ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-০৭

0
2778

গল্পর নাম :#ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_৭ : #শাড়ি_পড়াতে_পারেন?
লেখিকা : #Lucky

বিছানায় মাথা থেকে পা অব্দি চাদর দিয়ে নিজেকে ঢেকে শুয়ে আছি।
আমার হার্ট বিট এতটা বেড়ে গেছে যে আমি এই অস্থিরতায় ঘুমাতেও পারছি না।
আধা ঘণ্টা হতে চলল ইথান রুমে আসেনি।বেলকনিতেই আছে।
না আসলেই ভালো।
নিজের মুখ আর রাখলাম কই!
দিন দিন ত আমিই বখাটে হয়ে যাচ্ছি।
ছেলেরা ফার্স্ট মুভ নেয়। এখনে ত উল্টো হচ্ছে।
চোখ মুখ কুচকে নিজেকে নিজে গালি দিলাম। আর মনে মনে শপথ নিলাম যে এমন ভুল আর করব না।


শাড়ি পরে কলেজে যেতে হবে। কিন্তু অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য না, নবীন বরণে ভলেন্টিয়ার হিসেবে।
আর সব ভলেন্টিয়াররা শাড়ি পড়বে। যাতে সবাই চিনতে পারে যে আমরা ‘ভলেন্টিয়ার কামলা’।
যেহুতু আমি শাড়ি পরতে পারিনা। আর পরলেও কুচি জঘন্য হয় তাই শাশুড়ীর হেল্প নিলাম। ঘরে নাহয় যেমন তেমন কুচি দিয়ে পরা যায়। কিন্তু বাহিরে ত তা করা যাবে না।
ইথান সকাল সকালই বের হয়ে গেছে। নাহলে সেও দেখতে পেত আমাকে কত কিউট লাগছে। কালো ব্লাউজের সাথে কালো পারের নীল শাড়ি সত্যিই অন্যরকম সুন্দর। এর সাথে হাতে নীল কাচের চুড়ি ও কপালে কালো টিপ পরে নিলাম। আর ঠোঁটে হালকা খয়রী লিপস্টিক নিয়ে নিলাম। সাথে চুলগুলো খোলাই ছেড়ে দিলাম।
.
তাড়াতাড়ি করতে গিয়েও দেরি হয়ে গেল।
আমার বাড়ি থেকে কলেজ কাছে ছিল। কিন্তু ইথানের বাসা থেকে দূরে। এজন্য আরেকটু দেরি হলো। যদিও ইথানের মা বার বার বলছিলো এই অবস্থায় যেতে হবে না। তাও এলাম। কারণ এখন আর ব্যথা নামক সমস্যা নেই।
সবাই মোটামুটি চলেই এসেছে।
আমি তড়িঘড়ি করে কাজে লেগে পড়লাম। নবীনদের ফুল দেওয়া হবে। একটা করে গোলাপ আর একটা করে গাদা ফুল। এই দুইটা ফুল একসাথে করে বাধার দায়িত্ব আমরা যারা ভলেন্টিয়ার তাদের। এর পরে খাবার প্যাকেজিং এর কাজসহ আরো কাজ ত আছেই।
“তোর এত দেরি?” জিজ্ঞেস করলো প্রেমা।
আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড প্রেমা।
আমি দুইটা ফুল একসাথে বাধতে বাধতে বললাম, “হ্যা। কামলা খাটার জন্য জলদি এসে কি করব?”
“বাই দ্যা রাস্তা, এত সুন্দর করে সেজে কাকে দেখাবি?” ভ্রু উঁচু করে বলল প্রেমা।
আমি শুধু সরু চোখে তাকালাম।
“তোর জন্য একটা জিনিস এনেছি।” হাসিমুখে বলল প্রেমা।
আমি ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম কি।
প্রেমা ওর পার্সটা থেকে একটা রূপালি চেইন বের করলো। চেইনের মাঝ বরাবর ইংলিশ অক্ষরে ইথান লেখা।
আমি হাতে নিয়ে হা করে থেকে গেলাম। কারণ এটা অনেক সুন্দর।
প্রেমা একটু ভাব নিয়ে বলল, “কেমন?!”
আমি হাসিমুখে হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে বললাম, অনেক সুন্দর।
“আমি অর্ডার দিয়ে বানিয়েছি বলে কথা।” গর্বের সঙ্গে বলল প্রেমা।
“আয় পড়িয়ে দিই।” বলল প্রেমা।
আমি খুশি মনে সেটা গলায় পড়ে নিলাম।
“অনেক সুন্দর মানিয়েছে।” প্রেমা বলল।
আমি হাসি মুখে গলার পেন্ডেনটা দেখতে লাগলাম।
“শীলা আসে নি?” আমি প্রশ্ন করলাম।
“না আসে ত নি এখনো! আসবে হয়ত। আমরা করতে থাকি আপাতত।” বলল প্রেমা।

অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যাবে মনে হয়। কারণ চীপ গেস্টদের আসতে দেরি হয়েছিল। কারণ এদেরকে স্কুল লাইফ থেকে পানচুয়ালিটি শেখানো হয়নি মনে হয়। আমরা কাজ করে রীতিমতো সবাই হাপিয়ে গেছি।
ভলেন্টিয়ার বলে শুধু আমরাই কাজ করছি। অন্য কেউ ধারে কাছেও হেল্প করতে আসেনা।
এমনকি ভয়ে শাড়িও পরে নি তারা।
দুই একজন রাগ করে চলেও গেছে। কিন্তু আমরা যারা দ্বিতীয় বর্ষের তারা কেউই যেতে পারি নি। আমরাই ত সবচেয়ে ছোটো ব্যাজ আপাতত। নতুনরা ত মাত্র আসবে। তাই আমাদের দিয়েই গাধার খাটুনি করিয়ে নিবে। পরের বছর এই নতুনরা খাটবে। এটাই নিয়ম।
.
“বল তো কাকে দেখেছি?” লাফাতে লাফাতে এসে শিলা বলল।
কাজ করে করে ক্লান্ত আমি। তাই ওর দিকে বিরক্তির সাথে তাকিয়ে বললাম, “আমি কি করে বলব? আর তুই লাফানোর মত এত এনার্জি পাচ্ছিস কি করে? আমি ত কাজ করে করে শেষ।”
শিলা মুখটা একটু বাকিয়ে বলল, “হুহ! শুনলে ত তুই নিজেই লাফাবি।”
আমি ওর কথায় গুরত্ব না দিয়ে বললাম, “আমার অত এনার্জি নেই। অনেক কাজ করেছি। এগুলা আগে থেকে করালে এত কষ্ট হয় আমাদের? দুইদিন বসে বসে করলে তাও রিল্যাক্স হয়। কিন্তু না। তারা অনুষ্টানের দিন সকাল সকাল আমাদের এনে খাটাবে। খাটাশের দল।”
“ইথান এসেছে।” ক্লান্ত ভঙ্গিতে বলল শিলা।
শুনে আমি অনেক বেশিই চমকে গেলাম। আদৌ কি ঠিক শুনলাম!
“কে এসেছে?!” আমি বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলাম।
শিলা হাই তুলতে তুলতে বলল, “এত সময় আমার কথায় পাত্তাই দিলি না। এখন এত কিসের প্রশ্ন!”
“ইথান কেন আসবে!” বললাম আমি।
“তোকে নিতে এসেছে হয়তো রে গাধা।” নিজের কপাল চাপড়ে বলল প্রেমা।
আমাকে নিতে!
হয়তো ইথানের মা-ই বলেছে ওনাকে আসতে।
আমার মুখ জুড়ে এখন শুধু হাসি আর হাসি।
আমি প্রেমার দিকে ঘুরে বললাম, “আমার সব ঠিক ঠাক আছে?”
“হ্যা বাবা আছে।” মুচকি হেসে বলল প্রেমা।
“সত্যি?” সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বললাম আমি।
“দরকার হলে ওয়াসরুমের আয়নার দেখে আয় যা।” বলল শিলা।
হ্যা এটাই করা যেতে পারে।
আমি ওয়াসরুমে চলে গেলাম। তারপর নাকমুখে পানি দিয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছে নিলাম।
.
নিজেকে সুন্দর ভাবে পরিপাটি করে নিয়ে বের ত হয়ে এলাম। কিন্তু ইথানকে কোথায় দেখেছে শিলা সেটাই ত প্রশ্ন করিনি। হায়রে কপাল।
ঘুরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ানোর আগেই পিছন থেকে কেউ বলল, “এই তুমি নিউ সেকেন্ড ইয়ার থেকে ভলেন্টিয়ার না?”
আমি মুখ কালো করে পিছনে ঘুরলাম।
একটা সিনিয়র আপু।
অসহ্য এখনি কাজে লাগিয়ে দেবে।
কিন্তু কিছু করার নেই।
আমি করুন দৃষ্টিতে হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম।
সে আমার হাতে কয়েকটা টিস্যুর বক্স দিয়ে বলল, “এগুলো হল রুমে রেখে আসো। এগুলো লাগবে না।”
বলেই সেই সিনিয়র স্থান ত্যাগ করল।
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে হল রুমে গিয়ে টিস্যু গুলো রাখলাম।
তারপর হল রুম থেকে বের হতেই মৃদুলের সামনে পরলাম।
সে কিছু না বলে হতাস চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
বেচারার অবস্থা দেবদাসের মত হয়ে গেছে।
আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বললাম, কিছু বলবেন?
মৃদুল অত্যন্ত আহত গলায় বলতে লাগল, “বিয়ে করার আগে একবার বলতে পারতা। আমি সেই কবে থেকেই তোমাকে….যাই হোক। এভাবে মুখের উপর ব্লক দিয়ে দিবা বুঝিনাই। ভালো মত বললেই আমি বুঝতাম।”
তারপর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে মৃদুল বলল, “আমি আর জ্বালাবো না। ভালো থেকো।”
আমি চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে শুনতে লাগলাম। বেচারা ছেলেটা।
যদিও ইথান ব্লক দিয়েছিল রেগে।

“বাই।” বলল মৃদুল।
আমি কিছুই বললাম না। শুধু কিছুই জানিনা এমন ভান করে রইলাম।
মৃদুল কথা শেষ করে উল্টোদিকে ঘুরে হাটা শুরু করল।
যাই হোক। ওর জ্বালানো থেকে আমি শেষ অব্দি বাচলাম।
ভেবেই মুখে অনেক বড় হাসি চলে এলো। সেই হাসিমাখা মুখটা নিয়ে আমি পিছনে ঘুড়েই থমকে গেলাম। আর মুখের হাসিও সীমিত হয়ে গেল।
ইথান শক্ত মুখে তাকিয়ে আছে।
অফিসের গাড় খয়রী শার্টের সাথে কালো টাই আর কালো জিন্স।
কোটটা ভাজ করে এক হাতে ধরা আর অন্য হাতে ফোন।
কোটের কারণে হাতের কালো ঘড়িটা ঢাকা পরে গেছে।
কখন এসে দাঁড়িয়েছেন উনি কে জানে।
আমি একটু হাসার চেষ্টা করে বললাম, “আ..আপনি কখন এসেছেন এখানে?”
“কেনো? ডিস্টার্ব করে ফেলেছি?” ঠান্ডা গলায় বলল ইথান।
তার চাহনিই বলে দিচ্ছে যে সে ভুল সময় এসে দাড়িয়েছিল এখানে। আর সব উল্টো বুঝেছে।
“আপনি ভুল বুঝচ্ছেন।” আমি বলে উঠলাম।
“ফোন দিচ্ছি কখন থেকে?” বলল ইথান।
“ফো..ফোন?” আমি বিড়বিড় করে বললাম।
আসলে ফোন সাইলেন্ট করা ছিল আর কাজের চাপে পার্সটা এক জায়গায় ফেলে রেখেছিলাম।
-“এখানে বসে ছেলেদের সাথে গল্প করছ একা একা!”
-“আমি ত…”
-“তোমাকে এই অনুষ্ঠানে আসতেও বারন করেছিলাম আমি।”
আসা থেকে বকাবকি শুরু ওনার। এখন ত আমারো উল্টো চিল্লাতে মন চাচ্ছে। কিন্তু আমি মাথা নিচু করে এদিকে ওদিকে তাকাতে লাগলাম আর চিন্তা করতে লাগলাম কি বলব!
ইথান কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে উল্টো দিকে হেটে চলে যেতে লাগলো।
“থামুন প্লিজ।” বলেই আমি দ্রুত হাটতে গিয়ে শাড়িতে পা দিয়ে ফেললাম আর ধপাস করে পরে ফেলাম।
তারপর..?
তারপর সবচেয়ে লজ্জাজনক পরিস্থিতি তৈরি করে ফেললাম আমি।
শাড়ি পুরো খুলে গেল শুধু আঁচলটাই গায়ে রয়ে গেল।
আমি ঘটনার আকস্মিকতায় মাথা নিচু করেই রইলাম।
এদিকে কাচের কয়েকটা চুড়িও ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে গেছে।
এখন কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করে, দশা কাকে বলে?
হয়ত একেই বলে।
ইথান আমার কাছে এসে হাটু ভাজ করে ঝুকে বসে আমার হাত ধরে দেখতে লাগল কেটেছে কিনা।
আমি লজ্জায় মাথা নিচু করেই রইলাম।
এভাবে ওনার চোখের সামনেই পরতে হলো!
হাত চেক করে দেখলো ডান হাত অল্প কেটেছে।
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ইথান আমাকে বলল, “শাড়ি সামলাতেই পারো না, তাও পড়া লাগবে কেনো? আর তোমাকে আগেই বলেছি না পরতে।”
ওনার শেষের কথাটা মোটেই পছন্দ হলো না আমার।
শাড়িতে মেয়েদের অনেক সুন্দর লাগে। আমাকেও লাগে। এই আনরোম্যান্টিক বলে কিনা শাড়ি না পরতে?!
আমি মুখ ফুলিয়ে ফেললাম কিন্তু মাথা নিচু করেই রাখলাম।
ইথান একটা রুমাল বের করে ডান হাত বেধে দিল আমার। তারপর নিজের কোটটা আমার গায়ের সামনে দিয়ে রেখে আমাকে কোলে তুলে নিলো।
আমি চমকে বলে উঠলাম, “কি করছেন আপনি? কেউ দেখে নিলে।”
ইথান ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, “কেউ নেই এখানে।”
.
ইথান হল রুমে নিয়ে এসে আমাকে কোল থেকে নামালো।
শাড়ির আঁচল বাদে সব মেঝেতে লুটিয়ে পরলো।
“তাড়াতাড়ি শাড়ি ঠিক করো।” বলল ইথান।
আমি মিনমিনে গলায় বললাম, “আমি ত পড়তে পারিনা।
ইথান রেগে আমার দিকে দুইপা এগিয়ে আসতেই আমি পিছিয়ে দেয়ালের সাথে লেপ্টে গেলাম।
“আমি না আসলে আজ কি করতা তুমি? ওভাবে বসে থাকতা?” বলল ইথান।
আমি একটা ঢোক গিলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।
ওনার জন্যই ত হলো।
“বাসায় কিভাবে পরতা?” বলল ইথান।
“মাত্র দুইবার পরেছিলাম। প্রথমদিন রাতে পেচিয়ে পেচিয়ে আর সকালে এবড়োখেবড়ো কুচি দিয়ে। ওগুলো ত সুতির ছিল। এটা সিল্কের। পারিনা কুচি দিতে। আর পেচিয়ে পরলে ত হাটতে পারব না। আপনার মা পরিয়ে দিয়েছিল।” শাড়ির আঁচল অাঙুল প্যাচাতে প্যাচাতে নিচু গলায় বললাম আমি।
“তাহলে এখন?” দাতেদাত চিপে বলল ইথান।
“আপনি পারেন না? আপনি পড়িয়ে দিন।” আমি ইথানের দিকে মিনতিপূর্ণ চোখে তাকিয়ে বলে উঠলাম।
ইথান সরু চোখে তাকিয়ে বলল, “হোয়াট?”
আমি মাথা নিচু করে নিলাম।
“For your kind information, আমি শাড়ি পরাতে পারিনা।” বলল ইথান।
শুনেই মন খারাপ হয়ে গেল আমার।
কি পারে তাহলে?
আমি ঠোঁট উলটে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
ইথান আমার সামনে থেকে চলে যেতে লাগল।
সাথে সাথে আমি ওর হাত চেপে ধরে বললাম, “আমাকে একা রেখে যাবেন না প্লিজ। আমি সত্যিই পারিনা।”
ইথান আমার হাতের দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে তারপর আমার দিকে তাকালো আর বলল, “যাচ্ছি না। হাত ছাড়ো। আর যেমন পারো তেমন পড়ো।”
এটা কি বলল!
কি একটা অবস্থা। আমার ফোনটাও আনি নি যে প্রেমাকে ফোন দিব। তাছাড়া প্রেমাও শাড়ি পড়তে পারেনা, আমাকে কি পড়াবে!

ইথান আমার সামনে থেকে সরে গিয়ে দাড়ালো আর আমাকে ইশারায় শাড়ি পড়তে বলল।
আমি মনে মনে ওকে কয়েকটা গালি দিয়ে শাড়ির দিকে নজর দিলাম। আচলটা শুধু গায়ে ফেলে রাখা আছে পিন মেরে রাখার কারনে। বাকি সব মাটিতে।
আসলে শাড়ি খুলত না।
পেটিকোট টাইট দিয়ে বাধিনি। শাশুড়ী বার বার বলেছিল। আমি গায়ে লাগাইনি। তিনি আরো সেফটি পিনও মারতে বলেছিল। সব আমার দোষ।
এখন নিজেই ভুগছি।
ইথানের দিকে তাকালাম সে আমার সোজাসুজি দাড়িয়ে ফোনের দিকে দেখতে ব্যস্ত।
একটা নিঃশ্বাস ফেলে শাড়ি পরতে লাগলাম।
শাড়ি পরার সময় মনে মনে সিল্কের শাড়িকেও গালি দিতে লাগলাম। কুচি তিনটা করি ত, দুইটা ফসকে যায়। হাত কেটে যাওয়াতে আরোই সমস্যা হচ্ছে।
“কুচি করার আগে শাড়ি একবার গুজে নিতে হয়। এইযে…।” সরু চোখে তাকিয়ে নিজের ফোনটা আমার দিকে ঘুড়িয়ে বলল ইথান।
ইউটিউবে শাড়ি পরার ভিডিও বের করে ফেলেছে সে।
আমি হতাশ চোখে নিজের দিকে তাকালাম।
হায়রে কপাল। আমি শাড়ি এক প্যাচ না দিয়েই কুচি করছিলাম।
“এটা দেখো।” ইথান নিজের ফোনটা এগিয়ে দিলো।
আমি ফোনটা হাতে নিলাম।
সেই মুহুর্তে কয়েকজন কথা বলতে বলতে হল রুমের দিকে আসছিলো।
আমি আর ইথান দুইজনই চমকে গেলাম।
ইথান এক টান দিয়ে আমাকে এক সাইডে একটা আলমারির আড়ালে নিয়ে এলো। আর আমার সামনাসামনি খুব কাছে এসেই দাঁড়ালো। আমি ত থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম কিন্তু আমার হার্টবিট বাড়তে শুরু করে দিল।

উনি হাতটা এখনো ধরে আছেন।
যদিও সে কারা এসেছে সেটা পর্যবেক্ষণ করতেই ব্যস্ত।
আর আমি ইনিয়েবিনিয়ে তাকে দেখতে ব্যস্ত।
.
ওরা কিছু জিনিস রেখে চলে যাওয়ার সাথে সাথে ইথান গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
তারপর আমার কাছে এসে তাচ্ছিল্যের সাথে বলল, “আমিই পড়াচ্ছি। কারণ তোমার সারাজীবন লেগে যাবে।”
“আপনি শাড়ি পরাতে পারেন?” হা হয়ে প্রশ্ন করলাম আমি।
উনি শাড়ির দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ রেখে শাড়ি হাতে নিতে নিতে বললেন, “ইউটিউব।”
আমি মনে মনে বললাম, অহ আচ্ছা।
ইথান আমার হাত থেকে নিজের ফোনটা নিয়ে তারপর ভিডিও চালু করলো।
আমি ঠোঁট কামড়ে ধরে ফাকে ফাকে ওনার দিকে তাকাতে লাগলাম। হার্টবিট এখনো বেড়েই চলছে। আর পেটের মধ্যেও কেমন কেমন হচ্ছে।

উনি কয়েক সেকেন্ড দেখে ভিডিও পজ করলেন। তারপর আমার শাড়ির আঁচল ধরে কাধে উঠিয়ে দিলেন।
একটু কেমন কেমন লাগলেও আমি চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম। আর যত সম্ভব স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলাম।
উনি এক অংশ হাতে ধরে পেটে গুজে দিলেন। আমি সাথে সাথে কেপে উঠলাম।
ইথান আমার দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো।
“সুড়সুড়ি লাগছে।” চোখের দৃষ্টি রুমের ফ্লোরের দিকে আবদ্ধ রেখে নিচু গলায় বললাম আমি।
ইথান কিছু না বলে স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকেই তাকিয়ে রইল।
এতে আরো বেশিই কেমন কেমন লাগছে আমার।
উনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন!
আমি আস্তে আস্তে ওনার দিকে তাকালাম।
উনি আমার গায়ের দিকে তাকিয়ে আছেন।
সাথে সাথে আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে নিলাম। আর দুইহাত একসাথে ধরে কচলাতে লাগলাম।
উনি হঠাৎই আমার বুকের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন।
সাথে সাথে আমি চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে একশ্বাসে বলে উঠলাম, “এখন না প্লিজ, আমি এখনো রেডি না।”
.
কয়েক সেকেন্ড চোখ বন্ধ করেই রইলাম কিন্তু তেমন কিছুই হলো না।
তাই আস্তে আস্তে এক চোখ প্রথমে খুললাম। আর ঘটনা বুঝেতে পেরে দুই চোখই খুললাম।
উনি আমার গলার পেন্ডেনটা হাতে নিয়ে আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছেন।

(চলবে…)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে