ভালোবাসি_শুধু_তোমায় পর্ব-১৭

0
2559

#ভালোবাসি_শুধু_তোমায় ?❤
#পর্ব : ১৭
#লেখিকা : Aye Sha (Koyel Banerjee)

” এই অর্নিলটা আজ আমাকে একা ছেড়ে দিলো। ওই দিকে জিজু আর মীরা কি সুন্দর ঘুরছে। আর এই একটা বদ! যে কি না আমার কোনো খোঁজই রাখে না। ”

ইসমি রাগে গজ গজ করছে নিজের মনে মনে এনজিও তে বসে। ইসমি পারে না অর্নিল কে ধরে কাঁচা চিবিয়ে খেতে। সন্ধ্যে হয়ে গেছে, অর্নিল সেই সকালে ইসমি কে এনজিও তে ড্রপ করে দিয়ে গেছে তারপর একবারও ফোন করে খোঁজ নেয়নি। ইসমি ফোন করলেও অর্নিল তা রিসিভ করেনি। অগত্যা ইসমি মন খারাপ করে বসে রইলো।

— আজকে ও যদি আমায় নিতে না আসে তাহলে ফিরবোই না। কাওকে ফোনও করবো না আর কেউ ফোন করলে ধরবোও না।

ইসমি কথাটা নিজেকে নিজে বলে নিজের ফোন বার করে ফোন সুইচ অফ করে দিলো। রাগে ইসমির চোখে পানি চলে আসছে। ইসমি ঠিক করলো এভাবে বসে না থেকে বাচ্চাদের সাথে খেলাটা বেটার হবে। এই মনে করে বাচ্চাদের কাছে যাওয়ার আগেই একটা বাচ্চা এসে ইসমির কোমর জড়িয়ে ধরলো। ইসমি বাচ্চাটাকে ছাড়িয়ে ওর সামনে বসে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করলো,

— কি হয়েছে বাবু তোমার? এভাবে জড়িয়ে ধরলে কেন? কেউ কি বকেছে নাকি তোমায়?

বাচ্চাটি চুপ করে রইলো কিছুক্ষণ তারপর না বোধক মাথা নাড়লো। তখনই ইসমির মনে পরলো বাচ্চাটি কথা বলতে পারে না, কানেও শোনে না। ইশারায় মনের ভাব বোঝাতে হয়। ইসমি বুঝলো বেচারা কিছু না বুঝেই হয়তো মাথা নেড়েছে তাই ইসমি নিজের প্রশ্ন ইশারায় জিজ্ঞেস করলো। ইশারায় জিজ্ঞেস করতেই বাচ্চাটি না বোধক মাথা নাড়িয়ে ইসমির হাতে একটা আর্ট পেপার দিলো যাতে ছবি আঁকা।

ইসমি পেপারটা হাতে নিয়ে দেখলো ছবিটা ওর নিজের। একটা পেন্সিল স্কেচ। ছবিটা অসম্ভব সুন্দর হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে কোনো আর্টিস্ট এঁকেছে। এটা ভেবে ইসমি বাচ্চাটি কে আবার ইশারায় জিজ্ঞেস করলো,

— তুমি এঁকেছো এটা? এতো সুন্দর আঁকা এতো ছোট বয়সে কি করে শিখলে তুমি? [ইশারায়]

বাচ্চাটি হেসে দৌঁড়ে পালিয়ে গেলো হলরূমের দিকে। ইসমি কিছুই বুঝতে পারলো না। নিজের হাতে থাকা আঁকাটার দিকে তাকাতেই ইসমির মুখে হাসি ফুটে উঠলো। কি নিখুঁত ভাবে এঁকেছে। “কিন্তু কে এঁকেছে?” ভাবছে ইসমি।

__আপুইইইইইই! খেলবা না আমাদের সাথে?

ইসমি ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে নিচের ডিজে তাকাতেই দেখলো দুটো বাচ্চা মেয়ে ইসমির জামা ধরে টানছে খেলার জন্যে। ইসমি হেসে ওদের দিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

— খেলবো তো। আমি তো তোমাদের জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম। তোমরাই তো দেরী করলে। তাহ কি খেলবে আজকে?

বাচ্চা দুটো একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসলো যা ইসমির একটু খটকা লাগলো। বাচ্চা দুটি হেসে ইসমির দিকে তাকিয়ে একসাথে বললো,

— ছোঁয়াছুঁয়ি!

এটা বলেই ওরা দৌঁড় দিলো আর ইসমিও হেসে ওদের পিছু পিছু গেলো কিন্তু বাচ্চা দুটো হলরূমে ঢুকে যেতেই ইসমি একটু অবাক হলো। মনে মনে প্রশ্ন করলো,

— এরা সবাই হলরূমে কি করছে? যদি কোনো ঝামেলা করে বসে!? এই রেহ!

ইসমি ভয়ে ভয়ে ঢুকলো হলরূমের দরজা খুলে। পুরো রুমে নিয়ন আলো জ্বলছে তাই ইসমি দরজাটা ভেজিয়ে দিলো। দরজা ভেজিয়ে একটু এগোতেই সব লাইট জ্বলে উঠলো। ইসমি চারিদিকে তাকাবে তার আগেই সব বাচ্চারা ইসমির সামনে এসে দাঁড়ালো। ইসমি হাঁটু গেড়ে বসতেই বাচ্চা গুলো এক এক করে ওর হাতে কার্ড দিতে লাগলো। পর পর দেওয়ায় ইসমি কার্ডগুলোতে কি আছে তা দেখার সুযোগই পেলো না। কার্ড দেওয়া শেষ হতেই ইসমির চোখ গেলো সবর উপরে থাকা কার্ডের লেখার উপর। শুধু একটা ‘ I ‘ লেখা। ইসমি অবাক হয়ে এক এক করে কার্ড গুলো দেখলো যাতে লেখা L, O, V, E, Y, O, U, আর বুঝলো এটা একটা ওয়ার্ড। ইসমি নিজের মনে মনে বললো,

— এগুলো মিলিয়ে তো…” I LOVE YOU ” সব ওয়ার্ডগুলো তো এভাবেই সাজানো। কিন্তু এটা..?

ইসমির মনে প্রশ্ন আসতেই ইসমি সামনে তাকালো আর অবাক হয়ে গেলো। ইসমির চোখের সামনে ওরই নাচের পোশাক পরা ছবি। আশেপাশে তাকাতেই দেখলো পুরো হলরূম জুড়ে ইসমির নিজের হাতে আঁকা স্কেচ, আর নানান নাচের পোসে ছবি। ইসমি এসব অবাক হয়ে দেখছে তখনই ইসমির জামায় টান পরলো, ইসমি নিচে তাকাতেই দেখলো সেই বাচ্চাটি যে কিছুক্ষণ আগে ওকে ওর ছবির পেন্সিল স্কেচ দিয়েছিল। বাচ্চাটি আবারও ইসমির হাতে একটা আর্ট পেপার দিয়ে হলরুম থেকে ছুটে বেরিয়ে গেলো। ইসমি বাচ্চাটির দিকে না তাকিয়ে আর্ট পেপারটার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো কারণ এটা ওর আঁকা অর্নিলের পেন্সিল স্কেচ। অর্নিল কে যখন প্রথম দেখে মনে অনুভূতি জেগেছিল তখন এটা এঁকেছিল ইসমি, কিন্তু এটা বাচ্চাটা কি করে পেলো?

__ইসমি!

পিছন থেকে ইসমির নাম ধরে কেউ সম্বোধন করতেই ইসমি একটু চমকে উঠলো কারণ এই “কেউ” টা অর্নিল! ইসমি আস্তে আস্তে পিছন ফিরতেই দেখলো অর্নিল হাঁটু গেড়ে বসে আছে আর অর্নিলের পিছনে দেয়ালে বড়ো করে অর্নিল আর ইসমির একসাথে ছবি যেটা অর্নিলের হাতে আঁকা। ইসমি এসব দেক্গে এক-কদম পিছিয়ে দু-হাতে মুখ চেপে ধরতেই অর্নিল বললো,

— আই নৌ আমাদের দেখা হওয়ার পর থেকে আমি কোনদিন তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করিনি। তুমি ভালো ব্যবহার করার পরেও তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। আমি জানি আমি অনেক বড় ভুল করেছি কিন্তু আমি নিরুপায় ছিলাম। আমি চাইনি তোমাকে আর আমকে কেউ ইউস করুক। আমি তোমাকেই ভালোবেসেছি জীবনে তাই অন্য কোনো মেয়ের দিকে তাকাইনি। তোমার যে ছবি দেখে আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম, ভালোবাসার মানে বুঝেছিলাম সেটাই তোমার হাতে প্রথম পেয়েছো তুমি। আমি ভাবিনি তুমিও আমার ছবি এঁকেছো। আ..আই ওয়ান্ট টু টেল ইউ দ্যাট, আ..আই লাভ ইউ ইসমি! তোমার ছবি শুধু এই কাগজে নয়, আমার মনে আঁকা আছে। আমি তোমার সাথেই আমার সারাজীবন কাটাতে চাই। উইল ইউ ম্যারি মি? উইল ইউ হোল্ড মাই হ্যান্ড অ্যান্ড স্টে উইথ মি অল মাই লাইফ?

অর্নিল হাতে একটা গোলাপ ফুল নিয়ে সেটা বাম হাত দিয়ে ইসমির দিকে ধরে আছে আর ডান হাত ইসমির দিকে বাড়িয়ে রেখেছে। ইসমি নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না। যেই ছেলেটা ওর সাথে কিছুদিন আগেই ঠিক ভাবে কথা বলতো না সেই ছেলেটা আজ ওকে এভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে? ইসমি নির্বাক হয়ে গেছে। অর্নিল অসহায় ভাবে ইসমি কে আবার প্রশ্ন করলো,

— এতদিন ঠিক ভাবে কথা বলিনি বলে এভাবে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রেখে শাস্তি দিচ্ছো?

অর্নিলের প্রশ্নে ইসমি হেসে ফেললো আর এগিয়ে গিয়ে ডান হাত দিয়ে গোলাপ ফুল টা নিয়ে বাম হাতটা আস্তে করে অর্নিলের হাতের উপর রাখলো। কাঁপা গলায় বললো,

— আ..আই লাভ ইউ টু অ্যান্ড আই উ..উইল!

ইসমির কথা শেষ হতেই অর্নিল উঠে দাঁড়িয়ে ইসমি কে নিজের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে ফেললো। ইসমি হাল্কা কাঁপছে কারণ অর্নিলের উষ্ণ নিশ্বাস ইসমির কাঁধে পরছে। ইসমি অর্নিলের ঘাড়ে মুখ গুঁজে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো অর্নিল কে। বেশ কিছুক্ষণ পর, ইসমি চোখ খুলতেই দেয়ালে টাঙানো পেন্সিল স্কেচ টা দেখতে পেলো। [কভার পিকচারটা দেখেনিন সবাই, Arnil ❤ Ismi]

ইসমি অর্নিলের থেকে সরে এসে ছবিটার দিকে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো। পিছন থেকে অর্নিল এসে ইসমি কে জড়িয়ে কাঁধে থুতনি রেখে বললো,

— ইউ অ্যান্ড মি! আমার স্কেচ। ভালো লেগেছে?

ইসমি লাজুক হেসে বললো,

— আমার তো তোমাকেই ভালো লাগে, তাই তোমার হাতের আঁকা ও ভালো লাগে।

— বাট আমার তো তোমার আঁকা বেশি ভালো লেগেছে। তোমার আঁকাটা দেখে আমি জানতে পেরেছি যে আমিও সুন্দর দেখতে। চলে যায় আর কি! তাই না?

অর্নিলের প্রশ্নে ইসমি সামান্য লাজুক হাসলো। অর্নিল ইসমি কে ছেড়ে ইসমির হাত টেনে ধরে বললো,

— চলো।

ইসমি প্রশ্ন করলো,

— কোথায়? বাসায় যাবে?

অর্নিল উত্তর দিলো না, ইসমি কে নিয়ে বেরিয়ে গেলো এনজিও থেকে। হাঁটতে হাঁটতে ইসমি একটাও কথা বলেনি। কিছুক্ষণ আগের মুহূর্ত গুলো ভেবে আর অর্নিলের হাত ধরা দেখে ইসমি ব্লাশ করছে। অর্নিলের কথায় ইসমি চমকে উঠলো,

— কি ব্যাপার এক্ষুণি এতো ব্লাশ করছো?

— আব ক..কই ন..না তো। কি ব..বলছো এসব।

ইসমি আমতা আমতা করে উত্তর দিলো মাথা নিচু করে। অর্নিল হেসে ইসমির হাত ধরে জিজ্ঞেস করলো,

— কেমন হয়েছে সাজানো?

ইসমি অবাক হয়ে তাকালো অর্নিলের প্রশ্নে। অর্নিল চোখ দিয়ে ইশারা করতেই ইসমি বাম দিকে তাকালো আর দেখলো একটা পার্ক যেটা খুব সুন্দর করে সাজানো। নীল, সাদা বেলুন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পুরো মাঠে। চারিদিকে অনেক আলো জ্বলছে। অর্নিল ইসমিকে জিজ্ঞেস করলো,

— নীল রং তোমার পছন্দের তাই না?

— হ্যাঁ। তাই তো তোমাকে পছন্দ করেছি। হিহিহি।

ইসমি কথা বলে বেলুন নিয়ে খেলতে লাগলো আর অর্নিল কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করলো ইসমির কথার মানে। তারপর হেসে ইসমির পিছনে দাঁড়ালো আর বললো,

— পছন্দ যখন করেছো তখন আমার ইচ্ছে তো পুরণ করতে হবে তাই না?

ইসমি হাতে নীল বেলুন নিয়ে অর্নিলের দিকে ফিরে দেখলো অর্নিল পকেটে হাত গুঁজে ঠোঁটে দুষ্টু হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইসমি সেটা দেখে ভ্রু কুঁচকে অর্নিল কে জিজ্ঞেস করলো,

— তুমি এরকম শয়তানের মতো হাসছো কেন হ্যাঁ?

অর্নিল ঠাস! করে ইসমির হাতের বেলুন টা ফাটিয়ে দিলো আর ইসমির হাত ধরে হ্যাঁচকা টান মেরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। ইসমির চোখ বড় বড় করে আমতা আমতা করে বললো,

— তোমার দ..দাবী টা কি? এভাবে ধ..ধরলে কেন?

— রাইট! দাবী তো আমার আছে আর সেটা পুরণ করার দায়িত্ব তোমার।

অর্নিল কথাটা বলেই ইসমি কে একটা চোখ টিপ মারলো আর ইসমি একটা বড় ঢোঁক গিললো। অর্নিল আলতো স্পর্শে ইসমির চুলগুলো কপাল থেকে সরিয়ে কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে, ইসমির মুখমণ্ডল নিজের হাতের মাঝে নিয়ে কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। ইসমি পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে রয়েছে, শরীর জুড়ে মৃদু কম্পন সৃষ্টি হয়েছে, শিরদাঁড়া বেয়ে বয়ে যাচ্ছে শীতল শিহরণ! সব মিলিয়ে এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। অর্নিল ইসমির দু-চোখে ঠোঁট ছুঁয়ে ইসমির কম্পিত ওষ্ঠদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো নেশাগ্রস্ত চোখে। আস্তে আস্তে অর্নিল ইসমি কে পুরোপুরি নিজের বাহু বন্ধনে শক্ত করে আবদ্ধ করে আলতো স্পর্শে ইসমির ওষ্ঠদ্বয় নিজের ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা আবদ্ধ করে নিলো। ইসমি অর্নিলের কলার চেপে ধরে কিছুক্ষণ স্তম্ভিত থাকলেও কিছু মুহূর্ত পর অর্নিলের ভালোবাসার ডাকে সাড়া দিয়ে মাতোয়ারা হয়ে উঠলো নিজেদের ভালোবাসায়।

?
?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে