ভালোবাসি_শুধু_তোমায় পর্ব-০৪

0
3171

#ভালোবাসি_শুধু_তোমায় ?❤
#পর্ব : ৪
#লেখিকা : Aye Sha (Koyel Banerjee)

” নিজের স্ত্রী থাকতে একটা অন্য মেয়ের সাথে কীভাবে ঘনিষ্ট হতে পারেন আপনি আমান? ”

কথাটা ভাবতেই আমার চোখে পানি চলে এলো। আমার চোখের সামনে আমান আর নীহা একে অপরের ক্লোস হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আমান হাতে ড্রিংক এর গ্লাস নিয়ে আর নীহা আমানের কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখতে পাননি আমান এটা আমি বেশ ভালোই বুঝতে পারছি কারণ নাইট ক্লাবে অনেকেই রয়েছে আমাদের আশেপাশে। আমি চোখ বুজতেই আমার চোখের সামনে সেদিনের ঘটনা ভেসে উঠলো যখন আমি আমানের সামনে একটা অন্য ছেলের ক্লোস হয়ে ছিলাম….

“” — মীরা! মীরা এমনটা করো না তুমি। তুমি একজন ভদ্র বাসার মেয়ে, আর একটা ভদ্র বাসার মেয়ে হয়ে নাইট ক্লাবে যাওয়া উচিত নয়।

— ওহ শাট আপ মিস্টার আমান খান! আমি আপনার কাছ থেকে ফ্রি তে উপদেশ চাইনি বুঝলেন? আর আপনি কেন বলুন তো আমাকে ফলো করছেন? ফলো করে এখানেও চলে এসেছেন?

— হ্যাঁ এসেছি। কারণ আমি চাই না তুমি নাইট ক্লাবে যাও, ড্রিংক করো আর অন্য ছেলেদের সাথে মেশো।

— আচ্ছা তাই নাকি? তা আপনি কেন চান না এসব?

— বিকজ আই লাভ ইউ!

— বাট আই ডোন্ট! একটা ছেলে হয়ে মুরোদ নেই নাইট ক্লাবে যাওয়ার কিন্তু একজন মেয়ে হয়ে আমি যাচ্ছি তাই খুব গায়ে লাগছে তাই না?

— মীরা! আমি যখন বারণ করেছি তুমি নাইট ক্লাবে যাবে না তখন তুমি যাবে না ব্যাস!

— হাসাবেন না মিস্টার খান। আপনার কোনো অধিকার নেই আমাকে বারণ করার। ইউ আর জাস্ট নো ওয়ান ইন মাই লাইফ! আমি আমার ইচ্ছে মতো চলতে পছন্দ করি ছোটো থেকে। আমি নাইট ক্লাবে যাবো, ড্রিংক করবো, অন্য ছেলেদের সাথে মিশব আপনি বারণ করার কেউ নয় বুঝলেন! যত্তসব ভিখারির দল! এসেছে আমাকে, মীরা চৌধুরি কে বারণ করতে।

আমি কথাটা বলেই চলে এলাম নাইট ক্লাবের ভিতরে। এসেই আমার ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিতে শুরু করলাম। একটা টাইম ড্রিংক করার পর আমি আমার মেল ফ্রেন্ডের সাথে ডান্স করতে শুরু করলাম ক্লোস হয়ে। হঠাৎই কেউ আমাকে হ্যাঁচকা টান মেরে পিছন দিকে টেনে নিলো। আমি দেখলাম এটা সেই ভিখারি মানে মিস্টার আমান খান। গা আমার রি রি করে উঠলো লোকটাকে দেখে। উফফ! অসহ্য! আই জাস্ট হেইট দিজ ম্যান।

— চলো আমার সাথে।

— হাউ ডেয়ার ইউ টু টাচ মি? কোন অধিকারে আপনি আমাকে টাচ করেন?

— তোমার স্বামীর অধিকারে! যেমন কোনো স্ত্রী তার স্বামী কে অন্য কোনো মহিলার সাথে সহ্য করতে পারে না তেমন একজন স্বামীও তার স্ত্রী কে পরপুরুষের সাথে মেনে নিতে পারে না। হতে পারে বেশিরভাগ সময় অন্যায় নারীদের সাথেই হয় কিন্তু কিছু কিছু সময় অন্যায় পুরুষদের সাথেও হয়। কথায় আছে ভালো মানুষ খারাপের সঙ্গ পায় আর খারাপ মামুস ভালোর। সবসময় পুরুষরা ঠকায়না, কিছু কিছু সময় নারীরাও ঠকায়। ঠিক যেমন তুমি আমাকে ঠকাচ্ছ।

— ঠকাচ্ছি? আমি আপনাকে ঠকাচ্ছি? আমি তো আপনাকে…

— ভালোবাসো! আজ না হয় কাল তুমি আমাকে ভালোবাসবেই আর আমার স্ত্রী হবে তাই তোমাকে আমি অন্য কোনো পুরুষের ধারে কাছেও ঘেষতে দেবো না।

— আপনি…

আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে উনি আমাকে টানতে টানতে নাইট ক্লাবের বাইরে নিয়ে চলে এলেন। বাইরে আসতেই আমি ওনার কাছ থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে কিছু বলতে যাবো ঠিক সে সময় উনি আমার দিকে এমন ভাবে তাকালেন যে আমি কিছু বলার মতো ক্ষমতাই হারিয়ে ফেললাম, ভীষণ ভয়ঙ্কর আর রাগী দেখাচ্ছিল ওনাকে তাই আর কিছু বলতেই পারলাম না। উনি আমাকে বললেন…

— জানো তো মীরা একটা কথা আছে, ” যে যা চায় তা পায় না। ” ভালোবাসার ক্ষেত্রেও কথাটা প্রযোয্য। যে মন থেকে ভালোবাসে এবং ভালোবাসা চায় সেই শুধু অবহেলা, অপমান পায় ভালোবাসার বদলে আর যে টাকা-পয়সা চায় সে পায় শুদ্ধ ভালোবাসা। এই জন্যেই বলে কেউ না চাইতেও পেয়ে যায়, কেউ চেয়েও পায় না আর কেউ পেয়েও তার মর্ম বোঝেনা, হারিয়ে ফেলে। আমাকে মনে না রাখো, আমার কথাগুলো মনে রেখো নাহলে পরে কষ্ট পেতে হতে পারে যা আমি চাই না। “”

____ হেই মীরা! অনেকদিন পর নাইট ক্লাবে দেখছি তোকে।

হঠাৎ একজনের কথায় আমার ঘোর কাটলো। আমি পাশে তাকিয়ে দেখলাম আমারই একজন ফ্রেন্ড যার সামনে থেকে আমান আমাকে টেনে নিয়ে চলে গেছিলো। সেদিনের পর থেকে আর আসা হয়নি নাইট ক্লাবে। আমি ওর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে আমানদের দিকে তাকালাম দেখলাম ওরা হেসে হেসে গল্প করছে। আমি নিজের চোখের পানি আড়াল করে আমার ফ্রেন্ডের দিকে তাকিয়ে বললাম।

— হ্যাঁ রেহ আরুশ! কাজের ব্যস্ততায় আর আসা হয়না। আর এখন আমার এসবের থেকে মন উঠে গেছে।

— হ্যাঁ এখন তো তোর মন তোর বর আমানের উপর গিয়ে পরেছে। আমান কিন্তু সেদিন ঠিকই বলেছিলো তুই ওকে একদিন না একদিন ঠিকই ভালোবাসবি। তুই তো ভালোবাসলি ওর স্ত্রী হলি বাট আমানের কি হলো? ও তো এখন তোকে ছেড়ে অন্য মেয়ে নিয়ে ঘুরছে।

আমার মাথাটা গরম করে দিলো আরুশ আমানের ব্যাপারে উল্টো পাল্টা কথা বলে তবুও নিজের রাগ সংবরণ করে বললাম।

— আরুশ! আমি এখানে এসব ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করতে আসিনি ওকেই?

— ইয়াহ অফ কোর্স! লেটস ডান্স!

আরুশ আমার হাত ধরে ডান্স ফ্লোরে নিয়ে যেতেই দেখলাম আমান আমার দিকে তাকিয়েছে, চোখে চোখ পরতেই ও চোখ সরিয়ে নিলো। ঠিক সেই সময় একটা স্লো মিউজিকে গান চলতে লাগলো।

“” তেরে দার পার সানাম, হাম চালে আয়ে।
তু না আয়া তো হাম, চালে আয়ে। “”

গানের প্রত্যেকটা লাইন আমার মনে ঝড় তুলে দিচ্ছে। তখন যদি আমান কে এতটা অপমান না করতাম, ওনার কথা শুনতাম তাহলে আজ উনি আমার সাথে থাকতো, আমার পাশে থাকতো। উনি ঠিক বলেছিলেন, ” কেউ না চাইতেও পেয়ে যায়, কেউ চেয়েও পায় না আর কেউ পেয়েও তার মর্ম বোঝেনা, হারিয়ে ফেলে। ” আমি পেয়েও হারিয়েছি, নিজের অহংকারে হারিয়ে ফেলেছি আমানের ভালোবাসা। সেদিন তো আমান ভীষণ রেগে গেছিলেন তাহলে আজ? আজ কি হলো ওনার? আজ কেন রাগ করছেন না? আমি মনে মনে ঠিক করলাম …

— আজ আমাকে আরুশের ক্লোস হতেই হবে ইচ্ছে না থাকলেও। আমান যদি রিয়াক্ট করে তাহলেই আজকে উনি আমার কাছে ধরা পরে যাবেন। আমার ভালোবাসার কাছে হার মানতেই হবে।

এই ভেবে আমি আরুশের দু-হাত দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরতেই আরুশ হেসে আমার কোমরে হাত রাখলে আমার অসস্তি হতে লাগে। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে আমানদের দিকে তাকাতেই দেখি আমান নেই! আশ্চর্য! আমান কোথায় গেলেন? আমি সঙ্গে সঙ্গে দুরে সরে এলাম আরুশের কাছ থেকে। আরুশ আমার হাত টেনে ধরে বললো।

— কোথায় যাচ্ছিস মীরা?

আমি আরুশের হাতের দিকে তাকিয়ে রেগে বললাম।

— ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট! আজ আমি নিজে তোর কাছে গেছিলাম বলে আমাকে টাচ করার সুযোগ পেয়েছিস নাহলে এই মীরা খান চৌধুরি কে টাচ করার সাহস কাওর নেই শুধুমাত্র আমান খান ছাড়া। লিভ মাই হ্যান্ড!

কথাটা শেষ করে হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে বেড়িয়ে গেলাম কিন্তু এ কি? আমান কোথায়? খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎই চোখ গেলো রাস্তার দিকে। আমান রাস্তার ফুটপাতে থাকা কিছু বাচ্চাদের বিস্কুট খাওয়াচ্ছে। এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে দেখলাম রাস্তার পাশের দোকান থেকেই উনি এগুলো কিনেছেন। আমি আস্তে আস্তে ওই দোকানের দিকে চলে গেলাম।

— ভাইয়া তুমি কোথায় ছিলে এতোদিন?

— আমি? আমি তো একটু কাজে ব্যস্ত ছিলাম তাই আর আসা হয়নি তোদের কাছে। আর আজকেও দেখ কতো রাত হয়ে গেলো।

— ওহ ঠিক আছে। তুমি কাল সকালে আসবে তো?

— হ্যাঁ আসবো।

— ভাবী কে নিয়ে আসবে না?

— ভাবী? তোরা কি করে জানলি?

— ও বাবা তুমিই তো বলতে যে তুমি মীরা ভাবী কে ভীষণ ভালবাসো আর মীরা ভাবিকেই বিয়ে করবে। আমরা জানি তুমি মীরা ভাবিকে বিয়ে করেছো তাই এ কয়েকদিন আসোনি। বলো না ভাবী কে নিয়ে আসবে তো আগামীকাল?

____ আগামীকাল আসার কি আছে? তোমাদের ভাইয়া ভাবী কে আজকেই নিয়ে এসেছে।

আমান আমার গলার স্বর শুনে পিছন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন। আমি ওনার চোখে চোখ রেখে ওনার পাশে গিয়ে ওনার মতো করে বসলাম।

— তুমি আমাদের মীরা ভাব…

মেয়েটি আর বলতে না পেরে কাশতে শুরু করলো আর আমান তা দেখে উত্তেজিত হয়ে পরলো আর বলতে লাগলো।

— খাওয়ার সময় এতো কথা বলতে বারণ করেছি তো আমি? কথা শুনিস না কেন আমার? এখন কষ্ট হচ্ছে ত…

আমানের কথা শেষ হওয়ার আগেই আমি আমার হাতে থাকা পানির বোতল এগিয়ে দিলাম মেয়েটির হাতে। মেয়েটি পানি খেতেই ঠিক হয়ে গেলো আর আমার দিকে তাকিয়ে বললো।

— ধন্যবাদ ভাবী! তুমি খুব ভালো।

কথাটা বলেই মেয়েটি আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ওকে দেখে আশেপাশে যে বাচ্চাগুলো ছিলো তারাও আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমিও হেসে ওদের সবাই কে জড়িয়ে ধরলাম। কিছুক্ষণ ওদের সাথে থাকার পর আমান উঠে গাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করলেন। আমিও ওনার পিছু পিছু জোরে হেঁটে ওনার হাত পিছন থেকে টেনে ধরলাম আর বললাম।

— আমাকে একা ফেলে কোথায় যাচ্ছেন আপনি?

উনি ভাবলেশশূন্য হয়ে আমার দিকে না ফিরে না তাকিয়ে একইভাবে দাঁড়িয়ে থেকে উত্তর দিলেন।

— তোমার গাড়ি নেই নাকি টাকা-পয়সার অভাব? কোনটাই তো নয়। তাহলে আমার সাথে যাওয়ার কি আছে?

— কেন সব সময় আমার সাথে এমন ব্যবহার করেন আপনি? আমার ভুল হয়েছে তা মেনে তো আমি আপনার কাছে ফিরে এসেছি। আর আপনি আমায় ফিরিয়ে না নিয়ে, নিজের স্ত্রী কে অবহেলা করে অন্য একটা মেয়ের সাথে ঘুরছেন যে কি না আপনার স্ত্রীর বেস্ট ফ্রেন্ড? লজ্জা করছে না আপনার?

— তোমার যদি মেয়ে হয়ে নাইট ক্লাবে যেতে, ড্রিংক করতে, অন্য ছেলেদের সাথে মিশতে লজ্জা না করে তাহলে আমার একটা ছেলের হয়ে কেন করবে মীরা?

উনি বেশ রেগে উত্তর দিলেন কিন্তু ওনার উত্তরে আমি বুঝলাম উনি বেশ রাগ করেছেন আমার আজ নাইট ক্লাবে যাওয়ায় আর আরুশের সাথে ক্লোস হওয়ায়। আমি আমান কে নিজের দিকে ফিরিয়ে ওনার গলা দু-হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললাম।

— আপনার বুঝি খারাপ লেগেছে আমার আরুশের কাছাকাছি যাওয়াতে?

উনি আমার হাত নামিয়ে দিয়ে আমার চোখে চোখ রেখে বললেন।

— তুমি তোমার যা ইচ্ছে তাই করতে পারো। আমি কেউ হইনা বারণ করার। আমার মতো ভিখারির তো ক্ষমতা নেই নাইট ক্লাবে যাওয়ার তাই তোমাকে বারণ করেছি। তুমিই তো বলেছিলে আমাকে এগুলো মনে নেই? তাহলে কেম রাগ করতে যাবো আমি?

আমি আমানের পা জড়িয়ে ধরে বসে পরলাম আর কাঁদতে কাঁদতে বললাম।

— আমার ভুল হয়ে গেছে। অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি আমি আপনাকে, আপনার ভালোবাসা কে অপমান করে। আঅমার ভুল শোধরাতেই তো আমি আপনাকে বিয়ে করেছি, আপনি তো বলেছিলেন আমিই আপনার স্ত্রী হবো তাহলে কেন মেনে নিচ্ছেন না? ক্ষমা করে দিন না আমায়, আমি যে আর পারছি না, পারছি না আমি। ভীষণ ভালোবাসি আপনাকে।

আমি অঝোরে কাঁদছি সে সময় উনি আমার দু-কাঁধ ধরে উঠে দাঁড় করালেন। উনি আমার চোখের পানি মুছিয়ে কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আমার চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা হয়ে চোখ বুজে এলো। আমি আমার শরীরে ভারসাম্য হারিয়ে পরে যেতে নিলেই কেউ আমাকে ধরে ফেলে, আমি আদো চোখে দেখি আমান আমাকে ধরে আছে তারপর আর কিছুই মনে নেই।

আমান আর নীহার একসাথে থাকার দৃশ্য ভেবে আমি ধড়ফড় করে উঠে বসলাম আর মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখলাম আমান বেডে আমার পাশে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছেন। আমি ওনাকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই আমার ফোন বেজে উঠলো, এতো রাতে কে ফোন করলো এই ভেবে ফোন হাতে নিতেই দেখি আমার বান্ধবী। এতো রাতে ফোন করেছে, কোনো বিপদ হলো না তো? এই ভেবে সঙ্গে সঙ্গে ফোন রিসিভ করলাম আর যা শুনলাম তা শুনে আমি আতকে উঠলাম…….

?
?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে