ভিলেনি ভালোবাসা পর্ব-০১

0
1885

#ভিলেনি ভালোবাসা
পার্ট ০১
লেখিকাঃ তিথি সরকার

কলেজে ঢুকেই ধাক্কা খেলাম এক সিনিয়র আপুর সাথে।আর উনিও তাল সামলাতে না পেরে পরে যান। উনি দাত কিটমিট করতে করতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার মধ্যেই ওনার বন্ধুরা এসে ওনাকে টেনে তুললেন। আর ওনাদের মধ্যে একজন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যেই আপু টি পড়ে গিয়েছিল তিনি উঠে আমাকে চড় মারতে নিলে সেই ছেলেটি এসে বাধা দেয় এবং ওনাকে ধমক দেয়।

এবার চলুন পরিচয় করিয়ে দেই সবার ব্যপারে। যেই আপুর সাথে ধাক্কা খেলাম তিনি হলেন নীলিমা আপু। আর যেই ছেলেটি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো তিনি হলেন আমার কাকাতো ভাই তিয়াশ চৌধুরী। বয়স 24 ভার্সিটি থার্ড ইয়ার। গায়ের রং শ্যামলার চেয়ে একটু ফর্সা। লম্বায় ৬ ফুট ২ ইন্চি।বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। নীলিমা আপুর সাথে ভাইয়ার বিয়ের কথা চলছে। নীলিমা আপু ভাইয়ার খালাতো বোন। আর আপু আমাকে একদমই দেখতে পারে না। ধরতে গেলে কলেজে তিয়াশ ভাইয়ার কথায় সব চলে। কারণ তার বাবা এই কলেজে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা দেন বোনের হিসাবে। আর তিয়াশ ভাইয়া কলেজেও টপার। আমি তুলি বয়স ১৯। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার এর ছাত্রী। দেখতে সুন্দর। গায়ের রং হলুদ ফর্সা লম্বায় ৫ ফুট ৩ ইন্চি। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে।
আগে কাকারা আর আমরা এক সাথেই থাকতাম বাবারা ৩ ভাই। কিন্তু ব্যবসায় আমার বাবার সাথে রাগারাগি হলে আলাদা হয়ে যাই আমরা। তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি। আর তার পর থেকেই ভাইয়া আমার সাথে আর কথা বলে না। আমি জোর করে কথা বলতে গেলে অপমান করতো তাই আমিও এখন আর ভাইয়ার সাথে কথা বলি না। ভাইয়া খুবই রাগী সভাবের তবে আমাকে খুব ভালোবাসতেন। আমার সাথে কখনো রাগী ভাবে কথা বলেন নি। কিন্তু এখন আর আমাকে সহ্য করতে পারেন না।
গল্পে ফেরা যাক….

নীলিমা আপু আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। যেনো এখনি সুযোগ পেলে আমাকে কাচা চিবিয়ে খেলে ফেলে। ভাইয়া সবাইকে যেতে বললে আমিও আর না দাঁড়িয়ে ক্লাস যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াই। তখন তিয়াশ ভাইয়া আমাকে বলে উঠে খেয়ে এসেছিস। নাকি না খেয়েই চলে এসেছিস? দেরি করে এসেছিস তাই বললাম অন্য কিছু ভাবিস না আবার। আমি ছোট্ট করে না বলেই চলে আসলাম। আজকে আমাদের সেকেন্ড ইয়ার এর ফার্স্ট ক্লাস। এই কলেজে আমি নতুন। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার আমি যেই স্কুলে পড়েছি সেই কলেজেই পড়েছি।
ক্লাস শেষ হতে হতে দুপুর ৩ টা বেজে গেছে। ক্লাস থেকে বের হতে হতে দেখলাম সবাই মাঠে দাঁড়িয়ে আছে আর তাদের মধ্যে একজন কথা বলছে। যে কথা বলছে সে হলো আমার তুহিন ভাইয়া। আমার বড় কাকার বড় ছেলে। তুহিন ভাইয়ার একটি ছোট বোন আছে নাম মিলি। তুহিন ভাইয়াকে সকালে দেখতে পাই নি তাদের সাথে হয়তো কোনো কাজে বেস্ত ছিলো। তুহিন ভাইয়া আমাকে খুব আদর করে।
তুহিন ভাইয়া সবাইকে পরীক্ষার ব্যাপারে কিছু বলছে। আমিও গিয়ে দাঁড়ালাম। সেখানে তিয়াশ ভাইয়া নেতার মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো।আর পাশে নীলিমা আপুরাও ছিলো। কথা শেষ হওয়ার পর কলেজ থেকে বের হয়ে গেলাম। বের হওয়ার পর শুনলাম কেউ আমাকে ডাকছে পিছন থেকে। তাকিয়ে দেখি তুহিন ভাইয়া।

তুহিন ভাইয়াঃ কিরে তুলি তুই আমার সাথে দেখা না করেই চলে যাচ্ছিস! ও না বললে তো জানতামই না তুই এই কলেজে ভর্তি হয়েছিস।

তুলিঃ কে বললো ভাইয়া আমার ব্যাপারে?

তুহিন ভাইয়াঃ ছাড়তো এসব চল কিছু খাবি।

তুলিঃ আমি খেয়ে এসেছি ভাইয়া। বাসায় গিয়ে আবার খাবো।

তুহিন ভাইয়াঃ আমি অতোকিছু জানি না তুই না খেলে আমার অবস্থা ও খারাপ করে ছাড়বে। চল বোন।

তুলিঃ কার কথা বলেছিস ভাইয়া? কে তোর অবস্থা খারাপ করবে?

তুহিন ভাইয়াঃ তোর এতো কিছু জেনে লাভ নেই চলতো আমার সাথে।
বলেই টেনে নিয়ে কেন্টিনে বসলো আর খাবার অর্ডার দিলো। তার সাথে সাথেই দেখলাম তিয়াশ ভাইয়ারাও চলে এসেছে এখানে। তারা তাদের মত আড্ডা দিচ্ছে। আর তুহিন ভাইয়াও ওদের সাথে তাল মিলাচ্ছে। খাবার খাওয়ার সময় দেখলাম তিয়াশ ভাইয়া আমার দিকে আর চোখে তাকিয়ে আছে। আমি ওদিকে ধেয়ান না দিয়ে খাওয়াতে মনোযোগ দিলাম। কারণ না খেলে তুহিন ভাইয়া আমাকে বকবে। খাওয়া শেষ হলে তুহিন ভাইয়া আমাকে বাসায় পৌঁছে দিলো আর বললো কলেজে যেতে দেরি হলে ভাইয়াকে বলতে। তাহলে আমাকে এসে নিয়ে যাবে।

বাসায় ঢুকেই দেখলাম আম্মু সোফায় বসে টিভি দেখছে আর সবজি কাটছে। আমাকে দেখেই বলল হাত মুখ ধুয়ে আয় খেতে দিচ্ছি। আমি তখন বললাম কলেজে তুহিন ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছিল তখন ভাইয়া আমাকে খাইয়ে দিয়েছে তাই খিদে নেই। আম্মুও আর কিছু বললো না। আমি ঘরে এসে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসলাম আমার ফোন নিয়ে। নেট অন করতেই দেখি প্রতিদিনের মতো আজও মেসেজ এসেছে একটি আইডি থেকে। প্রতিদিন বলতে রোজই আমাকে একটি ছেলে মেসেজ দেয়, যেদিন থেকে ফোন পেয়ে আইডি খুলেছি সেদিন থেকেই। আর অবাক করা বিষয় হলো সে আমার ব্যাপারে সব কিছুই জানে। এমনকি আমি কখন কোথায় যাই তাও জানে। আজ যেই মেসেজ টি দিলো তা হলো…কেশোবতি তুমি আজকে চুল খোলা রেখে কেনো কলেজে এসেছো? আর কখনো যেনো এমন না দেখি।
আসলে আজ দেরি হওয়ায় চুল না বেঁধেই চলে গিয়েছিলাম।
প্রথম প্রথম ছেলেটার ব্যাপারে জানতে চাইতাম কিন্তু কিছুই বলতো না তাই এর পর আর কখনো কিছু জিজ্ঞেস করিনি আর উত্তর ও দেই নি তার কথার। ব্লক করলে অন্য আইডি দিয়ে মেসেজ দেয় তাই এখন আর ব্লক ও দেই না।
তার এই মেসেজ টি পড়ে ফোন রেখে দিলাম। বিকাল হয়েছে তাই ছাদে গেলাম এক কাপ কফি নিয়ে। এই সময়ে ছাদে দোলনায় বসে কফি খেতে খেতে আকাশ দেখতে আমার খুব ভালোলাগে। হাতে করে ফোন নিয়ে এসেছিলাম পাশেই রাখা ছিলো। হঠাৎ আবার তার মেসেজ… ভিজে চুলে কেনো এসেছো ছাদে। ঘরে যাও আর চুল খোলা রেখো না।
মেসেজ টি পড়ে সাথে সাথে আমি ছাদের সব দিকে ভালো করে দেখলাম নিচেও দেখলাম কিন্তু কারো দেখা পেলাম না। তখনি আবার মেসেজ এলো.. খুঁজে লাভ নেই। সময় হলে নিজেই ধরা দেবো। ঘরে যাও।

আম্মুও ডাকছে তাই নিচে চলে এলাম। এসে টিভি দেখতে বসে পড়লাম আর আম্মু রহিমা চাচির সঙ্গে কাজ করছে। রহিমা চাচি আমাদের বাসায় কাজ করে। রাত্রে আব্বু বাসায় আসলে আমার কলেজে কেমন দিন কাটল জানতে চাইলে আমিও সব বললাম তারপর এক সাথে খেয়ে ঘরে এসে পড়ি। সকালে কলেজে যেতে হবে তাই ফোনে অ্যালার্ম সেট করে ঘুমিয়ে পড়লাম।

চলবে…. 🍁

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে