ভালো লাগে ভালোবাসতে-পর্ব ১৩

0
2120

#ভালো লাগে ভালোবাসতে
#পর্ব-১৩
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

“বোকা,চরম বোকা,পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বোকা মেয়ের প্রেমে আমি পরেছি।তাকে যদি আমি এখন সামনে গিয়েও বলি ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ তবুও সে তার চোখগুলো গোল গোল করে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলবে,’আপনার কি হ্যালুসিনেশনের সমস্যা হচ্ছে?আমার ভেতর ঐ মেয়েকে দেখতে পাচ্ছেন?
‘তাই অন্য কথা তো আর বাদই দিলাম।শুনেছি মেয়েরা নাকি সহজেই বুঝতে পারে কে তাকে পছন্দ আর কে তাকে ঘৃণা করে,তাহলে এতকিছুর পরেও এই ঘুমকন্যা বুঝতে পারে না কেনো!
তাকে দেখেছি…!নাহ্ দেখেছি না, অনুভব করেছি,ঠিকমতো দেখার আগে আমি অনুভব করেছি তারে, আমার হৃদ মাঝারে।অনুভব করেছি তার হৃদস্পন্দনের মাঝে মিলিয়ে যাওয়া আমার হৃদস্পন্দনকে।প্রথম আলিঙ্গনে সিক্ত হয়ে পাওয়া প্রথম স্পর্শে আমার সর্বাঙ্গেই যেন এক অস্থিরতার স্বস্তিতা শুরু হয়ে গিয়েছিল।সমস্ত শরীর যেনো তৎপর হয়ে সংকেত পেয়ে যাচ্ছিলো তার অপূর্ণ অংশকে খুঁজে পাওয়ার।তার প্রথম স্পর্শেই আমার মনে হল এই তো আমার বাম পাঁজরের হাড়।আমার অপূর্ণ অংশের সম্পূরক।এবার যেনো আমি স্বয়ংসম্পূর্ণ হলাম।এ এক কেমন আকর্ষণ,বোঝানো যে বড্ড দায়!

আলিঙ্গন থেকে মুক্ত হয়ে তাকে আমি দেখতে লাগলাম খুবব খুঁটিয়ে।রাগে থরথর করে কাঁপতে থাকা তার পাতলা ঠোঁটগুলো,কপালের কার্ণিশে লেগে থাকা এক ছিটেফোটা কাঁদা,যেখানে মৃদু বাতাসে ঈষৎ কোঁকড়া চুলগুলো বারবার উড়ে এসে বারি খাচ্ছে।গাঢ় কাজলে ঢাকা পিটপিট করা তার চোখের চাহনি।নাহ্! ওটা কে কাজল বলবো না,সেটা তো ছিল এক মায়া,কোনো এক মেঘেদের দেশ থেকে চুরি করে আনা এক চিমটি মায়া।নির্বাক দৃষ্টিতে ঠায় দাঁড়িয়ে আমি শুধু ভাবতে লাগলাম যার চেহারায় আগে থেকেই রয়েছে উপচে পড়া মায়া তাকে শুধু শুধু আরেকটু মায়া চুরি করতে হলো কেনো!এক গভীর সম্মোহনী শক্তিতে যেনো সেই শ্যামবর্ণের ঘুমকন্যা আমায় নিঃশেষ করার প্রয়াসে প্রস্তুত হয়ে এসেছে!যেই গভীরতায় আমি নিজেই এখন ইচ্চকৃতভাবে নিঃশেষ হতে চাইছি।
খুব বিরক্ত হলাম,খুব।বিরক্ত আর রাগে আমার মাথা গরম হয়ে উঠলো যখন সে আমায় তাকে খুঁটিয়ে দেখার মাঝপথে থাপ্পড় মেরে বাঁধা প্রদান করলো।সবার সামনে থাপ্পড় মারার কারণ সেই রাগের কতটুকু অংশ ছিল জানি না তবে বিরক্ত করার কারণটাই ছিল প্রধান।
তাকে এক মুহুর্তের জন্যও যে দূরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।ইচ্ছে করে সর্বক্ষণ তাকে চোখের সামনে বসিয়ে রাখি।খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাকে শুধু দেখতে থাকি।তার ঢোক গিলে চোখ পিটপিট করা ভয়ার্ত চাহনি,অবাক চোখে গোলগোল করে তাকিয়ে থাকা,ঈষৎ রাগমাখানো চোখে ঠোঁট ফুলিয়ে থাকা,সবকিছু….সবকিছু আমাকে বড্ড অস্থির করে রাখে।তার অবাক চোখের চাহনি আমার সবথেকে বেশি প্রিয়।কিছু বুঝতে না পেরে সে যখন তার চোখদুটো গোল গোল করে অবাক হয়ে মুখপানে তাকিয়ে থাকে….ইশ! ইচ্ছে করে সহস্র জনম শুধু তাকিয়েই থাকি।এক জনম যেনো কুলোবে না তাকে দেখায়।তাই তো হয়তো একটু বেশিই স্বার্থপরতা করে ফেলি!তার সেই অবাক চাহনির লোভে তাকে বারবার অবাক করে দেই।
তাকে দেখেছি এক বৃষ্টি ভেজা বিকেলে,বেখায়লি আনমনে অবিরাম বারি ধারায় মত্ত হয়ে তৃষ্ণা নিবারণ করতে।কিন্তু হায়!আমার তৃষ্ণা কিভাবে নিবারণ হবে!এই তৃষ্ণা যে কখনো মিটবার নয়।এ যে ভালোবাসার তৃষ্ণা,ভালোবাসা পাবার তৃষ্ণা।
প্রাপ্তিতে হয় দ্বিগুণ।যতই মিলবে ততই বৃদ্ধি পাবে।যেদিন তাকে প্রথম দেখলাম কচুপাতা রঙের শাড়িতে,সে কি জানে কতটা যন্ত্রণা হচ্ছিলো এই বুকে!বারবার উড়ে এসে কপালে পড়া তার খোলা চুল সে যন্ত্রণাকে আরো বাড়িয়ে তুলছিলো।এক চিনচিনে ব্যাথায় ঘায়েল করে রাখছিলো খুব সন্তর্পণে।নিজেকে ঘায়েল হওয়া থেকে বাঁচাতেই তাকে বলেছিলাম বেঁধে ফেলতে সেই চুল যাকে খোলা দেখতেই আমার ভালো লাগে।করে ফেলেছিলাম তো বিরাট ভুল!
বাঁধা খোপায় বেলি ফুলের ছোঁয়ায় তাকে দেখতে যে আরো অনিন্দ্য সুন্দর লাগছিলো।যন্ত্রণা হ্রাসের সূত্র যে বিপরীতে গিয়ে ঠেকবে তাকি আমি জানতাম!
সেদিন বুঝলাম,এই ঘুমকন্যা গোপন ষড়যন্ত্রে আমার হৃদয়কে দগ্ধ করতেই এসেছে।এর থেকে আমার আর রক্ষে নেই…..কোনোভাবেই নেই।এই যন্ত্রণার ওষুধও সেই যে এই যন্ত্রণার পেছনের কারণ।তাকে আমার চাই….বৈধভাবেই চাই।তাকে দেখলেই যে শুধু পাগলামো করতে ইচ্ছে করে।ইচ্ছে করে কোনো এক পাগলামোর সাগরে তাকে নিয়ে ডুব দিতে।কোনো ভুল হোক তার আগেই তাকে বৈধ করে নিলাম।বড্ড অসহায় লাগে সে যখন ঠোঁট টিপে হাসে।নিজেকে সংযত রাখা যে তখন খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।তাকে যে সেই মুহুর্তে কি সুন্দর লাগে তা কি সে বোঝে!বোঝে না,নাকি আমি জ্বালাতেই সে বারবার সেই হাসি দেয়!
সে যে আমাকে একদন্ডও স্থির থাকতে দেয় না।
ঘুমপুত্রের রাজ্যে হানা দিয়ে সেই ঘুমকন্যা নিষ্ঠুর হৃদয় নিয়ে তার সর্বস্ব লুট করে নিয়ে গেল।হৃদয়ের এক কোণাও ছাড় দিল না,সমস্তটুকু দখল করে নিজের রাজ্য বিস্তার করে যাচ্ছে।ঘুমপুত্রের ঘুমকেই কেড়ে নিল।ইচ্ছে করে সবসময় তাকে একদম বুকের ভেতর ঢুকিয়ে রাখি,একদম নিশ্চুপ করে।কক্ষনো বের হতে না দেই।কিন্তু সে তো সুস্থির থাকে না শুধু ছটফট করে।আমাকে যন্ত্রণার অতল সাগরে ডুবিয়ে নিজে কি সুন্দর অবুঝ সেজে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়ায়।আর এদিকে আমার অবস্থা যে বেগতিক।মাঝে মাঝে মনে হয় তাকে একটা চরম শাস্তি দেই।আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়ে এই হৃদ কারাগারে তাকে বন্দি করে রাখি।একটা ধমক দিয়ে বলি ‘এই এত ছটফট করছো কেনো?চুপচাপ এই বুকে ঘুপটি মেরে বসে থাকো তো!’
সে কি শুনবে?সে কি বুঝবে?কবে আসবে সেই দিন?সে তো আবার নিজের অনুভূতিও বুঝতে পারে না।তার চোখে আমি স্পষ্ট দেখেছি আমাকে নিয়ে তার ভালো লাগা,হয়তো ভালোবাসাও।আমি চাই সে নিজে বুঝুক তার মনকে,তার অনুভূতিকে।
ততদিন না হয় আমি থাকবো আমার ঘুমহীন রাজ্যে ঘুমকন্যার খোঁজে।কিন্তু হ্যাঁ,বেশিদিন এই যন্ত্রণায় রাখলে কিন্তু সত্যি সত্যিই তাকে সেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে দেব!
সে কি কম বড় অপরাধ করেছে!আমার সমস্ত ভালো লাগাকে গ্রাস করে ফেলেছে।আমার যে এখন শুধু তাকেই ভালো লাগে,সেই নিদ্রর সুপ্তিকে।আমরা যে একই অর্থে,একই সূত্রে,একই আত্মায় গাঁথা।
তাকে যে আমার খুব খুব খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করে,ভিন্ন ভাবে, একইরকমে,সব উপায়েই ভালোবাসতে ইচ্ছে করে।তাকে ভালোবাসতে আমার ভালো লাগে।’

-‘সুপ্তি,তুমি কখন এলে?’
পেছন থেকে তার কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে পেছনে হাতের আড়ালে ডায়েরি লুকিয়ে তার দিকে ফিরে চাইলাম চোখে মুখে এক লাজুক হাসি নিয়ে।সে তার ভ্রুযুগোল কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আমার নির্বাক অবস্থা দেখে।

-‘রিপোর্ট দিতে কি দেরি হবে?’

আমি মাথা নিচু করে আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে ঘাড় নাড়িয়ে সায় দিলাম।
সে তার ভাঁজরত ভ্রু আরেকটু ভাঁজ করে বলল,
-‘কি হয়েছে তুমি এমন মিটিমিটি হাসছো কেনো?’

আমি আরেকটু মাথা নিচু করে রইলাম।এই লাজুক হাসিকে যে কিছুতেই সংযত করা যাচ্ছে না।নিচ থেকে মা নিদ্রর নাম ধরে ডাক দিলে উনি একবার বাইরে তাকিয়ে আরেকবার আমার দিকে তাকিয়ে নিচে চলে গেলেন।আর আমি দ্রুত ডায়েরিটা মুখের কাছে চেপে ধরে খুশিতে আপ্লুত হয়ে গেলাম।নিজের নামের সাথে বোকার সর্বোচ্চ ডিগ্রী ধার্য করা এই ডায়েরিকে একশবার চুমুতে ভরিয়ে দিলাম।আমার যে ইচ্ছে করছে এখন নাচতে,লাফালাফি করতে,গান গাইতে।আমার খুশির যে আজ বাঁধ ভেঙেছে।

আজ যেনো আমি তার সাথে চোখই মেলাতে পারছি না।লজ্জারা যেনো সব ডানা মেলে আমাকে ঘিরে ধরেছে।আর উনি কৌতুহলী হলেও তার অভিমান ভেঙে আমাকে পরিষ্কার করে জিজ্ঞাসাও করতে পারছেন না।শুধু আমার মিটিমিটি হাসির পরিবর্তে ভ্রু কুঁচকে বারবার তাকিয়ে দেখছে।চোখ মেলাতে পারছি না অথচ শুধু ইচ্ছে করছে তার সাথে ঘেঁষে থাকি।তার কোলে গিয়ে বসে থাকি,তার গলায় ঝুলে থাকি।
তার হৃদ কারাগারে বন্দী হতে যে এবার আমার মনও ব্যাকুল।
রাতে যখন সে আমার পাশে এসে শুয়ে পড়ল অভিমানী মুখে আমি একটু হেসে তাকে শক্ত করে জাপ্টে ধরলাম।উনি অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে বললেন,’একি কি হয়েছে সুপ্তি?এমন শক্ত করে ধরে রেখছো কেনো,ছাড়ো?’
আমি মনে মনে বললাম,’ইশ!এখন রাগ করে ন্যাকামো করা হচ্ছে।আমি ঘুমিয়ে পড়লে তো ঠিকই জড়িয়ে ধরে আর ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে,আমি ডায়েরি তে সব পড়েছি।
-‘কি হলো ছাড়ো!’
আমি চোখ বন্ধ করে আদুরে গলায় বললাম,’আমার ভয় লাগছে।’
তিনি আবারো কিছু বলতে চাইলেন কিন্তু আমি গভীর ঘুমের ভাণ ধরে পড়ে রইলাম।

ছুটির দিনের বিকেলে যদি এক ছুট ক্রিকেট খেলা যায় তবে ব্যাপারটা মন্দ হয় না।আইডিয়াটা আমিই দিলাম,স্নিগ্ধ শুনে উৎফুল্ল হয়ে উঠল।নিদ্র কোনো ভাবাবেগ না দেখিয়ে ল্যাপটপে মুখ গুঁজে জানিয়ে দিল সে খেলতে ইচ্ছুক নয়।আমিও পেছনে লেগে পড়ে তার হাত ধরে টানাটানি করতে লাগলাম।উনি কিছুক্ষণ হাতের দিকে আবার কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,’তুমি আজকাল একটু বেশিই ধরাধরি করছো না?’
আমি গলার স্বর নামিয়ে ফিসফিসিয়ে বললাম,’স্নিগ্ধ দাঁড়িয়ে আছে,বাচ্চাদের সামনে এসব কি বলছেন।’
তিনি বিরক্তিসূচক শব্দ করে আমার টানাটানিতে আর থাকতে না পেরে ল্যাপটপ নামিয়ে খেলতে উঠলেন।বারান্দার কাছে আসতেই আমার মতিগতির পরিবর্তন শুরু হয়ে গেল।ইচ্ছে করছে তার কোলে চোড়ে বহুদূর যাই।এখন বহুদূর যেতে পারবো না তাতে কি!বারান্দা থেকে বাগানে তো যেতে পারব!
ইচ্ছে করেই নিজেকে এলিয়ে দিলাম তার গায়ের উপর।সে আমাকে ধরতে ধরতে বলল,’কি হল সুপ্তি!’
-‘পায়ে মোচ খেয়েছি।’
সে আমাকে ঠিকমতো দাঁড় করানোর চেষ্টায় চলতে থেকে বলল,’পায়ে মোচ খেলে কেউ এভাবে গায়ের উপর ঢেলে পরে নাকি!’
আমি টলতে টলতেই আবার তার উপর পরে দুঃখী গলায় জবাব দিলাম,’এখন আমার পায়ে মোচ পড়েছে সেটা নিয়েও আপনার এত সমস্যা?এখানেও দোষ খোঁজা শুরু করেছেন!’
-‘ঠিকাছে পায়ে মোচ পড়েছে এখন খেলা বাদ।’
-‘আমি উদ্বিগ্ন গলায় বললাম,’আরে খেলা বাদ হবে কেন?’
-‘তোমার পায়ে ব্যাথা তুমি খেলবে কিভাবে?’
-‘আপনারা খেলবেন আমি দেখবো।আমি না হয় আম্পায়ারই হব।’
উনি জেরার মত প্রশ্ন করতে লাগলেন,
-‘আচ্ছা!আর নিচে নামবে কিভাবে?’
আমি মুখ টিপে হেসে নরম গলায় বললাম,’আপনি কোলে করে নিয়ে যান না!’
আমার কথায় স্নিগ্ধ ওর হাতের খোলা গাড়ির পার্টস থেকে মুখ তুলে চাইলো।আমি আড়চোখে দেখে ওর মাথার ক্যাপটা নিচে নামিয়ে দিয়ে বললাম,’তুই তোর মেকানিকে মন দে।’
নিদ্র কপাল ঈষৎ ভাঁজ করে টন্ট মেরে বলল,’এখন বাচ্চাদের সামনে কোলে উঠবে কিভাবে!’
আমি তার দুই হাত দিয়ে তার হাত চেপে ধরে বারবার প্লিজ প্লিজ করতে লাগলাম।সে একটি বিরক্তিচাপা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হলুদ শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ভাঁজ করে আমাকে ঝট করে কোলে তুলে নিল।আমিও খুশিতে ঝলমল করে তারে গলা জড়িয়ে ধরলাম শক্ত করে।সে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে একবার তার গলা আরেকবার আমার মুচকি হাসির মুখপানে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
খেলার সময় আমি টেনেটুনে স্নিগ্ধর হাত থেকে গাড়ির পার্টস নিয়ে বল ধরিয়ে দিলাম।স্নিগ্ধ বোলিং করছে আর আমার নিদ্র ব্যাটিং।আমি নামের অ্যাম্পায়ার হয়ে নিদ্রর সামনে বাম পাশের একটু সাইডে দাঁড়িয়ে তাকে খেলতে দেখতে লাগলাম।হলুদ শার্টে নিচের ঠোঁট হালকা কামড়ে ধরে মনোযোগ দিয়ে সামনে তাকিয়ে সে বলের অপেক্ষা করছে।দৃশ্যটি দেখতে কি সুন্দর লাগছে!
আর এই ছেলেটি নাকি আমায় ভালোবাসে!ভাবতেই মনের ভেতর কে যেন সুড়সুড়ি দিচ্ছে।
একবার শুধু সে আমাকে এমন ভ্যাবলার মত তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল,
-‘এভাবে এত সামনে জগতের কোন অ্যাম্পায়ার দাঁড়ায় একটু বল তো,বল লাগলে তো সোজা আকাশে উড়ে যাবে।’
-‘উড়লে উড়লাম।এই সুযোগে আপনার সাথে তো একটু আকাশে উড়া হবে।’
-‘কি?’
আমি থতমত খেয়ে বললাম,’কিছু না।’
প্রথম বল এই সে একটা ছক্কা মেরে দিল।আমি খুশিতে বাচ্চাদের মত কাছে গিয়ে তার গলা ধরে লাফাতে লাগলাম।সে সাংঘাতিক ভাবে ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো তারপর বলল,’এই,তুমি ঠিক আছো তো?কোনো অসুখ টসুখ হয়নি তো!’
আমি মনে মনে বলতে লাগলাম,’হ্যাঁ আমার অসুখ হয়েছে,সাংঘাতিক অসুখ।আপনাকে ভালোবাসার কোনো দিন সুস্থ না হওয়া এক দীর্ঘ অসুখ।যেই অসুখে এতদিন আপনি আক্রান্ত ছিলেন সেই অসুখ এখন ছোঁয়াচের ন্যায় আমাকেও আক্রান্ত করে দিয়েছে।
নিদ্র নিচের ঠোঁট আলতো কামড়ে ধরে ভ্রু কুঁচকে আনমনে সামনের দিকে তাকালো।তার ফর্সা মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়িগুলো দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে।ইচ্ছে করছে এখানে একটু ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে দেই।মনকে সবসময় অত দমিয়ে রাখতে হয় না।মাঝে মধ্যে মনের চাওয়াগুলোকেও স্বীকৃতি দিতে হয়।নয়তো একসময় মন অসুস্থ হয়ে যায়।
হাতের বাঁধনটা আরেকটু শক্ত করে পায়ের গোড়ালিতে ভর করে একপ্রকার লাফ দিয়েই আমি টুপ করে তার গালে একটা চুমু দিয়ে দিলাম।তারপর লাজুক মুখ নিয়ে এক ছুটে দৌড় দিলাম।আমার কান্ডে স্নিগ্ধ মুখ হা করে স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে হাত থেকে বল মাটিতে পড়ে গেল।আর উনার প্রতিক্রিয়া কি সেটা দেখার জন্য আমি আর পিছনে ফিরতে পারলাম না।আমি যে আজ শুধু উড়ছি।আমাকে আজ পায় কে!

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে