ভালোবাসি_শুধু_তোমায় পর্ব-১৬

0
2523

#ভালোবাসি_শুধু_তোমায় ?❤
#পর্ব : ১৬
#লেখিকা : Aye Sha (Koyel Banerjee)

” আমান কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমাকে এভাবে চোখ বেঁধে পড়ে যাবো তো আমি ”

আজকে সকালে হঠাৎ করেই আমান আমাকে বলে যে আমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাবে। কিন্তু কোথায় নিয়ে যাবে তার নাম বললো না। জিজ্ঞেস করতেই বলল সারপ্রাইজ। কি আশ্চর্য! এখন যেই গাড়ি থেকে নামলাম অমনি আমার চোখ বেঁধে দিলো, এভাবে চোখ বেঁধে যে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আল্লাহ জানেন। আমি প্রশ্ন করায় আমান বিরক্ত হয়ে বললো,

— চুপ করে আমার কথা মত চলো। আমাকে কি ভরসা করো না নাকি?

— না তা নয় কিন্তু এই দিনের বেলা চোখ বন্ধ করে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো এটাই তো বুঝতে পারছি না।

— কিছুক্ষণের মধ্যেই সব বুঝতে পারবে।

আমানের কথা শুনে আমি হতাশ হয়ে আমানের হাত ধরে ও যেভাবে নিয়ে যাচ্ছে সে মতই চলতে লাগলাম চুপ করে। কিছুক্ষণ পর আমান আমাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। আমি আমানের দিকে মুখ ঘুরাতেই আমান আমার কানে কানে বললো,
— চোখ কিন্তু খুলছি। আস্তে আস্তে চোখ খুলবে।

আমার নাম আর চোখ খুলে দিতেই আমি আস্তে আস্তে চোখ খুললাম আরেকটু চোখ পিটপিট করে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলাম বড় বড় করে লেখা ” চৌধুরী অ্যান্ড খান গ্রুপ অফ কোম্পানি। ” আমি আমান কে জিজ্ঞেস করলাম,

— এটা তো তোমার অফিস। কিন্তু তোমার অফিসের নাম তো ছিল খান গ্রুপ অফ কোম্পানি। এখন চৌধুরী অ্যান্ড খান গ্রুপ অফ কোম্পানি লেখা কেন?

— এই প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে তো ভেতরে যেতে হবে। আমিও বুঝতে পারছি না কেন খান গ্রুপ অফ কোম্পানি থেকে চৌধুরী গ্রুপ অফ কোম্পানি হয়ে গেল কোম্পানির নাম। চলো ভিতরে চলো, দেখি কি ব্যাপার।

— আমি কেন যাবো? এখানে তো তুমি কাজ করো আর প্রজেক্ট তো শেষ কত দিন আগেই। আমি এখন গিয়ে কি করবো আমান?

— আমি যেতে বলেছি তাই যাবে। আমাদের বস তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছে।

— তোমাদের বস আমার সাথে কেন দেখা করতে চেয়েছে? কোনো নিউ ডিল?

— তুমি কি বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব কিছু জিজ্ঞেস করে ফেলবে? ভিতরে যাবে না? আমি যখন বলেছি বস দেখা করতে চেয়েছে তখন চলো না দেখা করে আসি।

— আচ্ছা চলো।

আমি আমানের সাথে ভিতরে ঢুকলাম আমি আগেও একবার এই কোম্পানিতে এসেছি এখন স্টাফ সিলেকশন করার ব্যাপার ছিল। কিছুই চেঞ্জ হয় নেই কোম্পানির মধ্যে। আমি আর আমার এগিয়ে যাচ্ছি বসের কেবিনের দিকে তখন কোম্পানির মালিক এসে আমাদের সামনে দাঁড়ালো যার সাথে এ প্রজেক্ট ডিল করেছিলাম আমি উনাকে দেখেই আমি হেসে জিজ্ঞেস করলাম,

— হ্যালো মিস্টার আহমেদ? হাউ আর ইউ ডুইং?

— আই অ্যাম ফাইন! হোয়াট এবাউট ইউ ম্যাডাম?

মিস্টার আহমেদের মুখে ম্যাডাম শুনে একটু অবাক হলাম। যখন প্রজেক্ট একসাথে কাজ করেছিলাম তখন উনি আমাকে মিস চৌধুরী বলতেন কিন্তু আজ হঠাৎ ম্যাডাম কেন বললেন বুঝতে পারলাম না। তবুও ওনাকে আমার মনের সংশয় বুঝতে না দিয়ে উত্তর দিলাম,

— আই অ্যাম অলসো ফাইন! আচ্ছা আপনি আমার সাথে দেখা কেন করতে চেয়ে ছিলেন?

উনি আমার প্রশ্নে একবার আমানের দিকে তাকালেন তারপর হেসে উত্তর দিলেন,

— আপনি বসের কেবিনের দিকে এগিয়ে যান ওখানে উত্তর পেয়ে যাবেন।

আমি একটু অবাক হলাম মিস্টার আহমেদের উত্তরে। উনি আমানের দিকে তাকালেন কেন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে? আর আমানও কেমন যেন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কি জানি বাবা কিছুই তো বুঝতে পারছি না আমি। আমান আমাকে ডেকে বললো,

— কি ভাবছো মীরু? চলো যাবে না?

— হ..হ্যাঁ চলো।

আমি আমানের সাথে এগিয়ে গেলাম কোম্পানির এম.ডি.-র কেবিনের দিকে। কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখলাম কেউ নেই, কেবিন ফাঁকা। আমান আমাকে পিছন থেকে বললো,

— সিট!

আমি আমানের দিকে তাকিয়ে বললাম,

— মিস্টার আহমেদ তো এখনও আসেনি আমান। আর ওনার পারমিশন ছাড়া বসাটা কি ঠিক হবে?

আমান আমার প্রশ্নে শুধু হাসলো। হাসার কারণ বুঝতে পারলাম না আমি তার আগেই আমান আমায় ধরে সিটে বসিয়ে দিলো আর নিজে টেবিলের উপর বসলো। আমি ওকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই আমার চোখ গেলো টেবিলে রাখা নেইম প্লেটের দিকে। ওখানে লেখা ” মিস্টার আমান খান “। আমি হতবাক চোখে আমানের দিকে একবার তাকাচ্ছি আরেকবার নেইম প্লেটের দিকে তাকাচ্ছি। আমার এমন অবস্থা দেখে আমান জোরে হেসে ফেললো। আমি ওর মুখের দিকে অসহায় চাহুনী নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

— এসবের মানে কি? বুঝতে পারছি না তো কিছু।

আমান আমাকে উঠে দাঁড় করালো তারপর নিয়ে গিয়ে এম.ডি.-র চেয়ারে বসিয়ে দিলো। তারপর আমার সামনে টেবিলে বসে বললো,

— এই কোম্পানিটা আমাদের। আগে শুধুমাত্র আমার ছিলো তাই নাম ছিলো “খান গ্রুপ অফ কোম্পানি”। এখন কোম্পানি টা আমাদের তাই নাম চেঞ্জ করে হয়েছে ” চৌধুরি অ্যান্ড গ্রুপ অফ কোম্পানি”।

— তুমি এসব কিভাবে…??

— সাড়ে তিন বছরে নিজের পরিশ্রমে দাঁড় করিয়েছি। আমার সাথে নীল ও অনেক পরিশ্রম করেছে সঙ্গে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রুহান তো আছেই। ও আমার বিসনেস পার্টনার। আর মিস্টার আহমেদ হলো আমার পি.এ.। আমি জানতাম প্রজেক্ট তোমার কোম্পানির সাথে হচ্ছে তাই মিস্টার আহমেদ কে মিথ্যে বলতে বলেছিলাম। সব সাজানো ছিলো, আমি দেখতে চেয়েছিলাম সাড়ে তিন বছরে তোমার কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না।

— তাই বলে এতো বড় মিথ্যে আমান?

— উপায় ছিলো না জান! এবার বলো সারপ্রাইজ টা কেমন লাগলো?

— হুহ!

— কি হলো?

আমান আমাকে দু-হাত ধরে দাঁড় করিয়ে নিজের কাছে টেনে কোমর জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো,

— কথা বলবে না ঠিক করেছো?

— হু।

— কতক্ষণ?

— জানি না।

আমান টুপ করে আমার কথা শেষে গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতেই আমি সরে আসতে চাইলাম। কিন্তু পারলাম না। মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বললাম,

— ছাড়ো আমায়।

আমান আমাকে আরো কাছে টেনে বললো,

— নাহ এখন তো ছাড়া যাবে না।

— কেন? এটা অফিস আমান। ছাড়ো আমায়।

— আচ্ছা? এটা অফিস আর তোমার অফিস কি অফিস ছিলো না? তুমি আমায় কম জ্বালাতন করেছো নিজের অফিসে নিয়ে গিয়ে?

— উফ! ওটা তো আমার অফিস ছিলো।

— হমম এটাও তো তোমার আর তোমার বরের অফিস। আমি যা খুশি করতে পারি। আমার বলার আগে কেউ আসবে না আগে।

— কিন্তু আমান! আমার তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করার ছিলো।

— কি জিজ্ঞেস করার আছে করো? আমি কি উত্তর দেবো না বলেছি?

— না আসলে…

— বলো, হেয়ালি করবে না।

আমি আমানের শার্টের বোতাম নাড়াচাড়া করতে করতে আমতা আমতা করে বললাম,

— ন..নীহার কি খবর? ও কোথায় আছে আমান?

আমানের চোখের দিকে তাকাতেই রাগ দেখতে পেলাম। তাই আমান কে শান্ত করার জন্য বললাম,

— আসলে ওর কোনো খোঁজ তুমি দাওনি তাই জিজ্ঞেস করলাম। ও যা করেছে তার জন্যে আমি ওকে কোনদিন ক্ষমা করতে পারবো না।

— তুমি ক্ষমা করে দিলেও আমি দিতাম না। ওর জন্যে আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি। তোমার ফুপি আর নীহা যেই ভুল করেছে তার শাস্তি ওরা পাচ্ছে।

আমান দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বলায় আমি পারলাম না আর কিছু জিজ্ঞেস করতে। চুপ করেই রইলাম। কিছুক্ষণ পর আমান নিজেকে স্বাভাবিক করে আমার হাত ধরে টেবিল থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

— চলো।

— কোথায় যাবো এখন?

— আজ আমরা সারাদিন ঘুরবো। ওকেই?

— ওহ তো এই জন্য আজ অফিস আউটফিটে আসোনি তুমি?

— কারেক্ট বেবস!

আমি আমানের কথা শুনে হেসে ফেললাম। এরপর আমরা দুজন বাইরে বেরিয়ে গেলাম। অফিসের স্টাফদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর আমান আমাকে নিয়ে অফিস থেকে বেরোতেই দেখলাম একটা রেড ভেলভেট কালারের মার্সেডিস দাঁড়িয়ে। আমি বড় বড় চোখ করে দাঁড়িয়ে রয়েছি। আমান আমাকে একটু ধাক্কা দেওয়ায় আমি একটা ঢোঁক গিলে আমান কে জিজ্ঞেস করলাম,

— এটাও তোমার?

— উহুম! আমাদের।

আমান কথাটা বলে চোখ টিপ দিলো আমায়। হায় আল্লাহ! আমার বরটা তো ছুপা রুস্তাম বের হলো। এতো কিছু একদিনে হজম হবে না মনে হচ্ছে আমার।

— চলো বেবস! দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই।

আমান আমাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো, আর নিজে ড্রাইভ করতে করতে কি করে এতো কিছু করলো তা বলতে শুরু করলো এক এক করে।

?
?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে