউ কাউকে বাসে না৷ আপনি কেন আমাকে এতো ভালোবাসতে গেলেন? জানেন এই ভালোবাসা কতো ভয়ংকর হতে পারে? অতিরিক্ত ভালোবাসা কাউকে কখনো বাসা ঠিক নয়। যদি আমি আপনার ভালোবাসার মর্যাদা রাখতে না পারি তাহলে তো আমি আপনার কাছে সারাজীবন অপরাধী হয়ে থাকব।
সাগর নদীকে জড়িয়ে ধরে বলল
–তুই কেন অপরাধী হবি নদী? তুই শুধু আমাকে একটু ভালোবাসা দে তাহলে আমার আর কিছুই চাই না।
নদীও সাগরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। নদী কাঁদতে কাঁদতে বলল
–স্যার আমি আপনার এমন পাগলের মতো ভালোবাসা বুঝতে পারে নি। আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন।
–ক্ষমা আমি তোকে কোনোদিনও করব না।
–কেন স্যার?
–আমাকে স্যার না বলে সাগর বলে ডাকবি।
নদী সাগরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বলল
–সেটা কি করে হয় স্যার? আমার এতোদিনের অভ্যাস আমি কি করে পাল্টাবো? এটা আমার দ্বারায় হবে না।
–একবার আমার নামটা বলার চেষ্টা তো কর?
–স্যার পারব না আমি।
–আমি কি তাহলে ছাঁদ থেকে লাফ দিয়ে মরে যাবো?
–না না না। আমি বলছি।
–সা… সা… সা
–আরে কি সা সা সা করছিস নদী? আমার নামটাও কি ঠিক করে বলতে পারবি না?
নদী চোখ বন্ধ করে বলল
–সাগর… সাগর…. সাগর।
সাগর নদীকে এভাবে ভীতু গলায় নাম ধরে ডাকাতে সাগর মাটিতে হাত দিয়ে হাসতে থাকে। নদী চোখ খুলে সাগরের হাসি দেখে নিজেও হাসতে থাকে।




#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে