#ভালোবাসি_শুধু_তোমায় ?❤
#পর্ব : ১৮
#লেখিকা : Aye Sha (Koyel Banerjee)
” আমান আমরা এতো রাত্রে এখানে কেন এলাম? ”
আমান আমার প্রশ্নে উত্তর না দিয়ে হঠাৎ করে আমার অনেক কাছে এসে আমার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললো,
— ফীল এভরি মোমেন্ট অফ দিজ এনভায়রনমেন্ট!
আমানের কথা শুনে চুপ করে গেলাম। চারিদিক নিস্তব্ধ, অন্ধকার, তার মাঝে শোনা যাচ্ছে শুধু ঝিঝি পোকার ডাক আর নদীর স্রোতের শব্দ। আমি আর আমান একটা গ্রামে এসেছি নদীর পাড়ে। খুব সুন্দর জায়গাটা। আমি হাঁটতে হাঁটতে নদীর অনেকটা কাছে চলে এলাম। মৃদু শীতল বাতাস শরীর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। হঠাৎই ঘাড়ে কাওর উষ্ণ নিশ্বাস অনুভব করলাম। এবার আর চিনতে ভুল হলো না ব্যক্তিটি কে!?
— আমান! হঠাৎ এখানে কেন?
আমান আমার পেটের কাছে দু-হাত আবদ্ধ করে ঘাড়ে থুতনি রেখে বললো,
— এটা আমার প্রিয় জায়গা মীরু! যখন আমার ভীষণ মন খারাপ হতো। যখন আমি নিজের কাছে হেরে যেতাম, মনে হতো তোমাকে পাবো না তখন আমি এখানে আসতাম। এই জায়গাটাতেই আসলে আমার মন ভালো হয়ে যেতো। হ্যাঁ এটা ঠিক এই জায়গাটা তোমার অভাব পুর্ণ করতে পারেনি কোনদিন কিন্তু মন খারাপ টা ঠিকই দুর করে দিতো। সাহস জোগাতো যে আমি ঠিকই তোমাকে নিজের করে পাবো একদিন।
আমি আমানের কথা শুনছিলাম চোখ বন্ধ করে যা আমায় মুগ্ধ করছিলো। ওর কথা শুনলে মন যেমন ভালো হয়ে যায় তেমন একটু খারাপও হয়ে যায়। আমার জন্যেই তো এতটা কষ্ট পেয়েছে ছেলেটা। আমি কথাগুলো ভেবে আমানের কাঁধে পিছন দিকে মাথা হেলিয়ে দিলাম। আমান বললো,
— তোমার ভালো লাগেনি জায়গাটা মীরু?
আমি চোখ বন্ধ করেই বললাম,
— ভীষণ ভালো লেগেছে। ইনফ্যাক্ট তোমার থেকেও ভালো।
আমার মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি আসায় আমি সঙ্গে সঙ্গে কথাটা বলে ফেললাম। আমান আমাকে উঠে দাঁড় করিয়ে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— কি বললে তুমি? আমার থেকেও ভালো মানে?
আমি একটা ঢোঁক গিলে আমানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে খোলা বাতাসে দু-হাত ছড়িয়ে মাথা উপরের দিকে করে লম্বা নিশ্বাস নিলাম আর তারপর বললাম,
— এই জায়গাটা সত্যি খুব খুব সুন্দর। এখানে মন খুলে শ্বাস নেওয়া যায়। ভীষণ রোম্যান্টিক একটা পরিবেশ। তোমার মতো রসকসহীন মানুষ কে এ জায়গায় মানায় না।
— আচ্ছা তাই নাকি?
আমানের গলা পেতেই আমি চোখ খুললাম। দেখলাম আমান আমার দিকে এগিয়ে আসছে পকেটে হাত গুঁজে। মনে মনে একটা ঢোঁক গিলে নিজেকে বললাম,
— এই রেহ! ভুল লোককে ভুল কথা বলে ফেললাম মনে হয়। বিদ্রুপ করাটা ঠিক হয়নি আমার।
— এখন নিজেকে বকে কি লাভ মীরু? যা বলার তো তুমি বলেই ফেলেছো। এবার…
— ইয়ে না ম..মানে আ..আমি সেটা ব..বলতে চাইনি ….
— কি বলতে চেয়েছো তুমি?
আমানের রাগী কন্ঠ শুনে আমার কান্না পাওয়ার জোগান। কেন যে বলতে গেলাম এখন নিজেই ভাবছি। আমান আমার দিকে এগচ্ছে আর আমি পিছাচ্ছি। পিছাতে পিছাতে গাড়ির সাথে ধাক্কা খাওয়ায় আমি পিছন ফিরে গাড়িটাকে দেখলাম আর মনে মনে বললাম,
— প..পালানোর তো আর কোনো পথ নেই। কি করবো এখন?
কথাটা মনে মনে বলে যেই না সামনে ফিরেছি দেখি তুফান খান থুক্কু আমান খান আমার সামনে দাঁড়িয়ে। আমি ওর আশেপাশে তাকাতেই ও দু-হাত আমার দু-পাশে রাখলো আর আমার দিকে একটু একটু করে আগাতে লাগলো। ওর এগিয়ে আসাতেই আমি সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে নিলাম। ঠিক যেই সময় ওর উষ্ণ নিশ্বাস আমার ওষ্ঠদ্বয়ের উপর পরলো আমি এক নিশ্বাসে বলে ফেললাম,
— আমার আইসক্রিম খেতে মন চাইছে।
— হোয়াট!?
আমানের রাগমিশ্রিত কন্ঠ শুনে চোখ খুললাম আর ওর দিকে তাকিয়ে একটা ক্যাবলা হাসি হেসে বললাম,
— আইসক্রিম খাবো।
আমান আমার কথা শুনে যেন হতাশ হয়ে গেলো মনে হলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
— আমি নিয়ে আসছি।
আমি মনে মনে হাসলাম আমানের অবস্থা দেখে। ওর যাওয়ার আগে ওর হাত ধরে আস্তে করে গালে ঠোঁট ছুঁয়ে বললাম,
— চকলেট ফ্লেভার নিয়ে আসবে।
— সিরিয়াসলি? এই গ্রামে রাত ৯টায় তুমি আইসক্রিম খেতে চাইছো? পাবো কি না তার নেই ঠিক এর উপর আবার চকলেট ফ্লেভার। ওয়াও!
— হুহ! আসার সময় আমি রাস্তার পাশে একজন কে দেখেছি আইসক্রিমের গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যাও গিয়ে নিয়ে আসো।
— যো আপকি মার্জি।
আমান হেসে চলে গেলো। জায়গাটা কে গ্রাম বলে চিহ্নিত করলে ভুল হবে। শহরের মধ্যেই এক নির্জন জায়গা বলা যেতে পারে। সবুজ গাছ-পালা আর পাশ দিয়ে নদী বয়ে যাচ্ছে দেখে রাতের অন্ধকারে পুরো গ্রামের পরিবেশের অনুভূতি হচ্ছে। ঝিঝি পোকার ডাকটা হয়তো আরো বাড়বে রাত বাড়ার সাথে সাথে। বেশ কিছুক্ষণ পর,
— কি হলো? আমান এখনো এলো না কেন? আমরা তো অনেকটা ভিতরে চলে এসেছি আর আমান তো গাড়ি নিয়েও যায়নি। আমারই ভুল হয়েছে, ওর সাথে গেলে ভালো হতো। একটা ফোন করি বরং।
ফোন বাড় করতেই দেখলাম টাওয়ার প্রায় নেই। তবুও আমান কে কল করলাম কিন্তু রিংটোন আসলো গাড়ির ভিতর থেকে। গাড়ির ভিতরে তাকিয়ে দেখি সিটে ফোনটা বাজছে। এর মানে আমান ফোনটাও নিয়ে যায়নি? এবার আমার চিন্তা শুরু হলো।
— এখন কি করবো? দুর দুরান্তে কোনো গাড়ি আসছে না। পুরো নির্জন একটা জায়গা। আমি বরং এগোই আমান যেদিকে গেছে সেদিকে।
এটা ভেবে আমি হাঁটতে লাগলাম রাস্তা বরাবর। দু-পাশে সবুজ গাছপালা ঘেরা আর মাঝে রাস্তা। হাইওয়ের থেকে বাম দিকে ঘুরলে এই রাস্তাটা পাওয়া যায়। সেই মুখেই আমি আইসক্রিমের গাড়ি দেখেছিলাম। অনেকটা দুর অবশ্য কিন্তু তবুও! এতটা দেরী হওয়ার তো কথা নয়। যত এগোচ্ছি ততই জানো মনে ভয় দানা বাঁধছে। আমান ঠিক আছে তো?
আমি রাস্তার মুখে এসে দেখলাম কেউ নেই। হাইওয়ে দিয়ে শোঁ শোঁ করে গাড়িগুলো ফুল স্প্রীডে চলে যাচ্ছে। আমান! আমান কোথায়? চারিপাশে কোনো মানুষ নেই। আমি আস্তে আস্তে হাইওয়ের উপর উঠে গেলাম। হয়তো ওদিকে রয়েছে, কিন্তু নাহ! কাওকে দেখতে পাচ্ছি না শুধু গাড়ি আর গাড়ি। আমার কান্না আসছে সব ভেবে। আমি এক-পা এগোতে যাবো তখনই কেউ আমাকে হ্যাঁচকা টান মারলো পিছন দিকে, টাল সামলাতে না পেরে আমি তার বুকের উপর পরে গেলাম। সঙ্গে সঙ্গে একটা গাড়ি ফুল স্প্রীডে আমার চোখের সামনে থেকে বেরিয়ে গেলো যেখানে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। না পিছালে হয়তো অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে যেতো। আমি এরপর মাথা তুলে দেখলাম আমান আমাকে ধরে আছে। আমান প্রচন্ড রেগে আমার দু-বাহ ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার? আরেকটু হলে কতো বড় অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে যেতে পারতো হ্যাভ ইউ এনি আইডিয়া ড্যাম ইট!?
আমি আমান কে দেখে কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। সারা শরীর ভয়ে কাঁপছে আমার ভয়ে। আমি কিছু বলতেই পারছি না। আমার এরূপ ব্যবহারে আমান শান্ত স্বরে বললো,
— কি হয়েছে মীরু? তুমি কেন এগিয়ে এসেছো এতটা দুরে?
আমি কাঁপা গলায় কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললাম,
— ত..তু..তুমি এতো দেরী কেন ক..করলে? ফ..ফোনটাও নিয়ে যাওনি তুমি। আমার কতো টেনশন হচ্ছিলো জানো? এখানে এসেও তোমাকে না দেখে নিজেকে পাগল মনে হচ্ছিলো। কোথায় চলে গেছিলে তুমি আমাকে ছেড়ে? আ..আমি ….
— চুপ! ঠিক আছি আমি। তোমার কাছেই আছি। তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না আমি।
আমান মীরা কে শান্ত করার জন্যে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মীরাকে। তারপর নিজে মনে মনে ভাবলো,
— আমি বুঝতে পেরেছি মীরু তুমি কেন এতটা ভয় পেয়েছো। তুমি ভেবেছিলে আমি হয়তো আবার তোমাকে ছেড়ে চলে গেছি তাই তুমি চার বছর আগে যেভাবে আমকে খুঁজতে, আটকাতে রাস্তায় বেরিয়ে পরেছিলে আজও সেভাবেই খুঁজছিলে। আর খুঁজতে খুঁজতে নিজের দিকে খেয়ালও করোনি, আরেকটু হলে চার বছর আগের মতো একটা দুর্ঘটনা হয়ে যেতে পারত। আমি যদি সেদিন তোমার কাছে ফিরে আসতাম আজকের মতো তাহলে হয়তো আমাদের এতটা কষ্ট পেতে হতো না মীরু! আজ আমার জন্য তুমি নিজের ক্ষতি করতে বসেছিলে। আর নয়! এবার আমি তোমাকে নিজের বুকের ভিতরে আগলে রাখবো।
কথাগুলো ভেবে আমান মীরা কে আরেকটু শক্ত জড়িয়ে ধরলো। কিছুক্ষণ পর বললো,
— মীরু! আইসক্রিমটা আমার হাতেই গলে যাবে এবার।
আমানের কথা শুনে আমি সোজা হয়ে দাঁড়ালাম আর ছোঁ মেরে হাত থেকে আইসক্রিমটা নিয়ে নিলাম আর বললাম,
— মোটেও না।
আমান কে ছেড়ে আমি আইসক্রিমটা খেতে খেতে আমাদের গাড়ির দিকে হাঁটতে লাগলাম। আমি আইসক্রিম খাচ্ছি আর আমান আমার দিকে তাকিয়ে আছে তাই আমি ওর দিকে না তাকিয়েই বললাম,
— এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? নিজের জন্যেও আনতে পারতে তুমি। তাহলে আর আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে নজর দিতে হতো না হুহ!
আমান আমার কথার উত্তর না দিয়ে মাথা নিচের দিকে নামিয়ে শুধু হাসলো। আমিও আর কিছু না বলে হাঁটতে চলে এলাম গাড়ির কাছে। আমি নদীর দিকে তাকিয়ে আইসক্রিম খাওয়া শেষ করে পাশে তাকাতেই দেখলাম আমান নেই। ঠিক সে সময় আমান আমায় আওয়াজ দিলো,
— মীরু! এখানে আসো।
আমি তাকিয়ে দেখলাম আমান গাড়ির মাথায় বসে আছে। আমি হেসে আমানের দিকে হাত বারাতেই ও আমাকে উপরে টেনে তুললো। ওর পাশে বসতেই দেখলাম ও আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ও ওর হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে আমার ঠোঁটের কোণে থাকা আইসক্রিম টা মুছে দিলো। তারপর আকাশের দিকে ইশারা করে বললো,
— আজ তারাগুলো বেশিই সুন্দর তাই না?
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাশি রাশি তারার মেলা। ভীষণ সুন্দর একটা পরিবেশে রয়েছি আমরা। আমান গাড়ির উপর শুয়ে পরলো আর আমিও ওর হাতের উপর শুয়ে পরলাম। একটা সময় আমান আমাকে ওর বুকের উপর টেনে নিলো আর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। আমরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে রয়েছি একদৃষ্টিতে। আমান আস্তে আস্তে আমাকে নিচে রেখে আমাঅর উপর উঠে আমার ঠোঁটজোড়ার উপর আঙুল বুলাতে লাগলো। আমি ঝট করে চোখ বন্ধ করে নিলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর আমি চোখ খুলতেই আমান আমার ঠোঁটজোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো। আজ আমাদের ভালোবাসার সাক্ষী হিসেবে রইলো এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।
?
?