#ভালোবাসি_ভালোবাসা♥️
#written_by_Liza_moni
#part_6
রেস্টুরেন্টে সাদাফের সামনে বসে আছে হিয়া। অনেক কষ্টে সাদাফ হিয়া কে রাজি করিয়েছে দেখা করার জন্য। হিয়া মাথা নিচু করে হাতের নখ খুঁটছে।
.
এই বিয়েতে রাজি না হওয়ায় কারণ কি হিয়া?
.
হিয়া একবার সাদাফের দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে।
.
কিছু বলছো না কেন?
.
কী বলবো?
.
শুনেন মিস রাওজামিনি হিয়া, আমি গতকাল রাতে আপনার ডায়রিটা দেখেছি।
.
কথাটা শুনে হিয়া পারছে না দৌড়ে চলে যেতে।কী আপনি জানেন না মানুষের পার্সোনাল ডায়রি দেখতে নেই?
.
হুম জানি তো। আমি তো শুধু একটা পেজের দুটো বাক্য দেখেছি।
.
হিয়া বুঝতে পারছে সাদাফ কোন লেখাটা দেখতে পেয়েছে।
.
তুমি ও তো আমায় ভালোবাসো হিয়া তাহলে কেন এই বিয়ে করছো না তুমি?হিয়ার ডান হাতটা আলতো করে ধরে বলে সাদাফ।
.
আপনি তো আমায় ভালোবাসেন না সাদাফ ভাই। শান্ত কন্ঠে বলল হিয়া।
.
কে বললো হুম যে আমি তোমায় ভালোবাসি না?
.
তার মানে আপনি ও আমায় ভালোবাসেন? খুশিতে হিয়ার চোখ জ্বল জ্বল করে উঠলো।
.
জী ম্যাডাম। ভালোবাসি আমার ভালোবাসাকে।
.
হিয়ার খুশি যেন আকাশ সমান। এত্ত ভালো লাগছে বলে বোঝানো যাবে না।এত দিন চাতক পাখির মতো এই একটা কথা শুনার জন্য বসে ছিল।আজ তা পূরণ হলো। ভাবতেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছে হিয়া।
.
তোমাকে কেউ থ্রেট দিচ্ছে সে কথা কাউকে বলোনি কেন তুমি?
.
মানে
.
সাদাফ পকেট থেকে সেই কাগজটা বের করে হিয়ার সামনে ধরল। কাগজটা সাদাফের হাতে দেখে কলিজা শুকিয়ে গেছে হিয়ার।
তোতলাতে তোতলাতে বললো,,
.
আপনি এই কাগজটা কোথায় পাইলেন?
.
তোমার ডায়রি থেকে পড়ে গিয়েছিল। তখনই পেয়েছি।
এখন বলো এই সব কে দিয়েছে তোমাকে?
.
ঐ দিন সকালে আমি ফজরের নামাজ পড়ে একটু হাঁটতে বের হয়েছিলাম। তখন কোথা থেকে যেন এই কাগজটা এসে আমার গায়ে পড়েছিল।আসে পাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পাইনি।
.
আমাদের বলোনি কেন?
.
আসলে আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।
.
আমার সাথে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় কারণ?
.
যে দিন আপনারা আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন আংটি পরাতে যাবেন আর তখন আমার মোবাইলে একটা মেসেজ আসে।
.
কীসের মেসেজ?
.
হিয়া ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে মেসেজটা সাদাফ কে দেখায়।
.
মেসেজটা পড়ে বলে ও এই কারন। ফেসবুকে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তুমি ভিডিওটা দেখছো?
.
কিসের ভিডিও?
.
একটা লোক একটা মেয়ের ওড়না কেড়ে নিয়ে মেয়েটার জামা ছিঁড়ে দিয়ে ছিল এমন টাইপের একটা ভিডিও।
.
হ্যাঁ সকালে রিয়ান ভাইয়ার ফোনে দেখেছিলাম।
.
এই ভিডিওটি আমি করেছিলাম। কিন্তু আমি এটা পোস্ট করিনি।
.
তাহলে? হয়তো অন্য কেউ ভিডিও করেছিল আর ভাইরাল ও করেছে।
.
হুম হতে পারে। তোমায় যে এই কাগজ আর মেসেজ গুলো করেছে সে দেখেছিলো আমাকে ভিডিও করতে।সে হলো ঐ ভিডিওটির সেই অশ্লীল বেয়াদব লোকটা।যার জন্য তাকে পুলিশে গ্রেফতার করেছিল।
সে হয় ভাবছে আমিই ওকে জেলে দিয়েছি।
.
ওহ আল্লাহ। এই লোকটা আপনার পরিচিত?
.
হ্যাঁ। শুধু আমার না রিয়ান ও চিনে ওকে।সায়মান নাম তার। খুব খারাপ একটা লোক।মেয়ে খোর।আমানদের এক্সিডেন্টটা ও করছে।
.
ছি এত বাজে মানুষ ও আছে পৃথিবীতে।আমান ওর কি ক্ষতি করছে যে ও তিন টা নির্দোষ মানুষকে খুন করে ফেললো।
.
আমি ও তাই ভাবছি। আচ্ছা চলো তোমাকে বাড়িতে দিয়ে আসি। অনেক বেলা হয়ে গেছে।
.
আচ্ছা।
.
সাদাফ হিয়া কে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে নিজের বাড়ির দিকে রওনা হলো।
হিয়া রুমে এসে গোসল করার জন্য ওয়াস রুমে চলে গেল।
.
.
বাড়িতে এসে সাদাফ বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। ঠিক তখনই সাদাফের ফোন বেজে ওঠে।পেন্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখে আরিফ কল দিয়েছে।
কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আরিফ বলে উঠে,,
.
আজ অফিসে আসেন নি কেন সাদাফ ভাই?
.
আজ একটা কাজ ছিল তাই বসের থেকে ছুটি নিয়েছি।
.
ওহ আচ্ছা।যেটার জন্য কল দিছি,,সায়মান আছে না ওকে নাকি পুলিশ ওর আস্তানা থেকে আবার গ্রেফতার করেছে।
.
কী বলেন? আমি এখনই আসছি।
সাদাফ কল কেটে দিয়ে রিয়ানকে কল দেয়।
রিয়ান ফোন ধরতেই সাদাফ বলে তৈরি হয়ে নে।আজ একটা টুর্নামেন্ট খেলা হবে। আমি আসছি। রিয়ানকে কিছু বলতে না দিয়েই সাদাফ কল কেটে দেয়।বাইক নিয়ে আবার রিয়ানদের বাসার দিকে রওনা হয়।
রাস্তার পাশেই রিয়ানকে দেখতে পেল সাদাফ।
.
বাইকে বস।
.
রিয়ান বাইকে বসে সাদাফ কে জিগ্যেস করে কী হয়েছে?
.
সাদাফ রিয়ানকে সব বললে রাগে রিয়ানের কপালের রগ ফুলে উঠে। এখন যদি সায়মান কে রিয়ান সামনে পেত তাহলে কেটে কুচি কুচি করে ফেলতো।
সাদাফ পুলিশ স্টেশনের সামনে বাইক থামায়।বাইক থেকে নেমে তারা এসিপির সাথে দেখা করতে ভেতরে যায়।
.
আরে সাদাফ মে,কি অবস্থা আপনার?
.
এই তো ভাই আছি। শুনলাম সায়মান কে নাকি গ্রেফতার করা হয়েছে?
.
হ্যাঁ। কিছু দিন আগে বর যাত্রীর গাড়িতে ধাক্কা মারে যার ফলে ঐ গাড়িতে থাকা যাত্রীরা মারা যায়।
.
হুম সে বর যাত্রী আমার বোনের ছিল।
.
ওহ মাই গড।কি বলেন?
.
আচ্ছা আমরা কি সায়মানের সাথে দেখা করতে পারি?
.
হ্যাঁ অবশ্যই। আসুন আমর সাথে। এসিপির পেছন পেছন সাদাফ আর রিয়ান ও যায়।
.
কি অবস্থা আমার প্রান প্রিয় বন্ধু?সাদাফের ঠাট্টার ছলে বলা কথায় পিছন ফিরে তাকায় সায়মান। চোখ থেকে তার আগুন ঝড়ছে।লাল টুকটুকে হয়ে আছে তার চোখ।
.
তুই কত্ত বড় বোকারে সায়মান।আমায় কষ্ট দিতে গিয়ে তুই আমাকে সুখের রাজ্যে নিয়ে গেলি?
.
চোখ কটমট করে তাকায় সায়মান।
.
আমার সাথে লাগতে এসিছিলি সাদাফ এর ফল খুব খারাপ হবে।
.
আরে রাখ তোর ফল খারাপ হওয়ার কথা। শালা মন চাচ্ছে তোকে মাটিতে পুঁতে ফেলতে।রাগছ গজগজ করতে করতে বলল রিয়ান।
.
শুন সায়মান আমাকে কষ্ট দিতে গিয়ে তুই শুধুই আমানদের মারলি।আমানরে যদি না মারতি তাহলে হিয়া কে না পাওয়ার যন্ত্রনায় আমি এমনি মরে যেতাম। কিন্তু দেখ আমানকে মেরে তুই সারা জীবনের মতো হিয়াকে আমার করে দিলি।শুন এর পর লাগতে আসলে একটু ভেবে চিন্তে লাগতে আসিস।জেলের মধ্যে ভালো থাক।শুভ কামনা রইলো।আসি।
আল্লাহ হাফেজ।
বলে সাদাফ আর রিয়ান পুলিশ স্টেশন থেকে বাড়িতে চলে আসে।
.
.
বাড়িতে এসে রিয়ান সবাইকে সব বলে সায়মানের কথা।
.
বেয়াদব লোক একটা।আর যেন জেল থেকে বের না হতে পারে। বলে হিয়া নিজের রুমে চলে গেল।
.
.
.
রাত তখন প্রায় দশটা বাজে।সাদাফ হিয়া কে ফোন দেয়।
হিয়া ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সাদাফ বলে উঠে,,
কী মেম এখন তো কোনো বাধা নেই, এখন কী আমাকে বিয়েটা করা যাবে?আর সিঙ্গেল থাকতে ইচ্ছে করে না তো।
.
সাদাফের কথায় হিয়া লজ্জা পেয়ে বলল ঘুম পাচ্ছে রাখি।
.
আরে লজ্জা পেয়ে কল কেটে দেওয়ার কি আছে? বিয়েটা তাহলে হচ্ছে? আব্বু আম্মু কে নিয়ে কাল আসছি আপনার বাসায় মেম।
.
হিয়া কিছু বললো না।
সাদাফ বুঝে নিলো নীরবতা সম্মতির লক্ষণ।
,
,
চলবে,,,,,,,