#ভালোবাসি_শুধু_তোমায় ?❤
#পর্ব : ২
#লেখিকা : Aye Sha (Koyel Banerjee)
” তোমার সাথে কি আমার কোনো শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে? ”
আমানের এমন প্রশ্নে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। ওয়াশরূম থেকে বেড়িয়ে এসে আমাকে কাঁদতে দেখে ততক্ষণাৎ উনি এই প্রশ্নটি আমার দিকে ছুড়ে দিলেন। আমি কি উত্তর দেবো কিছুই বুঝতে পারছি না। তিনি আবারও জিজ্ঞেস করলেন কিন্তু এবার কড়া সুরে।
— তোমার সাথে কি আমার কোনো শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে আজ অবধি? হয়নি তো?
আমি চোখ মুছে কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দিলাম।
— ন..নাহ।
— তাহলে কেন তুমি আমার পিছনে পরে আছো বলতে পারবে? যা ক্ষতি করার তা তো করেই দিয়েছো তুমি আমার? এখন আর কি বাকি আছে? এইবার কি আমার প্রাণটাও নিয়ে নেবে?
— নাহহহ! এসব কি বলছেন আপনি আমান? আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমি আপন…
আমার কথায় বিরক্ত হয়ে আমাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে উনি রেগে চিৎকার করে বললেন।
— ভালোবাসি, ভালোবাসি আর ভালোবাসি! এই এক কথা শুনতে শুনতে আমার কানটা পচে গেলো। মাথাটা খারাপ হয়ে যায় তোমার মুখ থেকে এই ভালোবাসি কথাটা শুনলে। আই জাস্ট হেইট ইউ মীরা। হোয়াই ক্যান্ট ইউ আন্ডারস্টুড দ্যাট?
আমি কাঁদতে কাঁদতে আমানের কাছে দাঁড়িয়ে ওনার চোখে চোখ রেখে বললাম।
— এই মীরা কেই তো আপনি ভালোবাসতেন আমান। আজ কি করে এতটা সহজে বলছেন যে আপনি আমায় ঘৃণা করেন? ভালোবাসার মানুষ কে কি ঘৃণা করা যায়?
— ওহ প্লিজ! স্টপ ইউর মেলো ড্রামা! আমি তোমার এই ন্যাকামি দেখতে বসে নেই। জাস্ট ইরীটেটিং লাগে আমার এসব। কোথায় গেলো সেই মীরা যার মধ্যে অহংকার, জেদ ছাড়া কিছু ছিলো না? কোথায় গেলো সেই মীরা যে ভালোবাসায় বিশ্বাস করতো না?
— সেই মীরা কে তো আপনি বদলে দিয়েছেন আমান আপনার ভালোবাসা দিয়ে। আপনি তো সেই মীরা চাননি তাই তো নিজেকে বদলিয়েছি আমি।
আমান আমার কথা শুনে তাচ্ছিল্য হেসে বললো।
— ওহ রিয়েলি? দ্যান এক কাজ করো। তুমি আবার তোমার পুরোনো ফর্মে ফিরে যাও। ইটস গুড ফর মি। তোমার রোজকার এই প্যান প্যান, ঘ্যান ঘ্যান থেকে এটলিস্ট মুক্তি পাবো আমি।
— শুধু আমি নই আমান। আপনিও অনেক বদলে গেছেন। আমাকে ভালোবাসার মানে বুঝিয়ে আপনি এভাবে আমাকে একা ছেড়ে যেতে পারেন না। আমি যেতে দেবো না আপনাকে।
আমান আমার কথায় শব্দ করে হেসে দিলো। আমার দিকে এগিয়ে এসে গাল দিয়ে বেয়ে পরা আমার চোখের পানি এক আঙুলে নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আমার দিকে তাকালেন। পানির ফোঁটাটা ফেলে আমার মুখের দিকে এসে একবার ভালো করে দেখে বললো।
— আমাকে ধ্বংস করে দিয়েছো তুমি মীরা। আমার জীবনটা নরক করে দিয়েছো তুমি। তোমার জন্য আমার মনে ঘৃণা ছাড়া কিচ্ছু নেই! কিচ্ছু না।
দাঁতে দাঁত চেপে আমাকে কথাগুলো বলে উনি ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলেন। আমি নিচে বসে পরলাম ধপ করে। আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম…
— কি এমন করেছি আমি? কিসের এতো রাগ আমার উপর আপনার? আমি যে সত্যি আপনাকে ভালোবাসি আমান। অনেক বড়ো ভুল করেছিলাম আমি আপনাকে অবহেলা করে, অপমান করে। অনেক বড়ো ভুল। আই মিস ইউ আমান! আই মিস ইউর ম্যাডনেস লাভ!
কথাগুলো নিজের মনে বলেই কাঁদতে লাগলাম। এমন সময় আমার কাঁধে কাওর হাতের স্পর্শ পেলাম। মাথা তুলে পাশে তাকিয়ে দেখলাম সুমি বসে আছে। ও আমাকে তুলে নিয়ে বেডে বসিয়ে দিলো আর বললো।
— কেন এরকম করছিস মীরা? কেন জোর করে এখানে পরে আছিস? আমান জিজু তোকে ভালোবাসে না। কোনো জায়গা নেই তোর জন্য আমান জিজুর মনে। এতো অবহেলা, অপমান সহ্য করে কেন তুই জেদ করে এখানে পরে আছিস?
আমি সুমির দিকে তাকিয়ে সামান্য হেসে বললাম।
— উনি তো আমার সাথে কিছুই করেননি সুমি। তুই বোধহয় ভুলে যাচ্ছিস আমি ওনার সাথে কি করেছি। দিনের পর দিন আমি ওনাকে ভার্সিটি তে অপমান করে গেছি, অহংকার দেখিয়ে গেছি। এতোই টাকার অহংকার ছিলো আমার যে যখনই উনি আমার কাছে ভালোবাসার দাবী নিয়ে আসতেন তখনই ওনাকে অপমান করেছি ভিকারি বলে। আমার এহেনো ব্যবহারের পরও উনি সব মুখ বুজে সহ্য করে বার বার আমার কাছে ভালোবাসার দাবী নিয়ে এসেছেন। শেষ পর্যন্ত ওনাকে চরিত্রহীন বদনাম নিয়ে আমি ভার্সিটি থেকে বার করে দিয়েছি। এতটা জঘন্য, এতটা খারাপ আমি। ওনার ভালোবাসার বদলে আমি শুধু ….
আর কিছু বলতে পারলাম না আমি, ভীষণ কান্না পাচ্ছে আমার। পারছি না নিজেকে সামলে রাখতে। সুমি আমাকে শান্ত করতে বলতে লাগলো।
— তুই কেন নিজের উপর এভাবে সব দোষ নিচ্ছিস? স্যার সেদিন তোর কোনো কথা শোনেনি তাই জন্যেই তো…
— প্লিজ সুমি। আমাকে একটু থাকতে দে।
সুমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে গেলো বেড থেকে, দরজার কাছে গিয়ে বললো।
— আমি বাসায় চলে যাচ্ছি। তুই সাবধানে থাকিস।
সুমি চলে যাওয়ার পর আমি বেডে হেলান দিয়ে বসে থাকলাম। আজ গলা দিয়ে কিছু নামবে না। নীহার সাথে আমানের বসে থাকার মুহুর্তটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। চোখ দিয়ে পানি পরা বন্ধ হওয়ার কোনো নামই নিচ্ছে না। কেন জানো আজ দম বন্ধ লাগছে। এতোদিন আমান খারাপ ব্যবহার করতো ঠিকই কিন্তু আমি জানতাম আমার আমান শুধু আমাকেই ভালোবাসেন। কিন্তু আজ? আজ কেন উনি নীহার হাত ধরলেন?
নিজেকে শক্ত করে চোখের পানি মুছে নিজেই নিজেকে বললাম।
— আপনি আমায় চেনেন না আমান। আপনি আমার জেদ চেনেন না। আমি যেমন আপনার ভালোবাসা ফিরিয়ে দিয়ে ভুল করেছি ঠিক তেমন আমি আপনাকে ভালোবেসে নিজের কাছে আবারও ফিরিয়ে এনে আমার ভুল শুধরে নেবো। আপনি শুধু আমার আমান, শুধু আমার, মীরা চৌধুরির। আপনাকে আমি ভালোবাসা দিয়ে নিজের করেই ছাড়বো ইটস মাই চ্যালেঞ্জ!
হঠাৎই এসব ভাবতে ভাবতে আমার একটা কথা মাথায় এলো। আমি ক্যাফেতে বলা তখন নীহার কথা ভাবতে লাগলাম।
— নীহা তো বলেছিল আমান আর ও আজকে নাইট ক্লাবে যাবে। তাহলে আমান ঘরে কি করছে? ও কি বাসায় নাকি বাইরে বেড়িয়ে গেছে? ট্র্যাকপ্যান্ট পরে তো আমান নাইট ক্লাবে যাবে না। তার মানে আমান যায়নি নাইট ক্লাবে?
আমার মনে একটা প্রশান্তির শিহরণ বইয়ে গেলো কারণ আমার স্বামী অন্য কোনো মেয়ের কাছে যায়নি। এসব ভাবার পর কখন যে চোখ এঁটে এসেছিলো বুঝতেই পারিনি।
ঘুমটা ভেঙ্গে চোখ খুলতেই দেখলাম পুরো ঘর অন্ধকার। তার মানে রাত হয়ে গেছে। উঠে বসে পাশের ল্যাম্প লাইটটা জ্বালাতেই দেখতে পেলাম আমান সোফায় শুয়ে আছে। পাশ থেকে ফোন ওন করে জানলাম রাত ১২টা বাজে। আজ সন্ধ্যে বেলায় ওরকম একটা দৃশ্য দেখার পর নিজেকে স্বাভাবিক করতে ঘুমটা প্রয়োজন ছিলো আমার। আমি একটা বালিশ হাতে নিয়ে আমানের কাছে চলে গেলাম গিয়ে ওনার মাথা থেকে বালিশ টা সরিয়ে সোফার ও-পাশে ফেলে দিলাম আর নিজে বসে পরলাম ওনার মাথা কোলে নিয়ে। আলতো করে ওনার চুলে বিলি কেটে দিতে আমার বেশ ভালোই লাগছিল।
সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছিল ওনার মুখটা দেখে। ওনার মুখের দিকে তাকালেই আমার মনে পরে যায় ওনাকে করা আমার অপমানের কথা। একটা সময় কতোই না খারাপ কথা বলেছি মানুষটাকে আমি তাও একটা কথা বলেনি, সব সহ্য করে গেছে। এখন আমার পালা! আমি জানি উনি আমাকে ভালোবাসে তাই তো আজ নীহার সাথে নাইট ক্লাবে যাননি। আর আজ কেন? আমি সিওর উনি কোনদিন ওসব জায়গায় যাননি। গেছি তো আমি। আমি ছিলাম উশৃংখল। টাকার অহংকারে ওনার মতো মানুষ কে আমি কষ্ট দিয়েছি, আর উনি আমায় ভালোবেসে গেছেন। যেই মানুষটাকে সহ্য করতে পারতাম না আজ সেই মানুষটাকেই আমি পাগলের মতো ভালোবাসি! ওনাকে ছাড়া বাঁচার কথা ভাবতেই পারি না। আপনাকে তো আমি এতো সহজে ছাড়বো না আমান। জোর করে যেমন বিয়ে করেছি তেমন ভালোবাসা, নিজের পুরোনো জায়গায় জোর করেই আদায় করে নেবো।
কথাগুলো বলে নিজেকে সামলাতে না পেরে নিচু হয়ে ওনার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলাম। উনি নড়ে উঠতেই সরে এলাম, কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে আমায় দেখতেই ঝট করে উঠে বসলেন আর বললেন।
— তুমি এখানে কি করছো?
— আব, আপনি বালিশ ছাড়া শুয়ে ছিলেন তাই বালিশ দিতে এসেছিলাম তখন আপনি আমার কোলে মাথা শুয়ে পরলেন।
সাজিয়ে গুছিয়ে একটা মিথ্যে বলে দিলাম। উনি ধরতে পারলেন না আমার মিথ্যে। উনি কিছু বলছেন না দেখে আমি নিজেই জিজ্ঞেস করলাম।
— আপনি নাইট ক্লাবে গেলেন না?
— নাহ। শরীর ভালো লাগছে না আমার। ঘুমাতে চাই।
— সে কি? আপনি এখানে কেন শুচ্ছেন শরীর খারাপ থাকা সত্বে? বেডে শুয়ে পড়ুন। আমি মাঝে কোলবালিশ রেখে দিচ্ছি।
উনি আর কথা না বাড়িয়ে উঠে বেডে গিয়ে শুয়ে পরলেন। আর আমি সোফার পিছন থেকে ওনার বালিশটা নিয়ে গিয়ে বেডে শুয়ে পরলাম। হঠাৎ কিছু একটার গন্ধ পেয়ে আমি উঠে বসে আমানের দিকে তাকিয়ে বললাম।
— আপনি ড্রিংক করেছেন আমান?
— হ্যাঁ করেছি তো? তোমাকে এর জন্য কৈফিয়ত দিতে হবে আমায়? মনে রেখো আমি তোমাকে স্ত্রী বলে মানিনা।
— আপনি না মানলেই তো সত্যিটা মিথ্যে হয়ে যাবে না তাই না? আর কোনদিন জানো আপনাকে ড্রিংক করতে না দেখি, দেখলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। এই বলে দিলাম আমি।
ওনাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমি শুয়ে পরলাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম, যেই মানুষটাকে জোর করে আনি ড্রিংক করাতে পারিনি একসময় সেই মানুষটা আজ নিজে থেকে ড্রিংক করে এসেছে। কতটা খারাপ আমি, কাওকে কোনদিন সুখ দিতেই পারিনি। ভাবতেই চোখে পানি চলে এলো আমার আর বালিশ ভিজতে লাগলো সেই পানিতে।
?
?