ভালোবাসি_শুধু_তোমায় পর্ব-১৫

0
2856

#ভালোবাসি_শুধু_তোমায় ?❤
#পর্ব : ১৫
#লেখিকা : Aye Sha (Koyel Banerjee)

” আমি তোমার সাথে একসাথে থাকতে পারবো না মীরা। আমাকে ক্ষমা করো, আমার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। আমাদের আলাদা থাকাটাই বেটার। ”

আমি ভাবতেই পারিনি আমান এভাবে কথাটা বলবে আমাকে। আমার মনটাই ভেঙ্গে গেলো আমানের এরূপ কথায়। কেন? কেন আমান বারবার এভাবে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করো তুমি? আমি মাথা নিচু করে আমানকে জিজ্ঞেস করলাম,

— তুমি থাকতে পারবে তো আমাকে ছাড়া?

আমান কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাথা নিচু করে উত্তর দিলো,

— জানি না।

— কেন জানো না? বেশ তো জোর গলায় বললে “আমি তোমার সাথে একসাথে থাকতে পারবো না।”

— তাহ আমি কি করতাম? তুমিই তো রাজি হচ্ছো না। আমি থাকতে চাই না ওই বাসায়।

— আমার বাসা কি তোমার বাসা নয়?

— নাহ। না আমি তোমার বাসায় থাকবো আর না তোমার কোম্পানি তে জব করবো। এসব কিছুই আমি করেছিলাম বাধ্য হয়ে। ওই তালিকায় একটা ডিল ছিলো যা কালকে শেষ হয়ে গেছে। তুমি থাকো তোমার বাসায় আর আমি আমার বাসায় থাকবো। আমি বাঁচলাম না মরলাম তা নিয়ে ভাবতে হবে না তোমায়।

— আহ আমান! কি সব বলছো তুমি এগুলো?

আমান আমার কথার উত্তর না দিয়ে গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। আমিও বেডে বসে রইলাম চুপ করে আমানের দিকে তাকিয়ে। বেশ হাসি পাচ্ছে আমান কে দেখে, কি সুন্দর বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে বসে আছে। আমি ভুলবশত জোরে হেসে ফেলতেই আমান আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো আর আমার হাসি ফুস! আমি সঙ্গে সঙ্গে মুখে আঙুল দিয়ে বসতেই আমান আমাকে ধমকে বললেন,

— খুব হাসি পাচ্ছে তাই না? তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না তাই এভাবে হাসছো তাই না? ফাইন! হাসো, বেশি করে হাসো।

কথাটা বলে আমান চলে যেতে নিলে আমি আমানের হাত টেনে ধরে আবার ওকে আমার পাশে বসালাম। আমান বসলো ঠিকই কিন্তু আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে। আমি ওর মুখ নিজের দিকে ফিরিয়ে বললাম,

— তোমার মনে হয় তোমার কষ্টে আমি হাসবো? আর শুধু তোমার কষ্ট হবে আমাকে ছেড়ে থাকতে? আমার কষ্ট হবে না?

আমার প্রশ্নে আমান চুপ করে রইলো। আমি হেসে ওর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বললাম,

— আমি তোমার সাথে তোমার বাসায় থাকবো আজ থেকে। আমার আব্বুর সম্পত্তির কোনো অংশ তোমাকে ব্যবহার করতে বলবো না। আমার স্বামীর উপার্জনেই আমি চলবো। খুশি?

আমান হেসে আমাকে জড়িয়ে ধরলে আমিও আমান কে জড়িয়ে ধরি। ঠিক সেই সময় অর্নিল আর ইসমি দরজায় নক করে আর আমি আমান কে ছেড়ে সোজা হয়ে বসি। আমান অর্নিল কে ভিতরে ডাকতেই অর্নিল আর ইসমি ভিতরে এলো আর এসে বললো,

— ভাবীর ডিসচার্জ হয়ে গেছে ভাই। আজকেই আমরা ভাবী কে বাসায় নিয়ে যাবো তো?

আমান হেসে অর্নিল কে উত্তর দিলো,

— হমম শুধু তোর ভাবী কে নিয়ে যাবো না, তোর বউ ও যাবে।

সুমি আমানের কথা শুনে সামাম্য লজ্জা পেয়ে আমতা আমতা করে বললো,

— আব, জ..জিজু আমি কেন?

— কারণ তুমি আমার শালীকা। এতদিন তো শালীকার খাতির-দারি করতে পারিনি তাই এখন করার চেষ্টা করবো। কি বলো?

সুমি হেসে আমান কে উত্তর দিলো,

— আচ্ছা। আমি নিশ্চয় যাবো কিন্তু থাকবো না।

— যো আপকি মার্জি শালী সাহেবা।

এরপর আমরা সবাই বেরিয়ে পড়লাম আমানের বাসার উদ্দেশ্যে। আমান গাড়ি থামালো খুব সুন্দর একটা একতলা বাড়ির সামনে। বাসার আশে পাশে রয়েছে সবুজ বাগানের মতো যেখানে অনেক রকমের ফুলের টব বসানো। আমি বাসাটা দেখছিলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তখনই আমান আমাকে বললো,

— মীরু!? যাবে না ভিতরে?

আমি থতমত খেয়ে গেলাম আচমকা কথা আমানের প্রশ্নে, উত্তর দিলাম,

— হ্যাঁ চলুন।

আমান আমার কথা শুনে কিছুটা রেগে বললেন,

— কি বললে?

আমি ওনার রাগের কারণ বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে নিজের ভুল শুধরে বললাম,

— চ..চলো, অর্নিল আর সুমি তো এগিয়ে গেলো।

আমান সামান্য হাসলো আমার উত্তরে, এরপর আমানের বাসায় প্রবেশ করে প্রথমেই সালাম করলাম আম্মু কে। আম্মু আমাদের দু-বোন কে পুরো বাসাটা ঘুরে দেখতে বললো। সুমি তো সঙ্গে সঙ্গে পিছনের বাগানে চলে এলো। বাসার পিছনে যে বাগান রয়েছে সেখানে অনেক বড় গাছ আছে আর গাছের মধ্যে অনেক পাখি বসে আছে। পাখি গুলো কিচিরমিচির করছে। পিছন দিকে যে ফুলের টবগুলো আছে তা ঘিরে অনেক প্রজাপতি উড়ছে। ব্যাস! সুমি কে আর কে দেখে? সুমি প্রজাপতি নিয়ে খেলা করতে ব্যস্ত হয়ে পরলো বাচ্চাদের মতো। আর আমি পাখির কিচিরমিচির ডাক শুনতে শুনতে পাশে রাখা দোলনা তে বসে পরলাম। সত্যি! কি সুন্দর এখানকার পরিবেশটা। আমাদের বড়ো ওই রাজপ্রাসাদে থেকে এরকম সুন্দর অনুভূতি হয় না। আমাদেরও তো বাগান ছিলো, তাতে ফুলের টব ফল গাছ ছিলো কিন্তু কই? এখন যেই ভালোলাগাটা কাজ করছে তা তো কক্ষনো করেনি। আমি এসবই ভাবতে লাগলাম বসে বসে, হিসেব মিলাতে লাগলাম আমার জীবনের।

অন্যদিকে,

— কি রে? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বউ কে দেখছিস? নীল! তুই তো এমন ছিলি না ভাই আমার। যেই তুই কি না মেয়ে দেখলে উল্টো দিকে হাঁটা মারতিস আর আজ সেই তুই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাও আবার লুকিয়ে একটা মেয়ে কে দেখছিস। তোর এই অবস্থা দেখে আমার একটা গানের লাইন মনে পরছে, “ক্যায়া সে ক্যায়া হো গায়া দেখতে, দেখতে।”

কথাগুলো বলার পর আমান হেসে ফেললো, অর্নিল রেগে না গিয়ে সামান্য হেসে আমানের উদ্দেশ্যে বললো,

— ওর জন্যেই তো মেয়েদের দেখলে উল্টো দিকে হাঁটা দিতাম আমি।

আমান হাসি থামিয়ে অবাক হয়ে অর্নিল কে জিজ্ঞেস করলো,

— মানে?

অর্নিল আমানের রিয়াকসন দেখে হাসলো,

— তোকে যেমন ছবি দেখিয়েছিল ভাবীর তেমন আমাকেও তো দেখিয়েছিল। তুই যেমন ছবি তে দেখেই ভাবী কে ভালোবেসেছিস তেমন আমার ক্ষেত্রেও তাই। ভাই তুই তো ভালো ভাবেই জানিস আমি মনের কথা খোলামেলা ভাবে বলতে পারি না। তাই এসব কোনদিন বলিনি। আর সেটাই শেষে কাজে এলো, আমি ভালো ভাবেই জানি তুই যদি জানতিস আমি ইসমি কে ভালোবাসি তাহলে কোনদিনই ওকে দুরে সরিয়ে রাখতে দিতিস না। তুই যেই কষ্টটা পাচ্ছিলিস ভাবী কে দুরে সরিয়ে রেখে সেটা আমাকে পেতে দিতিস না। কিন্তু আমি চাইনি ভাবী কে আর তোকে যেভাবে ওদের ফুপি ইউস করেছে তেমন আমাকে আর ইসমি কে করুক। ইসমি আমার কথা তোরা যেই বাসাতে ছিলিস সে বাসায় গিয়ে শুধু ভাবী কে বলতো। তাই ফুপি জানতেও পারেনি।

— আমার ছোট্ট ভাইটা দেখছি অনেক বড় হয়ে গেছে। কিন্তু একটা জিনিস আমি ভাবছি।

— কি ভাবছিস ভাই?

আমান অর্নিলের কাঁধে হত রেখে বললো,

— ভাবছি! যদি ইসমি মীরার থেকে চার মিনিটের বড় না হয়ে চার বছরের বড় হতো তাহলে তো ইসমি বয়সে আমার থেকেও বড় হয়ে যেতো কারণ আমি তো মীরুর থেকে তিন বছরের বড়। আমি যদি ছোট হতাম তাহলে তো তুইও ছোট হতিস তখন কি হতো তোর?

আমান কথা শেষ করে হাসতে হাসতে লাগলো নিজের পেট ধরে এদিকে অর্নিল দাঁড়িয়ে দাঁড়িতে দাঁত কিড়মিড় করছে। সব শেষে থাকতে না পেরে বললো,

— অমন কিছু হয় তো নি? ভাবী তোর থেকে তিন বছরের ছোট আছে আর ইসমি আমার থেকে দু-বছরের। সব তো ঠিকই আছে তাহলে তুই এতো কথা বারাচ্ছিস কেন হুহ!?

অর্নিল রেগে মুখ ফিরিয়ে নিলো এদিকে আমান কোনমতে হাসি থামিয়ে বললো,

— ব্যাপারটা বালিকা বাধু থেকে বালিক পতি হয়ে যেতো।

আমান আবারও হাসতে শুরু করলো। অর্নিল রেগে গেলেও কিছুক্ষণ পর আমানের কথাগুলো মনে মনে রিপিট করে হেসে ফেললো। তারপর আমান কে বললো,

— ভাই! আজ দীর্ঘ চার বছর পর তোকে এভাবে হাসতে দেখলাম। ভীষণ ভালো লাগছে জানিস?

আমান নিজের হাসি থামিয়ে অর্নিল কে বললো,

— কষ্টের সাথে লড়াই করেছি বলেই তো শেষ হাসিটা আমিই হাসলাম।

আমানের কথা শুনে অর্নিল হেসে দু-হাত ভাঁজ করে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ইসমি আর মীরার দিকে তাকিয়ে আমান কে জিজ্ঞেস করলো,

— ভাই? আমি জানি, আমার পুরো বিশ্বাস আছে ইসমি এখানে মানিয়ে নেবে। কারণ ও প্রথম থেকেই গরিবদের সাথে মিশতে জানে, কোনো অহংকার ওর মধ্যে নেই কিন্তু ভাবী…??

আমান অর্নিলের প্রশ্নে বাঁকা হেসে পকেটে দু-হাত গুঁজে সামনে মীরার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো,

— আমার মীরুর মধ্যে এখন আর কোনো অহংকার তুই দেখতে পাবি না। আমি ছেড়ে যাওয়ার পর সাড়ে তিন বছরে ও অনেক পালটে ফেলেছে নিজেকে যা আমি এই ছয় মাসে বুঝে গেছি। তুই জানিস ও এখন ওখানে বসে বসে কি ভাবছে?

— কি ভাবছে ভাবী?

— ভাবছে, ও কেমন মানুষ ছিলো আর এখন কেমন হয়ে গেছে। আগের মীরা চৌধুরি আর এখন মীরা খানের মধ্যে কতটা তফাত তার হিসেব করছে। ভাবছে, কেন চার বছর আগে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল? কেন অবিশ্বাস করেছিল? যদি সেদিন অবিশ্বাস না করতো তাহলে কি আজকের পরিস্থিতি কেমন হতো আজ যে ওর ফুপির সত্য সামনে এসেছে এতটা জটিলতা, কষ্টের মাধ্যমে তা কি সোজাসুজি চলে আসতে পারতো না? কিংবা হয়তো সেদিন আমায় বিশ্বাস করলে ওর ফুপির সত্য কনফিং সামনেই আসতো না কারণ আমাকে ওর ফুপি ব্যবহার করতে পারত না সেই সময়। এই ভাগ্যের মারপ্যাচ নিয়ে ভাবতে বসেছে আমার মীরু।

— তুই কি করে জানলি এত কিছু? ভাবী কি তোকে এসব বলে ভাবতে বসেছে নাকি?

আমান পকেট থেকে একহাত বাড় করে মীরার দিকে ইশারা করে অর্নিল কে বললো,

— ওই মেয়েটা আমার জীবন! ও আমার হৃদয়, আমার মস্তিষ্ক, আমার সমস্ত চিন্তা-ভাবনা জুড়ে বিরাজ করে। আমার প্রত্যেকটা হার্টবিট কারণ ও। ওর কথা ভেবেই নিজেকে সাড়ে তিন বছর সামলে রেখেছি, ছয় মাস ধরে ওকে ফিরে পাবার চেষ্টায় লড়েছি আর তুই বলছিস ও কি ভাবছে সেটা কি করে জানলাম? যে মেয়েটা আমার অস্তিত্ব তাকে আমি জানবো না তো কে জানবে? তুই যদি এখন মীরু কে জিজ্ঞেস করিস আমি কি ভাবছি? আমার মাথায় কি চলছে? ও সেটা আমার মুখ দেখেই বলে দেবে যেমনটা আমি বললাম কারণ…

আমান কে থামিয়ে দিয়ে অর্নিল বললো,

— ভাবীর হৃদয়, মস্তিষ্ক জুড়ে শুধু তুই আছিস ভাই। ভাবী যেমন তোর অস্তিত্ব, তুইও ভাবীর অস্তিত্ব! তোরা একে অপর কে ছাড়া অসম্পূর্ণ।

— আমাদের মতো তুই আর ইসমিও একে অপরের পরিপূরক।

__এত কি গভীর আলোচনা করছো তোমরা দুই জোড়া বলদ?

আমি আর সুমি বাগান থেকে উঠে বাসায় ঢুকব তখন দেখি আমান আর অর্নিল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। সেই দেখে আমি আর সুমি হাসলাম। ঠিক করলাম দুজন কে একটু খচাবো। তাই আমি ওদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলাম। প্রশ্নটা শুনে আমান আর অর্নিল দুজনেই ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলো। আমান আর অর্নিল রেগে বললো,

— এই মীরু তুমি কি বললে?

— আ..আমরা বলদ?

অর্নিলের প্রশ্নের উত্তর হিসেবে সুমি বললো,

— তা নয়তো কি? যখন থেকে তোমাদের পরিচয় জানলাম তখন থেকে একে অপরের সাথে চিপকে রয়েছো। যেমন জোড়া বলদরা থাকে। যেখানে যায় একসাথে যায়।

সুমির কথা শেষ হতেই আমি আর ও হাই-ফাই দিয়ে হাসতে লাগলাম। এদিকে আমান আর অর্নিল রাগে ফুঁসছে। রেগে-মেগে হনহনিয়ে ঘরে চলে গেলো দুজন। সেটা দেখে আমরা আরো জোরে হেসে উঠলাম। আমাদের হাসি শুনে আম্মু বেরিয়ে এলেন আর আমাদের জিজ্ঞেস করলেন “কি হয়েছে?” আমরা সবটা বলতেই উনি সামান্য হাসলেন আর আমাদের বললেন,

— ঠিকই বলেছো তোমরা। ওরা দুই-ভাই সব সময় যেখানে যায় একসাথে যায়। যে কাজ করে একসাথে মিলে মিশে করে। ছোট থেকেই অর্নিল আমানের বাধ্য। ওদের বয়সের পার্থক্য মাত্র ১ বছর হওয়ায় অর্নিল ছোট বেলায় ভাইয়া বলতে চাইত না। পরে বড় হওয়ার পর যখন বন্ধুদের দেখলো তাদের বড় ভাই কে ভাইয়া বলতে তবে থেকে আমান কে “ভাই” বলা শুরু করলো। প্রথম থেকে তো আমানের সব কথা শুনতই এরপর থেকে আরো বেশি বাধ্য হয়ে গেছিলো। আমার আর ওদের আব্বুর কথার থেকেও ওর কাছে ভাইয়ের কথা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অর্নিল যেমন ভাইয়ের বাধ্য তেমন আমানও নীল বলতে অজ্ঞান। নীলের যদি গায়ে এক ফোঁটা আচরও লাগে তো সারা বাসা মাথায় করে ফেলবে চিৎকার করে। আমি বা ওর আব্বু নীল কে বকতে পারবে না, এমনকি কেউ নীল কে বকতে পারবে না ও ছাড়া। যে বকবে তার অবস্থা খারাপ। আমাদের কথায় যদি নীল মন খারাপ করে তাহলে যতদিন না নীলের মন ভালো হবে ততদিন আমাদের সাথে কথা বলতো না আমান।

আমি আর সুমি আম্মুর কথা শুনে অবাক। কি টান দুই-ভাইয়ের। একে অপর কে ছাড়া এক পা চলে না। ওদের কথা শুনে আমার সুমির নিজেদের কথা মনে পরে গেলো। আমি আম্মু কে বললাম,

— জানেন আম্মু আমি আর সুমি এমনই ছিলাম ছোট..

আম্মু আমাকে থামিয়ে বললেন,

— আপনি না তুমি করে বলবে। আজ থেকে আমি তোমার মা। ইসমি! তুমিও আমাকে আম্মু বলবে কারণ আর কদিন পরেই তোমাকে এ বাসায় ছোট বউ হিসেবে নিয়ে আসবো আমি।

সুমি আর আমি দুজনেই মাথা নাড়লাম। আম্মু আমাদের ঘরে নিয়ে এসে বেডে বসে বললেন,

— আয়! এবার আমার কাছে এসে তোদের সব গল্প বল শুনি আমি।

আমি আর সুমি হেসে আম্মুর কাছে বসে আমাদের ছোটবেলার গল্প বলতে লাগলাম,

— জানো আম্মু সুমি ছোট থেকেই আব্বু-আম্মুর কথা শুনত কিন্তু আমি একটুও শুনতাম না।

— হ্যাঁ তাই তোর করা দোষ গুলো আমাকে ঘাড়ে নিয়ে বকা খেতে হতো।

— হিহি, তুই আমার থেকে চার মিনিটের বড় তাই এটা তো আপুর কর্তব্য।

— আহাহা! এখন চার মিনিটের বড়র অজুহাত তাই না?

— হুহ! জানো আম্মু, আব্বু আর আম্মু আমাকে কোনদিন কোনো কষ্ট পেতে দেয়নি। সুমিও সব সময় আমাকে সেভ করতো সব কিছুর থেকে তাই কোনদিন কষ্ট কি জিনিস বুঝিনি, আবার এতো ভালোবাসা পেয়ে ভালোবাসার মূল্য বুঝতে পারিনি। তাই তো তোমার ছেলে কে কষ্ট দিয়েছি কতো। আমি খুব খারাপ।

আমার চোখে পানি টলমল করছে, যখনই আগের কথা মনে পরে তখনই নিজের উপর রাগ ওঠে। আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকে টেনে নিয়ে বললো,

— নাহ মা তুই খারাপ নস। তুই খারাপ হলে আমার ছেলে তোকে এতটা ভালোবাসতে পারতো না। বুঝলি? আর কোনদিন এসব বলবি না, নিজেকে দোষারোপ করবি না। আমান জানলে কিন্তু খুব বকা দেবে।

আমি আর বেশি কিছু না বলে গল্প করতে শুরু করলাম, গল্পের মাঝে সুমি আম্মুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরেছে। গল্প শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই।

আমান আর অর্নিল আম্মুর ঘরে ঢুকেই দেখে মীরা আম্মুর বুকে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে আর ইসমি কোলে মাথা রেখে। আম্মু দু-হাত দিয়ে দুজনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে দুজনের ঠোঁটেই হাসির রেখা ফুটে উঠলো। আম্মু ইশারায় ওদের চলে যেতে বললো সেই দেখে অর্নিল বললো,

— আজ আমাদের আম্মু কে দখল করে নিয়েছে ভাই। চল এখান থেকে নাহলে আম্মুর কিল খেতে হবে ওদের ঘুম ভাঙলে।

আমান হেসে বললো,

— অনেকদিন পর ওরা মায়ের আদর পেয়েছে। চল আমরা দুই ভাই ঘুমাবো আজ অনেকদিন তো আমরাও একসাথে ঘুমাই না।

— মজা হপ্পে!

— নাহ ভাই! মীরু জানতে পারলে আমার রক্ষে থাকবে না।

— কি ভাই এতো কেন ভয় পাচ্ছিস? চল তো অনেক দিন পর খাবো একসাথে, কুছ নাহি হো গা। মেইন হুন না!?

আমান বিড়বিড়িয়ে বললো,

— উসি কা তো ডার হেইন।

— কি বললি?

— কই কিছু না তো। হিহি, চল।

আমান আর অর্নিল চলে গেলো নিজের নিজের ঘরে। কিছুক্ষণ বাদে অর্নিল নিজের ঘর থেকে কিছু একটা নিয়ে হাঁটা ধরলো আমানের ঘরের দিকে।

?
?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে