ভালোবাসি_শুধু_তোমায় পর্ব-১৪

0
2670

#ভালোবাসি_শুধু_তোমায় ?❤
#পর্ব: ১৪
#লেখিকা : Aye Sha (Koyel Banerjee)

” মীরার এমন অবস্থা কি করে হলো ইসমি? তোমাকে তো বারবার করে আমি খেয়াল রাখতে বলেছিলাম। ”

ডক্টরের প্রশ্নে ইসমি মাথা নিচু করে নিচে স্বরে বললো,

— আঙ্কেল আমি অনেক বার করে ওকে বারণ করেছিলাম। কিন্তু ও…

— থাক। আমি পরে শুনবো সবটা। এখন মীরার ট্রিটমেন্ট করতে হবে আর হ্যাঁ! তুমিও এখন কম্পলীট রেস্ট নেবে। আমি জানো তোমাকে টেনশন করে অসুস্থ হতে না দেখি। এমনিতেই তোমরা টুইনস, নিশ্চয় শরীর খারাপ করবে তাই খেয়াল রাখো আমি আসছি।

ডক্টর চলে যেতেই অর্নিল ইসমি কে ধরে বসায়। একদিকে আমান পাথর হয়ে বসে আছে আরেকদিকে ইসমি কাঁদছে। অর্নিল পরে গেছে মাঝখানে। তবুও অর্নিল জিজ্ঞেস করলো,

— ইসমি? কি হয়েছিল ভাবীর? ডক্টর কি বললেন এসব?

ইসমি নিজের চোখ মুছে যথেষ্ট স্বাভাবিক করে নিজেকে বললো,

— আসলে আজ থেকে চার বছর আগে জিজুকে যখন ভার্সিটি থেকে রাস্টিগেট করা হয় তারপর জিজুর একটা ফ্রেন্ড মীরা কে সব সত্যি টা বলে। ও সবটা জেনে সারা ভার্সিটি তে জিজু কে খোঁজে। ভার্সিটিতে না পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যায় ভার্সিটি থেকে, আমি সেটা দেখে মীরার পিছু নেই। কিন্তু মেইন রোড গিয়ে আমি মীরা কে হারিয়ে ফেলি তাই ওকে খুঁজতে খুঁজতে এগিয়ে গেলে দেখি একটা জায়গায় ভিড় জমেছে। ভিড় ঠেলে ওখানে যেতেই দেখলাম ম..মীরা রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে রাস্তায়। ওখানের একজন আই-উইটনেস আমাকে বলেন যে মীরা হন্য হয়ে একটা গাড়ির পিছনে ছুটছিল। ওর পিছনে যে গাড়ি আসছিল সেটা ও দেখেইনি। মীরা যেই গাড়িটার পিছনে ছুটছিল সেটা ধরতে না পারায় ও দাঁড়িয়ে পরে আর সঙ্গে সঙ্গে গাড়িটা ওকে…

ইসমি আর বলতে পারলো না। ডুকরে কাঁদতে লাগলো, অর্নিল আলতো করে ইসমি কে বুকে জড়িয়ে নিতেই ইসমি একটু শান্ত হলো। অর্নিলের বুকে মাথা রেখেই ও বলতে শুরু করলো,

— আমি মীরাকে হসপিটালে ডক্টর আঙ্কেল-এর কাছে নিয়ে আসায় আঙ্কেল বলেন যে ওর মাথায় গুরুতর চোট লেগেছে যার ফলে ওর ইন্টারনল হ্যামারেজ হয়েছে। প্রায় ছয় মাস পর মীরা সুস্থ হয়। ডক্টর আঙ্কেল বার বার করে বলে দিয়েছিল যে মীরা জানো কোন রকম কোন প্রেসার না নেয় মাথায়। বেশি প্রেসার নিলে ওর মাথায় রক্ত উঠে যেতে পারে আর তার ফলে ব্রেইন স্টোক করতে পারে। আজ মে বি সেটাই হয়েছে।

— ইসমি?

ইসমি তাকিয়ে দেখলো ডক্টর বেরিয়ে এসেছে, ইসমি সঙ্গে সঙ্গে উঠে ডক্টরের কাছে যেতে নিলেই ওর মাথাটা ঘুরে যায়। অর্নিল ইসমির পাশে থাকায় ইসমিকে ধরে ফেলে, সেই সময় ডক্টর বলেন,

— জানতাম এমন কিছু একটা হবে। তুমি ওকে কেবিনে শুইয়ে দাও। আসো আমার সাথে।

অর্নিল ইসমি কে কোলে তুলে নেয় আর আমান কেও আস্তে বলে ওর সাথে। আমান শুধু রোবটের মতো ওই কেবিনে যায়। কেবিনে গিয়ে ইসমি কে শুইয়ে দিতেই ডক্টর অর্নিল কে জিজ্ঞেস করে,

— তুমি কে হও ইসমির?

অর্নিল সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেয়,

— উড-বি হাসব্যেন্ড। আর উনি হচ্ছে আমান খান। মীরা খানের হাসব্যেন্ড।

ডক্টর সব শুনে আমানের দিকে তাকিয়ে বলেন,

— আমি বুঝতে পারছি আপনার অবস্থা। কিন্তু টেনশন করবেন না আর। মীরা সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত এবং কিছুদিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাবে।

এতক্ষণে জানো আমানের ধরে প্রাণ এলো, চোখে মুখে স্বস্তির ছাঁপ দেখা গেলো। ডক্টর বলতে শুরু করলেন,

— অ্যাকচুয়লী মীরার মাথায় আগে থেকে এক্তা ইঞ্জুরি ছিলো। এছাড়া মীরার এবং ইসমির দুই বোনের হাইলি ডিপ্রেসনের প্রবলেম আছে। মীরার মাথায় ইন্টারনল হ্যামারেজের কারণে ওর মাথায় বেশি চাপ পরলে ক্ষতি হতে পারে। এইবার তেমন কিছু হয়নি কিন্তু প্রেসারে ব্লাড মাথায় উঠে গেছিলো আর ব্লাডের পরিমান বেশি থাকায় পালস রেট পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেকটা ব্রেইন স্টোকের মতোই কিন্তু নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে যাওয়ায় প্রবলেম হয়নি। এখন মীরা কম্পলীটলি আউট অফ ডেঞ্জার বাট খেয়াল রাখতে হবে যাতে আর কোনো স্ট্রেস ও না নেয়। মীরার সাথে সাথে ইসমির খেয়াল রাখাটাও প্রয়োজন কারণ ওরা টুইনস।

অর্নিল ডক্টরের কথা শুনে বললো,

— ইয়েস ডক্টর। আমরা ওদের দুজনের পুরো খেয়াল রাখবো।

— ইসমির আর কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলে মীরার নিউস টা দিয়ে দেবেন। নাহলে আবার টেনশন করবে।

— আ..আমি কি একবার ম..মীরু কে দেখতে পারি?

আমানের এমন করুন কন্ঠস্বর শুনে ডক্টর বললেন,

— এখন না। মীরা ঘুমাচ্ছে এখন। আরেকটু পরে গিয়ে দেখা করতে পারবেন।

ডক্টর বেরিয়ে গেলে আমান অর্নিল কে বলে,

— সব দোষ আমার জানিস তো নীল!? আমার জন্য আজ মীরার এমন অবস্থা।

— ভাই তুই কি বলছিস এসব? তোর জন্য কেন ভাবীর এমন অবস্থা হবে?

— ও আমার গাড়ির পিছনেই ছুটে ছিলো। আমি অভিমানে সাড়া দিইনি। দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে গেছি। তাই ওর ওভাবে অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। আর আজ? আজও আমার জন্য এই অবস্থা। আমি যদি আর কিছুদিন আগে আম্মু কে সেভ করতে পারতাম তাহলে মীরু এতটা কষ্ট পেতো না। আমার ব্যবহারে ও দিনের পর দিন কষ্ট পেয়েছে।

— কষ্ট ভাবী একা নয় তুইও পেয়েছিস ভাই। যেই তুই কি না কোনদিন নেশার ধারে কাছে যেতিস না সেই তুই কষ্ট ভুলে থাকার জন্য নেশা করেছিস দিনের পর দিন যাতে ভাবী কে ফেস না করতে হয়। ভাবীর হাত ফোস্কা পরায় নিজের হাত পুড়িয়ে ফেলেছিস। তোরা দুজনেই কষ্ট পেয়েছিস আর স্টিল নাও পাচ্ছিস। ভাবী কে এই অবস্থায় দেখে তোর উপর দিয়ে কি যাচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না মনে করছিস?

আমান আর নিজেকে সামলাতে না পেরে অর্নিল কে জড়িয়ে ধরলো। মাঝে মাঝেই কেঁপে উঠছে আমান। জোরে শব্দ করে কাঁদতে পারলে হয়তো হাল্কা লাগতো নিজেকে কিন্তু আমান তা পারে না। এদিকে অর্নিলের চোখের কোণা বেয়ে পানি পরছে। অর্নিল মনে মনে বলছে,

— আমি জানি ভাই নিজের ভালোবাসার মানুষকে দুরে সরিয়ে রাখার কষ্টটা কি জিনিস? আমি নিজে ফীল করেছি সেটা। শুধু তুই প্রথবার ভাবীর ছবি দেখে ভাবী কে ভালোবেসে ফেলিসনি! আমিও ইসমি কে প্রথমবার দেখেই নিজের মন দিয়ে ফেলেছিলাম। এতদিন ওর কাছে পরিচয় দিতে পারিনি, ওকে দুরে সরিয়ে রেখেছিলাম শুধুমাত্র ওর ফুপি কে ধরার জন্য। আমি নিজেও কষ্ট পেয়েছি আর ওকেও কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু এবার সবটা ঠিক হবে ড্যাম সিওর আমি।

আমান অর্নিল কে ছেড়ে দিয়ে বললো,

— তুই থাক ইসমির কাছে। আমি মীরুর কাছে যাচ্ছি।

— হ্যাঁ ভাই তুই যা, আমি আছি ওর কাছে।

আমান ধীর পায়ে মীরার কেবিনে ঢুকলো। মীরা চুপচাপ বেডে শুয়ে আছে চোখ বুজে, হাতে ক্যানোলা লাগানো যা দেখতে আমানের একদম ভালো লাগছে না। আমান আস্তে করে মীরার মাথার কাছে বসলো আর মীরার হাতটা আলতো করে নিজের হাতের ভাঁজে নিয়ে কপালে ঠেকিয়ে নিচু গলায় বলতে লাগলো,

— আমাকে ক্ষমা করে দাও মীরু। অনেক কষ্ট দিয়েছি আমি তোমাকে। আমি ভাবিনি আমার ফিরে না তাকানোয় তুমি এতো বড় অ্যাক্সিডেন্ট ঘটিয়ে বসবে। আমি জানতাম তুমি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলে। তোমার কথাগুলো সে সময় বিষের মতো কাজ করছিলো আমার জন্য, মনে হচ্ছিলো ভালোবেসেও এতটা অবিশ্বাস কি করে করতে পারো তুমি আমায়? তাই তো অভিমানে ফিরে তাকায়নি। কিন্তু বিশ্বাস করো সাড়ে তিন বছর পর তোমার কাছে আসায় আমি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম স্পেশালি তোমার মুখ থেকে “ভালোবাসি” কথাটা শুনে। আমি ” ভালোবাসি শুধু তোমায় ” মীরু! ভীষণ ভালোবাসি তোমায় সেই প্রথম থেকে।

আমান কথাগুলো মীরার হাতে ঠোঁট ছোঁয়ালো। তারপর ওভাবেই বসে রইলো। অন্যদিকে, ইসমির জ্ঞান ফিরেছে,

— অ..অর্নিল! মীরা? ম..মীরা ঠিক আছে?

ইসমি কে উঠে বসতে দেখে অর্নিল ইসমির কাছে গিয়ে ওকে সাহায্য করলো তারপর আস্তে করে ওর হাত ধরে বললো,

— ভাবী একদম ঠিক আছে ইসমি। তুমি একদম উত্তেজিত হয়ো না ইটস নট গুড ফর ইউর হেলথ।

— কিন্তু মীরা..

— বললাম তো ভাবী ঠিক আছে। ভাই গেছে ভাবীর সাথে দেখা করতে।

— ওহ! আন্টী কেমন আছে আর জিজু!? জিজু ঠিক আছে তো এখন?

— আম্মি কে খবর দিয়ে দিয়েছি আমি। আম্মি ঠিক আছে আর ভাবী ঠিক হয়ে গেছে শুনেই তোমার জিজু ঠিক হয়ে গেছে।

ইসমি কথাটা শুনে সামান্য হাসলো। অর্নিল ইসমি কে সামান্য ভ্রূ তুলে জিজ্ঞেস করলো,

— সবার খোঁজ নিলে, আমার খোঁজ তো নিলে না?

ইসমি অর্নিলের কথা শুনে আমতা আমতা করে বললো,

— আব, আ..আপনি তো ঠিকই আছেন।

অর্নিল শুধু তাচ্ছিল্য হাসলো ইসমির দিকে তাকিয়ে, ইসমির তা দেখেই কেমন বুক কেঁপে উঠলো। অর্নিল ইসমির চোখ থেকে চোখ নামিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিচু গলায় উত্তর দিলো,

— (মনে মনে– তোমার কোনো ধারণা নেই আমার উপর দিয়ে কি ঝড় গেছে। আমি চাইও না তুমি এটা জানো। আমি শুধু ভাইয়ের মতো প্রকাশ করতে পারি না বলে তুমি হয়তো বুঝতে পারছো না আমার মনের মধ্যে ঠিক কি চলছে।) ঠিক বলেছো। আমি একদম ঠিক আছি। তুমি রেস্ট করো, আমি আসছি।

অর্নিল উঠে যেতে নিলেই ইসমি অর্নিলের হাত টেনে ধরে বললো,

— সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চললো। কিছুই তো খাওনি তুমি। আম্মি যখন ঠিক আছে তখন গিয়ে কিছু খেয়ে নাও আগে।

অর্নিল কিছুটা অবাক হলো ইসমির ব্যবহারে আবার খুশিও হলো এই ভেবে যে ইসমি আবার ওকে তুমি করে বলছে। অর্নিল ইসমির পাশে বসতেই ইসমি অর্নিল কে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রেখে বললো,

— ” ভালোবাসি শুধু তোমায় ” তাই তোমার মনের কথাও বুঝতে জানি। তোমার উপর দিয়ে কি গেছে তা তোমার বাইরে টা দেখে বোঝা যায় না কিন্তু ভিতরটা? সেটা তো বোঝা যায় আর সেটা বোঝার ক্ষমতা আমার আছে।

অর্নিল ইসমির কথাগুলো শুনে, ইসমি কে নিজের বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মাথায় আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো। তারপর নিচু স্বরে বললো,

— আই লাভ ইউ ইসমি!

ইসমির জানো নিজের কানকে বিশ্বাসই হচ্ছে না। ইসমি ভাবতেও পারছে না আজ অর্নিল নিজের মুখে ওকে ভালোবাসার কথা জানাচ্ছে। স্বীকার করছে অর্নিল ইসমিকে ভালোবাসে। ইসমি হাল্কা কাঁপা কন্ঠে উত্তর দিলো,

— আ..আই লাভ ই..ইউ টু অর্নিল!

এদিকে,

আমি আস্তে আস্তে চোখ খুলে সব কিছু ঝাপসা দেখলাম তাই চোখ বুজে ফেললাম আবার। চোখ বুজে অনুভব করলাম আমার হাত ধরে কেউ বসে আছে। তাই আবারও চোখ খুললাম আর প্রথমে বোঝার চেষ্টা করলাম আমি কোথায়। চারিদিক দেখে বুঝতে পারলাম আমি হসপিটালে আছি। চারিদিক দেখার সাথে সাথে পাশে তাকাতেই আমার নজরে এলো আমান আমার হাত ধরে তা কপালে ঠেকিয়ে বসে আছেন। ওনাকে দেখে আমার মনে পরে গেলো আজ সকালে যা যা ঘটেছে। নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে আজ ওনার সামনে। উনি জানতেন আমার জন্য ওনার আব্বুর কোম্পানি নেই, আমার বোনের জন্য ওনাদের শেষ আশ্রয় নেই। তারপরেও উনি আমাকে ভালোবেসে গেছেন। এখানেই থেমে থাকেননি উনি! বার বার আমার অপমান, অবহেলা দুরে রেখে উনি ছুটে এসেছেন আমার কাছে। কি করে আমান? কি করে পারেন আপনি এসব? আপনার ভালোবাসার কাছে, আমার ভালোবাসা অতি নগণ্য।

— এতো কি ভাবছো মীরু? ডক্টর তোমাকে স্ট্রেস নিতে বারণ করেছে। তাও কেন তুমি এতো চিন্তা করছো? এখন তো সব ঠিক হয়ে গেছে।

ওনার কথায় আমার ঘোর কাটলো, আমি দেখলাম উনি চোখে পানি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি ওনার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম দেখে উনি সঙ্গে সঙ্গে আমায় প্রশ্ন করলেন,

— তুমি মুখ ফিরিয়ে নিলে কেন? আবার কি আমাকে দুরে সরিয়ে দেবে বলে ঠিক করেছ? একটা কথা ভালো ভাবে জেনে রাখো মীরু যাই হয়ে যাক তুমি আর আমার কাছে দুরে সরে যেতে পারবে না। দরকার পরলে জোর করে নিজের কাছে বন্দী করে রাখবো তোমায়। আর যদি যাওয়ারই হয় তাহলে আমাকে শেষ ক…

— কি বলছেন এসব? মাথাতেও আনবেন না এইসব ভাবনা। আজ আপনার চোখে যে পানি রয়েছে তা আমার জন্যে। আমি চাই না আপনার চোখে পানির কারন হতে।

ওনাকে থামিয়ে ওনার দিকে ঘুরে কথাটা বললাম। উনি রেগে চোখ মুখ শক্ত করতেই আমি সামান্য ভয় পেয়ে গেলাম।

— ফাস্ট অফ অল আপনি বলে সম্বোধন করা বন্ধ করো অ্যান্ড সেকেন্ডলি তুমি আমার সব কিছুর কারণ। আমার সুখ-দুঃখ, ভালোলাগা-মন্দলাগা সব কিছু! তোমার জন্যে কষ্ট পেলে তোমার জন্যেই হাসি আমি। তুমি আমার ভালো থাকার একমাত্র কারণ মীরু। তাই তুমিই আমার খারাপ থাকার কারণও হবে। যেই জিনিসের ভালো আছে সেই জিনিসের খারাপও আছে আর আমি দুটোকেই এক্সেপ্ট করেছি।

— আপনি…

আমি আপনি বলতেই উনি ঝট করে চোখে মুখে বিরক্তি নিয়ে উঠে গেলেন। সেই দেখে আমি তাড়াতাড়ি করে উঠে বসতে বসতে আমানের বেরিয়ে যাওয়ার আগে ডাকলাম,

— আমান আমার কথাটা শোনো একবার। এভাবে তুমি যেও না আমাকে ছেড়ে।

আমার কথা ওর কানে যেতেই ও দ্রুত গতিতে আমার দিকে ছুটে এসে আমায় উঠে বসতে সাহায্য করলো। আমি ওকে বললাম,

— এভাবে রাগ কেন দেখাচ্ছ আমাকে? এতদিনের অভ্যেস কি করে এতো তাড়াতাড়ি বদলাবো?

আমান গাল ফুলিয়ে আমার পাশে বসে আমায় একহাতে জড়িয়ে নিয়ে বললো,

— আমি ওসব কিছু জানি না। আমাকে আজ থেকে আপনি করে বলবে না ব্যাস! আর কিচ্ছু শুনতে চাই না।

আমি একটা কীল বসিয়ে দিলাম বুকের মধ্যে আর বিড়বিড়িয়ে বললাম,

— ঘাওড়া ব্যাটা!

— এই এই কি বললে তুমি? নাহ কি বললে?

আমি মনে মনে ভাবছি এই রেহ! শুনে ফেলেছে। কেন যে মনের কথা মনে রাখি না আল্লাহ মালুম! এখন কি হবে?

— মীরু! তুমি আজকে জানলে আমি ঘাওড়া?

আমানের উল্টো প্রশ্নে আমি আমতা আমতা করে বললাম,

— ইয়ে না ম..মানে আমি আ..আসলে……

— আমি ঘাওড়া বলেই তো আজ তুমি আমার জীবনে আছো। তোমাকে পেয়েছি আমি। যদি তোমার অপমান কে মনে ধরে দুরে সরে যেতাম তাহলে আমার জীবন ব্যর্থ হয়ে যেতো। জেদ করে ঘাওড়ার মতো তোমার পিছনে পরে না থাকলে তুমি কি আমাকে ভালোবাসতে? এই ছয় মাসে আমার মনে একটুও ভয় ছিলো না তোমাকে হারানোর। আমি জানতাম সত্যিটা জানলে আমার চাইতেও বেশি কষ্ট তুমি পাবে।

আমি আমান কে যত দেখছি তত অবাক হয়ে যাচ্ছি। আমাকে কতটা ভালো ভাবে চেনে ও। আমি ওর সাথে মজা করার জন্য মুখ টিপে হেসে বললাম,

— তার মানে তুমি স্বীকার করছো তুমি ঘাওড়া?

— ইয়ে হ..হ্যাঁ মানে ন..না তুমি আমাকে জেদি বলো বাট ঘাওড়া বলো না। কেমন জানি বাজে লাগে শুনতে ওয়ার্ডটা।

আমি জোরে হেসে ফেললাম আমানের মুখ দেখে আর আমান আমার দিকে ক্যাবলার মতো তাকাতেই ওর চোখে চোখ রেখে বললাম,

— ঘাওড়াআআআ!

বলে আবার হাসতে শুরু করলাম, আমান আমার দিকে ছোট ছোট চোখ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো কিন্তু আমার হাসি থামলো না। সেই জন্যে আমার হাসি দেখে আমান ও হেসে ফেললো। এরপর আমি শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আমান কে। আমান আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,

— মীরু! তোমার ঠোঁটে আমি সবসময় এই হাসিটাই দেখতে চাই। এখন থেকে একটুও স্ট্রেস নেবে না তুমি। যা করার আমি করবো।

— আমান ফুপি কোথায়? ফুপি কে কি তুমি আম্মুর সাথে রেখে এসেছো?

— নাহ জান আমি তেমন কিছুই করিনি। আম্মু আমাদের বাসায় আছে। তোমার ফুপি আর তার ক্রাইম পার্টনাররা সবাই পুলিশ কাস্টেডি তে আছে। অনেক শিক্ষা পাওয়া বাকি তোমার ফুপির। তিলে তিলে শেষ করবো আমি ওনাকে।

— তোমার যা ইচ্ছে তুমি তাই করতে পারো আমান, আমি তোমাকে বাঁধা দেবো না। কিন্তু নিজের খেয়াল রেখে। আমি চাই না ফুপি তোমার আর কোনো ক্ষতি করুক।

— তুমি আছো তো এখন আমার সাথে। আমার কিছু হবে না জান!

আমি আমানের বুকে মুখ গুঁজে আস্তে করে জিজ্ঞেস করলাম,

— সুমি কোথায়? ওকে দেখছি না কেন? ঠিক আছে তো ও?

— সুমি পাশের কেবিনে আছে মীরু।

আমি ঝট করে আমানের থেকে সরে এসে উত্তেজিত কন্ঠে বললাম,

— পাশের কেবিনে আছে মানে? কি হয়েছে ওর?

— মীরু, মীরু কাম ডাউন। তোমরা টুইনস! তোমার শরীর খারাপ হওয়ায় ওরও শরীর একটু দুর্বল হয়ে পরেছিলো তাই মাথাটা একটু ঘুরে গেছিলো। এখন ঠিক আছে ইসমি, নীল আছে ওর সাথে।

— ওহ! আব, আমি যাবো ওর কাছে।

— জান! আমি বললাম তো ইসমি ঠিক আছে? তাও কেন চিন্তা করছো তুমি আবার? আমার কথা শুনবে না তুমি?

আমানের কথায় কাঁচুমাচু হয়ে চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে রইলাম। আমার সুমির কাছে যাওয়ার ইচ্ছেটাকে গলা টিপে মেরে দিলো আমান। কি আর করার এখন?

আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছি সেই সময় আমার মনে হলো আমান বোধ হয় আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যেই ভাবা সেই কাজ সঙ্গে সঙ্গে আমানের দিকে তাকালাম আর দেখলাম ও স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর দৃষ্টি আজ কেমন জানো অন্যরকম লাগছে। একটা আলাদা ভাষা প্রকাশ পাচ্ছে আমানের দৃষ্টিতে, ভালোবাসার নেশা প্রকাশ পাচ্ছে। আমি টেরও পাইনি আমান কখন আমার এতোটা কাছে চলে এসেছে, ওর উষ্ণ নিশ্বাস আমার মুখে পরায় আমার হুঁশ এলো। আমান আস্তে করে আমার কপালে ঠোঁট ছোঁয়াতে আমার শরীরে হাল্কা শিহরণ বয়ে গেলো। এই প্রথম আমানের স্পর্শ এতো টা ভালো ভাবে অনুভব করছি আমি। আজকে ওকে দুরে সরিয়ে দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

আমান আস্তে করে নিজের দু-হাত আমার কানের নিচ দিয়ে প্রবেশ করিয়ে আমার সারা মুখমণ্ডলে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিতে লাগলো আর আমি চোখ বুজে তা অনুভব করতে থাকলাম। সবশেষে আমান থেমে গেলো, আমি আমার ঠোঁটের উপর ওনার উষ্ণ নিশ্বাস অনুভব করলাম। আস্তে করে চোখ খুলে আমানের চোখে চোখ রাখতেই নিমিষে উনি আমার ঠোঁট জোড়া ওর ঠোঁট জোড়ার ভাজে নিয়ে নিলো। নিজের জড়তা কাটিয়ে আস্তে আস্তে আমি মেতে উঠলাম আমার ভালোবাসার মানুষের ভালোবাসায়। আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে স্বাদ গ্রহণ করতে লাগলাম একে অপরের ঠোঁটের।

?
?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে