ভুলক্রমে – লেখনীতে-তানভীন শিলা

0
690

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগষ্ট_২০২০
ভুলক্রমে
লেখনীতে-তানভীন শিলা

“আমি পালিয়ে বিয়ে করতে চাই।”
“আমাদের বাড়ি থেকে তো মেনেই নিয়েছে, পালিয়ে কেন বিয়ে করতে যাবো?”
“নাহ্ আমি পালিয়েই বিয়ে করবো। তুমি করবে কিনা বল।”
“তোমার এইসব পাগলামী আমার মোটেই ভালোলাগেনা মুশু।”
“তা কেন লাগবে? এখন তো ভালোবাসোনা আমায়।”
“আচ্ছা ঠিক আছে, একটা ছোট ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বের হয়ে আয় বইন। আমি ১০মিনিটে পৌঁছে যাবো।”
“ইচ্ছে পূরণ করতে বলায় বইন হয়ে গেলাম? যাও লাগবেনা আসতে।”
মুশরিকার অভিমানি স্বরে বলা কথাটা তীরের মতো বিঁধে রাকিবের বুকে। মেয়েটা কষ্ট পেলে তারও যে বড্ড বেশিই কষ্ট হয়। ৫বছরের রিলেশন শেষ করে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছে তারা। তবে মুশুর জন্য হয়তো সুষ্ঠুভাবে বিয়েটাও করতে পারবেনা রাকিব। যখন যা ইচ্ছা হয় তাই করতে চায় মুশু। মাত্র ১সপ্তাহ্ পর তাদের বিয়ে, আর আজ মুশুর একটা ইচ্ছা পূরণ করতে বাড়ি ছেড়ে পালাতে হবে তার।
মুশুর বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে রাকিব। মুশুকে দুইবার কল দিয়েও লাভ হয়নি। মেয়েটা যে বড্ড অভিমানিনি। হয়তো নিজের মত পাল্টে দিয়েছে। রাকিবকে ভুল প্রমাণিত করে ৩মিনিটের মধ্যে উপস্থিত হয় মুশু।
“ভেবেছিলাম আমার প্রাণপাখি অভিমানের গলিতে হারিয়ে গেছে।”
“আমি তো তোমার বোন লাগি। আমার সাথেও কেউ নাই, কাকে প্রাণপাখি বলতেছো?”
রাকিব মুশুকে কাছে টেনে নিয়ে গালে হাত রেখে বলে-
“তুই আমার বোন না বউ লাগিস। এখন চল নয়তো ধরা পরে যাবো।”
“হাউ রোম্যান্টিক। আরো কিছুক্ষণ থাকি প্লিজ? বাবা অথবা চাচ্চু বের হয়ে আমাদেরকে জোর করে নিয়ে বাড়িতে ঢুকবে। তারপর পালিয়ে যাওয়ার প্লান করায় বিয়ে দিয়ে দিবে। আমি কান্না করতে থাকবো আর তুমি…”মুশুকে বলতে না দিয়ে রাকিব বলে-
“বিয়ে না ডিরেক্ট শুট করে দিতো। তবে আমাদেরটা ভিন্ন, কেননা হবু বর তার হবু বউকেই নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। সবাই নিজেদের পেট ধরে ফ্লোরে শুয়ে নাগিন ড্যান্স দিয়ে হাসবে।”
রাকিবের কথা শুনে মুশু খিলখিল করে হেসে ওঠে। এই হাসিটা রাকিবের বড্ড পছন্দের।
“মুশু চল প্লিজ দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
“কোথায় যাওয়ার জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে? তুমি কি সব রেডি রেখেছো? আর বাইক কেন এনেছো?”
“পালিয়ে কোথায় যাবি? একটা সপ্তাহ্ পরেই তো বিয়ে মুশু। আমাদের শহর থেকে কিছুটা দূরে যে বাড়িটা আছে সেটায় থাকবো আমরা। বাইকে না গেলে কিভাবে যাবো? হেঁটে যেতে বুঝি?”
“তাহলে পালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি তো গন্তব্যহীন পথে পাড়ি দিতে চাই। হেঁটে নয় দৌড়িয়ে যেতাম। তুমি বড্ড আনরোম্যান্টিক, মুভি কেন দেখনা বলতো? আমরা দৌড়াতাম আর বাড়ির লোকেরা পিছু নিতো। আহ্ আমার তো ভাবতেই ভালোলাগতেছে।”
“আচ্ছা চলো তুমি, যেখানে যেতে চাইবে সেখানেই নিয়ে যাবো। তবে বাইক ছাড়া পসিবল না।”
“হুম চলো।”
মুশু আর রাকিব পাড়ি দেয় অজান পথে। গত ৫বছরে একবারের জন্যও মুশুর কোন কর্মকান্ডে বিরক্ত হয়নি রাকিব, কিন্তু মাঝে মাঝে রেগে যেতো। মুশুর ইচ্ছেগুলোই যে অদ্ভুত রকমের। মাঝে মাঝে শুধুমাত্র একটু দেখবে বলে বায়না ধরতো।
জোড়ে ব্রেক কষে রাকিব।
“কি হলো রাকিব? আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছো।”
“সামনে দেখো মুশু।”
মুশু সামনে তাকাতেই আতঁকে উঠে। চোখ বন্ধ করে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাকিবকে।
“রাকিব আমাকে কেন দেখালে? তুমি জানোনা আমার এইসব দেখতে ভয় লাগে?”
“নামো মুশু চেক করতে দাও আমায়। লোকটি যদি বেঁচে থাকে তাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।”
“নাহ্ তুমি এখান থেকে চলো।”
“প্লিজ এখন পাগলামী করোনা। লোকটা যদি বেঁচে থাকে আর আমরা চলে যাই, তার মৃত্যুর জন্য আমরা দ্বায়ী হয়ে যাবো।”
মুশু কান্না করে দিয়ে বলে-
“এমন বিভৎস্যভাবে মরে পরে আছে আর তুমি বলছো বেঁচে আছে কিনা দেখবে? প্লিজ চলো এখান থেকে।”
“আচ্ছা তো পুলিশকে জানিয়ে দেই। নাহলে দেখা যাবে বনের হিংস্র্র পশুদের আহার হয়ে যাবে।”
“সেটা করতে পারো, কিন্তু এই খুনের দায়ভার যদি আমাদের উপরে পরে?”
“উফ্ তুমি সিনেমা একটু কম দেখবে বুঝলে? এটা রিল নয় রিয়েল লাইফ। আমরা অলরেডি জড়িয়ে গেছি এই লাশের সাথে, ইনকয়েরির জন্য বেশ কয়েকবার পুলিশ ষ্টেশনেও যেতে হতে পারে তবে আমরা দ্বায়ী নই সেটা প্রমাণ দিলেই হবে। আমরা তো জানিও না এই লোকটা কে। আমি বরং পুলিশকে কল দিয়ে জানিয়ে দেই।”
রাকিব পুলিশকে কল দিয়ে সব জানিয়ে লোকেশন ও দিয়ে দেয়। যেহেতু মুশু ভয় পাচ্ছে তাই সে মুশুকে নিয়ে তাদের শহর থেকে দূরে যে বাড়িটা আছে সেটাতে চলে আসে। পুলিশকে তাদের স্থান ত্যাগের কথাও জানিয়েই দিয়েছে। বাড়িতে পৌঁছানোর পরে রাকিব মুশুর জন্য সাথে করে নিয়ে আসা খাবার গরম করে খাইয়ে দেয়। প্রচন্ড ভয় পেয়েছে মেয়েটা তার চেহারায় সম্পূর্ণটাই দৃশ্যমান।
“রাকিব আমি একা থাকতে পারবোনা।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
রাকিব মুশুকে নিয়ে ড্রইংরুমের সোফায় বসে। মুশুকে বলে পা তুলে শুয়ে পরতে। মুশু রাকিবের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে। খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাকিবের কোমর। রাকিব মুচকি হেসে মুশুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। কিছুক্ষণের মথ্যেই ঘুমিয়ে যায় মুশু। রাকিবের কোমর থেকে মুশুর হাত আলগা হতেই রাকিব নিজেও সোফায় শরীর এলিয়ে দেয়। প্রায় ১০মিনিট পরে রাকিবের ফোনে কল আসে।। কলের রিংটোন-এর কারণে মুশুও জেগে যায়, কেননা সে প্র্রচন্ড ভয় তাকে ঘুমের শহরে যেতে বাঁধা দিচ্ছিল। রাকিব ফোনে কথা বলে বেশ চিন্তায় পরে যায়। রাকিবকে চিন্তিত দেখে মুশু প্রশ্ন করে-
“কি হলো রাকিব, কে কল দিয়েছিল? তোমাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?”
“পুলিশ কল দিয়েছিল মুশু। আমাদের বলা লোকেশনে তারা কোন লাশ পায়নি। রক্তের ছিটেফোঁটাও নাকি ছিলনা সেখানে।”
“লাশ কোথায় গায়েব হয়ে গেলো রাকিব? আমার প্রচন্ড ভয় লাগতেছে রাকিব।”
মুশুকে কি বলে শান্তনা দিবে জানা নেই রাকিবের, কেননা সে নিজেও চিন্তিত। পুলিশ নাকি আশেপাশেও চেক করেছে, যদি কোন হিংস্র জন্তু টেনেও নিয়ে যেতো কোন না কোন ক্লু তো থাকতোই। যেহেতু পাওয়াই যায়নি নিশ্চই কেউ গায়েব করেছে নয়তো মরে নয় লোকটি জীবিত ছিল। রাকিবের ভাবনার মাঝে মুশু বলে-
“লোকটা মরে ভূত হয়ে আমাদের সাথে এসে পরেনি তো?”
মুশুর কথা শুনে রেগে যায় রাকিব, কিন্তু প্র্রকাশ করেনা। মেয়েটা শুধু সিনেমার জগতেই বিচরণ করে, বাস্তবতার ছিটেফোঁটার সাথে যেন তার কোন সম্পর্ক-ই নেই। যেহেতু ভয় পাচ্ছে তাকে অন্য কিছু বলে বেশি চিন্তায় ফেলে দিতে চায়না রাকিব। এভাবে কোন লাশ কিভাবে গায়েব হতে পারে সেটাও ভাবাচ্ছে রাকিবকে। কেন রক্তের ছিটেফোঁটার চিহ্নও থাকেব না? লাশের পেট দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পরেছিল রাস্তায় অনেকখানি আবার চেহারাও তো কতটা বিভৎস্যরূপে ছিল। কেউ কি প্ল্যানিং করে সব করেছে? অতিরিক্ত চিন্তা করায় রাকিবের মাথায় চিনচিন ব্যথার উৎপত্তি হতে শুরু করে। রাকিব ট্যাবলেট খেয়ে মুশুসহ একটা নির্ঘুম রাত কাটায়। মুশুকে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও ঘুমের শহরে নিতে পারেনি রাকিব।
.
সকাল ৭:১২মিনিট
আধো আধো চোখ লেগে এসেছিল রাকিবের আর মুশু তো ৬টার পরেই ঘুমিয়েছে। ডোর বেলের টুংটাং আওয়াজে দুজনেরই ঘুম টুংটাং শব্দের সাথেই গায়েব হয়ে যায়। মুশু জাপটে ধরে রাকিবকে, কেননা তারা এখানে আছে কেউই তো জানেনা। আর বাড়ির লোকেরা হলেও তারা এতো সকালে আসবেনা। রাকিব মুশুকে সড়িয়ে উঠার জন্য মুশুর হাত ধরতেই অবাক হয়ে যায়। এতো সিনেমা দেখেও ভয় কাটাতে পারেনি মুশু, প্রচন্ডরূপে কম্পন অনুভব করতে পাচ্ছে রাকিব। রাকিব বাধ্য হয়েই মুশুকে বাম পাশের বাহুডোরে আবদ্ধ করে গেট খুলে দেয়। পুলিশকে দেখে মুশু সম্পূর্ণই রাকিবের সাথে মিশে যায়। রাকিবের প্রচন্ড রাগ লাগতেছে, একটু শান্ত থাকতে কেন পারতেছেনা মেয়েটা? এমন একটা সেন্সিটিভ বিষয়ে এতো ভয় পেলে চলবে না। বাধ্য হয়ে রাকিব মুশুকে তার বেডরুমে নিয়ে লক করে দেয়। কেননা পুলিশের সাথে কথা বলার সময় ভয় পেলে চলবে না, হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।
“মি. রাকিব আপনার ওয়াইফ কি মেন্টালি আনওয়েল?”
“গতরাতের পর থেকে অনেক বেশিই ভয় পেয়েছে অফিসার। আবার লাশ পাওয়া যায়নি শুনে তো ঘুমোতেই পারেনি। কোন ক্লু পেয়েছেন কি অফিসার?”
“নাহ্ কোন ক্লু পাইনি। একফোঁটা রক্তও পাওয়া যায়নি মি. রাকিব। আপনার বলা বিবরণের সাথে নাতো লাশ পেয়েছি আর না রক্ত।”
পুলিশের সাথে কথা বলার সময় রাকিব মুশুর চিৎকার শুনতে পায়। হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যায় মুশুর কাছে। গেট খুলে মুশুর কাছে যেতেই রাকিবকে জাপটে ধরে মুশু শুধু লাশ লাশ বলতে থাকে। পুলিশ অফিসার মুশুর হাত অনুসরণ করে দেখতেই রাকিবের দিকে তাকায়। রাকিব পুলিশ অফিসারে দৃষ্টির অর্থ বুঝতে না পেরে নিজেই কিছুটা ঝুঁকে বেডের অপরপাশে চোখ বুলিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। গতরাতে দেখা লাশ তার বাড়িতে কিভাবে আসলো? রাকিবের ঘোর কাটে পুলিশ অফিসারের প্রশ্নের হুংকারে-
“মি. রাকিব! আপনি বাড়িতে লাশ রেখে আমাদেরকে মিথ্যা ইনফরমেশন দিয়ে নিজেকে নিদোর্ষ প্র্রমাণ করতে চেয়েছিলেন? আপনার কথা মতো সেই নিস্তব্ধ রাস্তায় আমরা ঠিকই গিয়েছিলাম, হয়তো আপনি এক্সপেক্ট করেননি যে আমরা আজকেই আপনার বাড়িতে চলে আসবো। জানলে হয়তো অন্য কোথাও গায়েব করে দিতেন।”

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

রাকিব নির্বাক। কেননা পুলিশ অফিসার মুহিনকে বলার মতো তার কাছে কিছুই নেই। যাই বলুক না কেন এইমুহুর্তে বিশ্বাস করাতে পারবে না। সে তো সত্যিই জানেনা এই লাশটা এখানে কিভাবে আসলো। আর বাড়িটা যেহেতু তার, এখানে একটা লাশ আনতেও নিশ্চই তার অনুমতির প্রয়োজন আছেই। মুহিনকে রাকিব বলে-
“অফিসার সত্যিই আমি জানিনা এই লাশটা কিভাবে এলো আমার বাড়িতে এবং আমারই শয়ন কক্ষে।”
রাকিবের কথা উপেক্ষা করে মুহিন তার দুজন কনে্সটেবলকে বলে লাশটাকে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যেতে। লাশ নিয়ে যেতেই অফিসার রাকিবকে তার সাথে নিতে চাইলে মুশু বাঁধা দিয়ে বলে-
“প্লিজ অফিসার রাকিবকে নিয়ে যাবেন না প্লিজ। আমরা কিছুই করিনি, আমরা তো জানিও না ঐ লাশটা কার। সে আমাদের পরিচিত কিনা সেটাও জানা নেই। প্লিজ রাকিবকে নিয়ে যাবেন না।”
“ঠিক আছে মি. রাকিবকে এখনই নিবোনা, কিন্তু আপনারা শহর ছেড়ে কোথাও যেতে পারবেন না। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আমি হাতে পেলেই যোগাযোগ করবো আপনাদের সাথে।”
পুলিশ চলে যেতেই জোড়েই কান্না করে মুশু। এমন একটা খুনের দ্বায়ে তারা ফেঁসে গেছে যেখানে তারা জানেই না মৃত ব্যক্তি কে। অনেক কষ্টে শান্ত করে রাকিব মুশুকে। বাড়িতে কল দিয়ে জানিয়ে দেয় তারা যেন চিন্তা না করে আর বিয়ের ডেট আরো একসপ্তাহ্ পিছাতেও বলে।
৭দিন পর-
কল রিসিভ করে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে রাকিবের। মুহিন জানিয়েছেন সে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ২দিন আগেই পেয়েছে। লাশের আইডেন্টিটিসহ তার হত্যাকারীদেরও পেয়েছেন। সবকিছু কিভাবে তারা করেছে সেটা জানানোর জন্য ডেকেছেন তিনি রাকিবকে।
রাকিব মুশুকে নিয়ে মুহিনের কেবিনে বসে আছে। মুশু কিছুটা নিশ্চিন্ত হলে পুরোপুরি হতে না পারায় কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে আছে। মুহিন তার কেবিনে প্রবেশ করলে রাকিব উঠে দাড়ালেও মুশু ছিল অন্যমনস্ক। রাকিবের সাথে হ্যান্ডশেক করে মুশুকে প্র্রশ্ন করতেই মুশু হন্তদন্ত হয়ে উঠে যায়। অফিসার বলেন—
“রিল্যাক্স মিস. মুশরিকা। ঘাবড়াবেন না প্লিজ। আমরা খুনিদের পেয়ে গেছি, তাই আপনি এতো চিন্তা না করে নিজের বিয়েতে কন্সন্ট্রেট করুন। আপনারা শুধু ভুলক্রমে সেই স্থানে গিয়েছিলেন।”
অফিসারের কথায় অবাক হয় রাকিব। কেননা সে তো বলেছিল মুশু আর রাকিব দুজনে বিবাহিত। অফিসার সত্যিটা জানলো কিভাবে? রাকিবকে অবাক হতে দেখে অফিসার বলেন-
“আপনার যেহেতু সাসপেক্ট ছিলেন তাই সব খোঁজ নিতে হয়েছে। আপনাদের কাছে এক্সপ্লেনেশন চাবো না। এখন যা বলবো শুধু সেগুলোই শুনুন।”
অফিসার সব বলতে শুরু করেন-
“মৃত ব্যক্তির নাম জোবাইদ চৌধুরী। পেশায় তিনি বিজনেসম্যান। তার দুটো ভার্সিটিও রয়েছে, অনেক মেহনতি মানুষ ছিলেন সে। শুরুতে তো কিছুই ছিল না তার, একাই করেছেন সবকিছু। সব করতে করতে বয়সটাও এুকটু বেশি হয়ে যায়। তার বয়স ৪৮বছর। ৪৪বছর বয়সে বিয়ে করেন তিনি। এমন একজন মানুষকে বিয়ে করলে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া যাবে, কোন মেয়ে-ই বা না চাইবে ওনাকে বিয়ে করতে? সব মেয়েদের কথা বলছি না। থাকে তো কিছু কিছু অর্থলোভী মেয়ে। ঠিক তেমন-ই তার স্ত্রী নয়নতারা রহমান। অর্থের লোভে তার স্বামী-ই তার দ্বিতীয় বিয়ে করান। দ্বিতীয় বিয়ে অর্থের কারণে হলেও প্রথমটা ছিল প্রেমের। নয়নতারার প্রথম স্বামী মোস্তাকিন, জোবাইদ চৌধুরীর ম্যানেজার ছিলেন। কারণে-অকারণে প্রেমের টানে ছুঁটে আসতেন মোস্তাকিন নয়নতারার কাছে। ৪বছর লুকিয়ে বিবাহিত প্র্রেম চালিয়েছেন তারা। ৭দিন আগে জোবাইদ চৌধুরী জরুরী মিটিংয়ে দুবাইয়ে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন কিন্তু মিটিংটা কোন কারণে ক্যান্সেল হয়ে যায়। বাড়িতে ফিরে এসে নিজের বেডরুমে তারই বউকে তার ম্যানেজারের সাথে গভীরভাবে-লিপ্ত পেয়ে মাথা ঘুড়ে পরে যান। আওয়াজ পেয়ে নয়নতারা আর মোস্তাকিন তাকাতেই দেখে জোবাইদ তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। জোবাইদ উঠে ঘর থেকে বের হবে এমন সময় মোস্তাকিন তাকে ঘাড় ধরে ঘরে টেনে নেয়। জোবাইদ নানান রোগে অসুস্থ হওয়ায় তাদের সাথে পেরে উঠেনি। প্র্রথমে ফ্লাওয়ার ভাস্ দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয় তার, তারপরে নয়নতারা নিজেই চাকু ঢুকিয়ে দেন তার পেটে। ঐ নিস্তব্ধ রাস্তায় নিজেদের গাড়ি লুকিয়ে রেখে লাশ বের করে জঙ্গলে ফেলে দেয়ার জন্য বের করে রাস্তায় রাখতেই আপনাদের বাইকের আওয়াজে নিজেরাও লুকিয়ে পরে। আপনারা আমাদের কল দেয়ায় রেগে যায় দুজনে। আপনারা স্থান ত্যাগ করতেই লাশটাকে আবারো গাড়িতে তোলা হয়। রাস্তায় পরে থাকা রক্ত সুন্দর করে ধুয়ে পানিটাকেউ শুকিয়ে দেয়। সবকিছু সাথে করেই নিয়ে গিয়েছিল। কতটা প্ল্যানিং সহকারে করেছে বুঝতে পেরেছেন নিশ্চই? আচ্ছা তারপর শুনুন। আপনাদের পিছু নেয় নয়নতারা আর মোস্তাকিন। আপনাদের গেটে থাকা দারোয়ানকে কিছু টাকা খাইয়ে গাড়ি নিয়ে বাড়িতে ঢুকে পরে। দারোয়ানের সাহায্যেই কাঁচের জানালা হওয়ার সুবাদে খুব সহজেই খুলতে সক্ষম হয়। দারোয়ানকে অবশ্য লাশ সম্পর্কে কিছু জানায়নি তখনও। মি. রাকিব আপনার বাড়ির দারোয়ানও কিন্তু এখন আমাদের স্পেশাল সেলে রয়েছে। দারোয়ান চলে যেতেই্ লাশ নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন তারা। লাশটাকে সুন্দর করে গুছিয়ে রেখে গাড়ি নিয়ে আপনাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।”
“তাদের ধরলেন কিভাবে?”
“সিসিটিভি ক্যামেরা। জোবাইদ চৌধুরীর বাড়িতে মোট ১৭টা সিসিটিভি ক্যামেরা পেয়েছি আমরা। সেগুলোর মধ্যে ৪টা ছিল হিডেন। ফুটেজ দেখে ধরতে সক্ষম হয়েছি। জানালায় লেগে যাওয়া রক্ত পরিষ্কার করতে ভুলে গিয়েছিল হয়তো। তাই আপনাদেরকে না জানিয়েই ইনফরমেশন কালেক্ট করে ফেলি।”
রাকিব আর মুশু মুহিনকে ধন্যবাদ দিয়ে বাড়িতে আসে। আজই তারা বিয়ে করবে জানালে কেউই আপত্তি না করে বিয়ে করিয়ে দেয় তাদের।
.
সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে