ভালোবাসি_শুধু_তোমায় পর্ব-০৭

0
2650

#ভালোবাসি_শুধু_তোমায় ?❤
#পর্ব : ৭
#লেখিকা : Aye Sha (Koyel Banerjee)

দরজা খুলতেই আমান কে নীহার সাথে দেখে আমার চোখে পানি চলে এলো। নীহা আমানের কোমর জড়িয়ে ধরে আছে। আমাকে দরজার সামনে দেখতে আমান নীহা কে দুরে সরিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো আর ভিতরে এসে আমাকে দরজার সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতে গেলে নীহা বললো,

— আমান তুমি দরজা কেন বন্ধ করছো? ইউ নীড মাই হেল্প! আমি তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি ঘরে।

আমান বেশ কড়া সুরে জবাব দিলেন,

— ফাস্ট অফ অল এটা আমার বাসা তাই আমি দরজা বন্ধ করছি, তোমাকে আমি আমার সাথে আসতে বলিনি তাও তুমি এসেছো নিজের ইচ্ছায়। অ্যান্ড সেকেন্ডলি আমান খানের কাওর হেল্পের প্রয়োজন নেই, আমি নিজেই নিজের ঘরে যেতে পারবো কজ আই এম অ্যাম নট আ হ্যান্ডিক্যাপড ওকেই? নাও গেট লস্ট!

আমান কথা শেষ করে নীহার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে, দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে রইলেন। ওনাকে দেখে মনে হচ্ছে হয়তো ওনার শরীর খারাপ তাই আমি ওনার দিকে এগিয়ে গিয়ে ওনার কাঁধে হাত রাখতেই উনি চোখ খুলে আমার দিকে তাকালেন। ওনার চাহুনী তে আমার বুকের ভিতরটা কেমন জানি করে উঠলো। ওনার চোখ দুটো লাল হয়ে রয়েছে, অমায়িক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন উনি। মনে হচ্ছে কিছু বলতে চান আমায় কিন্তু বলতে পারছেন না। আমি আর চুপ থাকতে না পেরে ওনালে ডাকলাম,

— আমান! কিছু হয়েছে?

উনি আমার কোনো উত্তর না দিয়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন। সামান্য টলছেন কিন্তু কাওর সাহায্য নেবেন না। নেবেন’ই বা কেন? দ্য গ্রেট আমান খান! বলে কথা। আমিও ওনার পিছন পিছন উপরে চলে গেলাম। ঘরে এসে দেখি আমান নিজের শার্ট খুলে ফেলেছেন, কিছুটা লজ্জা বোধ করলাম তাই মাথা নামিয়ে ফেললাম। উনি আস্তে আস্তে ওয়াশরূমে চলে গেলেন। আমি বেডে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম ওনার আসার। আগে কোনদিন উনি ড্রিংক করতেন না, রাত করে বাসায় ফিরতেন না আর এখন? কি যে হয়েছে ওনার কি জানি।

উনি ওয়াশরুম থেকে ফেরত আসতেই আমি টি-শার্ট এগিয়ে দিলাম। উনি ডান হাত বাড়িয়ে টি-শার্ট নিতেই আমার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো। টি-শার্ট পরা হতেই আমি ওনার ডান হাত নিজের কাছে টেনে আনতেই উনি হাল্কা চিৎকার দিয়ে উঠলেন,

— আহ! কি করছো মীরু!

আমি কিছুক্ষণ ওনার মুখের দিকে চেয়ে রইলাম। আনমনে বললাম,

— কি বললেন? আবার বলুন!

— কি করছো? ছাড়ো আমার হাতটা!

— ছাড়বো মানে টা কি? কি করে হলো এসব? কি করেছেন আপনি এগুলো?

আমানের ডান হাতে জায়গায় জায়গায় সিগারেটের পোড়া ক্ষত। ঠিক যেসব জায়গায় আমার ফোস্কা পরেছে সে সব জায়গায় ওনার পোড়া ক্ষত গুলো রয়েছে। আমি ওনাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম,

— আপনি এগুলো ইচ্ছে করে করেছেন তাই না? আমি জানি। আমার যেসব জায়গায় ফোস্কা পরেছে আপনি একভাবে সেসব জায়গায় ক্ষত সৃষ্টি করেছেন। কেন করলেন এমন?

আমার প্রশ্নে উনি আমাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে বললেন,

— ক্ষুধা পেয়েছে! খেতে দেবে?

— আপনি বসুন। আমি আসছি খাবার নিয়ে।

আর দেরি করলাম না চটপট গিয়ে খাবার প্লেটে নিয়ে আসলাম ওনার জন্য। এসে দেখি উনি বেডে হেলান দিয়ে শুয়ে আছেন চোখ বন্ধ করে। উনি কি ঘুমিয়ে পরলেন? এই ভেবে ওনার কাছে গিয়ে হাল্কা ডাক দিলাম।

— আপনি খাবেন না? খাবার এনেছি তো আমি।

আমার ডাকে উনি সোজা হয়ে বসলেন। মনে হচ্ছে অনেক কষ্টে চোখ খুলে আছেন। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললেন,

— খাইয়ে দেবে?

একের পর এক ঘটনা আমাকে চমকে দিচ্ছে। এসব কি নেশার ঘোরে করছেন? হয়তো কাল সকালে সব ভুলে যাবেন। তাই আর সুযোগ হাতছাড়া করলাম না। ওনার মুখের সামনে খাবার তুলে দিতেই উনি খেতে শুরু করলেন, মাঝ পথে উনি খাবারে হাত দিতে নিলে আমি বাঁধা দিলাম,

— হাত দিচ্ছেন কেন আপনি? আমি খাইয়ে দিচ্ছি তো।

উনি হেসে উত্তর দিলেন,

— আমার পেট ভরে গেছে, আর খাবো না। তাই তোমাকে খাইয়ে দেবো। আমি জানি তুমি দুপুর থেকে কিছু খাওনি এখন পর্যন্ত।

— আপনি কি করে জানলেন?

— দুপুরে তো ঘুমিয়ে ছিলে, ঠান্ডাও লাগছিল। চাদর টেনে দিয়ে চলে গেছি অফিসে। দুপুরের ঘুম নিশ্চয় রাত ১০টা/১১টার আগে ভাঙেনি।

— আব, না মানে…

— খেয়ে নাও।

উনি আমাকে খাইয়ে দিতে শুরু করলেন। খেতে খেতে ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম,

— আপনি তো কোনদিন ড্রিংক করতেন না, তাহলে কেন এখন রোজ রাতে ড্রিংক করে ফেরেন?

উনি তাচ্ছিল্য হেসে জবাব দিলেন,

— (মনে মনে– আমার মনে যে কি চলছে, তুমি তা বুঝবে না।) আজকের পর থেকে আর খাবো না।

— সত্যি তো?

— হ্যাঁ।

আজ জানো মনে হচ্ছে আমি আমার আমান কে ফিরে পেয়েছি যে কি না মীরু বলতে অজ্ঞান ছিলো। শত অপমান, অবহেলার পরেও ভালোবাসত আপ্রাণ। আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি আমান এতটা ড্রাঙ্ক থাকার পরেও কোনোরকম কোনো বাজে আচরণ, ব্যবহার করছেনা আমার সাথে। কতটা কন্ট্রোলে রেখেছে নিজেকে এটাই ভাবছি আমি। মনে হচ্ছে উনি কিছুই খায়নি, একদম স্বাভাবিক।

উনি হাত ধুয়ে এসে আমার হাতে একটা প্যাকেট দিলেন কাবার্ড থেকে বাড় করে। আমি প্যাকেটটা হাতে নিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম,

— কিসের প্যাকেট এটা?

— তোমার গিফ্ট! প্রথমবার রান্না করেছো তাও আবার এতো সুন্দর। আশা করছি তোমার ভালো লাগবে।

আমি হেসে প্যাকেট খুলেই দেখলাম একটা সুন্দর লাল সিল্কের শাড়ি যা আমার খুবই পছন্দ হলাম। আমি খুশি হয়ে বললাম,

— আমার খুব পছন্দ হয়েছে। থ্যাংক ইউ!

কথাটা বলেই ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম কিন্তু একটা ভয় হলো ‘এই না দুরে সরিয়ে দেয় আমায়’ কিন্তু না! উনি এমনটা না করে উল্টো আমার পিঠে দু-হাত রেখে বললেন,

— আগামীকাল সকালে আমি চাই তুমি আমার সামনে স্নানের পর এই শাড়িটা পরে আসো। আসবে তো?

— অবশ্যই।

উনি আমাকে ছেড়ে হেসে গিয়ে বেডে শুয়ে পরলেন, আমিও কিছু বললাম না কারণ সত্যি ওনার খুব ঘুম পেয়েছে। উনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন বুঝতে পেরে আস্তে আস্তে ওনার পাশে বসে মলম লাগিয়ে দিতে লাগলাম পোড়া জায়গায়। আমি ভুল ছিলাম না! আজও আমার আমান আমাকে ভালোবাসে। আমি কষ্ট পেয়েছি বলে নিজেকে কষ্ট দিয়েছে। পাগল একটা! মলম লাগিয়ে আমিও ওনার পাশে এসে শুয়ে পড়লাম। কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি তা খেয়াল নেই।

সকালে ঘুম ভাঙতেই মনে পড়ে গেল আমানের রাতের বেলার কথা। উনি বলেছিলেন সকালে স্নানের পর ওনার দেওয়া শাড়ি পড়ে ওনার সামনে আসতে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম সকাল সাতটা বাজে, এর মানে আর একটু পরেই আমান ঘুম থেকে উঠে পরবে। তাই আমি চটজলদি বিছানা ছেড়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলাম উনার দেওয়া শাড়িটা নিয়ে। সত্যি বলতে আমার এরকম শাড়ি খুব পছন্দ! আমি রেড কালার খুব পছন্দ করি। আমি তো ভাবতেই পারি না আমান কি করে আমার পছন্দের এত খেয়াল রাখেন।

আমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখলাম আমান ঘরে নেই। এত তাড়াতাড়ি করে উঠে রেডি হলাম ওনার দেওয়া শাড়ি পড়ে ওনাকে দেখাবো ভেবে আর উনিই ঘরে নেই। ধুর! আমি বেশি নিরাশ হয়ে ব্যালকনি তে গিয়ে রেলিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে অন্যমনুস্ক হয়ে চুল আচরাতে লাগলাম। সে সময় হঠাৎ করে একজোড়া হাত আমার পেটের কাছে আবব্ধ হলো এবং ঘাড়ে আমি ঠোঁটের ছোঁয়া পেলাম। এতো তাড়াতাড়ি এতো কিছু ঘটে গেলো যে আমি কিছু বুঝে উঠতে পারলাম না তাই সঙ্গে সঙ্গে পিছন ফিরে ধাক্কা মেরে দিলাম আমার পিছনে থাকা ব্যক্তিটি কে। ধাক্কা মারার পর আমি দেখলাম এটা আর কেউ না আমান!

আসলে অন্যমনুস্ক ছিলাম আর উনি কোনদিন আমাকে এভাবে স্পর্শ করেনি তাই ওনার স্পর্শ চিনতে পারিনি আর ধাক্কা দিয়ে ফেলেছি। এখন ভাবছি এটা আমি কি করে ফেললাম। আমি আমান কে কিছু বলতে যাবো তখনই উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— স্যরি! আসলে আমার এমন কোনো ইনটেনসন ছিলো না বাট জানি না কি হলো। তোমাকে লাল শাড়িতে এতো সুন্দর লাগছিল যে … যে আমি কন্ট্রোল রাখতে পারিনি। আই অ্যাম এক্সট্রিমলি স্যরি। আর কোনদিন এমন হবে না।

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই উনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন আর আমি কিছু বলতেও পারলাম না। উনি বেরিয়ে যেতেই কান্নায় ভেঙ্গে পরলাম। এমন একটা মুহুর্তে ওনাকে এতটা কষ্ট দিলাম আমি? কেন? কেন বারবার আমি ওনাকে কষ্ট দিয়ে ফেলি? আমার জন্য উনি প্রথমে বদনাম নিয়ে ভার্সিটি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন আর আজ ওনার স্বামীর অধিকার থাকতেও এমন একটা মুহুর্তে দুরে সরিয়ে অপমান করে ফেললাম। আজ সকালটা কতটা ভালো হবে আশা করেছিলাম যা নিজে হাতে নষ্ট করে ফেললাম। এই ভেবে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকলাম আমি ……………

?
?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে