#ভালোবাসি_শুধু_তোমায় ?❤
#পর্ব : ১৯
#লেখিকা : Aye Sha (Koyel Banerjee)
“এনজিও টা আমার জানো ইসমি?”
কথাটা শুনে ইসমি অর্নিলের বুক থেকে মাথা তুলে অবাক চোখে অর্নিলের দিকে তাকালো। তারপর আস্তে করে প্রশ্ন করলো?
— তোমার মানে? কি বলতে চাইছো?
অর্নিল ইসমি কে আবারও নিজের বুকে টেনে নিয়ে বললো,
— এই এনজিওর মালিক আমি। কিন্তু কেউ সেটা জানে না। আমার আঁকতে ভালো লাগে তাই সপ্তাহে একটা দিন বাচ্চাদের কে আঁকা শিখাতে আসতাম। এতে ওদের কে সময় দেওয়াও হতো আর আঁকা শিখানোও হতো।
ইসমি কেমন জানো দ্বিধায় পরে গেলো। অর্নিল বুঝতে পারলো ইসমির কনফিউশান তৈরী হয়েছে মনে তাই এক এক করে আমানের সাকসেস, ওর নিজের সাকসেসের কথা বললো ইসমি কে। ইসমি সব শুনে অর্নিল কে জিজ্ঞেস করলো,
— আগে কেন বলোনি এসব আমাদের?
— সঠিক সময়ে বলেছি। ভাই যদি আগে থেকে নিজের পরিচয় ভাবী কে দিয়ে দিতো তাহলে ফুপি কে আজ আমরা শাস্তি দিতে পারতাম না।
— ওহ। সে নয় বুঝলাম কিন্তু তুমি কেন আমার সাথে কথা বলার সময় এটা বলতে যে তুমি মেয়েদের ঘৃণা করো?
ইসমির প্রশ্নে অর্নিলের মাথা নিচু হয়ে গেলো। ইসমি জোর দিয়ে অর্নিল কে বললো,
— কি হলো বলো?
অর্নিল আমতা আমতা করে বললো,
— আ..আসলে ভাবী ভাইয়ের সাথে কি ব্যবহার করেছে তা পুরোটা শোনার পর আমার খুব খারাপ লেগেছিলো। ইউ নৌ না ভাই আমার লাইফে কতটা ইম্পরট্যান্ট। আমি মানতে পারিনি ভাবীর বিহেভিয়ার তাই ভাবীর জন্য পুরো নারী জাতিটাকেই ঘৃণা করতাম। এরপর তোমার কথাও ভাবতাম না আমি কারণ তুমি ভাবীর বোন, তুমিও হয়তো ভাবীর মতোই এটাই ভাবতাম আমি। তাই নিজেকে দুরে রাখতাম। তুমি আমার সাথে কথা বললেই আমি মেজাজ খারাপ করে ফেলতাম আর এসব বলে ফেলতাম।
অর্নিল কথা শেষ করে ইসমির দিকে তাকিয়ে দেখলো ইসমি চুপ করে বসে আছে নিচের দিকে। অর্নিল একটু ভয় পেয়ে গেলো ইসমি কে দেখে। “ইসমির কি খারাপ লাগলো?” ভাবছে অর্নিল।
— ইসমি, আই অ্যাম স্যরি! আসলে আমি যেটা ফীল করতাম সেটাই বলেছি। তোমার খারাপ লেগেছে? ট্রাস্ট মি আমি কোনদিন অন্য কোনো মেয়েকে নিয়ে ভাবিনি কারণ আমি ” ভালোবাসি শুধু তোমায়। ”
— বাসায় যাবো, অনেক রাত হয়ে গেছে।
ইসমি কথা শেষ করেই পার্কের বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ালো আর অর্নিলের গাড়ি যেখানে পার্ক করা সেখানে চলে গেলো। অর্নিলের মুখে ফুটে উঠলো একরাশ অনুতাপ। ইসমির পিছু পিছু গিয়ে ইসমির গাড়িতে ওঠার আগেই অর্নিল ইসমির হাত টেনে বললো,
— কেন রাগ করছো? আমি তো বললাম স্যরি! আমি ভুল ভেবেছিলাম। তারপরেও রাগ করে থাকবে? প্লিজ ইসমি! এভাবে শাস্তি দিয়ো না আমাকে।
অর্নিলের কন্ঠস্বর হাল্কা কাঁপছে। ইসমি একটা ছোট্ট নিশ্বাস নিয়ে অর্নিলের চোখে চোখ রেখে বললো,
— তুমি যেই বিহেভটা করেছো সেটা স্বাভাবিক অর্নিল। আমি এই নিয়ে কেন রাগ করতে যাবো? যেখানে আমি নিজেই মীরার উপর রেগে ছিলাম। কিন্তু মীরার অ্যাক্সিডেন্টের পর, ওর নিজের ভুলের অনুতাপ দেখে আমি আর রেগে থাকতে পারিনি।
— আমি বা ভাই কেউ জানতাম না ভাবিযুর অ্যাক্সিডেন্ট এর কথা।
— আমি জানি সেটা। আচ্ছা আমরা কি এই রাতে এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো? বাসায় যাবো না?
অর্নিল কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
— তুমি রেগে নেই তো?
ইসমি অর্নিলের অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে দিলো আর বললো,
— এটা কি সেই অর্নিল খান যে আমাকে দেখলে পালাতো যাতে কথা না বলতে হয়? আজ সেই অর্নিল খান দেখছি পাগল হয়ে যাচ্ছে আমি কথা না বলায়, কি ব্যাপার?
ইসমির প্রশ্নের পরিবর্তে উত্তর না দিয়ে অর্নিল ইসমি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আর আস্তে আস্তে বললো,
— আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। ভাই তো তাও ভাবীর থেকে জাস্ট সাড়ে তিন বছর দুরে ছিলো আর আমি? আমি তো অনেকদিন দুরে ছিলাম। আর থাকতে চাই না।
ইসমির চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে খুশির। কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেনি অর্নিল ওকে এতটা ভালোবাসবে। ইসমি শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো অর্নিল কে।
অন্যদিকে,
আমান আমাকে বললো,
— মীরু! লেটস গো। বাসায় ফিরতে হবে তো এবার।
— হমম চলো।
আমান আর আমি গাড়ির ছাদ থেকে নেমে গাড়িতে উঠে বসলাম আর আমান গাড়ি স্টার্ট দিলো। জানলা খোলা থাকায় শীতল মৃদু বাতাস শরীর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। হাল্কা শীত ও লাগছে সে কারণে। আমান আমায় না বলেই গাড়ির জানলা তুলে লক করে দিলো। আমি কিছু না বলে চোখ বুজলাম।
— মীরু! তোমার কি এখনও শীত লাগছে?
আমান গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে প্রশ্ন করলো মীরা কে। কিন্তু উত্তর না পাওয়ায় মীরার দিকে তাকাতেই দেখে মীরা ঘুমিয়ে পরেছে আর মীরার মাথাটা সিট থেকে হেলে পরছে। আমান সঙ্গে সঙ্গে এক হাত বাড়িয়ে মীরা কে নিজের কাছে, বুকে জড়িয়ে নিলো। ঠিক সে সময় আমানের ফোনে কল আসায় আমান সেটা ব্লুটূথ দিয়ে রিসিভ করলো,
— হ্যালো!
ওপাশ থেকে উত্তর এলো,
— ভাই।
— হ্যাঁ নীল বল।
— কোথায় আছিস তুই?
— এই তো মীরু কে নিয়ে ফিরছি। তুই কোথায়?
— আমি ইসমি কে বাসায় ড্রপ করে ফিরছি এখন। তোর মনে আছে তো কালকে সকালের প্ল্যানের ব্যাপারে?
— ইয়াহ অফ কোর্স! ওটা কি করে ভুলবো আমি?
— ওকেই। দ্যান বাসায় গিয়ে মীট হচ্ছে।
— হমম। তুই ফ্রেশ হয়ে আমাকে একটা কল করিস আমি চলে আসবো তোর ঘরে।
— ওকেই ডান।
অর্নিল কল রেখে চোখে মুখে রাগের ছাঁপ নিয়ে ফুল স্প্রীডে ড্রাইভ করলো নিজের বাসার উদ্দেশ্যে। এদিকে আমানের মুখেও রাগের ছাঁপ স্পষ্ট। মীরার মাথায় হাল্কা ঠোঁট ছুঁয়ে আমানও স্প্রীড বাড়িয়ে দিলো গাড়ির।
বাসায়,
— প্ল্যান করেছিস কিছু ভাই?
অর্নিল সোফায় বসে বিয়ারের ক্যানে চুমুক দিয়ে আমান কে কথাটা জিজ্ঞেস করলো। আমান জানলার কাছে দেয়ালে ঠেস দিয়ে এক হাত পকেটে হাত গুঁজে আরেক হাতে বিয়ারের ক্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অর্নিলের কথা শুনে বিয়ারের ক্যানে চুমুক দিয়ে আমান বললো,
— কি আর প্ল্যান করবো? যা হবে সব সামনাসামনি হবে।
— যদি নিজে থেকে স্বীকার করতো তাহলে মে বি এতটা কষ্ট করতে হতো না আমাদের।
— ইয়াহ! বাট স্বীকার না করায় একটা লাভ হয়েছে।
— কি লাভ?
— এই যে নিজের হাতে ওদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে পারবো।
— অফ কোর্স! সবটা সুদে আসলে ফেরত পাবে ওরা। বায় দ্য ওয়ে ভাই? আজকের দিন কেমন কাটলো তোর?
আমান অর্নিলের প্রশ্নে হাসলো তারপর উত্তর দিলো,
— ভালোই। তুই বল, তোর আর ইসমির ডেট কেমন কাটলো? প্রপোস করেছিস বিয়ের জন্য?
অর্নিল আমানের প্রশ্ন শুনে আমতা আমতা করে বললো,
— ইয়ে ম..মানে তুই ক..কি করে জানলি?
— তোর ভাই হই। ১ বছরের বড় তো আর মুখ দেখতে হইনি তাই না? সো চটপট বল। হ্যাঁ বলেছে তো নাকি ফিল্মের মতো থাপ্পড় খেয়ে ফিরলি?
আমান কথাটা বলে হাসতে থাকলেই অর্নিল রেগে বলে,
— আজ্ঞে না। অবভিয়াসলি আমাকে হ্যাঁ বলেছে। বেশি হাসছিস তো? দেখবি ভাবী তোরে ঝাড়ুর বারি মারবো হু।
আমানের হাসি সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেলো। ও মনে মনে কল্পনা করলো মীরা কোমরে শাড়ির আঁচল গুঁজে এক হাতে ঝাড়ু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমান কে মারার জন্য। আমান কল্পনা করেই একটা শুকনো ঢোঁক গিললো আর সেটা দেখে অর্নিল আমানের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
— ভাই! আজ তুই বিয়ার খেয়েছিস। এটা যদি ভাবী টের পায় তাহলে ঝাড়ুর বারি নিশ্চিত।
আমান করুন চোখে অর্নিলের দিকে তাকাতেই অর্নিল হো হো করে হাসতে লাগলো। আমান রেগে-মেগে সোফা থেকে বালিশ ছুড়ে মারলো অর্নিলের দিকে আর অর্নিলও পাল্টা বালিশ দিয়ে মারতে শুরু করলো। একটা সময় দুজন হাঁপিয়ে গিয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো। অর্নিল গিয়ে আমান কে জড়িয়ে ধরলো আর আমানও অর্নিলকে ধরে হাসলো। ছোটবেলায় এভাবেই মারামারি করতো ওরা দুজন।
?
?