ভালোবাসি_শুধু_তোমায় পর্ব-০৩ || Golpo poka love story

0
3812

#ভালোবাসি_শুধু_তোমায় ?❤
#পর্ব : ৩
#লেখিকা : Aye Sha (Koyel Banerjee)

” আপনার কোনো যোগ্যতা নেই মীরা চৌধুরির ভালোবাসা পাওয়ার মিস্টার আমান খান। ”

ভার্সিটির সবার সামনে দাঁড়িয়ে আমি একতা বখাটে ছেলে কে কথাটা বললাম। রোজ রোজ আমাকে ডিস্টার্ব করা জানো ছেলেটার অভ্যেস হয়ে গেছে। প্রতিদিন এতো অপমানের পরেও যে কি করে আমার সামনে এসে দাঁড়ায় আল্লাহ জানেন। আমার কথাটা বলার পর উনি ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে বললেন।

— ভালোবাসতে যোগ্যতা লাগে না, লাগে হৃদয়ের শুদ্ধতা। ভালোবাসা হৃদয় থেকে হয়। কেউ কেউ মস্তিষ্ক দিয়ে ভালোবাসে আর কেউ কেউ হৃদয় দিয়ে। আমি তোমাকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসি মীরা।

মুখে বিরক্তির ছাঁপ ফুটে উঠলো আমার। একরাশ বিরক্তি নিয়ে ওনার চোখে চোখ রেখে বললাম।

— আর কিছুদিন পর এই ভালোবাসা শেষ হয়ে যাবে অন্য কোনো নারী কে দেখলে। তখন আমি পুরোনো হয়ে যাবো, প্রাক্তন হয়ে যাবো আর সে নতুন। তাকেও গিয়ে আপনি এই একই কথা বলবেন যা যা আমায় বলছেন তাই না?

— হমম জানি আজকাল এটা নতুন কিছু না। কিন্তু যারা সত্যি ভালোবাসে না তারা নিজেকে জাহির করে। যেটা আমি করছি না। তুমি আমার চোখের দিকে তাকাও বুঝতে পারবে তোমার জন্য আমার মনে কি আছে। আমি শুধু আমার ভালোবাসা জাহির করছি, আমার ক্ষমতা নয়।

আমানের কথায় হেসে দিলাম। কোনো রকমে হাসি চেপে বললাম।

— ক্ষমতা আছে নাকি যে দেখাবেন? ভিকারিদের ভিক্ষা করা ছাড়া কি বা ক্ষমতা থাকে? স্কলারশিপ পাচ্ছেন বলেই এই ভার্সিটি তে পড়ছেন নাহলে আপনার ঠিকানা হতো রাস্তা। আমি খুব ভালো ভাবেই জানি আপনি আমার টাকা কে ভালোবাসেন। তাই তো এতো অপমানের পরেও ছুটে আসেন। আপনার ভালোর জন্য বলছি আপনার এই লোভ সংযত করুন কারণ তা কোনদিন পুর্ণ হবে না।

— আমি আমার যোগ্যতায় এই ভার্সিটিতে পড়ছি মীরা। এই ভার্সিটিতে যারা পড়ে তারা সবাই সমান স্টেটাসের, বাইরে যার যার স্টেটাস আলাদা কিন্তু ভার্সিটিতে এক। মানছি আমার অর্থের ক্ষমতা নেই কিন্তু তুমি পাশে থাকলে আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করবো উন্নতি করার। আমার তোমার কাছে শুধু ভালোবাসা চাই, একবার বিশ্বাস করে দেখো কথা দিচ্ছি ঠকবে না।

— ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট! একদম নিজের সাথে আমাকে তুলনা করবেন না। সাহস কি করে হলো আপনার নিজের সাথে আমার স্টেটাসের তুলনা করার?

— ভালোবাসায় স্টেটাসের কোনো স্থান নেই মীরু।

আমার মাথায় জানো আগুল জ্বলে গেলো ওনার মুখ থেকে “মীরু” শুনে। আমি রেগে বললাম।

— স্টপেড! জাস্ট স্টপেড! একদম আপনি আমায় মীরু বলে ডাকবেন না। কোনো অধিকার নেই আপনার আমাকে মীরু বলে ডাকার। উফফ মাথা খারাপ হয়ে যাবে আমার এই নির্লজ্জের সাথে কথা বলতে বলতে।

এই কথাটা বলে আমি ওনার দিক থেকে পিছন ফিরে নিজের ক্লাসের উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই উনি পিছন থেকে জোরে বলে উঠলেন।

— দেখে নিয়ো, একদিন এই ভিকারি, নির্লজ্জ কেই ভালোবাসতে হবে।

আমি ওনার কথা শুনে সামান্য হেসে ওনার দিকে না ফিরেই জোর গলায় বললাম।

— দিনের বেলা জেগে জেগে স্বপ্ন দেখাটাই আপনার কাজ। আপনি স্বপ্ন দেখে যান যা কোনদিন পূরণ হবে না। এমন দিন কোনদিন আসবে না।

দরজায় টোকা পরার শব্দে আমি আমার অতীত থেকে বেড়িয়ে এলাম। এতক্ষণ আমানের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আমি আমার অতীতে ডুবে ছিলাম। ভাবছিলাম, উনি ঠিকই বলেছিলেন ওনাকে ভালোবাসতে আমাকে হবেই। এখন মনে হয় নিজের অতীতে গিয়ে নিজের ভুলগুলো শুধরে নিই কিন্তু তা যে সম্ভব নয়, সম্ভব নয়। আর পারলাম না বসে থাকতে বেড থেকে নেমে দৌঁড়ে ওয়াশরূমে এসে শাওয়ারের অন করে ধপ করে বসে পরলাম নিচে আর হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম।

আমি ছোটো থেকেই বাবা-মার আদরে বড়ো হয়েছি। আমি যা চাইতাম আব্বু-আম্মু আমাকে তাই এনে দিতো। কোনো সময় কোনো কিছু থেকে আমি বঞ্চিত হইনি। আমাকে কোনো কষ্ট কোনোদিন ছূঁতেই পারেনি। তাই তো এতটা জেদী, অহংকারী হয়ে গেছিলাম যে ভালোবাসার মূল্য বুঝিনি। আজ আমার কষ্ট পাওয়ার কারণ আমি নিজে। আমাকে আমার আমান কে ফিরিয়ে আনতে হলে আমার জেদ কে আবার জাগিয়ে তুলতে হবে। মিস্টার আমান খান! তৈরী হয়ে যান আবার আপনার মীরার জেদ দেখার জন্য। আমার জেদের কাছে হার আপনাকে মানতেই হবে।

নিজেকে স্বাভাবিক করে আমি ফ্রেশ হয়ে নিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে ঘরে যেতেই দেখলাম আমান নেই। চারিদিকে চোখ বুলাতেই নজরে গেলো ঘড়ির দিকে। আমি ৭টা নাগাদ ওয়াশরূমে গেছিলাম আর এখন ৮টা বাজে। প্রায় ১ ঘন্টার মতো ওয়াশরূমে ছিলাম তাই হয়তো আমান অন্য রূমে ফ্রেশ হয়ে নিয়েছেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে নিচে নেমে গেলাম উনার খোঁজ নেওয়ার জন্যে কিন্তু সেখানে আম্মু ছাড়া কেউই ছিলো না আই আমি আম্মু কেই জিজ্ঞেস করলাম।

— আম্মু! উনি কোথায়?

আম্মু বেশ বিরক্ত হয়ে রাগিসুরে উত্তর দিলেন।

— আমান এই সময় অফিসে বেড়িয়ে যায় তুমি জানো না? তোমার অফিসেই তো কাজ করে। নিজের স্বামী কে তো চাকর বানিয়ে রেখেছো।

— আম্মু তুমি কি বলছো এসব? উনি যেই কোম্পানি তে কাজ করে সেই কোম্পানির এম.ডি উনি। তারপরেও আপনি এসব কেন বলছেন?

— জোর করে বিয়ে করেছো তুমি আমার ছেলেটা কে। ওর জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছো আর এখনও দিচ্ছো। শোনো মীরা! তোমার বাবার টাকা আছে দেখে তুমি যদি ভাবো আমাদের কে চাকর বানিয়ে রাখবে, আমাদের কে নিজের কথায় নাচাবে, ছড়ি ঘুরাবে আমাদের মাথার উপর তাহলে ভুল ভাবছো। না আমার ছেলে তোমাকে মেনে নেবে আর না আমি।

— কেন আম্মু? আমাকে কি ভালোবাসা যায় না? মানছি এই বাসা আমার আব্বুর দেওয়া, ওনাকে জব আমার আব্বু দিয়েছেন কারণ আমি ওনাকে জোর করে বিয়ে করেছি। আমার আব্বু চায়নি আমি কোনোরকম কষ্টে থাকি, আমার তো অভ্যেস নেই। কোন বাবা-মা চায় নিজের সন্তান কষ্টে থাকুক বলুন? আর আমি! আমি আমান কে ভালোবাসি দেখেই তো জোর করে বিয়ে করেছি।

— হাহ! ভালোবাসা। ভালোবাসা জোর করে পাওয়া যায় না, আমার ছেলে তোমাকে ভালোবাসে না আর কোনোদিন বাসবেও না। যত্তসব ঢং!

আম্মু কথাগুলো বলে নিজের ঘরে চলে গেলেন আর আমিও কাঁদতে কাঁদতে নিজের ঘরে চলে এলাম। এসে অফিসের জন্য রেডি হয়ে নিলাম কারণ আজকে আমি অফিস যাবো, শুধু আজ নয় এখন থেকে প্রতিদিন আমি অফিস যাবো। ওনার সাথে সারাটাদিন থেকে বোঝাবো আমি ওনাকে ভালোবাসি।

রেডি হয়ে অফিসের জন্য বেড়িয়ে পরলাম। অফিসে প্রবেশ করতেই সব স্টাফেরা ভয় ভয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে মর্নিং উইশ করতে লাগলো আর আমি হেসে তাদের উত্তর দিতে থাকলাম। সবাই অবশ্য এতে বেশ অবাক হচ্ছেন কারণ আমি কোনদিন অফিসে হাসতাম না স্টাফেদের সামনে, সবসময় রাফ অ্যান্ড টাফ হয়ে থাকতাম। আমি এম.ডি.র কেবিনের দিকে এগোচ্ছি ঠিক তখন একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে যথেষ্ট বিরক্ত হয়ে ওর দিকে তাকালাম আর ও সঙ্গে সঙ্গে “স্যরি” বলে উঠলো। আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনই আমার চোখের সামনে একটা ঘটনা ভেসে উঠলো।

আমান বসে দরকারি কাজ করছিলেন আর সেই সময় বাসার কাজের লোক আমান কে কফি দিতে গিয়ে হোঁচট খায় আর কফিটা আমানের গায়ে পরে যায় আর কিছুটা কাগজে পরে যায়। কাজের লোক সঙ্গে সঙ্গে আমানের পা জড়িয়ে ধরে বলে।

— বাবু আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি বুঝতে পারিনি। আজ আমার শরীরটা ভালো ছিলো না তাই মাথা ঘুরে যায় আর হোঁচট খেয়ে আপনার গায়ে….

কাজের লোকের কথা শেষ হওয়ার আগেই আমান ওনাকে তুলে সোজা করে দাঁড় করিয়ে ঠান্ডা ভাবে বলেন।

— আরে চাচা এতো ভয় পাচ্ছো কেন? আর আমার থেকে বয়সে বড়ো হয়ে তুমি আমার পা ধরছো? মাথা ঠিক আছে তো তোমার? আমি কিন্তু ভীষণ রাগ করেছি তোমার উপর।

— আর এমন হবে না বাবু।

— উফফ একদম বাবু নয়। আমাকে নাম ধরে ডাকবে তুমি নিজের ছেলে কে যেমন ডাকো আর আপনি নয়, তুমি বলবে। আমি কি তোমার ছেলে নই?

— এসব কি বলছো বাবা। তুমি তো আমার ছেলের মতোই।

— তাহলে ছেলেকে নিজের অসুস্থতার কথা জানাওনি কেন? যাও তুমি ঘরে গিয়ে রেস্ট নাও এক পা বেড়াবে না ঘর থেকে আমি ডক্টর কে ফোন করে আসতে বলে দিচ্ছি।

— এসবের কি দরকার ছিল…

— আহ! ছেলের কথার অমান্য করতে নেই। যাও তুমি।

— কিন্তু তোমার কাজের ক্ষতি হয়ে গেলো তো।

— ও আমি ম্যানেজ করে নেবো। আর এ কি? চোখে পানি কেন? তোমার চোখের পানি তোমার ছেলে সহ্য করবে না কথাটা জানো মাথায় থাকে।

আমি সেদিন অবাক হয়ে আমান কে দেখছিলাম। আজ ওর জায়গায় আমি হলে কখন ওই কাজের লোককে দুর করে দিতাম বাসা থেকে, চিৎকার করে বাসা মাথায় তুলতাম। আর উনি? কতো সুন্দর বুকে টেনে নিলেন।

— ম্যাডাম! ম্যাডাম প্লিজ আমাকে ফায়ার করবেন না। আমার ভুল হয়ে গেছে। আই অ্যাম এক্সট্রিমলি স্যরি ম্যাডাম। প্লিজ ফরগিভ মি, প্লিজ ম্যাডাম!

স্টাফ মেয়েটির কথায় আমার ঘোর কাটলো, আমি মেয়েটির কাঁধে দু-হাত রেখে বললাম।

— ইটস ওকে। ভুল হতেই পারে। সামান্য ধাক্কার জন্য আমি কোনদিনই আপনাকে ফায়ার করতাম না।

— থ..থ্যাংক ইউ ম্যাডাম।

— আপনাদের সকলকে আমার কিছু কথা বলার ছিলো। আপনারা সবাই নিশ্চয় জানেন আমি ১ মাস হলো অফিসে আসছি না কিন্তু আজ থেকে ডেইলি আসবো। আর হ্যাঁ! প্লিজ কেউ এভাবে ভয়ে ভীত হয়ে থাকবেন না, আমি কোনো বাঘ-ভাল্লুক নই। এছাড়া আপনাদের এম.ডি. তো মিস্টার আমান খান। সে ছাড়া কেউ আপনাদের কিছু বলতে পারবে না।

— ম্যাম আপনার হাসবেন্ড তো উনি?

আমি স্টাফটির কথা শুনে তাচ্ছিল্য হেসে উত্তীর দিলাম।

— হ্যাঁ। ওনার কথাই শেষ কথা এই অফিসে। আপনারা সবাই কাজ করুন আমি ওনার কেবিনে যাচ্ছি।

আমি ওনার কেবিনের দিকে এগোতেই ওনার পি.এ. আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন।

— ম্যাম একটা কথা ছিলো।

— হ্যাঁ বলুন।

— আসলে স্যার না আজকে অফিসে আসতেই একটা মেয়ে আসেন আর উনি তার সাথে বেড়িয়ে যান। বললেন আজ জানো আমি সব মিটিং অ্যাটেন্ড করে ফেলি।

— মেয়ে? কি নাম কিছু জানেন?

— স্যার ওনাকে “নীহা” বলে সম্বোধন করে ছিলেন তখনই শুনতে পেয়েছি।

— আচ্ছা। আজ মিটিংগুলো আমি অ্যাটেন্ড করবো ওকেই?

— ওহ ওকে ম্যাম।

আমান নীহার সাথে বেড়িয়ে গেছে? নাহ আমাকে খোঁজ নিতে হবে ওরা কোথায় গেছে। আমি মেসেজ করে দিলাম সুমি কে ব্যাপারটা। মিটিংগুলো শেষ করে আমি খবর নেবো উনি কোথায় গেছেন।

?
?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে