ভাড়াটে বউ
লেখকঃ সানভি আহমেদ সাকিব।
.
– স্যার বেডরুমে আসতে বললেন যে?(রিহা)
দরজার দিকে ফিরে তাকায় সানভি।
তাকিয়েই দেখে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে রিহা কিছুটা থমকে দেখে তাকে। আজ আবার অনেকদিন পর দেখলো তাকে। প্রায় চারবছর পর। সানভি ঘোর কাটিয়ে উত্তর দেয়,
.
– কোনো সমস্যা আছে বেডরুমে ডাকায়?(সানভি)
– না স্যার কোনো সমস্যা নাই।আমি কি আসবো?(রিহা)
– হ্যা আসো।(সানভি)
– স্যার আমার ব্যাপারটা নিয়ে কি ভাবলেন?(রিহা)
– তোমার চাকরিটা দরকার তাইতো?(সানভি)
– হ্যা স্যার চাকরিটা আমার অনেক দরকার।(রিহা)
– চাকরি দিতে পারি এক শর্তে?(সানভি)
– কি শর্ত?(রিহা)
.
– আমাকে ভালোবাসতে হবে।আমার সাথে থাকতে হবে সবসময় রান্না করতে হবে খাইয়ে দিতে হবে আর আমাকে ঘুম পাড়িয়ে তুমি চলে যাবে ব্যাস তোমার কাজ শেষ এটাই তোমার চাকরি আর বেতন ৪০ হাজার টাকা।(সানভি)
.
– স্যার এটা কি বলছেন?(রিহা)
– ভেবে দেখো? (সানভি)
– স্যার আমি কালকে জানাই?(রিহা)
– আচ্ছা বাসায় এসো সমস্যা নাই।(সানভি)
– আচ্ছা. আমি আসি তাহলে স্যার।(রিহা)
– আচ্ছা যাও।(সানভি)
.
– আর শোনো শাড়ি পড়ে আসবা কালকে থেকে যদি কাজটা করতে চাও তাহলে।(সানভি)
– জ্বি স্যার।(রিহা)
.
রিহা বেরিয়ে যায় রুম থেকে। মনে করে চার বছর আগের ঘটনা যখন সানভি তাকে প্রোপোস করেছিলো।
কিন্তু রিহা ফিরিয়ে দিয়েছিলো অনেকক ঘুরার পরও যখন রিহা রাজি হলোনা তখন সানভি বলেছিলো তোমাকে ভালোবাসতেই হবে। আমি আদায় করে নিবো।
সেই যে গিয়েছিলো ছেলেটা তারপরর আর ৪ বছর দেখা মিলেনি তার। আজ ৪ বছর পর হঠাৎ এমন একটা জায়গায় দেখা হবে কখনো ভাবেনি রিহা ।
.
সত্তিই সময়ের সাথে সাথে অনেককিছু বদলে যায়।
যেমন বাবা মারা যাওয়ার পর বদলে গেছে রিহার জিবন।
আরর সানভি তো আগে থেকেই বাবা মা হারা।
তবে সানভির ও অনেক কিছু বদলে গেছে।
৪ বছর আগে আজকের সানভি সেই সানভি ছিলো না।
ছিলোনা এতো টাকা এমন জায়গায় কিভাবে আসছে সেটা শুধু সে নিজেই জানে।
.
জেদ মানুষকে অনেককিছু দেয় তেমন তাকেও দিয়েছে।
সানভি চেয়ার থেকে উঠে জানালার পাশে এসে ব্যাস্ত ঢাকা শহড়টাকে দেখে।
মনে পড়ে যায় সেই গ্রামের কথা। যেখানে রিহা আর সানভি একি কলেজে পড়তো।
সানভি তার মামার বাসায় থাকতো আর রিহারর বাবার অনেক টাকা ছিলো তাই সবসময় ভাব নিয়ে চলতো।
সানভির ভালো লাগতো তাকে কিন্তু সাহস করে বলতে পারেনি। আর যখন বললো অনেক অপমান করেছিলো রিহা।
.
এরপর সানভি পালিয়ে আসে ঢাকা শহড়ে।
তারপর একটা দোকানে কাজ করতে করতে আজ সে এমন একটা জায়গায় এসে দাড়িয়েছে যেখানে খুব কম লোকই আছে। আর রিহা তার ভাগ্য ক্রমশই খারাপ হতে থাকে সানভি চলে আসার পর। এক বছর আগে বাবা মারা যায়।।
আর সব সম্পত্তি হাতিয়ে নেয় তার চাচা।
তারপর সবশেষ চলে আসে ঢাকা শহড়ে।
একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে রিহা আর তার মা সাথে আছে ছোট বোনটাও।
,
চাল নেই ঘরে। পড়নের কাপড় নেই আর নেই মায়ের ঔষুধ।
বাধ্য হয়েই চাকরির খোজে বেরিয়ে পড়ে।ভাগ্যের টানে সানভির কাছে চলে আসে তারপর বাকিটা তো পড়লেনই।
,
রিহা বাসায় এসে ভাবতে থাকে,
৪০ হাজার টাকা বেতন। কিন্তু সানভি যে চাকরিটা দিয়েছে সেটা কিভাবে মেনে নিবে আর সে চার বছর আগে ফিরিয়ে দেওয়া সানভিকে আজ কিভাবে মেনে নিবে।
.
পাশের রুম থেকে কেশে উঠে তার মা।
সব চিন্তা মুছে ফেলে চাকরিটা তার দরকার।
জিবন বদলে যাবে তার। হয়তো আবারো ভালো একটা পজিশনে থাকবে সে। তখন চাকরিটা ছেড়ে দিলেই হবে।
তবে সানভি তাকে আজো ভুলেনি।
।
রিহা ঠিক করে নিলো চাকরিটা সে করবে।
হার মেনে নেয় ভাগ্যের কাছে। বাস্তবতা বরই কঠিন সেটা হারে হারে টের পাচ্ছে আজ এক বছর যাবত।
.
ওদিকে সানভিও জানে রিহা রাজি হবে কারন যে লোকটা তার কথা বলেছিলো সে তার সম্পর্কে সবকিছু বলে দিয়েছে।
বলতে পারেন টাকায় কেনো ভালোবাসা।
সানভি বলেছিলো রিহাকে ভালোবাসতে হবে।
আর তাই হতে চলেছে । বিজয়ের হাসি দেয় সানভি।
.
রাতে রিহা খেতে বসে আবারো বিরক্ত আজো সেই আলু ভর্তা আর ডাল।
সে তার মাকে বলে,
– আম্মু আবারো ডাল।(রিহা)
– কি করবো মা বল দোকানে আর বাকি দিবেনা তবুও অনেক চেয়ে ডাল আনছি।(আম্মু)
– আম্মু জিবন বদলাতে চলেছে আমি চাকরি পেয়ে গেছি।(রিহা)
– সত্তিই মা তুই চাকরি পাইছিস?(আম্মু)
– হুমমম মা ৪০ হাজার টাকা বেতন।(রিহা)
– কিসের চাকরি মা?(আম্মু)
– জানিনা কালকে বলবে।(রিহা)
উত্তর দিতে পারেনা রিহা।
কি উত্তর দিবে সে? বলবে যে একজনকে ভালোবাসার বিনিময়ে টাকা দিবে।
রিহা খাবার রেখে উঠে রুমে চলে যায়। গিয়ে কাদতে থাকে বালিশে মুখ লুকিয়ে।
,
সারারাত ঘুমাতে পারেনা রিহা কারন কালকে থেকে যে নতুন দিনের শুরু।
,
পরের দিন আটটা বাজতেই বেরিয়ে যায় রিহা।
মনের মধ্যে ভয় কাজ করে তার। কি হবে ভাবতে পারেনা।
সানভির বাসায় গিয়ে বেল বাজাতেই দরজা খুলে দেয় সানভি। দরজা খুলে অবাক হয়ে দেখতে থাকে রিহাকে।
খোলা চুল আর সবুজ শাড়িতে পরির মতো লাগছে তাকে।
.
চলবে??