#ভালোবাসি_বলে(৮)
#Jannat_prema
” তুই এখন কাদঁছিস কেনো? ”
আপনার বিরহে আরহাম ভাই। আপনাকে হারানোর ভয়ে আমার বুকটা দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই মুক্ত হাওয়া এখন আমার বিষের মতো লাগছে। সব অনুভূতিগুলো তিক্ত হয়ে বুকের ভিতর যন্ত্রণা দিচ্ছে। আমি যে হৃদয়ের ব্যাথায় ছটফট করছি আরহাম ভাই। কিভাবে আপনাকে এতোটা ভালোবেসে ফেললাম জানি না।
” আমার মতো গম্ভীর, রাগি মানুষটার সাথে থাকতে পারবি? পারবি আমার মতো মানুষকে তোর ভালোবাসার ছোঁয়ায় আগলে রাখতে? ”
আরহাম ভাইয়ের কথা শুনে স্তব্ধ বনে অবাক হয়ে ফোন কানে নিয়েই বসে আছি৷ আমি কি আরহাম ভাইয়ের বিরহে আবোলতাবোল শুনছি। আমি ঘোরের মাঝেই বলে উঠলাম,
” জ্বী! ”
ওপাশ থেকে আরহাম ভাইয়ের জোরে শ্বাস নেওয়ার শব্দটা শুনতেই বুঝে গেলাম উনি কিছুটা রেগে গেলেন৷ আরহাম ভাই মনে হয় দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
” তুই আমাকে আর স্নেহাকে দেখে কাঁদছিলি কেনো? আন্সার মি আইরু, তখন কাদঁছিলি কেনো? ড্যাম ইট! ”
আরহাম ভাইয়ের ধমকে ভড়কে উঠলাম। অভিমানে চোখে পানি এসে গেলো। নিজেকে আর আটকে না রেখে ফুপিয়ে কেঁদে বলে দিলাম,
” আপনাকে ভালোবাসি বলে, আরহাম ভাই। আনি আপনাকে ভালোবাসি। প্রচন্ড ভালোবাসি আরহাম ভাই। আমি আপনার সাথে সারাজীবন কাটাতে চাই। আপনা কাধে মাথা রেখে সূর্যাস্ত দেখতে চাই। আবার আপনার বুকেই আমার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে চাই। ”
আমার কথা শেষ হতে না হতেই ওপাশ থেকে টুট টুট করে কল কেটে দিলো। আমি হা করে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছি। কি হলো ব্যাপারটা? আরহাম ভাই কেটে দিলো কেনো? ধুর! এতো কিছু না ভেবে খুশিতে ফোনটাতে অসংখ্য চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলাম। আরহাম ভাইকে শেষ পর্যন্ত নিজের মনে কথাটা বলতে পারলাম৷ আর আরহাম ভাইও তো আমাকে চায়। আমি হাত পা মেলে শুয়ে মাথার উপর ঘুরতে থাকা ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছি। মনের কষ্টগুলো কেমন গায়েব হয়ে গেলো। বারবার খালি আরহাম ভাইয়ের কথাগুলো কানে বাজছে।
” আমার মতো গম্ভীর, রাগি মানুষটার সাথে থাকতে পারবি? পারবি আমার মতো মানুষকে তোর ভালোবাসার ছোঁয়ায় আগলে রাখতে? ”
আমি বিরবির করে বললাম,পারবো না কেনো আরহাম ভাই৷ আপনাকে আমি আমার ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখবো৷ যাতে কেউ নজর না দিতে পারে৷ দরকার পড়লো আপনার গায়ে সিল মেরে দিবো। বলে দিবো,
” এই অতীব সুদর্শন পুরুষটা হলো আইরিশের। তার সব কিছুতে খালি আইরিশের অধিকার থাকবে। ”
” কিরে এভাবে ভুতের মতো একা একা হাসছিস কেনো? ”
আচমকা ভয়ে আমি লাফিয়ে উঠে বসলাম। আশরাফ ভাইয়া পাগলের মতো হাসছে৷ এদিকে ভয়ে বুকে থুথু দিয়ে রেগে বললাম,
” খুবই খারাপ ভাইয়া। এভাবে কেউ আসে? এমন পাগলের মতো হাসছিস কেনো? তোর ওই খচ্চরের মতো হাসিটা বন্ধ করবি, ইবলিশ! ”
ভাইয়া নিজের হাসি কোনো রকম সামলে বলে উঠলো,
” তুই যাই বলিস না কেনো, আইরিশ। তোর ভয় পাওয়ার রিয়াকশনটা সেই ছিলো৷ ভাবলে আমার এখনো হাসি পাচ্ছে। হাহাহা! ”
প্রচুর বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে। একে তো ভুতের মতো এসে ভয় পাইয়ে দিলো, আবার নিজেই পাগলের মতো হোহো করছে।
” তোর জন্য ভাত এনেছি, খেয়ে নে। আহ জীবন! নিজের জন্য কোনোদিন রুমে ভাত এনে খাইনি। সেখানে তুই! খেয়ে নে, খেয়ে একটু মোটা হ। নাইলে বাতাসের সাথে উড়ে যাবি। ”
ভাইয়ার কথা শুনে রেগে গেলাম৷ আমি রাগে চোখ ছোট ছোট করে বললাম,
” তোর মতো হাতির থেকে আমি ভালো আছি। তুই কি খেয়ে মোটা হলি? দেখ তোর ভুড়ি দেখা যাচ্ছে৷ নিজে আগে ফিটফাট হ, তারপর আমাকে বলিস৷ এখন যাহ এখান থেকে৷ ”
আমার কথা শুনে ভাইয়ার চোয়াল ঝুলে গেলো। গাধার মতো আয়নার সামনে গিয়ে নিজের পেট দেখছে। একবার এদিক থেকে তো আবার ওদিক থেকে দেখছে। ভাইয়ার এমন কর্মকান্ড দেখে আমি হোহো করে হেসে উঠলাম। ভাইয়া নিজেও হেসে দিলো এবার।
.
ভাত খেয়ে সবে মাত্র বিছানায় বসতেই ফোনের নোটিফিকেশনের আওয়াজ হলো। ফোন হাতে নিতেই ‘ মাই হার্ট ‘ থেকে মেসেজ দেখে ঝটপট চেক করলাম৷
” এখন সাড়ে এগারোটা বাজছে। ঠিক বারোটার সময় গেটে হাজির থাকবি৷ কেউ যেনো দেখে।”
মেসেজটা বারবার দেখতে লাগলাম। হঠাৎ এমন ম্যাসেজ করার মানে বুঝতে পারলাম না। তখন উনি আমার অনুভূতির কথাটা পুরোপুরি না শুনে খট করে কল কেটে দিলেন, এখন আবার এই মেসেজ। তবে যেই কারণে করুক না কেনো তাতে কি! আরহাম ভাইয়ের সাথে থাকতে পারবো এটাই অনেক আমার কাছে। দেখতে দেখতে ১১:৫০ বেজে গেলো। আমি ঝটপট রেডি হয়ে গেলাম৷ চুলটাকে হালকা একটু আচড়িয়ে বেণি করে নিলাম, ঠোঁটে হালকা করে লিপবাম লাগিয়ে নিলাম। দরজাটা হালকা করে খুলে সবার ঘরে একবার চোরের মতো উঁকি দিলাম। সবাই এখন গভীর ঘুমে আটকে আছে৷ আবারো ফোনের দিকে তাকালাম। আরহাম ভাই মেসেজ দিলেন,
” তাড়াতাড়ি আয়। ”
.
গেটের সামনে আসতেই আমার হার্ট বিট মিস করলো। আরহাম ভাইয়ের পড়নে হাটু সমান একটা শর্ট প্যান্ট, গায়ে সাদা টিশার্ট। চুলগুলো আজকে একটু এলোমেলো। উনার ফর্সা গায়ে সাদা টিশার্টটা যেনো সৌন্দর্য আরও দ্বিগুণ বেড়ে গেলো৷ উনাকে এই বেশে আমি দ্বিতীয় বার দেখলাম৷ আরহাম ভাই যখন উনার ঘন পাপড়ির চোখ জোড়া দিয়ে আমার দিকে তাকায় তখন নিজেকে কেমন বেসামাল লাগে। মুগ্ধ হয়ে যাই।
” এখানেই কি রোবটের মতো দাড়িয়ে থাকবি? ”
আমি ঝটপট চোখ নামিয়ে নিলাম৷ লজ্জায় মাথা নিচু করে উনার সামনে গিয়ে দাড়ালাম। আচমকা আরহাম ভাই আমার কপাল থেকে চুলগুলো কানে গুজে দিলেন৷ উনার ছোঁয়াতে পুরো শরীর শিরশির করে উঠলো। মুখ তুলে চাইলাম আরহাম ভাইয়ের মুখপানে। উনি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছেন। এই প্রথম আরহাম ভাইয়ের চোখে আমার জন্য মুগ্ধতা দেখতে পেলাম। আরহাম ভাই আমার গাল থেকে হাত সরিয়ে বললেন,
” গাড়িতে উঠে বস। ”
.
লেকের সামনে গাড়ি থামালেন আরহাম ভাই৷ আমি আশেপাশে একবার তাকালাম। এমন নিরব নিস্তব্ধ জায়গায় এতো রাতে কেনো নিয়ে এলেন? আরহাম ভাই গাড়ি থেকে নামতেই আমিও নেমে পড়লাম৷ বাতাস এসে যেনো পুরো শরীরটাকে ঠান্ডা করে দিলো৷ বাতাসের সাথে কপালের ছোট চুলগুলো মুখের উপর উড়ে আসতে কানে গুজে দিলাম। আরহাম ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ কেনো যেনো খুব লজ্জা লাগছে। আমি উনার পাশে গিয়ে দাড়ালাম। আকাশে আজকে অর্ধ চাঁদ উঠেছে। চাঁদের কিরণে লেকের পানির ঢেউগুলো চিকচিক করছে। জায়গাটা বেশ দারুন!
” রাতে খেয়েছিস? ”
লেকের পানি থেকে চোখ সরিয়ে উনার মুখের দিকে তাকালাম। উনার মুখটা কেমন শুকনো শুকনো লাগছে। উনার প্রশ্নের জবাবে বললাম,
” আপনি খেয়েছেন আরহাম ভাই? ”
আরহাম ভাই মুচকি হাসলেন। চাঁদের আলোতে উনার হাসিটা মারাত্মক লাগলো আমার কাছে। উনি লেকের পানিতে তাকিয়ে আবারো বললেন,
” তখন ফোনে কি যেনো বলেছিলি? ”
আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম। অবাক স্বরেই বললাম,
” আপনি কিছু শুনেন নি? ”
” না তো! ”
উনার উত্তরটা শুনে চোয়াল ঝুলে গেলো আমার। আমি টলমলে চোখ জোড়া উনার থেকে সরিয়ে অন্য দিকে দৃষ্টি দিলাম৷ মনের সব আশা যেনো ভেঙে গুড়িয়ে গেলো। আরহাম ভাই শুনেনি আমার অনুভূতির কথা।
” আইরিশ শুনছিস, তোকে আমি ভালোবাসি! ”
শিউরে উঠে ঘুরে দাড়ালাম। আরহাম ভাইকে নিজের অতি নিকটে দেখে অবাক নয়নে তাকালাম। আমাকে উনার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেসে বললেন,
” ভালোবাসিস না আমায়?”
আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না। গলার কাছে শব্দগুলো আটকে আছে৷ আরহাম ভাই যে নির্জন পরিবেশে ভালোবাসার কথাটা বলবে সেটা একদম অকল্পনীয়। আমি ফুপিয়ে উঠলাম। কিছু পাওয়ার আনন্দে কেঁদে উঠলাম। মাথা ঝাকিয়ে বললাম,
” খুব ভালোবাসি। আপনাকে আমি খুব ভালোবাসি আরহাম ভাই। ”
হুট করে উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন৷ আমি মুচকি হেসে উনার বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছি। এক অজানা প্রশান্তিতে মন শান্ত হয়ে গেলো আমার।
চলবে!