ভিলেনি ভালোবাসা পর্ব-০৯

0
1090

#ভিলেনি_ভালোবাসা
পার্টঃ ০৯
লেখিকাঃ #তিথি_সরকার

সকাল ৭টা বেজে ৩৫ মিনিট তুলি ঘুম থেকে উঠার পর তুলির মাথা ব্যাথা ধরেছে সারারাত কান্না করার ফলে।
তুলি আজ কলেজে যাবে না ঠিক করলো তাই ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে আসলো।
নিচে নামার সময় দেখলো তুলির আম্মু তুলির আব্বুর সাথে কোনো একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। আর তুলি নিচে নামতে নামতে যা বুঝতে পারলো তা হলো তুলির আম্মু ওই বাড়িতে অর্থাৎ তিয়াশ দের বাড়িতে যাবে না এই নিয়েই তাদের বিবাদ চলছে।
তুলি তাদের সামনে এসে বললো তোমরা কি নিয়ে আলোচনা করছো?
তুলির আব্বু বললো তোর দাদী আর বড় কাকারা চায় আমরা আবার আগের মতো যৌথ পরিবার হয়ে থাকি কিন্তু তোর মা আর ওই বাড়িতে যেতে চাইছে না। তখন তুলির আম্মু বলে উঠলো আবার অপমানিত হতে ইচ্ছে করছে তোমার? আর কেউ জানুক আর না জানুক আমি জানি যে তোমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ব্যবসা থেকে সরিয়েছে তোমার মেজো ভাবি। তার পরেও আবার যেতে চাইছো।
তুলির আব্বু বললো দেখো তা আমিও বুঝতে পেরেছিলাম কিন্তু আমি কিছু বললে ভাইয়ের সংসারে অশান্তি লাগতো। আর তাছাড়া আমার কোনো প্রমাণ ও ছিলো না। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো মায়ের ইচ্ছে যাতে আমরা সবাই এক সাথে থাকি।
এই কথা বলার পর তুলির আম্মু আর কিছু বললো না কারণ তিনি তার শাশুড়ি মাকে অনেক ভালোবাসে।

তুলি মনে মনে ভাবলো যার থেকে দুরে সরে থাকতে চায় আবার তার সামনেই যেতে হবে ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তুলি।

এদিকে তিয়াশ তার দাদী কে জড়িয়ে ধরে বলছে আমার কথা রাখার জন্য তোমাকে এত্ত এত্ত ধন্যবাদ মাই সুইট হার্ট দাদী মা।
তিয়াশ মনে মনে বলছে এবার কোথায় পালাবে ক্যাশোবতি।


দুপুরের দিকে তুলি আর তুলির আব্বু আম্মু ওই বাড়িতে গিয়ে পৌঁছালো। বাড়ির সবাই খুশি হলেও তিয়াশের আম্মু যে তুলি দের দেখে খুশি হয়নি তা তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
তুলি রা যেই ঘরে আগে থাকতো সেই ঘরেই তারা থাকবে। আর তুলির ঘর তিয়াশ এর ঘরের সাথে দেওয়া হয়েছে।

তুলি ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে দাদীর ঘরে ঢুকলো। দাদী কে সালাম দিয়ে কেমন আছে জিজ্ঞেস করলো।
মিসেস আমেনা (দাদী) তুলি কে তার পাশে বসতে বললো আর জিজ্ঞেস করলো ভালো আছি দিদি ভাই। তুমি কেমন আছো?
তুলি বললো ভালো আছি দাদী।
তুলি কে মিসেস আমেনা বললো কাল রাতে না বলে কেনো চলে গিয়েছিলে দিদি ভাই? তুমি থাকলে তোমার জন্য কতো ভালো হতো জানো। বলেই তিনি পানের বাটা নিয়ে বসলেন।
তুলি বললো কাল রাতে হঠাৎ করেই শরীর টা অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো তাই চলে গিয়েছিলাম দাদু। পরক্ষণেই তুলি জিজ্ঞেস করলো আমার কিসে ভালো হতো দাদু?
তুলির দাদী তার কথার উত্তর না দিয়ে তুলি কে বললো তার জন্য পান বানিয়ে দিতে।
তুলি বুঝতে পারলো দাদী ইচ্ছে করেই কথাটা এড়িয়ে গেলো। তুলি আর কিছু বলতে নিবে তার আগেই ঘরের বাহিরে কথার আওয়াজ শুনলো। তুলির সরগোল পছন্দ না তাই কিছুক্ষণ বসে রইলো তার দাদীর কাছে। কিন্তু ব্যাপার টা অল্পতে থেমে নেই কেউ কারো সাথে ঝগড়া করছে এরোকম লাগছে তুলির কাছে তাই ঘরের বাইরে ড্রইং রুমে আসলো।

তুমি কাল রাতে এমন টা কেনো করলে তিয়াশ? নীলিমা বলছে তিয়াশ কে।
তিয়াশ বললো যা বলার আমি রাতেই বলে দিয়েছি এ নিয়ে আর কোনো কথা আমি বাড়াতে চাই না।
তিয়াশকে আর কিছু বলতে নিবে তার আগেই তিয়াশ তুলির আব্বুর দিকে তাকিয়ে বের হয়ে গেলো বাসা থেকে।

তিয়াশ যাওয়ার সাথে সাথেই নীলিমাও তার মা বাবার কাছে গিয়ে বললো চলো এখান থেকে আমি আর এখানে থাকতে চাই না।
নীলিমার আম্মু তিয়াশের আম্মুকে বললো আপা আমাদের ডেকে নিয়ে এসে এই ভাবে অপমান না করলেই পারতি। তুই যখন জানতিই তোর ছেলে অন্য একটি মেয়েকে ভালোবাসে তাহলে আমাদের মেয়েকে তোর ছেলের সাথে বিয়ে দিবি এই কথা কেনো বললি।

তিয়াশের আম্মু বললো বোন আমি কিছুই জানি না বিশ্বাস কর।
নীলিমার আম্মু বললো তুই বা তোরা না জানলে তিয়াশ কেনো বললো তাকে ওই মেয়ের বাবা কথা দিয়ে রেখেছে যে তার মেয়ের সাথে তোর ছেলের বিয়ে দিবে।
আর কাল অতোগুলো লোকের সামনে আমার মেয়ের গায়ে হাত তুললো তিয়াশ।
নীলিমা কেদেই চলেছে।
তিয়াশের আম্মু আবার বললো আমরা এ ব্যাপারে কিছুই জানি না।
নীলিমার আম্মু আর কোনো কথা না শুনে নীলিমাকে নিয়ে তিয়াশ দের বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন।

তুলির আব্বু এই কথা শুনে বুঝতে পারলেন তিয়াশ কাল রাতে তার কথাই বলেছে। আর তার জন্যই বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তার দিকে তিয়াশ তাকিয়ে ছিলো।
তিনি মনে মনে ভাবলেন তখন তিয়াশ ছোট ছিলো আবেগের বশে হয়তো অমন কথা বলেছে তাই তিয়াশের যাতে পড়াশোনায় মনোযোগ নষ্ট না হয় আর তুলি ও যাতে ডিস্টার্ব না হয় তাই তিনি বলেছিলেন যে তুলির পড়ালেখা শেষ হলে তিয়াশের সাথে তুলির বিয়ে দিবেন তিনি। এর আগে তুলি কে যাতে তিয়াশ এইসব কথা না বলে।

তুলির আব্বু সিদ্ধান্ত নিলেন তুলির যতো তারাতারি সম্ভব তিনি নীরবের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবেন। তাহলে তিয়াশ ও আর কিছু করতে পারবে না আবার নীলিমার সাথে তিয়াশের বিয়ে হলে সবাই খুশিও হবে।
যেই ভাবা সেই কাজ তাই তিনি নীরব এর বাবার কাছে কল দিলেন।


তিয়াশ অফিসে এসে ভাবছে কাল রাতে নীলিমার সাথে আমার এংগেজমেন্ট এর কথা জেনেও ছোট কাকা কেনো চুপ করে ছিলো। কাকা তো জানে যে তুলি কে আমি কতো টা ভালোবাসি। তাহলে কি কাকা অন্য কিছু প্ল্যান করছে। এটা যদি সত্যি হয় তাহলে আমি কাউকে ছাড়বো না কাউকে না। তুলি শুধু আমার। আমার ক্যাশোবতি শুধু আর শুধু মাত্রই আমার বলেই সামনে যা ছিলো সব ছুড়ে ফেলে দিয়ে মাথা ধরে বসে রইলো।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে