ভালো লাগে ভালোবাসতে
পর্ব-৫
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
“কাজী অফিস”
নামটা শুনলেই কেমন একটা পালিয়ে বিয়ে করা ব্যাপারটা মাথায় আসে।নিদ্র ভাইয়া আমাকে কাজী অফিসে যেতে বলছে কেনো?সে আবার পালিয়ে বিয়ে করছে না তো!নাকি সেই মেয়েকে ধরে নিয়ে এসেছে?কোনটা?আর যাই হোক,আমাকে যেতে বলছে কেনো?সাক্ষী দিতে?
এসব ঝামেলার ব্যাপার আমার একদম পছন্দ না।কিছু হলে তো শেষে মেয়ের পরিবার আমাকে এসে ধরবে।আমি তো সাফাকে আগেই বলে দিয়েছি আর যাই করুক না কেনো লুকিয়ে প্রেম,পালিয়ে বিয়ে এসবে যেনো আমার সাহায্য না চায়।
আমি চিন্তিত গলায় বলে উঠলাম,ভাইয়া আমি গিয়ে কি করবো? ভাইয়া আপনার তো কত বন্ধু বান্ধব আছে তাদের দিয়েই সাক্ষী দিন না।আমাকে এসবে জড়াবেন না।প্লিজ ভাইয়া।
নিদ্র ভাইয়া ধমকের সুরে বলে উঠল,
-‘চুপ।এক নিঃশ্বাসে কয়বার ভাইয়া বলো!মানুষ নিজের আপন ভাইকেও তো মনে হয় এত বার ভাইয়া বলে ডাকে না।আজকে আমার বিয়ে তাই যা বলছি তাড়াতাড়ি করো।পনের মিনিটের মধ্যে যেন তোমাকে এখানে পাই।’
অগত্যা আর কি করার এই ছেলেকে আমি যথেষ্ট ভয় পাই।তার মুখের উপর এর থেকে বেশি বলার ক্ষমতা আমার নেই।কোনোমতে হাত মুখ ধুয়ে হলুদ কামিজের সাথে লাল উড়না মাথায় দিয়ে সিএনজি করে কাজী অফিসে চলে এলাম।
ভেতরে গিয়ে দেখি নিদ্র ভাইয়া একটি খয়েরী রঙের সুতি পান্জাবী পড়ে সোফায় বসে তার বন্ধুদের সাথে হাসাহাসি করছে।তানিয়া আপু সহ তাদের আরো কয়েকটা মেয়ে বান্ধবীও আছে।
আমি চোখ ঘুরিয়ে খুঁজতে লাগলাম কোন মেয়েটা হতে পারে।নিদ্র ভাইয়ার কাছে গিয়ে বললাম,
-‘আপনার অনেক ফ্রেন্ডরাই তো এসেছে তবুও আমাকে ডেকেছেন কেনো?’
আমার কথায় সে আমার দিকে হালকা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আবার বন্ধুদের সাথে হাসাহাসি করায় মনোযোগ দিল।রক্ত মাংসে গড়া গোটা একটি মানুষ যে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তা যেন সে টেরই পাচ্ছে না।আমি যথেষ্ট অপমানিত বোধ করলাম।
আমাকে অপমান অনুভব করার আর সুযোগ না দিয়ে কাজী সাহেব বলে উঠল,’কই তাড়াতাড়ি চলে আসুন।আমাকে আরো এক জায়গায় গিয়ে বিয়ে দিতে হবে।’
নিদ্র ভাই কাজী সাহেবের চতুর্কোন টেবিলের সামনে রাখা একটি চেয়ার টেনে বসে পড়ল।তানিয়া আপু আমাকে টেনে তার পাশের চেয়ারটায় বসিয়ে দিল।আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।বরের পাশের চেয়ারে সাক্ষী দাতা বসে নাকি!
কিছু ফর্মালিটি পূরণ করে কাজী সাহেব আমাদের দিকে একটি কাগজ বাড়িয়ে দিল।নিদ্র ভাই সাইন করলে আমিও বিরক্তি নিয়ে সাইন করে দিলাম।এরপর কাজী সাহেব বলল,’বলুন কবুল।’
নিদ্র ভাইয়া এক সেকেন্ড সময়ও নষ্ট না করে তার বলার সাথে সাথেই তিন কবুল বলে দিল।এরপর কাজী সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে বলল,’এবার আপনি বলুন।’
তার কথায় আমি অ্যাঁ করে তাকিয়ে রইলাম।আমতা আমতা করে বললাম,’আমি বলবো?’
কাজী সাহেব বিরক্ত হয়ে বলল,’তাহলে আর কে বলবে!উফ আপনারা দেখি অনেক সময় নষ্ট করছেন।’
এই কাজী সাহেবের দেখছি অনেক তাড়াহুড়া।পারলে মুখ থেকে কথা টেনে বের করে আনে!
কিছু মানুষ আছে যাদের জন্মই হয় শুধু বিরক্ত হওয়ার জন্য।তারা সব ব্যাপারেই বিরক্ত হয়।এমনকি তাদের সামনে যদি আপনি তার প্রশংসা করেন এতেও সে মহাবিরক্ত।যেনো শুধু শুধু তার কান দিয়ে কতগুলো কথা শুনতে হলো।
আমাদের সামনে বসা খাটো করে বয়স্ক পান খাওয়া কাজী সাহেবটাও বুঝি তাদের মধ্যে একজন।
এদিকে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।আমি তো শুনেছি বর কনে কেই তিনবার কবুল বলতে হয়।যারা সাক্ষী দেয় তাদেরকেও কি কবুল বলতে হয় নাকি!
বিয়ে বাড়িতে গিয়ে সবসময় বউর কাছেই বসে থাকায় বিয়ে পড়ানোর সময় ঠিক কি কি করা হয় তা আমি কখনো দেখিনি।শুধু দেখি বউ সেজেগুজে একটি রুমে বসে থাকে তারপর একজন দাড়িওয়ালা পান্জাবী টুপি পড়া লোক এসে কনের মুখ থেকে তিনবার কবুল শুনে তার সিগনেচার নিয়ে চলে যায়।তার একটুপর শালী বান্ধবীরা নেচে নেচে গিয়ে বরকে দুষ্টামি করে টানতে টানতে নিয়ে এসে কনের পাশে বসিয়ে দেয়।আর অযথা রাজ্যের সব হাসাহাসি শুরু করে দেয়।
এখন এর অগোচরেও আরো কিছু করা হয় কিনা তাতো জানি না।একটু ইতস্তত করে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম সবাই আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।যেনো আমার মুখের জবাবের অপেক্ষায় সব বুদ হয়ে আছে।আমিও একটু আমতা আমতা করে কবুল বলেই দিলাম।
আমার মুখ থেকে কবুল শুনে সবাই একটি স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল।
কাজী সাহেব আবারো ব্যস্ত হয়ে বলে উঠলেন,
-‘নিন বিয়ে হয়ে গেলো।এবার মালা বদলটা তাড়াতাড়ি করে ফেলুন।’
নিদ্র ভাইয়া চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে একটু ভাব নিয়ে কলারটা ঠিক করে মালা হাতে নিয়ে দাঁড়াল।
তানিয়া আপু আমাকে তার সামনে দাঁড় করিয়ে আমার হাতেও ফুলের একটি মালা ধরিয়ে দিল।
কাজী সাহেব আবারো তাড়া দিতে লাগল।ঘড়ি দেখে আমাকে বলল,’তাড়াতাড়ি করুন।’
আমি শুধু চমকের উপর চমক হচ্ছি।বিয়ে হয়ে গেলো অথচ কনের কোনো কাজ দেখলাম না।এ আবার কেমন বিয়ে!আর আমি কেনো মালা পড়াবো?অদ্ভুত তো!
তাই আমি চোখ গোলগোল করে কাজী সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললাম,’আমি কেনো মালা পড়াবো?’
কাজী সাহেব আমার কথায় চরম বিরক্ত হয়ে বলল,’আপনি দেখছি ভালো বোকা।আপনার সাথে বিয়ে হয়েছে তা আপনি মালা পড়াবেন না তাহলে কি অন্য কেউ এসে মালা পড়াবে!’
কাজী সাহেবের কথায় আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ল।আমি হা করে বাংলা সিনেমার স্টাইলে হাত আলগা করে মালাটা ছেড়ে দেওয়ার আগেই নিদ্র ভাইয়া তার মাথাটা নিচু করে মালার ভেতর ঢুকিয়ে নিল।আর এক মুহূর্তও বিলম্ব না করে দুষ্ট হাসি দিয়ে আমার গলায় ও মালা পড়িয়ে দিল।সবাই হাত তালি দিয়ে উঠল।আর একে একে কনগ্রেচুলেশন বলে বিদায় নিতে লাগল।আমি এতটাই চমৎকৃত হয়েছি যে কতক্ষণ যাবৎ আমার মুখ দিয়ে কোনো কথাই বেরোলো না।
সবাই চলে গেলে নিদ্র ভাই বলল,’এবার অন্তত মুখটা বন্ধ করো নাহলে সব মাছি ঢুকে যাবে।’
আমি অস্থির ভঙ্গিতে বললাম,’এটা কি হল?’
সে আমার সামনে থেকে সরে সোফায় থাকা ব্যাগটি ঠিক করতে করতে বলল,’কি হল আবার, বিয়ে হল।’
আমি তার পেছন পেছন গিয়ে বলতে লাগলাম,’আপনি আমাকে কেনো বিয়ে করলেন।আপনার পছন্দের মেয়েকে বাদ দিয়ে।’
-‘এত অস্থির হওয়া লাগবে না।তোমার জন্যই সব করতে হয়েছে।’
-‘আমি আবার কি করলাম।’
-‘তুমি যে আমাকে ভার্সিটির প্রথম দিন চড় মেরেছো তার জন্য জানো আমার রেপুটেশন কতটা নষ্ট হয়ে গেছে, এখন আমার সেই পছন্দের বালিকা তো আমার প্রপোজাল একসেপ্ট করছে না।’
-‘তার জন্য আমাকে কেনো বিয়ে করলেন?’
-‘সেদিন বললাম না আমি একটি পাত্রী দেখতে গিয়েছিলাম সেই মেয়েতো আমার জন্য পুরো পাগল হয়ে গেছে।কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না।এখন এই ম্যারিজ সার্টিফিকেট নিয়ে আমি বলব আমার বিয়ে হয়ে গেছে তারপর সে আমার পিছু ছেড়ে দেবে।আর আমি আমার পছন্দের মেয়েকে পটানোর জন্যও সময় পাবো।ততদিন তোমাকে আমার সাথে ঝুলে থাকতে হবে।’
তার কথার আমি কিছুই বুঝি না।সেদিন পাত্রী দেখতে যাওয়ার আগে সেই মেয়ে তাকে পছন্দ করবে কিনা এই নিয়ে এমন ভাব করছিলো যেন সেই মেয়ে পছন্দ না করলে তার আর বেঁচে থাকার কোনো অবলম্বন থাকবে না।আর আজ কিনা ঐ মেয়ের থেকে বাঁচতেই আমাকে বিয়ে করেছে!
আমি মুখটা ভার করে বললাম,’আপনার তো আরো অনেক বান্ধবী ছিল তাদেরই বিয়ে করতেন।’
-‘সমস্যা শুরু তো তুমি করেছো থাপ্পড় মেরে।আমি তো আগেই বলেছিলাম এর ভরপুর তোমাকে করতে হবে।আর এত সিরিয়াস হচ্ছো কেনো?টেক ইট ইজি।এটা তো এমনিই বিয়ে।’
এই মুহূর্তে আমার ইচ্ছা করছে তার মাথার চুলগুলো টেনে ধরি।নাহ!তার মাথার চুল না,ধরা উচিত আমার মাথার চুল।চার মাস আগে একটা থাপ্পড়ের জন্য আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।আর এই ছেলে এমন ভাব করছে যেনো কিছুই হয়নি,নরমাল একটা ব্যাপার।কি সুন্দর মুখ দিয়ে শিষ বাজাতে বাজাতে গাড়িতে গিয়ে উঠছে।আমাকে বিয়ে করে নিয়েছে আর বলছে টেক ইট ইজি।
পেটের ভেতর কথা কিলবিল করছে তাকে বলার জন্য।কিন্তু কিছুই বলতে পারছি না।
হায় আল্লাহ!আমাকে আর কতদিন এসব পোহাতে হবে?
টেনশনে যেখানে মানুষের খাওয়া দাওয়া লোপ পায় সেখানে টেনশনে পড়লে আমার ক্ষিধে বহু গুনে বেড়ে যায়।বিছানার উপর পা তুলে বসে রাত ১টা বাজে বসে বসে চামচ দিয়ে আইসক্রিম খাচ্ছি আর টেনশন করছি।আমার বিয়ে হয়ে গেলো?কি সাংঘাতিক ব্যাপার!এত সহজে বিয়ে হয়ে যায়!কেউ যদি জেনে যায় তাহলে কি হবে!
আর কতদিন তার সাথে এভাবে ঝুলে থাকতে হবে?সেটা তো পরিষ্কার করে কিছু বলল না।
আজ আবার ভরা জ্যোৎস্না।চাঁদের আলো উপচে এসে পড়ছে রুমে।অন্ধকার রুমকে মায়াবী আলোতে আলোকিত করে রেখেছে।তার মধ্যে পুরো রুমে আমি একা একা বসে আছি।সোমা আপু আজকে তার অন্য ব্যাচম্যাটের রুমে গিয়ে ঘুমিয়েছে।ব্যাপারটা কি আমিও বুঝিনি।মিটিমিটি করে হেসে বলল আজকে নাকি তার এই রুমে কিছুতেই ঘুম আসবে না।আমিও বেশি জোর করিনি।এমনিতেই টেনশনে আছি পাছে সে আবার না বুঝে যায়!
বেলকনি থেকে টুক করে কিছু পড়ার অদ্ভুত আওয়াজ আসায় আমি চামচ মুখে ঢুকিয়েই ভ্রু কুঁচকে সেই বরাবর তাকালাম।আবারও কেমন আওয়াজ আসছে।তাই এবার বিছানা ছেড়ে ধীরে ধীরে খালি পায়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম।এই হোস্টেলের বেলকনিগুলো খোলা,কোনো গ্রীল দেওয়া নেই।
আমি সেখান দাঁড়িয়ে আশেপাশে চোখ বুলাতে লাগলাম।হঠাৎ মনে হল আমার পেছনে কিছু একটা আছে।ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেলো।
তখনই ফ্লোরে আমার পাশে আরো একটি ছায়ার মতো দেখতে পেয়ে আমি কাঁপা কাঁপা গলায় চিৎকার দিতে গেলাম,’ভূ…ভূ..উত।’
তার আগেই এক জোড়া হাত এসে আমার মুখ চেপে ধরে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে নিল।
আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আধো আলো আঁধারে দেখতে পেলাম সেই সুন্দর ঘন কালো ভ্রু।
সাদা টি শার্টের উপরে বোতাম না লাগিয়ে আকাশি রঙের শার্ট পড়ে সে ঠোঁটের কোনায় একটি হালকা হাসি ঝুলিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
সে ফিসফিস করে বলল,’পাগলী আস্তে।এখানে ভূত আসবে কোনদিক থেকে!’
আমি তাকে ইশারায় চোখ দিয়ে আমার মুখ থেকে হাত সরাতে বললাম।সে ওহ্ বলে সাথে সাথে ছেড়ে দিল।আমি বুকে হাত দিয়ে বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে লাগলাম।কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!
নিদ্র ভাইয়া হাত মেলে আড়মোড়া ভেঙে রুমের ভেতরে গিয়ে ঢুকল।
এতক্ষণে আমার হুঁশ হল সে এখানে কি করছে!
আমি পিছন থেকে গিয়ে চিন্তিত স্বরে বললাম,’আপনি এখানে এসেছেন কেনো?’
-‘আজকে না আমাদের বাসর রাত।বাসর রাতে স্বামী স্ত্রী কে আলাদা থাকতে হয় না জানো না?’
তার কথা শুনে আমি চরম পর্যায়ের অবাক হয়ে গেলাম।বললাম,’বাসর রাত মানে!আপনি না বলেছেন এটা এমনি এমনিই বিয়ে।তাহলে আবার এসব কি?’
-‘আরে আমাদের জন্য এটা এমনি এমনিই কিন্তু বিয়েটা তো সত্যি সত্যিই হয়েছে।এখন বাসর রাতে যদি আমরা আলাদা থাকি তাহলে তো অমঙ্গল হতে পারে।এখন তুমি কি চাও আমার অমঙ্গল হোক?’
আমি মাথা নাড়িয়ে না বললাম।আমি চাই না তার কোনো অমঙ্গল হোক।কেনো চাই না তা জানি না,তবে একটুও চাই না।
আমি আবারো বললাম,’আপনি দোতলায় উঠে আসলেন কিভাবে?’
-‘কিভাবে আবার,মই বেঁয়ে।রাফি আর তামিম ধরে রেখেছিল।’
-‘যদি কেউ দেখে ফেলতো?’
-‘তোমার কি মনে হয় আমি এতো কাঁচা প্লেয়ার!’
বিশাল চাঁদ এখন মাঝ আকাশে উঠে এসেছে।নিদ্র ভাইয়া আমার বিছানার কাছে গিয়ে পকেট থেকে দুটি তাজা গোলাপ ফুল বের করে বিছানার সাথে ঘেষানো ছোট্ট টেবিলটিতে রেখে বলল,বাসর রাতে একটু ফুলের ছিটেফোঁটা না থাকলে মোটেও ভালো লাগবে না।’
এই বলে সে শুয়ে পড়ল আমার বিছানায়।কিছু মুহূর্তের মধ্যেই যেন ঘুমিয়ে পড়ল।আমি সোমা আপুর বিছানায় শুয়ে বারবার এপাশ ওপাশ করতে লাগলাম।টেনশনে কিছুতেই যেন ঘুম আসছে না।আর উনি কি সুন্দর শান্তিতে ঘুমিয়ে যাচ্ছে।
খোলা জানালা থেকে ভেসে উঠছে পূর্ণিমার
স্নিগ্ধ মায়াবী চাঁদ।জানালার পর্দা দুলিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে ঠান্ডা মৃদু হাওয়া।হঠাৎ তার ঘুমন্ত মুখের দিকে আমার চোখ পড়ল।জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধ আলোয় তার ঘুমন্ত মুখ চাঁদের থেকেও বেশি মায়াবী লাগছে।অদ্ভুত হলেও সেই দুটো গোলাপ থেকে মনে হল মিষ্টি সুভাস ছড়াচ্ছে।টকটকে লাল গোলাপ দুটি যেন পলক না ফেলে আমাকেই দেখে যাচ্ছে।যেমনটি আমি দেখে যাচ্ছি নিদ্র ভাইয়াকে।টেনশন যেন সব কোথায় উড়ে গেল।কোন এক অজানা জগৎ থেকে ভেসে এলো এক অচেনা সুর।সেই মায়াবী আলোয় মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে একটি অদ্ভুত ইচ্ছা আমার মনে জাগলো,তার ঘুমন্ত মুখটিকে একটু ছুঁয়ে দিতে।
ইচ্ছে টা যেন ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে।
অদ্ভুত তো!
চলবে