#ভালোবাসি_শুধু_তোমায় ?❤
#পর্ব : ৬
#লেখিকা : Aye Sha (Koyel Banerjee)
” তোহ মিস ইসমি? আমার পিছু নিয়ে এখানেও চলে এসেছেন আপনি? ”
কথাটা শুনেই ইসমি চমকে উঠলো! এতক্ষণ ওর চোখ রাস্তার ধারে একজন কে খুঁজছিল। কিন্তু কথাটা শুনে তা স্থির হয়ে গেলো। হাতে হাত ডলতে ডলতে ইসমি পিছন দিকে ঘুরলো কারণ আওয়াজটা পিছন থেকে এসেছে। ইসমি পিছন ফিরতেই সেই ব্যক্তিটি আবার বললো,
— আপনি কি আমায় রেহাই দেবেন না? এরকম পিছু করার মানে কি?
ইসমি আমতা আমতা করে বললো,
— তুমি কি করে বুঝলে আমি তোমার প..পিছু করছিলাম? আমি মোটেও তোমার পিছু করছিলাম না বুঝলে?
— আচ্ছা তাই? দ্যান আমি যেই NGO তে আঁকা শিখাচ্ছিলাম সেইখানে আপনি জানলায় দাঁড়িয়ে আমায় কেন দেখছিলেন?
— চোখ আছে তাই দেখছিলাম। আর আ..আমিও এই NGO তে আসি বুঝলে?
— হ্যাঁ সেটা আজকে থেকে তাই তো?
ইসমি এর উত্তরে কিছুই বলতে পারলো না সেই দেখে ব্যক্তিটি ছোট্ট একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো,
— আমার পিছন করা ছেড়ে দিন মিস ইসমি চৌধুরি! আমার পিছনে আপনি বেকার সময় নষ্ট করছেন। আপনার মতো বড়লোক ঘরের মেয়ে আমার মতো অতি সাধারন ছেলের পিছনে ঘুরছে! এটা মানায় না। আপনি আপনার স্টেটাসের কাওকে খুঁজে নিন।
— স্টেটাস দেখে ভালোবাসা হয় না, ইভেন ভালোবাসা তে কোনো কিছুই বাছ-বিচার করা হয় না। ভালোবাসা মন থেকে হয় আর আমি তোমাকে মন থেকে ভালোবাসি। নিজেই তো বলছো আমি বড়লোকের মেয়ে আর তুমি অতি সাধারন ছেলে। এর মানে নিশ্চয় আমার কোনো স্বার্থ নেই তোমাকে ভালোবেসে। আমি তোমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসি অ…
— প্লিজ! প্লিজ এই এক কথা আমাকে বলবেন না। আমি মেয়েদের কে সন্মান করি এটুকুই জাস্ট! এর চাইতে বেশি আর কিছু না। আমি আমার জীবনে আমার আম্মি ছাড়া আর কাওর অবদান থাকবে না। আর এই ভালোবাসা যার কথা আপনি বলছেন! সেটা কে আমি ঘৃণা করি। ভালোবাসা শব্দটাকেই আমি ঘৃণা করি। আমার জীবনে আপনি তো কি! কোনো মেয়েই কোনো স্থান পাবে না। আপনি যতো তাড়াতাড়ি বুঝবেন আপনার ডাল এখানে গলবে না ততো ভালো হবে আপনার জন্য। চলি!
ইসমি কে কথাগুলো বলে সে পিছন ফিরে পকেটে হাত গুঁজে হাঁটা শুরু করলেই ইসমি চিৎকার করে বলে,
— এ ‘মিস্টার অর্নিল খান!’ আপনার জীবনে শুধু আমার স্থানই আছে আপনার আম্মির পরে। অন্য কোনো মেয়েকে আমি আসতে দেবো না। ভালোবাসতে আপনাকে হবেই আর রইলো বাকি ডাল গলার কথা? আমার কাছে ডালের কাঁটা আছে, না গললে ঘেটে গলিয়ে ফেলবো নো টেনশন ডু লাভ মি!
অর্নিল ইসমির কথা শুনে দাঁড়িয়ে পরলো, ইসমির অজান্তেই অর্নিল হেসে ফেললো তারপর আবার হাঁটতে গেলেই ওর হাতে টান পরে, বেশ ভালোই বুঝতে পারছে ওর হাত ইসমি টেনে ধরেছে। অর্নিল তাকাতেই ইসমি ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রূ কুঁচকে বললো,
— এই মিস্টার অর্নিল খান! খুব তো বললেন মেয়েদের রেস্পেক্ট করেন তাহলে আমায় একা ফেলে চলে আসছিলেন কেন?
— কারণ আমি আপনাকে চিনি না তাই।
— তুমি না চিনলে কি হবে? আমি তো তোমাকে চিনি তাই না! সো তুমি আমাকে এখানে একা ছেড়ে গেলে আমার ক্ষতি হয়ে গে…
— এতো কথা বলেন কেন আপনি? একটু তো নিজের ঠোঁটটাকে রেহাই দিন তাহলে আমার কানটা রেহাই পায়। কানটা খারাপ হয়ে যাবে এবার আমার।
— আমার কথা শোনো না কেন তুমি? আমার কথা না শুনলে তো আমি কথা বলবোই।
অর্নিল নিজের মনে বিড়বিড়িয়ে বললো,
— এখনই এই অবস্থা না জানি সারাজীবন কি হবে আমার? আল্লাহ! সেভ মি ফর দিজ চপর চপর গার্ল!
— এই এই কি বললে তুমি?
— বললাম চলুন আমার সাথে আর আমার উদ্ধার করুন।
— হিহিহি! চলো, চলো।
এই বলে ইসমি আর অর্নিল হাঁটা শুরু করলো, ইসমি তো হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলে চলেছে আর অর্নিল পকেটে হাত গুঁজে নিজের মতো হেঁটে চলেছে। মাঝে মধ্যে ইসমির দিকে তাকিয়ে সামান্য হাসলেও সেটা ইসমি দেখতে পাচ্ছে না কারণ ও নিজের কথা বলতে ব্যস্ত।
অন্যদিকে,
— মীরা! আজ তুমি রান্না করবে। রান্নার লোক আজ আসেনি, আর আমারও শরীরটা ভালো নেই তাই তুমিই আজ রান্না করবে আমাদের জন্য।
আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে আসতেই আম্মু আমাকে কথাটা বললো। আমি আম্মু কে বললাম,
— আম্মু আমি তো অফিস যাবো তাহলে রান্না কি…
— বাহানা দিয়ো না মীরা। এতোদিন অফিস যাওনি আজ অফিস না গেলে এমন কিছু হবে না। আর তাছাড়া আমান তো গেছে অফিসে।
— ঠিক আছে আম্মু কিন্তু আপনি আমাকে একটু সাহায্য করলে ভালো হতো, আমি তো রান্নাটা ওতো ভালো পারি না তাই…
— ঘরের কাজ তো কিছুই পারো না, যা যা একজন সংসারী মেয়ে মানুষের পারার কথা তার তো কিছুই জানো না। শুধু পারো বড়লোকি চাল দেখাতে আর উশৃংখল মেয়ে মানুষদের মতো নেচে বেড়াতে। এরপরেও যে কি করে আমার ছেলের বউ হওয়ার আশা করো ভেবে পাই না আমি। আমান কে বলতে হবে অন্য একটা ভালো মেয়েকে বিয়ে করে আনতে তোমার মতো বেহায়া কে বিদায় করে।
আমি আম্মুর কথা শুনে জোরে বলে উঠলাম,
— আম্মু! এসব কি বলছেন আপনি? আমি আস্তে আস্তে সব শিখে নিচ্ছি ঘরের কাজ। চেষ্টা করছি যোগ্য বউ হওয়ার, যোগ্য বউমা হওয়ার। তার পরেও আপনি এমন কেন বলছেন? কেনো আপনার আমাকে পছন্দ নয়? আমি তো আমার আগের উৎশৃংখল জীবনযাপন ছেড়েই দিয়েছি। এখন আপনার ছেলের যোগ্য হওয়ার চেষ্টা করছি। আমি আপনার ছেলেকে ভালোবাসি। আমি ওকে ছেড়ে কিছুতেই যেতে পারব না। আমি রান্না করবো আর আপনার কোনো সাহায্য নেব না।
আম্মুর মুখের উপর কথাটা বলে আমি রান্নাঘরে চলে এলাম, কিন্তু আমিতো জানিনা কিভাবে কি রান্না করতে হয়! শুধু জানি আজকে কি রান্না করতে হবে। আজ থেকে অনেক বছর আগে আমি একবার রান্না করেছিলাম তাও সেটা সুমির সাথে। সুমি বেশির ভাগ রান্নাটা করেছিল কিন্তু আমি শুধু দেখেছিলাম। এক মিনিট! সুমিকে ফোন করলেই তো হয়। সুমি তো সব রান্নাই পারে তাহলে আজকে রান্নার রেসিপি টা অন্তত জেনে নেব কিভাবে কি করতে হয়, তারপর ইউটিউব তো আছেই। যেই ভাবা সেই কাজ আমি সঙ্গে সঙ্গে সুমিকে ফোন করলাম।
— সুমি!
— হ্যাঁ বল। কিছু হয়েছে?
— আমার একটু সাহায্য লাগবে তোর।
— কি সাহায্য বল?
আমি সুমি কে সবটা খুলে বললাম। সুমির কথায় আমার মনে পরলো আমরা এরকম রান্নাই করেছিলাম, আমি দেখেছি সুমি কে রান্না করতে। ও আমাকে বুঝিয়ে বলে দিলো কি কি উপকরণ কি পরিমাণে লাগবে। আমি বুঝে ওকে বললাম,
— থ্যাংক ইউ রেহ! বাঁচালি আমায়।
— মেনশন নট। আমি এখন ফ্রি আছি, মানে অফিস চলে এসেছি আর মিটিংও নেই। তাই তোর প্রবলেম হলেই আমাকে কল করিস আমি বলে দেবো।
— একদম। ঠিক আছে রাখলাম।
সুমির কল কেটে লেগে পড়লাম কাজে, এক এক করে সুমির কথা মতো সব করে ফেললাম অসুবিধে হল না। রান্না করতে গিয়ে মনে পরে গেলো আগে কীভাবে সুমি আর আমি মিলে রান্না করেছিলাম। সব রান্না হওয়ার পর বাকি ছিলো শুধু মাছ ভাজা করা, এই মাছ ভাজতেই আমার যত ভয়। তবুও ভয়ে ভয়ে শুরু করলাম, একটা মাছ আস্তে করে ছেড়ে দিলাম। কিছু না হওয়ায় একটু জোরেই পরের মাছটা ছেড়ে দিলাম আর তেলের ছিটে এসে হাতে লাগলো আমার। আমি হাল্কা চিৎকার করে সরে এলাম হাত ধরে। মাথা তুলে তাকাতেই দেখলাম সিঁড়ির কাছে আমান আমার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমানের সাথে আমার চোখে চোখ পরতেই উনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে উপরে চলে গেলেন নিজের ঘরে আর আমি ঠোঁট চেপে নিজের কান্না আটকে রেখে কাজ সম্পূর্ণ করতে লাগলাম।
বেশ কিছুক্ষণ পর,
আমি সব রান্না শেষ করে উপরে নিজের ঘরে যাবো আমানের সাথে দেখা করতে এমন সময় আম্মু ডাক দিলেন,
— মীরা!
— হ্যাঁ আম্মু বলুন।
— রান্না সেরে ফেলেছো সব যা যা বলেছিলাম?
— হ্যাঁ আম্মু রান্না সেরে, রান্নাঘর পরিস্কার করে, খাবার টেবিলে সাজিয়ে দিয়েছি। শুধু পরিবেশন করাটাই বাকি।
আম্মু মুখ ছোটো করে বললেন,
— ওহ!
আমি আর কিছু না বলে সামান্য হেসে নিজের ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম। ঘরে এসেই দেখি আমান বেডে বসে ফাইল চেক করছেন। আমি ওনার কাছে এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
— আপনি আজকে এ সময়? কিছু ভুলে গেছেন?
— হমম একটা ফাইল।
কথা শেষ করেই উনি উঠে দাঁড়ালেন আর বেরিয়ে যেতে নিলেই আমি ওনার গলা জড়িয়ে ধরে দাঁড়ালাম দু-হাত দিয়ে আর আদুরে সুরে বললাম,
— এসেই যখন পড়েছেন তখন লাঞ্চটা করেই যান না প্লিজ!
আমার কথা শুনে উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার দু-হাত ধরে গলা থেকে নামালেন আর আমি ব্যাথা পেয়ে চিৎকার করে উঠলাম,
— আহহহহ!
আমার হাত সঙ্গে সঙ্গে উনি ছেড়ে দিলেন। যে জায়গায় ফোস্কা পড়েছিল মাছ ভাজ্তে গিয়ে, আমান ভুলবশত সেখানেই হাত দিয়ে চেপে ধরেন আর আমি চিৎকার দিয়ে উঠি। আমান আমার হাতের ফোস্কা দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলেন,
— কি করে হলো এসব?
— আ..আসলে রান্না করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত হয়ে গেছে।
— যা পারোনা তা করো কেন? তোমার দ্বারা যেগুলো হয় না সেগুলো করে আমার মন জেতার চেষ্টা করছো? কোনো দরকার নেই এসবের।
উনি কথাটা বলে চলে যেতে নিলে আমি ওনার পথ আটকে বললাম,
— অনেক কষ্ট করে প্রথমবার একা হাতে পুরো রান্না করেছি। প্লিজ এভাবে না খেয়ে যাবেন না, কথা দিচ্ছি খারাপ লাগবে না আপনার। আমি আপনার যোগ্য না হলেও আমার বানানো খাবার আপনার খাওয়ার যোগ্য হবে।
আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে রেগে তাকিয়ে বললেন,
— তোমার ফালতু কথা শোনার কোনো ইচ্ছে নেই। আজ কিছুক্ষণ আগেই খাওয়ার ইচ্ছে আমার মরে গেছে।
উনি চলে গেলেন আর আমি বেডে বসে পড়লাম। এমন করেন কেন উনি আমার সাথে? আমি কি এতটাই অসহ্যকর ওনার জন্য? জোর করে যখন বিয়ে করেছিলাম তখন তো না বলেননি তাহলে বিয়ের পর এতো অবহেলা কেন?
আমি কাঁদতে কাঁদতে বেডে শুয়ে পড়লাম, আমার পুরোনো অভ্যেস আমি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যাই আর তা অনেক পরে ভাঙে। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না আমি ঘুমিয়ে গেলাম কাঁদতে কাঁদতে। ঘুম যখন ভাঙলো তখন ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত ১১টা। এতে এতটা অবাক হলাম না যতটা অবাক হলাম আমার গায়ে চাদর দেখে। আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি কোনো চাদর গায়ে দিয়ে শুইনি। তাহলে? কোথা থেকে এলো এটা? কে গায়ে দিয়ে দিলো? আম্মু? কি জানি বাবা।
আমি আর কিছু না ভেবে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে, ক্ষুদা মরে গেছে আমার। যেখানে স্বামী আমার হাতের তৈরী খাবার খেলো না সেখানে আমি কি করে খাই? রাতেও হয়তো আমান ডিনার করেই আসবেন। আমিও ঠিক করলাম আর খাবো না আজকে! একদিন না খেলে নিশ্চয় মরবো না। কিন্তু আমান এখনও এলেন না কেন? এতো রাত তো করে না উনি! প্রায় ১১:৩০ টা বাজতে চললো। আমি ফোন করলাম কিন্তু ফোন ধরলেন না তাই টিভি দেখতে লাগলাম। টিভি দেখতে দেখতে কলিং বেলের আওয়াজ পেলাম, ফোন অন করে দেখলাম রাত ১২:৩০ টা বাজে। আমি গেলাম দরজা খুলতে, দরজা খুলতেই যা দেখলাম তা দেখে আমার চোখে পানি চলে এলো ……
?
?