ভালো লাগে ভালোবাসতে-পর্ব১
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
ভার্সিটির দ্বিতীয় দিনেই যদি সবার চোখের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া যায় তবে তার প্রতিক্রিয়া ঠিক কি হওয়া উচিত আমি আদৌ বুঝতে পারছি না।যতটুকু আমি জানি ভার্সিটিতে আসার পর সবাই একটু আধটু চায় সকলের মনোযোগ অর্জন করতে।কিন্তু আমি না চাইতেই পেয়ে গেছি।
-‘দেখ দেখ এটাই ঐ মেয়েটা না?’
-‘হ্যাঁ,এই মেয়েটাই তো।’
গেটে পা রাখার পর থেকেই এই ধরণের ফিসফিস আমি শুনতে পাচ্ছি।আর সকলের নজরও যে সরাসরি বা ঘুরে ফিরে আমার দিকেই আছে তাও বেশ বুঝতে পারছি।কোথাও কিছু একটা ঘাবলা যে হয়েছে তা আমার অবচেতন মনে প্রবল বেগে সাড়া দিচ্ছে।
ক্লাসে ঢোকার মুখেই দেখতে পেলাম সবাই পলকহীন ভাবে আমাকে দেখে যাচ্ছে।চুপচাপ সামনের বেঞ্চে গিয়ে বসতেই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সাফা আমার কাঁধ ঝাঁকিয়ে উদ্বিগ্ন মুখে বলল,’কিরে,কাল নাকি তুই কোন সিনিয়রকে থাপ্পড় মেড়েছিস?’
সাফার এতটুকু কথায় আমার মাইন্ড রিঅ্যয়ান্ড করে চলে গেল কালকের ঘটনায়।
ভার্সিটির প্রথম দিন তাই আমার সব থেকে পছন্দের হালকা আকাশি রঙের ওয়েটলেস জর্জেট সেলোয়ার কামিজ পড়ে গিয়েছিলাম।জামাটি আমার খুব পছন্দের।তার সাথে ম্যাচিং করে জুতো,সিলভার রঙের একমুঠ চুড়ি,কানে ছোটো ঝুমকো কানের দুল পড়ে আমার হালকা কোঁকড়া চুলগুলো খোলাই রেখেছিলাম।খুব স্বাচ্ছন্দ্যেই সব ক্লাস করে বাসার উদ্দেশ্য বের হয়ে মাত্র ভার্সিটির গার্ডেন এরিয়া পর্যন্ত এসেছি কোথা থেকে একটা বাইক এসে গতরাতের বৃষ্টিতে রাস্তায় জমে থাকা কাঁদা পানি আমার গায়ে ছিটিয়ে দিল।কপালের একাংশ আর নিজের পছন্দের জামাটি এভাবে কাঁদাপানিতে লুটোপটি হওয়া দেখে আমার মেজাজ সপ্তম ডিগ্রীতে পৌছে গেল।আর সেখানে, সেই বাইকে বসা হোয়াইট কালারের শার্ট আর ব্লাক কালারের জিন্স পড়া ছেলেটা সানগ্লাস চোখে দিয়ে কি ভাব নিয়ে বাইক থেকে নামছে!শার্টের সাদা রঙ যেন ছেলেটার গায়ের রঙের সাথে মিশে যাচ্ছে।
আমি রাগে গজগজ করতে করতে ছেলেটির দিকে এগিয়ে গেলাম।ছেলেটি চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে শার্টের বুকে ঝুলিয়ে পিছনে ফিরে ঘুরতেই আমি কাঁদায় স্লিপ খেয়ে একেবারে ছেলেটার গায়ে গিয়ে পড়লাম।সেও আচমকা হতভম্ব হয়ে আমাকে সামলাতে গিয়ে পিছনে হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরল।
এভাবে স্লিপ খেয়ে পড়তে পড়তে বেঁচে যাওয়ায় আমার বুকে কয়েকগুণ জোড়ে ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেল।একটু কান পরিষ্কার হতেই বুঝলাম ধ্বক ধ্বক শব্দ আমার একার না ছেলেটির বুকেও হচ্ছে।আমার মাথা এবার আরো গরম হয়ে গেল।আজ পর্যন্ত কোনো ছেলে আমার হাত পর্যন্তও ধরেনি।আমি ঠিক করেছি আমার ভালোবাসার মানুষই আমার হাত প্রথম ধরবে আর সেখানে একটি অপরিচিত ছেলের গায়ে এভাবে জড়িয়ে থাকা…ছি! ছি!
এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম।তার উপর পড়ে যাওয়ায় তার সাদা শার্টেও আমার থেকে কাঁদা ভরে গেছে।ছেলেটি বিষ্ময় ভরা দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।আমি তার বিষ্ময়ের পরিমাণ আরেকটু বাড়িয় দিয়ে ঠাস করে গালে একটি চড় বসিয়ে দিলাম।আর রাগে গজগজ করে বলতে থাকলাম,’বাইক দেখেশুনে চালাতে পারো না তাহলে চালাও কেনো!
আমাকে কাঁদার ভূত বানিয়ে এখন আবার জড়িয়ে ধরা হচ্ছে!’
এবার ছেলেটি আমার দিকে রক্তবর্ণ চোখে ফিরে তাকালো।ধবধবে ফর্সা মুখটা রাগে লাল হয়ে রয়েছে।এমন রাগের প্রতিমূর্তি দেখে আমি এবার পুরো চুপসে গেলাম।ছেলেটি দ্রুত বাগানের ভেতর ঢুকে মালীর হাত থেকে পানির পাইপটি নিয়ে এসে আমার দিকে তাক করে রাখল।পানির জোড়ে আমার চোখমুখ বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম।কিছুক্ষণ এভাবে ধরে রেখে আমাকে পুরো ভিজিয়ে চুপচুপ বানিয়ে পাইপটা ফেলে দিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
‘হয়েছে এবার।’আরো কিছু বলতে নিলেই তার ফোন বেজে উঠে।সে একবার ফোনের দিকে তাকিয়ে আর একবার তার গায়ের শার্টের কাঁদা অংশের দিকে তাকিয়ে কটমট করে বলল,’তোমার ক্লাস তো আমি পড়ে নিচ্ছি।বলেই সানগ্লাসটা চোখে দিয়ে চলে গেল।’
এবার আমার চোখে চরম বিস্ময়।ভিজে টুইটুম্বর হয়ে দাঁড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে ভাবতে লাগলাম এটা কি হলো!
সাফার আরেক ঝাঁকুনিতে সেই ভাবনা থেকে ফিরে এলাম।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।ভয়ার্ত গলায় বললাম,
-‘বিশ্বাস কর সে যে সিনিয়র আমি একদম বুঝতে পারিনি।’
-‘ভার্সিটিতে সবথেকে জুনিয়র তো আমরাই।আর সবাই তো হয় প্রফেসর না হয় সিনিয়র হবে।আর তুই কিছু না ভেবেই এভাবে যাকে তাকে থাপ্পড় মেড়ে বসবি।’
-‘আমি এমনিতেই ভয় পাচ্ছি আর তুই দেখি আরো ভয় পাইয়ে দিচ্ছিস।’
-‘এখনো কিছুই বলিনি সোনা।তুমি যাকে মেরেছো সে কোনো নরমাল সিনিয়র না।শুনেছি এই ভার্সিটির টপার,পলিটিক্যাল লিডার প্লাস বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়ন।ভার্সিটির চকলেট বয়,সকল মেয়েদের ক্রাশ,স্যারদের চোখের মধ্যমণি,কোটিপতি বাবার ছেলে।ভার্সিটির সবথেকে ফেমাস বয়কে তুই কিনা থাপ্পড় মেড়েছিস!পুরো ভার্সিটিতে ছড়িয়ে গেছে এই কথা।এখন তোর কি অবস্থা হয় তা আল্লাহই
জানে।’
সাফার মুখে এই কথা শুনে আমার আত্মা যায় যায় অবস্থা।উপর থেকে শক্ত দেখালেও আমি ভেতরে ভেতরে অনেক ভীতু।ঝামেলা খুব ভয় পাই।আর এসব সিনিয়র,পলিটিক্যাল লিডার এগুলো এমনিতেই ভয় পাই।নিজের সম্পর্কে যদি কিছু বলতে হয় তবে আমি এটাই বলব একটা প্রবাদ বাক্য আছে ‘ভাবিয়া করিও কাজ,করিয়া ভাবিও না।’আমার জীবনে হয়তো এর সূত্র পুরো উল্টোভাবেই নিয়েছে।’করিয়া কাজ,ভাবিয়া মরো।’আমি এমনই, হুটহাট করে একটা কাজ করে ফেলি তারপর ভাবতে ভাবতে মরি।অলয়েজ কনফিউশনে থাকা আমার স্বভাব।কেনো যে তখন থাপ্পড়টা মারতে গেলাম!
প্রফেসর ক্লাসে লেকচার শুরু করে দিলেও আমার তাতে মন নেই।মাথাটা যেন হ্যাং হয়ে গেছে।আমি যেখানে বসেছি সেখান থেকে ক্লাসরুমের দরজা দিয়ে সরাসরি বাহিরে দেখা যায়।হঠাৎ চোখ পড়তেই দেখলাম ছয় সাতজনের একটি গ্যাং আসছে যার সামনে সানগ্লাস চোখে দিয়ে পায়ে ব্লাক হোয়াইট কেডস,হাতে ব্লাক ব্রান্ডেড ঘড়ি,চকলেট কালার শার্ট আর হোয়াইট কালার জিন্স গায়ে কালকের সেই ছেলেটা।ছেলেমানুষও যে এত সুন্দর হয় আমার জানা ছিল না।লম্বা ছয় ফুটের মত।তার চেহারায় সব থেকে আকর্ষণীয় জিনিসটি হলো তার ঘন কালো ভ্রু। যা ফকফকে ফর্সা চেহারায় নজর কেড়ে রেখেছে।এত সুন্দর চেহারা অথচ কি গাম্ভীর্য্য!রাগ যেনো সেখানে বাসা বেঁধে রয়েছে।এই রাগগুলো নিশ্চয়ই আমার জন্যই জমিয়ে রাখা। তাকে দেখে ভয়ে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।দেহের রক্তকণিকা যেন দ্রুত বেগে ছুটছে।
কি ভাগ্য!ক্লাস শেষের ঘণ্টা টাও এখনি পড়তে হল!
বেড়িয়ে যাবার মুখে স্যার ছেলেটার সাথে হেসে হেসে কিছু কথা বলে চলে গেল।
তারা সবাই ক্লাসে ঢুকতেই পুরো ক্লাস পিন ড্রপ সাইলেন্ট হয়ে গেল।হঠাৎ ছেলেটা চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে একটি ডেম কেয়ার ভাব নিয়ে আমায় বলল,
-‘তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।সিনিয়ররা ক্লাসে এসেছে,কোনো রিসপেক্টও বলতে নেই।’
আড়চোখে আশেপাশে তাকিয়ে বুঝলাম এই কথা কেনো বলছে,সবাই দাঁড়িয়ে গেছে তাদের দেখে শুধু আমি ছাড়া।এখন আমি তাকে কিভাবে বোঝাই আমার শরীর ভয়ে জমে রয়েছে।দাঁড়ানোর মত শক্তিটুকুও পাচ্ছি না।
সে পুরো ক্লাসের উদ্দেশ্যে বলল,’তোমাদের জন্য একটি গুড নিউজ আছে।তোমাদের কারো রেগিং করা হবে না।কারণ তোমাদের সবার রেগিং এই পুচকি মেয়েটা পূরণ করবে।কারণ তার অসীম সাহস।এগুলো নিশ্চয়ই তার কাছে কিছুই না।’
তার কথা শুনে আমার এখন কেঁদে ফেলতে ইচ্ছে করছে।কি বলে এসব!
তাদেরক মধ্যে থেকে শ্যাম বর্ণের একটি ছেলে সাফাকে উদ্দেশ্যে করে বলল,’এই যে মিস আপনাম নাম কি?’
সাফা কাঁদো কাঁদো গলায় উত্তর দিল,’সাফা।’
ছেলেটি মুখ ভেংগিয়ে বলল,’তো সাফা..আফা আপনি দয়া করে পাশের বেঞ্চে চলে যান আর আমাদের কৃতার্থ করুন।’
বলে তারা সবাই জোরে জোরে হাসতে শুরু করল।সাফা আমতা আমতা করে যাচ্ছে না দেখে তাদের মধ্যে থাকা ছিপছিপে গড়নের সুন্দর একটি মেয়ে ধমক দিয়ে বলল,
-‘তামিম কি বলল কানে যায় নি নাকি তোমারও রেগিংয়ে ভাগ নেওয়ার ইচ্ছা আছে,যাও এখান থেকে।’
সাফা উঠে চলে গেলে আমি একা ফাঁকা বেঞ্চে পড়ে রইলাম।এবার সেই ছেলেটি আমার সামনের হাই বেঞ্চে দু হাত দিয়ে জোড়ে বাড়ি দিয়ে হাতের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে কটমট করে বলল,
-‘আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না একটি দু দিনের পুঁচকে মেয়ে নাকি আমাকে থাপ্পড় মেরেছে!তুমি ভাবতেও পারছো না কত বড় ভুল করে ফেলেছো।’
বেঞ্চে বাড়ির শব্দে আমার শরীর কেঁপে উঠল।আমার চোখের থেকে মাত্র দু ইঞ্চি দূরে তার এই রক্তবর্ণ দৃষ্টি দেখে আমি চোখ গোল গোল করে ভয়ে একটি ঢোক গিললাম।এখন আমার অনেক কিছুই বলা দরকার।ক্ষমা চেয়ে ব্যাপারটা চুকিয়ে নিলেই হয়।কিন্তু গলা দিয়ে কিছু বের হলে তো!
মনে হচ্ছে যেন কথা বলাই ভুলে গেছি।
-‘নাম কি?’
-‘সু..সুপ্তি।’
আমার নামটা শোনার সাথে সাথেই কৌতুহলী দৃষ্টিতে তার ভ্রু কুঁচকে গেল।আমার নামে এমন ভ্রু কুঁচকে রাখার কি আছে আমি বুঝতে পারলাম না।
সে বেঞ্চ থেকে দু হাত সরিয়ে প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে একটু ইতস্তত করে বলল,’সুপ্তি…মানে ঘুম!’
পেছন থেকে আরেক ছেলে তার কাঁধে হাত রেখে দুষ্টুমির ছলে বলল,
-‘কিরে নিদ্র,হোয়াট এ কো-ইনসিডেন্স!সুপ্তি মানে ঘুম,নিদ্র মানে ঘুম।এতো দেখি দুই নাম এক মানে।’
পেছন থেকে সেই মেয়েটে আবারো বলে উঠল,’রাফি তোদের ফাজলামোটা এখনের মতো একটু স্কিপ রাখ।যে কাজটা করতে এসেছি সেটাতেই ধ্যান দেই।’
-‘যথা আজ্ঞে মিথি ম্যাডাম।’
এবার সেই ছেলেটি মানে নিদ্র আমার সামনে একটি ব্যাগ উপুড় করে মেকআপের সব ইনস্ট্রুম্যান্ট ঢেলে বলল,
-‘আমি কি ভাবছি রাফি নাচ,গান,রেম্প ওয়াক এগুলো তো প্রতিবারই করি এবার কিছু ডিফারেন্ট করলে কেমন হয়।সুপ্তি তোমার উপর একটি খুব বড় কাজ দিলাম।আমাদের না সবার খুব মুড অফ হয়ে আছে তো তুমি তোমার সিনিয়রদের এন্টারটেইন করবে।এই যে মেকআপের সব দেখছো এগুলো দিয়ে নিজেকে সাজিয়ে নাও কিন্তু একটু অন্য ভাবে।’
-‘মানে?’
তাদের মধ্যে থেকে আরেকটি ছেলে বলল,
-‘মানে হল তোমার এই সুন্দর টানা টানা চোখে দিবে লিপস্টিক আর এই গোলাপি গোলাপি ঠোঁটে দিবে কাজল।তারপর রীতিমতো একটি জোকার সেজে মাঠের মধ্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে ফানি ফানি পোজ দিবে।’
-‘কি?’
-‘আচ্ছা আরেকটা অপশন দিচ্ছি প্রিন্সিপাল স্যারের কেবিনের সামনে গিয়ে নাগিন ডান্স দিবে।মে নাগিন নাগিন….’
সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।
তাদের এই কথায় দরদর করে আমার মুখের ঘাম ছুটে গেল।এখন কি আমাকে পুরো ভার্সিটির সামনে এসব করতে হবে।কি লজ্জা!
নিদ্র ভাইয়া বলল,-‘আমাদের হাতে সময় নেই তাড়াতাড়ি কর।’
আমি নিশ্চুপ হয়ে ভয়ে কাঁপতে লাগলাম।
প্রচন্ড ধমক দিয়ে সে আবার বলল,’কি হল করো!’
এবার আমি আর নিজেকে আটকিয়ে রাখতে পারলাম না।ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেললাম।আমার কান্না দেখে সে এবার একটু নরম হয়ে গেল।কিছু না বলেই পুরো দলবল নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।
ভার্সিটির ফেমাস বয়কে চড় মেরে আমি যে একটা ভয়ংকর ভুল করে ফেলেছি সেটা আমি হাড়ে হাড়ে বুঝে গেছি।এবং এই জল গড়িয়ে যে অনেকদূর চলে গেছে তাও বুঝতে পারলাম।তবে এই জল থেকে নদী হওয়ার আগেই আমাকে তা আটকাতে হবে।ঠিক করেছি খুব করে মাফ চাইবো দরকার হলে হাত জোরও করবো।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর থেকে রেহাই পেতে হবে।একবার মাফ পেয়ে গেলে আর সেই সিনিয়রদের ছায়াও মাড়াবো না।ভার্সিটির সিনিয়র মানেই সাংঘাতিক ব্যাপার।এদের থেকে যতদূরে থাকা যায় ততই ভালো আর আমি তো আগে থেকেই চড় মেরে ফেঁসে রয়েছি।
তার পরেরদিন সাফাকে সাথে নিয়ে স্পোর্টস গ্রাউন্ডের দিকে এগিয়ে গেলাম।যেখানে নিদ্র আর তার টিম মিলে বাস্কেটবল খেলে যাচ্ছে।এখন সে হাতাকাটা স্পোর্টস টি শার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে আছে।শরীর থেকে টপ টপ করে ঘাম ঝরছে।কিছু মেয়েরা হা করে তা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।এই মেয়েদের কি কোনো লজ্জা বলতে কিছু নেই একটা ছেলের দিকে এভাবে তাকিয়ে রয়েছে!
আমাকে দেখে সে খেলা থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে বল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।আমি তার কাছে গিয়ে একটি ঢোক গিলে মাথা নিচু করে বললাম,
-‘ভাইয়া আমার খুব বড় ভুল হয়ে গেছে।আমি না বুঝে হঠাৎ করে ফেলেছি।আই এম এক্সট্রিমলি স্যরি।প্লিজ মাফ করে দিন।’
-‘তোমার কি মনে হয় একটি ছোট্ট স্যরি শব্দ বলেই তুমি আরিয়ান ইসলাম নিদ্রর গায়ে হাত তোলার পরিণাম থেকে বেঁচে যাবে।এখন যদি আমি তোমাকে মাফ করে দেই তবে তো যে কেউ আমার গায়ে হাত তুলে স্যরি বলে চলে যেতে পারে।সবকিছু এত্ত সহজ না ম্যাম।’
-‘ভাইয়া তাহলে আর কিভাবে ক্ষমা চাইবো।’
-‘ক্ষমা নয় পানিশম্যান্ট।’
-‘পানিশম্যান্ট?’
-‘হ্যাঁ,তোমাকে পানিশম্যান্ট পেতে হবে।আর তোমার পানিশম্যান্ট হলো এখন থেকে তোমাকে সব কাজে আমার সাথে থাকতে হবে।অনেকটা ব্যাক্তিগত সম্পাদক এর মতো।’
-‘মানে?’
-‘বাংলা ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট হয়ে তুমি দেখও বাংলা কম বুঝো!পি.এ. বুঝো তো?
পারসোনাল সেক্রেটারী,তুমি এখন থেকে আমার পারসোনাল সেক্রেটারী।আমি যা বলব তোমাকে তাই করতে হবে।’
তার কথা শুনে আমার মাথায় বাজ পড়ল।কোথায় আমি ভাবছি তার থেকে দূরে দূরে থাকবো আর সেখানে নাকি আমাকে তার সাথে সাথে থাকতে হবে।অসম্ভব!
-‘ভাইয়া প্লিজ এমন বলবেন না।আমি ক্ষমা চাইছি আপনার কাছে।’
-‘ক্ষমায় কাজ হবে না।এই শাস্তিতে তুমি রাজি না হলে আরো বেটার অপশন আছে।তবে বেটারটা আমার জন্য তোমার জন্য না।গট ইট।
আমিও মুখ ভার করে মাথা নেড়ে সায় দিলাম।এই ছয় ফুট ধলা লম্বুশের সাথে আর কথা বলে যে কোনো লাভ নেই তা স্পষ্ট বুঝে গেছি।পিছনে ঘুরে দেখলাম পুরো ক্যাম্পাসের সবাই এখানে এসে জড়ো হয়ে গেছে।এদের কি আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই!আমাকে আর নিদ্র ভাইকে একসাথে দেখলেই সব কোথা থেকে চলে আসে।অসহ্য!
চলবে,