গল্পর নাম : #ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_৩ : #কালপ্রিট
লেখিকা : #Lucky
“মেয়ে দেখলেই ছুতে ইচ্ছে করে?” রেগে বলে উঠলাম আমি।
ছেলেটা অনেক বেশি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো।
“অনেক ক্ষণ ধরে খেয়াল করছি। টাচ করার ধান্দায় থাকেন তাই না? আপনাদের মত অসভ্য কতগুলো ছেলের জন্য আজ সমাজের এই অবস্থা।” আমি চোখ পাকিয়ে বললাম।
ছেলেটার সারা মুখে হলুদ লাগানো। এই আবছা অন্ধকারে চেহারা ভাল বুঝাও যাচ্ছেনা।
আমার চেয়ে লম্বা। আমি নিজেই ত পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি। এই ছেলে পাঁচ ফুট আট হবে হয়তো। আর দেখে ভদ্র পরিবারেরই ছেলে মনে হয়।
কিন্তু ভদ্র মনে হলেই কি আর ভদ্র হয়!
গ্রামের এক বিয়েতে এসেছি আমি। আজ হলুদ। হলুদের অনুষ্ঠানেও মনে হলো কেউ আমার কোমড় স্পর্শ করল। যদিও তখন খুজে পাইনি। তাহলে সেখানেই পুতে দিতাম। তবে এর পরেও গায়ে অনেক বার মোড়ানো কাগজও মেরেছিল। এত লোকের মধ্যে বুঝতেও পারি নি। এখন হাত মুখ ধুতে কলের কাছে এসেছিলাম। তখনি কেউ পিছন থেকে আবার আমার পিঠে ছোটো মোড়ানো কাগজ মারল। পিছনে ঘুরে এই ছেলেকে দেখলাম। আর কি! সব জায়গায় বখাটে।
কিন্তু এই ছেলে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন আমি বখাটে, আর সে নির্দোষ।
আমি নাক মুখ কুচকে বললাম, এরপরে যদি এগুলো করেন তাহলে ফল ভাল হবেনা।
“What do you mean?” ভ্রুকুচকে বলল ছেলেটা।
ন্যাকা সাজচ্ছে এখন। যত্তসব। আশেপাশে আর কেউ নেই। এই ছেলেই সব করেছে আমি জানি। এরা এক্সট্রা অর্ডিনারী বখাটে। দোষ করবে উপর থেকে ভাবও নিবে।
“বখাটে কোথাকার। আবার ভাব নেওয়া হচ্ছে?” ক্ষেপে বললাম আমি।
ছেলেটা রেগে গেল।
তাতে কি! আমি ভয় পাইনা।
তখনি কয়েকজন ছেলে কথা বলতে বলতে কলের কাছে এলো।
“কিরে ইথান, একে চিনিস তুই?” একটা ছেলে বলল।
“বখাটের নাম ইথান তাহলে!” মুখে একরাশ বিরক্তি এনে আমি বলে উঠলাম।
ছেলেগুলো হতভম্ব হয়ে গেল।
ইথান নামের ছেলেটা ত রেগে আগুন হচ্ছে।
সবার সামনে অপমান করাই দরকার। নাহলে এসব ছেলেরা শিখবে না।
“বখাটে! কে?” অবাক হয়ে বলল আরেকটা ছেলে।
“এইযে এই ছেলে। আমার সাথে সেই কখন থেকে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টায় আছে। এসব ছেলেদের থাপড় দিয়ে ঠিক করা লাগে।” বললাম আমি।
আশেপাশে আরো কয়েকজনও এসে হাজির হলো।
সবাই হাত মুখ ধুতেই আসছে। হলুদের অনুষ্ঠান প্রায় শেষের পথে।
ইথান রেগে কিছু বলার আগেই আমার ডাক পরল।
“এরিন, জলদি আয়।”
আমি ইথানের দিকে একটা চোখ ঝাঝানি দিয়ে বললাম,”সময় থাকতে ভাল হন। নির্লজ্জ কোথাকার।”
আশেপাশের মানুষ ফিসফিসিয়ে কথা বলতে লাগল। কেউ কেউ ইথানের দিকে ঘৃণার চোখে তাকালো।
এতে ভালই লাগল। এটাই হওয়া উচিত।
আমি সেখান থেকে চলে এলাম।
হলুদের অনুষ্ঠানে আমার মা তার এক পুরোনো বান্ধবীর সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন।
তারা অনেক ভালো ফ্রেন্ড। আজ অব্দি মায়ের মুখেই শুনেছিলাম ওনার কথা।
“মনে আছে আমার কথা? তুমি ছোটো থাকতে একবার গিয়েছিলাম তোমাদের বাসায়।” বললেন উনি।
আমি ঠোঁট উলটে না সূচক মাথা নাড়লাম। আমার মনে নেই সে কথা।
“আমার ছেলে ভুল করে তোমার ফুলদানি ভেঙে ফেলেছিলো তাই তুমি ওর ঘড়ি ভেঙে দিয়েছিলে! মনে নেই?” উনি উজ্জ্বল হাসির সাথে বললেন।
আমি চিন্তা করতে লাগলাম। সেভাবে ত মনে আসছে না, তবে ঘড়ি ভেঙে ছিলাম হয়ত ছোটো বেলায় কারো।
“অনেক ছোটো ছিল, মনে কি থাকবে? চার বছরের কম ছিল তখন।” আমার মা বলল।
“তাও ঠিক।” বললেন উনি।
“তোর ছেলে কই?” মা জিজ্ঞেস করল।
উনি এদিকে ওদিকে চোখ বুলিয়ে বললেন, “হবে এখানে কোথাও!”
একটু থেমেই উনি বলে উঠলেন, “ওই ত!…..ইথান এদিকে আয়।” ডাকলেন উনি।
আমি নাম শুনেই চমকে উঠলাম।
ইথান ওর মায়ের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে আমাকে দেখে চোখ মুখ শক্ত করে ফেলল।
ছেলেটা দেখতে সুন্দর। তখন হলুদ চেহারায় লেগে থাকার কারনে চেহারা বোঝা যাচ্ছিলো না। এখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
ইথান ওর মায়ের কাছে এসে দাড়াতে না দাড়াতেই আমি বলতে লাগলাম, “এই বখা…”
ইথানের রাগমিশ্রিত চোখের দিকে তাকিয়ে আমি চুপ করে গেলাম।
‘এই বখাটেটা আন্টির ছেলে? How!’ মনে মনে বললাম আমি।
“তোরা চিনিস একে অপরকে?” জিজ্ঞেস করল ইথানের মা।
“kind of.” আমার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে দাতেদাত চিপে বলল ইথান। রাগ দমন করে রেখেছে বুঝাই যাচ্ছে।
“কিভাবে চিনিস?” ইথানের মা অবাক হয়ে গেল।
ইথান কিছু বলল না।
“কত বড় হয়ে গেছে ছেলে তোর।” বলল আমার মা।
“মনে আছে ছোটো বেলায় আমরা বলেছিলাম যে আমাদের ছেলে আর মেয়ে হলে দুইজনের বিয়ে দিব!” বলল ইথানের মা।
আমি চমকে গেলাম, “বিয়ে? এই বখা…” এটুকু বলেই আমি চুপ করে গেলাম।
ইথান রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি কোনোরকম পাত্তা না দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে রাখলাম।
আমার মা গল্পে ব্যস্ত হয়ে গেল আর আমাদের দুইজনকে রেখে চলে গেল।
আমি সরু চোখে ইথানের দিকে তাকালাম। সে ত রেগে আগুন।
“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?” ভাব নিয়ে বললাম আমি।
“You are not my type. So Don’t flatter yourself.” তাচ্ছিল্যের সাথে বলেই ইথান চলে গেল।
আমাকে কিছু বলার সুযোগও দিল না।
কত বড় সাহস! রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার।
আমি হেটে এগিয়ে গিয়ে ইথানের সামনে দাড়ালাম আর বললাম, “আপনিও আমার টাইপের না। বখাটে কোথাকার!”
ইথান রেগে আগুন হয়ে গেল।
আশেপাশে কয়েকজন আমাদের দিকে তাকালো। আমি সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ করলাম না। নিজের মত হেটে চলে এলাম। আরো কিছু মানুষও শুনলো। যাক এখন শান্তি লাগছে।
.
পরেরদিন সকালে উঠতে দেরি হয়ে গেল। হলুদ হয়েছে। আজ বিয়ে। আমি জলদি ফ্রেস হয়ে বের হয়ে এলাম।
পুরো বাড়ির উঠোন রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো হয়েছে। দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।
কিন্তু একটা সুতা ঢিলা হয়ে গেছে যার কারণে সেই সুতার কাগজগুলোও নিচে নেমে এসেছে।
আমি সেটা ঠিক করার জন্য লেগে পরলাম। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! বাশের কাছে বাধা ওই একটা সুতা টাইট দিতে গিয়ে ভুলে সব সুতা খুলে ফেললাম। আরকি খুলে গেল।
সম্পূর্ণ সাজানো মাটিতে গেল। মানে, এক সাইডের
সুতার রঙিন কাগজ গুলো সব খুলে গেল।
কতগুলো ছেলে দৌড়ে এসে নিজেদের কপাল চাপড়াতে লাগল।
আমি দোষী চোখে তাকিয়ে রইলাম।
“আপু সেই সকাল থেকে সাজাচ্ছি! কি করলেন এটা! রাতে শিশির পরে তাই আগে সাজালে কাগজ নষ্ট হয়ে যেত। তাই সকাল সকাল ঘুমের বারো বাজিয়ে কাজ করলাম। এটা কি করে দিলেন।” বলল একটা ছেলে।
আমি কি বলব বুঝতে না পেরে তাকিয়ে রইলাম। কি করতে কি হয়ে গেল।
“Do it Again.” বলল ইথান।
আমি পিছন ফিরে তাকালাম।
ইথান আমার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের সাথে বলল, “এবার খেয়াল করবেন যাতে যে সে এসে বিগড়ে দিতে না পারে। যাদের করার কাজ নেই তারা এসব করতে ভালোবাসে।”
আমি বুঝলাম যে উনি আমাকে খোটা মেরে বললেন।
আমি দাতেদাত চিপে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করলাম। তারপর ছেলেগুলোর দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে বললাম, “সরি ভাইয়া। ভুল হয়ে গেছে। আপাতত এই বখাটে যা বলছে তাই ই করেন। আবার ঠিক করেন। আমি আর আসব না।” বলেই আমি ইথানের দিকে ব্যাঙ্গত্মক চোখে তাকালাম।
তার নাক মুখ শক্ত হয়ে গেছে আর হাতও মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে এই ছেলেগুলোও হা হয়ে রইল।
“আর আপনাদের মা বোন থাকলে সাবধান। এই ছেলে প্রচুর লুচ্চা।” বললাম আমি।
বুঝুক মজা এখন! আমি নিজের মতো ভাব নিয়ে চলে এলাম।
বিয়ের অনুষ্ঠানেই সারাদিন কেটে গেল। মাঝে একবার দুইবার ইথানের দিকে চোখ পরেছিলো। সে ত তার অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আমি সেটা গায়ে মাখাচ্ছি না।
কিন্তু ব্যাপারটা অনেক ভাল লাগছে।
কিন্তু এই ভালো লাগাটা কি এমনিই ভালো লাগা? নাকি অন্যকিছু!
আমি নিজেকে ধমকে মাথা থেকে সব ঝেড়ে ফেললাম। একটা লুচ্চা ছেলেকে কি করে পছন্দ করব আমি! ছি! অসম্ভব।
কিন্তু উনি কি সত্যিই খারাপ?
সন্ধ্যার পরে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলো। আর শেষ হতেই খেয়াল হলো যে আমার এক কানের দুল নেই। এখন কোথায় খুজবো! এটা আমার প্রিয় দুল ছিল। একটা অর্ধচন্দ্রাকার দুল। দুলটা কালো আর এর প্রান্তভাগ হালকা সবুজ। সেই সবুজের মধ্যে কয়েকটা ছোটো তারা আকা।
বাহিরের দেশের। গিফট দিয়েছিল কাকা।
আমি সব জায়গায় খুজে এলাম। কোথাও নেই। মনটাই খারাপ হয়ে গেল।
মন মরা হয়ে ফিরে এসে বিছানায় বসলাম।
হঠাৎ মনে পরল বাগানের কথা। অইখানে অনেক ছবি তুলেছিলাম।
সাথে সাথে আমি বাগানে চলে এলাম। কিন্তু সঙ্গে করে ফোনটা আনতে ভুলে গেলাম। চাদের আলো আছে কিন্তু তাও দুল খোজার জন্য লাইট লাগবে।বাগানটা একটু নির্জন জায়গায়। কোনো লাইট নেই আসেপাশে। মনে করেছিলাম লাইট থাকবে। গ্রামে এই এক সমস্যা।
ফোন না আনলে খুঁজে পাবই না। তাই ফিরে যেতেই হবে।
কিন্তু সেই মুহুর্তেই মনে হলো কেউ আমার পিছনে এসে দাড়ালো।
আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম।
পিছনে ঘুরতেও ভয় লাগছে। ভুত হলে?
আমি ঠিক করলাম কোনো দিকে না তাকিয়ে বাড়ির দিকে হাটা শুরু করব।
তাই সত্যিই পিছনে ফিরলাম না।
কিন্তু দুই পা বাড়াতেই পিছন থেকে তিনটা ছেলে আমার পথ আটকে দাঁড়ালো।
আমি অনেক ঘাবড়ে গেলাম আর বললাম, “কারা আপনারা?”
“পুরো হলুদ জুড়ে তোমাকে সিগনাল দিচ্ছি, তুমি নোটিশই করছ না।” একটা ছেলেটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল।
ওর চেলাপেলা গুলোও দাত কেলাতে লাগল।
তারমানে এরা! কিন্তু তিনজনের সাথে আমি পেরে উঠব কিভাবে!
ভয়ে শুকিয়ে গেলাম আমি। ওদিকে সাউন্ড বক্সে জোরে জোরে গান বাজছে। আমি চিৎকার করলে কেউ শুনবেও না।
কিন্তু ভয় পেলে চলবে না।
আমি সাহসী হবার ভান করে মিথ্যে বললাম,”আ..আমার বাবা পুলিশ। মেরে লক আপে দিয়ে দিবে একদম।”
ছেলেগুলো ভয় পেল না। বরং পাশের একটা ছেলে বলল, “ওহ তাই? আমার বাপ র্যাব।”
ছেলেগুলো হাসতে লাগল।
আমি ভয়ে ঢোক গিলে নিলাম।
“তোমাকে ভালোবাসি আমি।” একটা ছেলে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল।
আমি দ্রুত পিছিয়ে গেলাম আর পিছনে কারো সাথে ধাক্কা খেলাম।
ধাক্কা খেয়ে সাথে সাথে আমি জড়সড় হতে এক সাইডে সরে দাড়ালাম কারণ আমি মনে করলাম পিছনের লোকটাও এদের দলের।
কিন্তু সামনের ছেলেগুলো ভয়ে কাচুমাচু হয়ে গেল।
আমি অবাক হয়ে গেলাম।
তারপর পাশে ফিরে তাকালাম।
ইথান! সে এখানে কি করছে? যদিও ওকে দেখে আমার ভয় দূর হয়ে গেল।
হঠাৎই ইথান ওই ছেলেটার কলার চেপে ধরলো। তাই ভয়ে বাকি দুইটা ছেলে দৌড়ে পালালো।
“So, you are the culprit?” গম্ভীরমুখে বলল ইথান।
ছেলেটা থতমত খেয়ে গেল।
“স…সরি ভাই আর হবে না।” ভয় পেয়ে বলল ছেলেটা।
“নাম কি?” বলল ইথান।
ছেলেটা আমতা আমতা করতে লাগল।
ইথান রেগে কলার আরো জোরে চেপে ধরতেই বখাটে টা ভয়ে বলে উঠল, “হি..হিরো।”
নাম শুনেই আমার মুখ ভেটকি মাছের মতো হয়ে গেল। বখাটের নাম যদি হয় হিরো!
“আসল নাম জানতে চেয়েছি।” বলল ইথান।
“ভাই আর জীবনেও এমন ভুল করব না। এটা আপনার গার্লফ্রেন্ড, জানতাম না ভাই। সরি ভাই। মাফ করেন ভাই! বোন সরি বোন।” ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে মিনতি করে বলল।
আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। আমি কবে গার্লফ্রেন্ড হলাম!
ইথান ভ্রুকুচকে ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। ছেলেটা সাথে সাথে দৌড়ে পালিয়ে গেলো।
আমি আড়চোখে ইথানের দিকে তাকালাম।
ইথানও আমার দিকে তাকালো।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, উনি কিভাবে এখানে এলেন! আমাকে ফলো করছিলেন! নাহলে এত রাতে এই বাগানে কে আসবেন!
“আ…আপনি এখানে কি জন্য….!” আমি প্রশ্ন করে ফেললাম।
ইথান উওর না দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল।
আমি চমকে পিছিয়ে যেতে যেতে বললাম,”ক…কি?”
উনি এগিয়েই আসতে লাগলেন।
এটাই বাকি ছিল! ভুল মানুষকে বখাটে বলে বলে পচিয়েছি। অপমানও করেছি। এখন কি সহজে ছেড়ে দেবে?
সরি বলব! নাকি বাচানোর জন্য ধন্যবাদ বলব!
কিন্ত এখন ত রেগে আছে। কি করবে!
“কি ক..করতে চ…চাচ্ছেন?” ভয়ে ভয়ে পিছাতে পিছাতে একটা ঢোক গিললাম।
ইথান আমার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলো। আমি অনেক চমকে গেলাম। আমার হার্টবিট বেড়ে যেতে লাগল।
ইথান আমার পিছনের দিকে তাকালো।
আমি প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আস্তে আস্তে আড় চোখে পিছনে তাকালাম।
পিছনেই একটা গোলাপ গাছ ছিল। এজন্যই উনি আমার হাত ধরে টান দিয়েছেন।
হঠাৎই আমাদের উপর কেউ লাইট মারলো।
ইথান লাইট ধরে থাকা মেয়েটাকে দেখে সাথে সাথে আমার হাত ছেড়ে দিল।
প্রথমে মেয়েটা একটু থ মেরে গেল কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে সুর টেনে বলল, “ভাইয়া~~, এখানে কি~~করছিস তুই!”
বলেই সে ভ্রু উঁচু করলো!
তার কথার স্টাইলেই বোঝা যাচ্ছে সে ভুল বুঝছে আমাদের।
মেয়েটা মুচকি হেসে সাথে সাথে ঘুরে হাটা শুরু করল আর জোরে জোরে ডাকতে লাগল, “মাসি মাসি, ভাইয়া প্রেম করছে। হট রোম্যান্স ইন গার্ডেন।”
“Damn it.” বলেই ইথান বিরক্তির সাথে মেয়েটার পিছনে চলে গেল।
আমি চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম।
বিয়ে বাড়িতে ইথানের সাথে পরের দিন আর দেখা হলো না। নিজের অজান্তে আমি বার বার এদিক সেদিক তাকিয়ে ওকে খুজতে লাগলাম। কিন্তু আর পেলাম না।
তাই মনে করলাম এটাই হয়তো শেষ দেখা!
কিন্তু না…।এই বিয়ে বাড়ি থেকে বাসা ফিরে যাওয়ার দুইদিন পরেই ইথানের মা আমাদের বাড়িতে এলেন।
আমি ভার্সিটি থেকে ফিরে ওনাকে দেখে একটু অবাক হলাম।
কিন্তু তার চেয়েও বেশি অবাক হলাম যখন শুনলাম উনি ইথানের সাথে আমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন।
“দুইজনই যখন দুইজনকে ভালোবাসে তখন আমি বাধা দেওয়ার কে!” ইথানের মায়ের এই কথাতে আমি মনে করেছিলাম যে উনি আমাকে ভালোবাসেন।
কিন্তু আমি ত ভুল ছিলাম।
তাও মনে এখনো একটাই প্রশ্ন, সত্যিই কি উনি একদমই জানতেন না যে বিয়েটা আমার সাথে ছিল!
আমি ইথানের দিকে ফিরলাম। ইথান আমার দিকে ফিরে ঘুমিয়ে আছে।
ঘুমন্ত অবস্থায় কতটা সুন্দর লাগছে ওকে দেখতে। আমার মুখে মৃদু হাসি চলে এলো।
আমি ইথানের একটু কাছে এগিয়ে এলাম। আর ওকে দেখতে দেখতে নিজের অজান্তেই আমার হাত বাড়িয়ে ওর গাল স্পর্শ করলাম।
সেই মুহুর্তেই ইথান আস্তে আস্তে চোখ খুলে আমার দিকে তাকিয়ে তারপর আমার হাতের দিকে তাকালো।
আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। আর হাতটা ওর গালের উপর থেকে উঠিয়ে এদিক ওদিক নাড়াতে নাড়াতে বললাম, “ম..মশা। মশা ছিল।”
ইথান আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকালো। হয়ত বুঝে গেছে!
হায় হায়! এত পাতলা ঘুম! আরেকটু গভীর ঘুম হলে কি হত! এখন!
“Do you think I’m a fool?” বলল ইথান।
আমি একটু সাহস যুগিয়ে বললাম, “নিজেকে অত বেশি চালাক মনে করার কিছুই নেই।”
ইথান তাচ্ছিল্য চোখে তাকিয়ে বলল,”তোমারো নিজেকে over smart ভাবার কিছুই নেই। কার মায়ের বড় গলা জানো?”
আমি রেগে গেলাম। উনি চোর বলছেন আমাকে!
“এখানে চুরির কি দেখেছেন? বিয়ে হয়ে গেছে আমাদের আর আপনি এখন আমার। আমি ছুতেই পারি আপনাকে।” আমি রাগে জ্বলে বলে ফেললাম।
বলার পরে খেয়াল হলো কি বলে ফেলেছি। আমি এক হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে বিস্ফোরিত চোখে ইথানের দিকে তাকালাম।
ইথানের তাচ্ছিল্য ভাব এখন গাম্ভীর্যে পরিনত হয়েছে।
ভাইরে ভাই, আমি আর আমার মুখ। কি করে ফেললাম এটা!
আমি লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলাম। আর দ্রুতো উল্টো দিকে ঘুরলাম।
ওপাশ থেকে ইথান আর কোনো কথা বলল না।
(চলবে…)