ভালোবাসি_শুধু_তোমায় পর্ব-১৩

0
2584

#ভালোবাসি_শুধু_তোমায় ?❤
#পর্ব : ১৩
#লেখিকা : Aye Sha (Koyel Banerjee)

” শেষ করে দাও আমানের মা কে, ওনাকে বাঁচিয়ে রাখার আর কোনো দরকার নেই। ”

আমি আমানের বুক থেকে মাথা তুলে ওনার দিকে তাকালাম, দেখলাম উনি স্থির দৃষ্টে ফুপির দিকে তাকিয়ে আছেন। চোখ দুটো ধীরে ধীরে রক্তজবার মতো লাল বর্ন ধারন করছে। এতকিছুর মধ্যেও আমান আমাকে ধরে রেখেছেন। আর আমি মনে মনে ভাবছি,

— শুধুমাত্র আমার জন্যে আজ আমানের আম্মু বিপদে। আমি যদি ওনাকে বিয়ে না করতে চাইতাম তাহলে ফুপি ওনাকে এরকম প্রপোসাল দিতেন না। ঠিকই বলেছেন উনি, ধ্বংস করে দিয়েছি আমি ওনাকে।

ফুপি ফোনে কাওকে কল করে বললেন,

— শেষ করে দাও আমানের আম্মু কে। ওনাকে বাঁচিয়ে রেখে আর কোনো লাভ নেই। সবাই যখন সব জেনেই গেছে তখন আর এই মিথ্যে অভিনয়ের কোনো মানেই হয় না।

কথাগুলো বলেই ফুপি কল কেটে দিলেন। সুমি চিৎকার করে ফুপি কে বললো,

— ফুপিইই! তুমি কি মানুষ? এভাবে একজন কে কি করে শেষ করে দিতে পারো তুমি? এতটা রুথলেস কি করে হতে পারো তুমি?

ফুপি জোরে জোরে হাসতে লাগলেন আর বললেন,

— আমি যে কতটা রুথলেস তার কোনো আইডিয়াই নেই তোদের। এক্ষুণি চোখের সামনে আমান নিজের আম্মুর মৃত্যু দেখবে। আমার কথার খেলাফ করার কি পরিণাম তা ও বুঝ…

ফুপির কথার মাঝে ফুপির কল এলো, ফুপি সেটা দেখে হেসে বললেন,

— আমান! তোমার আম্মুর মৃত্যুর খবর শুনবে নাকি দেখবে?

আমান ঝটপট উত্তর দিলো,

— দেখবো।

ফুপি কিছুটা চমকে উঠলেন আমানের উত্তরে কারণ উত্তর শেষে ওনার ঠোঁটে রয়েছে বাঁকা হাসি। ফুপি সামান্য ঘাবড়ে গিয়ে কল রিসিভ করতেই ওনার মুখটা কালো হয়ে গেলো। ফুপি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে আমান কে জিজ্ঞেস করলেন,

— ক..কে ত..তু..তুমি?

আমান ওনার কথায় আমাকে ছেড়ে হাসতে থাকলেন। আমি তো “থ” মেরে দাঁড়িয়ে আছি। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। হঠাৎই উনি চোয়াল শক্ত করে বললেন,

— কাকে মারতে চেয়ে ছিলেন জানতে পেরেই আপনার মুখটা এতটা শুকিয়ে গেলো? তাকে সামনাসামনি দেখলে আপনার কি অবস্থা হবে?

আমানের কথায় জানো ফুপির মুখমণ্ডলে রাজ্যের ভয় এসে ভর করলো। আমান বাঁকা হেসে দরজার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে একজনের নাম নিলেন,

— অর্নিলললল!

অর্নিল নামটা শুনতেই আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম। এই নামটা তো আমি সুমির মুখে শুনেছি। ও তো প্রায় আমাকে এসে বলতো যে ও যাকে ভালোবাসে তার নাম “অর্নিল”। এই কি সেই অর্নিল? আমি সুমির দিকে তাকাতেই দেখলাম ও’ও আমার মতো বিস্মিত। যদি এক হয়, তাহলে সেটা সুমি বুঝবে কারণ আমি কোনদিন অর্নিল কে দেখিনি। আমরা এবার দরজার দিকে তাকালাম, দেখলাম একটি ছেলে একজন বয়স্ক ভদ্র মহিলা কে নিয়ে ভিতরে আসছে। ওরা দুজন ভিতরে এসে দাঁড়াতেই সুমি বলে উঠলো,

— অ..অর্নিল তুমি?

আমি বুঝলাম এটাই সেই অর্নিল যার কথা সুমি আমাকে বলতো। অর্নিল সুমির দিকে তাকিয়ে শুধু হাসলো। অন্যদিকে ফুপি কেমন জানো ভয় পেয়ে গেছে ওনাদের দেখে। কি সব বিড়বিড় করছে ফুপি,

— ন..না না না, এটা হ..হতে পারে না। এটা ক..কি করে স..সম্ভব?

— এটা সম্ভব হয়েছে বলেই আজ আমি আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছি মিস রাহেলা চৌধুরি! আমি সেই আরমান খানের ছেলে যাকে আপনি পথে বসিয়েছিলেন। আপনি আমাদের মারতে চেয়েও মারতে পারেননি মিস রাহেলা চৌধুরি। না আমি মরেছি আর না আমার ভাই কে মরতে দিয়েছি। আমরা দুই-ভাই মিলে আমার আম্মু কে সেভ করেছি আপনার মতো নিন্মমানের মনের মানুষের থেকে যার কি না স্বার্থের জন্য মানুষ মারতে হাত কাঁপে না।

আমি আমানের কথায় বুঝলাম ফুপি এর আগেও মানুষ খুন করেছে। আমি নিজেকে শক্ত করে আমান কে জিজ্ঞেস করলাম,

— আ..আর কাকে কাকে খ..খুন করেছে ফুপি?

আমান আমার দিকে একবার তাকালেন তারপর সুমির দিকে তাকালেন। আমি বুঝলাম না ওনার এভাবে তাকানোর মানে। উনি আমার কাছে এগিয়ে এসে, আমার দু-বাহু শক্ত করে ধরে বললেন,

— তোমাদের আব্বু-আম্মুর মৃত্যুটা কোনো অ্যাক্সিডেন্ট নয় মীরু! ওটা মার্ডার ছিলো। যেটা তোমার ফুপির নির্দেশে হয়েছিল।

সুমি কথাটা শুনে পরে যেতে নিলেই অর্নিল গিয়ে সুমি কে ধরে ফেলে আর আমি চিৎকার দিয়ে দুরে সরে এলাম আমানের থেকে,

— নাআআ! আপনি মিথ্যে বলছেন। এমনটা কিছুতেই হতে পারে না। কিছুতেই না। আপনি বলুন না আপনি মিথ্যে বলছেন, বলুন না আমান?

— আমি মিথ্যে বলছি না মীরু। সবটা সত্যি।

আমানের উত্তর আমাকে পুরো ভিতর থেকে নাড়িয়ে দিলো। দাঁড়িয়ে থাকার মতো শক্তি আমি পাচ্ছি না, তবুও টলমল পায়ে আমি আস্তে আস্তে ফুপির দিকে এগিয়ে গিয়ে ফুপি কে জিজ্ঞেস করলাম,

— কেন এমন করলে আমাদের সাথে ফুপি? কি ক্ষতি করেছিল আব্বু-আম্মু তোমার? কেন এভাবে আমাদের দু-বোন কে অনাথ করে দিলে? কেন বলো? কেন করলে এমন?

আমি ফুপি কে ধরে জিজ্ঞেস করতেই আমান আমাকে সরিয়ে নিয়ে এসে সোফায় বসিয়ে বললেন,

— তোমাকে আমি সবটা বলছি। তোমার ফুপির বলার মুখ নেই।

— আরো কি কি শোনা বাকি আছে আমান?

আমি কাঁদতে কাঁদতে কাঁদতে ওনাকে কথাটা জিজ্ঞেস করতেই উনি আমার হাত ধরে পাশে বসে বললেন,

— আমি আছি তো তোমার সাথে। শক্ত হতে হবে তোমায়।

— বলুন আপনি।

— তোমার আব্বু আর আমার আব্বু ছিলেন বেস্ট ফ্রেন্ড, সেই সুত্রে আমার আব্বু তোমাদের বাসায় প্রায় সময় আসতেন। এরফলে তোমার ফুপির আমার আব্বু কে পছন্দ হয়ে যায় আর উনি আব্বু কে ভালোবেসে ফেলেন। এই কথাটা তোমার আব্বু কে তোমার ফুপি জানাতেই তোমার আব্বু আমার আব্বুর সাথে কথা বলেন। সব শুনে আমার আব্বু তোমার আব্বু কে বুঝিয়ে বলেন যে উনি তোমার ফুপি কে বিয়ে করতে পারবেন না কারণ উনি অন্য কাওকে ভালোবাসেন। এটা শোনার পর তোমার আব্বু কোনো রকম রিয়াক্ট না করে আমার আব্বুর সাথে সহমত হন আর তোমার ফুপির সাথে আমার আব্বুর বিয়েটা হয় না।

— আপনার আব্বু কাকে ভালোবাসত?

উনি বয়স্ক মহিলাটার দিকে ইশারা করে বললেন,

— আমার আম্মু কে। উনি আমার আম্মু। আমার আব্বু যখন আম্মু কে বিয়ে করেন তখন তোমার আব্বু উপস্থিত ছিলেন। আমার আব্বু-আম্মুর বিয়ের পর তোমার আব্বু বিয়ে করেন। সেই সময় আমার আম্মু প্রেগন্যান্ট ছিলেন যা তোমার ফুপি মেনে নিতে পারেননি। অনেকরকম ভাবে আম্মুর ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিলেন আর এটা আব্বু বুঝে যায়। তাই আব্বু তোমার আব্বু-আম্মু কে বলেন যে কাজের জন্য বাইরে যেতে হবে। এই অজুহাতে তোমার ফুপির থেকে অনেক দুরে নিয়ে আসে আব্বু আম্মু কে। এরপর আমি হই তার একবছর পর অর্নিল। প্রায় অনেক বছর পর আমার বয়স যখন ১৮ আর অর্নিলের ১৭ তখন আব্বু-আম্মু কে নিয়ে তোমার আব্বু-আম্মুর সাথে দেখা করতে যান। তারপর…

— তারপরের ঘটনাটা আমি বলছি আমান। আমি জানি তুই এই ঘটনাটা বলতে পারবি না।

আমানের আম্মু কথাটা বলে, আমার পাশে এসে বসলেন। সুমি অনবরত কেঁদেই চলেছে অর্নিল কে ধরে। অর্নিল সুমি কে আস্তে করে নিয়ে সোফায় বসলো, ওদিকে ফুপি কেমন জানো স্থির হয়ে বসে আছেন যা আমার ঠিক লাগছে না। আম্মু আমার মাথায় হাত রেখে বলেন,

— আমানের আব্বু আর আমি যখন তোমার আব্বু-আম্মুর সাথে দেখা করতে এসেছিলাম তখন আমান আর অর্নিল নিজের পড়াশোনার জন্য আসতে পারেনি। আমরা এসে যখন তোমাদের দুই বোন কে দেখি তখনই ঠিক করে ছিলাম তোমাদের দুজন কে আমাদের বাসার বউ করবো। আমান কে তোমাদের দুজনের ছবি পাঠাতেই ও আমাকে তখনই জানিয়ে দেয় ওর বিয়ে করার হলে তোমাকেই বিয়ে করবে। অর্নিল তখন কিছু বলেনি, শুধু হেসে ছিলো। ওদের কে আমি বলি আমান জানো এখানে চলে আসে উচ্চমাধ্যমিক টা দিয়েই। সব ঠিক থাকায় তোমার আব্বু-আম্মুর কাছে আমরা এই প্রস্তাব টা রাখি যা তোমাদের আব্বু-আম্মু খুশি খুশি মেনে নেন কিন্তু তোমাদের ফুপি তা মেনে নেননি। শুধু অভিনয় করেছিলেন মেনে নেওয়ার।

এরপর শুরু হয় তোমার ফুপির আসল খেলা। তোমার আব্বু-আম্মু একদিন তোমার ফুপির সাথে কথা বলতে তার ঘরে যাচ্ছিল ঠিক সেই সময় তোমার ফুপি একজনের সাথে প্ল্যান করছিল কীভাবে আমান, অর্নিলসহ আমাকে মেরে ফেলা যায়। এইটা শুনে নেওয়ায় তোমার আব্বু-আম্মু অনেক বকাঝকা করেন তোমার ফুপি কে।

সুমি বললো,

— ফুপি আপনাদের মারতে চেয়েছিল সে সময়?

— হ্যাঁ। সেই প্ল্যান ফ্লপ হওয়ায় উনি রাগে তোমাদের আব্বু-আম্মু কে একটা রোড অ্যাক্সিডেন্ট করিয়ে মেরে ফেলেন। ওনারা ফিরছিলেন বাসায় সে সময়। মীরা! তোমার ফুপি ছোট থেকেই তোমাকে জানতেন। উনি জানতেন যে ইসমি (সুমি) ঠান্ডা, শান্ত-শিষ্ট হলেও তুমি ছিলে রাগী, জেদি। কোনদিন তুমি হার মানতে শেখনি। এই কারণে উনি সে সময় তোমাকে ব্যবহার করেন।

— আমাকে ব্যবহার করেন মানে? সে সময় তো ফুপি জোর করে আমায় আব্বুর অফিসে পাঠিয়ে ছিলো। আমি তো কিছু বুঝতামই না তখন ব্যাবসার।

— তুমি কিছু জানতে না দেখে সেই জন্যেই তোমার ফুপি তোমাকে সামনে রেখে নিজের কাজ হাসিল করে ছিলেন। তোমার আর ইসমির নামে সব সম্পত্তি থাকায় তোমার ফুপি নিজে কিছুই করতে পারতেন না তাই তোমাকে ব্যবহার করেছেন। তোমার কি মনে আছে তুমি একটা ইন্ডাস্ট্রিজ পুরো কিনে নিয়েছিলে সেটা লস খেয়েছিল দেখে?

— হ্যাঁ। লসটা তো আমরাই চালাকি করে করিয়ে ছিলাম। ওই ইন্ডাস্ট্রিজ যাদের সাথে প্রজেক্ট ডিল করে টাকা ইনভেস্ট করেছিল সেই সব প্রজেক্ট আমরা আনসাকসেসফুল করে দিয়ে ছিলাম। সবটা তো ফুপিই আমাকে করতে বলেছিল কারণ ওই ইন্ডাস্ট্রিজ আমাদের থেকে বেশি এগিয়ে যাচ্ছিল দেখে। একসাথে অনেকগুলো প্রজেক্ট আনসাকসেসফুল হওয়ায় প্রচুর পরিমাণ লসের মুখে পরে যায় আর তখন আমরা সেই ইন্ডাস্ট্রিজ টা কিনেনি।

সুমি বললো,

— ও..ওটা তো খান ইন্ডাস্ট্রিজ ছিলো তাই না মীরা?

— হ..হ্যাঁ।

এবার মাথায় এলো যে ওটা খান ইন্ডাস্ট্রিজ ছিলো।

— তার মানে ওটা আমানদের কোম্পানি ছিলো?

— হ্যাঁ। আমাদের সব কিছু থাকতেও আমরা সব হারিয়ে ফেলেছিলাম, নিঃস্ব হয়ে গেছিলাম। আমান আর অর্নিল কে ওদের আব্বু আর দেখা করতে যেতে দেয়নি তোমাদের সাথে। আমানের উচ্চ মাধ্যমিক হয়ে যাওয়ার বেশ কয়েক মাস পর হঠাৎই একদিন কয়েকজন লোক এসে বলেন আমাদের যে বাসাটা মরগেজে রাখা ছিলো তার টাকা শোধ না করতে পারায় তোমাদের কোম্পানি আমাদের বাসা কিনে নিয়েছে। এটা শুনে আমানের আব্বু স্টোক করেন, এতো কিছু মেনে নিতে পারেননি উনি। আমান সব বুঝে অর্নিলকে নিজের হোস্টেলে পাঠিয়ে দিয়েছিল আর আমান নিজের রেজাল্ট ভালো থাকায় একটা চাকরি খুঁজে নিয়ে ছিলো। চাকরি করার সাথে সাথে স্কলারশিপ পাওয়ায় ভার্সিটি তে ভর্তি হয়ে ছিলো।

আমি সবটা শোনার পর আমানের দিকে তাকাতেই দেখলাম ওনার চোখে পানি। আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম,

— আপনি জানতেন আমিই সেই মেয়ে যে কি না আপনাদের ক্ষতি করেছি। আপনার আব্বুর জীবন নিয়ে নিয়েছি?

আমান শুধু হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম,

— তার মানে আপনি জেনে বুঝে বার বার আমার কাছে ভালোবাসার দাবী নিয়ে আসতেন?

আমান এইবারও শুধু হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো। সুমি ফুপি কে জিজ্ঞেস করলো,

— শুধুমাত্র নিজের প্রতিশোধের জন্য তুমি এতগুলো প্রাণ নিয়ে নিলে? নিজের সাথে সাথে মীরা কে আর আমাকে দিয়েও পাপ করিয়েছিলে। মীরা কে দিয়ে খান ইন্ডাস্ট্রিজ ধ্বংস করিয়ে ছিলে আর আমাকে দিয়ে ওদের শেষ সম্বল ওদের আশ্রয় টা কেড়ে নিয়েছিলে। এইভাবে প্রতিশোধ নিলে তুমি জিজুর আব্বুর থেকে তোমাকে বিয়ে না করায়, তোমাকে অস্বীকার করায়? ছিঃছিঃ তুমি কি মানুষ নাকি অন্য কিছু? এসব করেও তোমার শান্তি হয়নি যার জন্য তুমি মীরার জীবনটাকে নিয়েও খেলতে শুরু করে দিয়েছিলে?

আমান সুমি কে বললেন,

— শুধু মীরা নয় ইসমি। তোমাদের ফুপির নেক্সট টার্গেট তুমি ছিলে। পুরো সম্পত্তি আদায় করতে তোমার আর তোমার হাসব্যান্ডের ও সাইন দরকার। মীরার সাথে যেটা করেছেন তোমার সাথেও সেটাই করতেন উনি।

— হ্যাঁ, হ্যাঁ করতাম। তোর সাথেও সেটাই করতাম আমি ইসমি। তুই আর মীরাই ছিলিস আমার পথের কাঁটা। যদি এই আমান আর অর্নিল কে সেই সময় পেতাম না তাহলে ওদের কেও ওদের আব্বুর সাথে কবর দিয়ে দিতাম। পুরো পরিবার কে কবর দিয়ে দিতাম আমি। শুধুমাত্র তোদের আব্বুর জন্য আমি আমার ভালোবাসার মানুষ কে পাইনি। আর যাকে ভালোবাসতাম সে আমাকে রিজেক্ট করেছিল এই মহিলার জন্য! এতো বড় সাহস রাহেলা কে রিজেক্ট করে? হা হা হা! কি পরিণাম হলো তার? মৃত্যু! তোরাও মরবি। সবাই মরবে…

ফুপির এই কথা শুনে আমানের আম্মু উঠে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন ফুপির গালে। সুমি অর্নিল কে বললো,

— আজ আমি বুঝতে পারছি কেন আপনি মেয়েদের কে এতটা ঘৃণা করতেন। আমিও আপনার আব্বুর মৃত্যুর জন্য দায়ি! আমিই আপনাদের শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নিয়েছিলাম। পারলে আ..আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আমি জানি এটা অসম্ভব আপনার পক্ষে, আপনার পরিবারের পক্ষে কিন্তু ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই। এতোদিন আপনাকে যেভাবে বিরক্ত করেছি তার জন্যেও ক্ষমা করে দেবেন, আমি কথা দিচ্ছি আপনার সামনে আমি আর আসবো না।

সুমি কথাগুলো বলে উঠে যেতে নিলেই আমানের আম্মু ইসমির হাত ধরে বলে,

— এরকম বলে না মা। তোমাদের এতে কোনো দোষ নেই। তোমাদের কে তো ব্যবহার করা হয়েছে। তুমি আমার বাসার ছোট বউমা হবে।

— নাহ আন্টী! আমার কোনো যোগ্যতা নেই আপনার ছেলের বউমা হওয়ার।

— সেটা তো কেউ তোমাকে দেখতে বলেনি। তুমি যোগ্য কি যোগ্য নও তা আমি বুঝবো কারণ তুমি আমার সাথে থাকবে, আমার সাথে সংসার করবে। আম্মি! সেদিন ভাই বলেছিল আজ আমি বলছি। আমার বিয়ে করার হলে আমি ইসমি কেই করবো নয়তো নয়।

অর্নিলের কথা শুনে আমান উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

— শেষে আমার কপি করলি? অন্য স্টাইলে বিয়ের প্রপোসাল দিতে পারতিস।

— মীরা! এই মীরা কি হয়েছে তোর?

হঠাৎ আমার কি হলো জানি না। মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছিলো আমিই আমানের ধ্বংসের কারণ, হোক সেটা জেনে বুঝে আর না জেনে বুঝে। আমি আজকে পরিস্কার বুঝতে পারছি কেন আমান এই কথাটা বলতেন। ফুপির কথায় আমাকে দুরে সরানোর জন্যে আমান এই সত্যিটাই আমাকে বলতেন কারণ আমি তো আর জানতাম না আমার জন্য আমার ভালোবাসার জীবনটা শেষ হয়ে গেছে। এসব ভাবতে ভাবতে অর্নিলের সুমিকে বিয়ে করার কথাটা শুনলাম তারপর আমানের উঠে দাঁড়ানোয় আমি উঠতে নিলেই চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে এলো। শেষে শুধু সুমির কথাটা কানে এলো আর আমান কে দেখতে পেলাম, তারপর সব ঝাপসা।

ইসমির কথা শুনে আমান পিছন ফিরতেই দেখে মীরা টলছে। মীরা পরে যেতে নিলেই আমান সঙ্গে সঙ্গে মীরা কে ধরে সোফায় বসায়। ইসমি গিয়ে মীরা কে দেখতেই দেখে মীরার নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। আমান তো সব দেখে পুরো স্তব্ধ হয়ে গেছে। ইসমি মীরা কে ডাকছে আর জিজ্ঞেস করছে,

— এই মীরা? মীরা? চোখ খোল না! বার বার বলেছিলাম এতটা প্রেসার দিস না। এই মীরা?

আমানের আম্মু চোখে মুখে পানি ছিটালে ইসমি বলে,

— এসবে কোনো লাভ হবে না আন্টী। যা হবার হয়ে গেছে, আর হয়তো কিছু করার নেই। মীরার পালস রেট পাওয়া যাচ্ছে না।

ইসমির কথা শুনে আমান শুধু নিজেকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো,

— আমার মীরু কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? সবটা ঠিক হয়েও কি সব শেষ হয়ে যাবে? আমি কি পাবো না ওকে নিজের করে? হারিয়ে ফেলবো আমি ওকে?

?
?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে