#ভালোবাসি_শুধু_তোমায় ?❤
#লেখিকা : Aye Sha (Koyel Banerjee)
#পর্ব : ১
ক্যাফেতে ঢুকতেই নিজের স্বামী “আমান” কে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে দেখতে পেলাম। একে অপরের হাত ধরে হেসে কথা বলছেন, এমন কি হাতে চুমু ও দিচ্ছেন। দৃশ্য টা দেখে নড়াচড়া করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললাম। তাহলে এতদিন যা শুনতাম সব সত্যি! আমাকে যা যা কথা আমার বোন বলতো সেগুলো ও সত্যি? নাহ আর দাঁড়াতে পারছি না আমি, একটু পিছিয়ে যেতেই একটা টেবিল ধরে ফেললাম আর আমার স্বামী আমান আমার দিকে তাকালো। কিন্তু কোনো তফাত হলো না, সে আমার দিকে এগিয়ে এসে বললো।
— তুমি এখানে কি করছো?
— একই প্রশ্ন তো আমার আমান। আপনি এখানে “নীহার” সাথের কি করছেন?
— সেই উত্তর তো আমি তোমাকে দেবো না “মীরা”। আমি কি করবো না করবো সেটা তোমাকে বলার প্রয়োজন আমি মনে করি না।
— আমি আপনার স্ত্রী আমান!
— হ্যাঁ যেটা আমি মানি না। জোর করে তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। প্লিজ যাও তো এখান থেকে। আমাদের কে একটু টাইম স্পেন্ড করতে দাও।
— আমার মধ্যে কি এমন নেই যার জন্য আপনি আমাকে এভাবে দিনের পর দিন অস্বীকার করছেন?
— কিছুই নেই তোমার মধ্যে যা যা দ্য গ্রেট আমান খান ডিসার্ভ করে। তুমি আমাকে কোনদিনই স্যাটিসফাইড করতে পারবে না বুঝলে? মে বি এর চাইতে বেশি ডেসক্রাইব আমাকে করতে হবে না।
আমানের কথা শেষ হতেই নীহা আমানের বাহু জড়িয়ে বলে উঠলো।
— ডার্লিং? তুমি কি এসব কথা বলে এখানে টাইম ওয়েস্ট করবে? আমাদের তো আজ নাইট ক্লাবে যাওয়ার কথা, একসাথে নাইট স্পেন্ড করার কথা। ভুলে গেলে নাকি?
— অফকোর্স নট বেবি। লেটস গো।
আমাকে ধাক্কা দিয়ে আমান নীহার হাত শক্ত করে ধরে ক্যাফে থেকে বেড়িয়ে গেলেন। আমি ওখানে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে। কোনো মতে ক্যাফে থেকে বেড়িয়ে রাস্তার পাড় দিয়ে হেঁটে একটা পার্কের বেঞ্চে বসে পরলাম। সে সময় আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নেমে এলো আর আকাশের সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখের পানিও বাঁধ ভাঙলো। অঝোরে কেঁদে চলেছি আমি। বৃষ্টির কারণে সবাই এদিক ওদিক ছুটে চলে যাচ্ছে আর আমি একভাবে বসে আছি। একমুহূর্তে আমি চিৎকার করে কেঁদে উঠলাম আর বলতে লাগলাম।
— কেন আমান কেন? কি কমতি ছিলো আমার ভালোবাসায়? মন দিয়ে ভালোবেসেছিলাম আমি তোমাকে। কেন এভাবে ঠকালে তুমি আমাকে? কেন? কেন? কেন? আমি যে তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না আমান! বাঁচবো না আমি। আই লাভ ইউ সো মাচ! শুধু মাত্র আমি দেখতে খারাপ বলে আমকে ছেড়ে চলে গেলে আমান? আমি যে আর পারছি না। আর পারছি না।
আমি এইসব বলে উঠে দাঁড়িয়ে রাস্তায় নেমে এলাম। নিজের মনের মতো হেঁটে যাচ্ছি সে সময় একটা তীব্র আলো আমার চোখে এসে পড়ল আর দ্রুত গতিতে কেউ আমাকে হ্যাঁচকা টান মেরে একদিকে টেনে নিলো। বৃষ্টির কারণে ঠিক করে মুখ দেখতে পাচ্ছিলাম কিন্তু যখন ও কথা বললো তখন বুঝলাম ও আর কেউ না আমার বোন ইসমি।
— পাগল হয়ে গেছিলি তুই মীরা? এক্ষুনি তো অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে যেতো।
ইসমি কে জড়িয়ে ধরে আমি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম আর বললাম।
— আমি বাঁচতে চাই না সুমি। আমি বাঁচতে চাই না। তুই যা বলতিস সব ঠিক। আমান এভাবে আমাকে ঠকাতে পারলেন? আমি কি এতটাই খারাপ দেখতে যে আমাকে নিয়ে সংসার করা যায় না? আমাকে ভালোবাসা যায় না? আমি যে ওনাকে ছাড়া বাঁচবো না সুমি! বাঁচবো না আমি।
— তুই আগে শান্ত হ বোন। এমন কিছু হবে না।
— নাহহহহ! আমান আজ নীহার সাথে নাইট স্পেন্ড করতে গেছে। আমার সব শেষ সুমি। সব শেষ। আমিও শেষ করে দেবো নিজেকে।
সুমি আমার কথা শুনে ঠাস! করে একটা চড় বসিয়ে দিলো আমার গালে আর আমি আবারও ডুকরে কেঁদে উঠলাম, কাঁদতে কাঁদতে চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে এলো তারপর আর কিছু মনে নেই।
চোখ খুলতেই নিজেকে ঘরের মধ্যে আবিষ্কার করলাম। পাশে তাকাতেই দেখলাম সুমি দাঁড়িয়ে আছে, আমি উঠে বসতে চাইলে ও আমাকে হেল্প করলো। ও আমাকে বলে নিচে খাবার আনতে বেড়িয়ে গেলো তার কিছুক্ষণ পর আমি যখন আমানের চিন্তায় বিভোর তখন হঠাৎই আমান ঘরে প্রবেশ করলো। ঘরে প্রবেশ করে আমার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত সুরে বললো।
— ওহ মরনি তাহলে? আসলে আমারই ভুল, তুমি মরবে কেন? তুমি মরলে আমকে জ্বালিয়ে মারবে কে? ডিসগাস্টিং পিপল!
কথাগুলো বলেই উনি ওয়াশরূমে চলে গেলেন আর আমি কিছুক্ষণ স্থির হয়ে বসে থাকার পর নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না মুখ চেপে ধরে কাঁদতে লাগলাম।
?
?