গল্পর নাম :#ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_৮ : #প্রাইভেসি
লেখিকা : #Lucky
সাথে সাথে আমি চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে একশ্বাসে বলে উঠলাম, “এখন না প্লিজ, আমি এখনো রেডি না।”
.
কয়েক সেকেন্ড চোখ বন্ধ করেই রইলাম কিন্তু তেমন কিছুই হলো না।
তাই আস্তে আস্তে এক চোখ প্রথমে খুললাম। আর ঘটনা বুঝেতে পেরে দুই চোখই খুললাম।
উনি আমার গলার পেন্ডেনটা হাতে নিয়ে আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছেন।
আমি বোকা সেজে গেলাম।
এই নিয়ে দুইবার একই ভুল করলাম। কি লজ্জার বিষয়। এ জীবন রেখে কি লাভ!
তাছাড়া এই পেন্ডেন টা ওনার এভাবে হাত দিয়ে ধরে দেখার কি আছে! যত্তসব।
আমি পেন্ডেনের চেইন ধরে হালকা টান দিয়ে বললাম, “ছাড়ুন এটা।”
কিন্তু উনি শক্ত করেই ধরে রইলেন। আর আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
“কি করছেন আপনি! ছিড়ে যাবে ত।” আমি বিরক্ত হয়ে বললাম।
উনি হঠাৎই ছেড়ে দিলেন। তারপর আবার আমার শাড়ির দিকে মনোযোগ দিলেন।
আশ্চর্য! ভালো মন্দ কিছুই বলল না!
কিছু ত বলতেই পারত। অসহ্য।
.
উনি শাড়ির বিষয়টা আমলে আনতে পারছেন না। তাও যতটুকু পারছেন চেষ্টা করছেন।
উনি আমাকে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন আর আমি গুজে নিচ্ছি।
বেচারার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে।
ইচ্ছে করছে মুছে দিই।
কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে অন্যদিকে তাকালাম।
উনি কুচি করতে লাগলেন।
কুচি করতে অনেক সময় লেগে গেল তার।
কিন্তু শেষ অব্দি ভালই হলো।
উনি কুচি করে নিজেই কুচিটা গুজে দিতে গেলেন।
কিন্তু গুজে দিতে গিয়ে থেমে গিয়ে আমাকে গুজে নেওয়ার জন্য বললেন।
আমি ওনার হাত থেকে কুচিটা নিয়ে তাড়াতাড়ি গুজে নিলাম।
ইথান একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “চলো এখন।”
“পার্সটা ফেলে এসেছি। নিয়ে আসি?” চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বললাম।
“চলো।” চোখ দিয়ে ইশারা করে বের হতে বললেন উনি।
আমি এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললাম।
উনি নিজের কোটটা হাতে নিয়ে বের হয়ে এলেন।
দুইজনেই একসাথে ভলেন্টিয়াদের রুমের সামনে এসে হাজির হলাম। উনি দরজার কাছে দাড়ালেন।
আমি ভিতরে ঢুকতে না ঢুকতেই প্রেমা বলল, “যাস নি এখনো? সব কাজ শেষ। সবাই গেছে। আমরাও যাব এখনি।”
“হলে ছিলাম। শাড়ি পুরো খুলে গিয়েছিল। কি একটা অবস্থা!” কপাল কুচকে পার্সটা খুজতে খুজতে বললাম আমি।
শিলা সুর টেনে বলল, “অহ~~, তা খুলে গেছিলো নাকি ইথান খুলে দিয়েছিল।”
আমি চমকে উঠে চোখ পাকিয়ে তাকালাম ওর কথা শুনে।
ইথান বাহিরেই দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো শুনেও নিয়েছে।
আমি ইশারায় বললাম, চুপ করতে।
কিন্তু সে থামার মত না।
“শেষমেশ হল রুমে! বাসরঘরে করলেই ত পারতি। যাইহোক কি কি করেছিস রে?” ভ্রু উঁচু করে বাজে ইশারা করলো শিলা।
“বাহিরেই আছে। চুপ কর।” ফিসফিস করে হাতজোড় করে বললাম আমি।
“আছে ত কি হয়েছে! আমাদেরই ত জিজু।” বলল শিলা।
প্রেমা সরু চোখে তাকিয়ে মাথায় হালকা করে বাড়ি মারলো শিলার। আর বলল, “অনেক হয়েছে চুপ কর। তোর বিয়ের পর নিজেই দেখে নিস কি কি হয়।”
শিলা মুখ ফুলিয়ে নিজের মাথা ডলতে লাগলো।
“তুই যা৷ এখানে থাকলে আরো উল্টোপাল্টা শুনাবে ও।” প্রেমা আমাকে বলল।
আর কি বাকি আছে! ইথান ত মনে হয় শুনেই ফেলেছে।
আমি নিজের পার্সটা নিয়ে বাহিরে বেরিয়ে এলাম।
ইথান এক হাত পকেটে ঢুকিয়ে অন্য হাতে কোটটা ধরে দাড়িয়ে ছিল।
আমাকে দেখে একটা ঠান্ডা চাহনির সাথে তাকিয়ে হাটা শুরু করে দিল। দেখেই বুঝলাম তার মেজাজ বিঘড়ে আছে।
এখন আবার কি হলো!
এতসময় ত ঠিক ছিলো।
নাকি শিলার কথাগুলো শুনে ফেলেছে!
.
চুপচাপ গাড়িতে বসে সিট বেল্ট বাধলাম। ইথান সীটে বসে নিজের টাই টা ঢিলে করে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
আমি ওর দিকে আড় চোখে তাকাতে লাগলাম।
সে গাড়ির লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে নিতে ব্যস্ত।
আর সেই মুহুর্তেই আমার চোখ পড়লো ওনার ঘাড়ের কাছে। যেখানে আমি কামড় বসিয়ে দিয়েছিলাম।
জায়গাটায় লালচে দাগ হয়ে গেছে। টাই ঢিলে করায় আর অন্যদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে রাখায় এখন ভালোভাবেই দেখা যাচ্ছে।
আমার গত একদিন আগে বেকুবের মত করা কাজটা আবার মনে পরে গেল। তাই তৎক্ষনাৎ আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম।
যদিও আমার ইচ্ছে করছে ভালোভাবে দেখতে ঠিক কতটা লাল হয়ে গেছে।
হঠাৎই মনে হলো দাগ হয়ে গেলে!
আমি আবার ওর দিকে তাকালাম।
ইথান সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে এখনো তার মেজাজ বিঘড়েই আছে।
কি হয়েছে কে জানে!
আমি চিন্তা করতে করতে সামনে ঘুরলাম। কিন্তু চিন্তা করে ফলাফল হলো জিরো।
।
ঢাকা শহর মানেই জ্যামের জটলা। বাসায় ফিরতে ফিরতে আটটা বাজল।
রাত হয়ে গিয়েই ঝামেলা। সারাদিন এত দৌড়াদৌড়ি করে এখন গোসল না করলেই নয়। কিন্তু ঠান্ডাও লেগে যেতে পারে। যদিও সকালে গোসল করেছিলাম।
তাই ইথানের মা আগেই বলে দিল, এখন গোসল করোনা।
কিন্তু আমাকে ত করাই লাগবে। নাহলে আমি শান্তিতে থাকতে পারবো না।
রুমে এসে ঢুকতেই দেখলাম ইথান ড্রেস চেঞ্জ না করে দাঁড়িয়ে আছে। তার চাহনি দেখে বুঝলাম সে এখনো খারাপ মুডে আছে। আমি প্রশ্নসূচক চোখে তাকিয়ে তারপর আলমারি থেকে নিজের ড্রেস নিতে গেলাম। কারণ আমি কিছু করেছি বলে আমার মনে পরে না।
হঠাৎই বুঝলাম ইথান দরজা বন্ধ করে দিলো।
আমি থ মেরে আলমারির মধ্যেই তাকিয়ে রইলাম।
দরজা কেন বন্ধ করছেন উনি!
পরক্ষণেই মনে হলো করতেই পারে। কাজ আছে হয়ত কোনো!
আমি নিজের মত জামা নিয়ে আলমারিটা বন্ধ করে ঘুরতেই ইথানকে আমার সামনে পেলাম।
“কিছু বলবেন?” আমি অপ্রস্তুত হয়ে বললাম।
উনি কিছু না বলে শক্ত মুখ করে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন।
আমি একটু ঘাবড়ে গেলাম তবুও চুপচাপ জায়গায় দাড়িয়ে রইলাম।
উনি আমার একদম কাছে এসে থামলেন।
আমি দৃষ্টি ফ্লোরের দিকে রাখলাম। হার্টবিট বেড়ে গেছে। আর কিছুক্ষন এভাবে দাড়িয়ে থাকলে আমার খবর হয়ে যাবে।
উনি ত কিছু বলছেনও না। তবে কড়া কিছুই শুনাবে যা তার চাহনিতে বুঝলাম।
তাই আমি ওনার সামনে থেকে সরে গিয়ে বললাম, “আমি কি করেছি!”
“আমার যেটা পছন্দ না সেটাই করেছ।” বলল ইথান।
আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালাম।
“তোমার ফ্রেন্ডরা কি করে সেই বিষয়ে আমি interest দেখাই?” শক্ত গলায় বলতে লাগল ইথান।
আমি না বুঝে বোকা সেজে তাকালাম।
“দেখাই?” উনি আবার প্রশ্ন করলেন।
আমি ভয়ে ভয়ে না সূচক মাথা নাড়লাম।
“তাহলে তোমার সাহস কি করে হয় ওদের সাথে আমাদের পারসোনাল বিষয় নিয়ে আলোচনা করার!” দাতেদাত চিপে বলল ইথান।
আমি কাপা গলায় বললাম, “ক.. কি বলেছি আমি?”
“আমি তোমার সাথে যা করি, না করি সেটা আমার আর তোমার মধ্যে থাকবে। লাইক সিরিয়াসলি?! ফুলসজ্জায় যদি কিছু হতও সেটা তুমি অন্যদের কাছে আলোচনা করতা? কমন সেন্স নেই তোমার? প্রাইভেসি বলে ত কিছু থাকা উচিৎ। তুমি এসব বিষয় কি করে তোমার ফ্রেন্ডদের বলো?” রেগে এতগুলো কথা গড়গড় করে বলল ইথান।
আমি শুধু থমথমে মুখে তাকিয়ে রইলাম। ফ্রেন্ডদের সাথে ত এমন আলোচনা হয়ই। এগুলো হলে কি সমস্যা!
প্রশ্ন করতে চেয়েও করলাম না। না জানি আবার রেগে কিনা ফেটে যায়!
“চুপ করে আছ কেনো এখন? কি কি বলেছ ওদের! যেমন কিভাবে কিস করেছ? কিভাবে বাইট করেছো?” তীক্ষ্ণ দৃষ্টির সাথে তাকিয়ে বলল ইথান।
বলতে চাইলাম যে, বলিনি কিছুই। কিন্তু আমার মুখ দিয়ে কিছুই বের হলোনা।
যদিও আমি বলে দিতাম ফ্রেন্ড দের। কারণ আলোচনা করতে করতে মুখ ফস্কে বলা হয় যায় এগুলো।
কিন্তু এগুলোও যে এত গুরুতর ঝগড়ার বিষয় হতে পারে জানতাম না।
উনি কয়েক সেকেন্ড রাগী চোখে তাকিয়ে থেকে তারপর নিজের জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলেন।
আমি নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে চিন্তা করতে লাগলাম কি করা যায়।
সরি বললে রাগ কমে যাবে!
উফ কি অসহ্য।
এক মিনিট তারমানে উনি শিলার কথা সব শুনেছেন!
হায়রে কপাল।
আরেকটা বিষয় হলো, উনি যে বললেন আমাদের মধ্যে কিছু হলে বলে দিতাম কিনা!
আমাদের মধ্যে কিছু হওয়ার সম্ভাবনা ছিল তাহলে!
আমি হা হয়ে বাথরুমের দরজার দিকে তাকালাম।
তারপর ঠোঁট উলটে বিড়বিড় করে বললাম, তাহলে কবে হবে! বেকুব শিলার বাচ্চা, আমার জীবন তছনছ করে দিল! ওর ফুলসজ্জায় যদি আমি বোম না মারি ত আমিও এরিন না।
.
ইথান ফ্রেস হয়ে বের হয়ে এলো। আপাতত সে আমার দিকে তাকাচ্ছেই না। থম মেরে আছে।
আমি আহত চোখে তার মতিগতি দেখে যাচ্ছি।
সে ফ্রেস হয়ে বেলকোনিতে তোয়ালেটা রেখে দিয়ে এসেই রুম থেকে বের হয়ে গেল।
আমি মুখ ফুটে কিছু আর বলতে পারলাম না।
আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ফ্রেস হতে গেলাম। আর হালকা পাতলা গোসল দিয়ে বের হয়ে এলাম।
তারপর হেয়ার ড্রাইয়ার দিয়ে চুলগুলো শুকিয়ে নিলাম। নাহলে ইথানের মা বুঝতে পেরে যাবে।
তারপর ডিনারের জন্য নিচে নামলাম। ডান হাত কেটে গেছে বলে এক প্লেট মাখা ভাত আমার সামনে দিলেন ইথানের মা।
“হাত নাকি কেটে গেছে? কতটা কাটলো দেখি।” বললেন উনি।
আমি আড় চোখে ইথানের দিকে তাকালাম। সে চুপচাপ বসে আছে। অবশ্য এখন অত চরা মেজাজে নেই। রাগ ঝাড়া হয়ে গেছে যেহুতু।
হয়তো সে ই বলেছে হাত কাটার কথা।
কারণ বাসায় ঢোকার সময় ইথানের মা খেয়াল করেন নি। রান্নাঘর থেকেই আমার সাথে কথা বলছিলেন।
“বেশি না।” উওর দিলাম আমি।
ইথানের মা আমার হাতটা ধরে দেখতে লাগলেন।
“আহারে। আচ্ছা চামচ দিয়ে খাও। নাকি আমি খাইয়ে দিব?” বললেন তিনি।
আমি হাত নাড়িয়ে বলে উঠলাম, “না না, আমি একাই পারব।”
পুরো ডিনার করার সময়টা উনি থম মেরেই রইলেন।
খাওয়া শেষে ইথানের মা আমাকে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল, ঝামেলা করেছ তোমরা?
আমি সাথে সাথে না সূচক মাথা নাড়লাম।
কারণ উনি বলেছেন আমাদের ব্যাপার কাউকে না বলতে।
তাই আমি কাউকে কিছু বলব না। কাউকে না।
.
আমি রুমে এসে ইথানকে দেখলাম না।
কই গেল সে!
বেলকনিতে একটা উঁকি দিলাম। সেখানেও নেই।
তাই মন মরা হয় এসে বিছানায় বসলাম।
তখনি ইথান রুমে ঢুকল।
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম।
একদফা চোখাচোখি হতেই আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।
ইথান বিছানার সামনে এসে আমার কোলের উপর এন্টিসেপটিক ক্রিম ফেলল। মুখটা খুলে তারপরই আমার কোলে ফেলল আর কর্কটা পাশে ফেলে রাখল। যাতে দ্বিতীয়বার বলতে না হয় আমার যে, খুলে দিন।
আমি ক্রিমটা হাতে নিয়ে ইথানের দিকে তাকালাম।
সে তার মত বিছানায় শুয়ে উল্টো দিকে ঘুরে রইল।
আমি ওনার দিকে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে হাতে লাগিয়ে নিলাম।
যদিও রাগ হচ্ছে কারণ উনি আরেকটু ভালো ভাবে বুঝিয়ে বলতে পারতেন।
ওনার কি পছন্দ! কি পছন্দ না! আমি কিভাবে জানবো!
হুহ।
(চলবে…)