গল্পর নাম : #ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_২ : #’বখাটে_at_first_sight’
লেখিকা : #Lucky
বৌভাতে অনেক লোকজনই এলো। আমার বাড়ির লোকজনও সকালের মধ্যেই চলে এলো। আমি তাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। যদিও মা আসে নি। আসার নিয়ম নেই, নাকি ওইবাড়ির কাজে ব্যস্ত, কে জানে!
কারণ কালই ত মনে হয় নিজের বাড়িতে যেতে হবে।
আমার ফোনেও টাকা নেই যে মাকে ফোন দিব।
কিছুই ভাল লাগছে না।
আমাকে বউ সাজিয়ে সোফায় বসিয়ে দেওয়া হলো। বৌভাত বলে কথা। কিন্তু আমার গুনধর বরের খবর নেই।
কোথায় সে?
আমি আসেপাশে চোখ বুলিয়ে খুজতে লাগলাম। কিন্তু কোথায় ত নেই। অসহ্য একটা। এসব আনরোম্যান্টিক বর আমার কপালেই জুটল?
কিছুক্ষণ পরেই নিঝুম ইথানকে কোথা থেকে টেনে নিয়ে এসে আমার পাশে বসিয়ে দিল।
কিন্তু ওনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে উনি বসতে চাচ্ছেন না।
আমি আড়চোখে ওনার হাবভাব দেখতে লাগলাম। উনি গম্ভীর মুখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন।
এখনো এত রাগ পুষে রেখেছেন! অবশ্য রাখারই কথা। আমিই ত সব উল্টো পালটা কথা বলেছিলাম সেদিন।
“আরে, ভাবি মাথা তোলো, এত কিসের লজ্জা! পিক তুলব ত!” বলল দিবা।
আমি মুখ কালো করে মাথা নিচু করে ছিলাম। দিবার কথায় চমকে মাথা তুললাম।
দিবা আমাদের দুইজনের ছবি তুলতে চাচ্ছে।
আমি ইথানের দিকে তাকালাম। ইথান গম্ভীর মুখে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।
আমি সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলাম।
ওদিকে দিবা ছবি তুলেই যাচ্ছে।
“ভাইয়া, হাসতে পারিস না!” দিবা বিরক্ত হয়ে বলল।
“না।” বলল ইথান।
“আজব! আর ভাবি, তুমি হাসছ না কেনো? কি হয়েছে? বিয়ের দুইদিন হলোনা, এর আগেই ঝগড়া করে ফেলেছ?” দিবা বলল।
আমি দিবার দিকে হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
“যাই হোক, কি আর করার! থাকো তোমরা, আগে ঝামেলা মিটাও, পরে ছবি তুলে দিব।” দিবা হাই তুলতে তুলতে চলে গেল।
যদিও আশেপাশে লোকজনের হৈচৈ দিয়ে ভরা তাও মনে হচ্ছে কেউ নেই, শুধু আমি আর ইথানই আছি।
হার্টবিট আবার বাড়তে শুরু করেছে।
উনি আমার পাশে বসে আছেন, ভাবা যায়!
আমি আড় চোখে ইথানের দিকে তাকালাম।
ঠিক সেই মুহুর্তেই ইথান আমার দিকে তাকালো।
আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম আর একটা ঢোক গিললাম।
হঠাৎই খুবই নার্ভাস লাগতে শুরু হলো। আমি ইথানের থেকে একটু সরে বসলাম।
তখনি ইথান আমার পাশ থেকে উঠে চলে যেতে লাগল।
আমি সাথে সাথে ইথানের হাত ধরে নিলাম আর বলে উঠলাম, “কোথায় যাচ্ছেন!”
ইথান ভ্রুকুচকে আমার হাতের দিকে তাকালো।
আমি সাথে সাথে হাত ছেড়ে দিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বললাম, “ন…না মানে…।”
আমি চুপ হয়ে গেলাম।
ইথান কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে চলে গেল।
আমি ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
বুঝিনা, আমার পাশে বসলে কি ওর গা জ্বলে যায়?
চিন্তা করেই আমারই গা জ্বলে যাচ্ছে।
যত্তসব ঢং।
আমারো ইচ্ছে করছে উঠে হেটে বেড়াতে। কিন্তু কিছুই করার নেই। ওভাবেই বসে রইলাম।
অনেকক্ষণ পরে আর বসে থাকতে না পেরে উঠলাম।
উঠতেই ইথানের দিকে চোখ পরলো। ইথান ওর কয়েকজন ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলছিল।
তাদের মধ্যে একজন ইশারা করে আমাকে ডাকলো।
ডাকলে ত যেতেই হবে। তাই এগিয়ে গিয়ে ইথানের পাশে দাড়ালাম। তবে একটু দূরত্ব রেখে।
“ভালই মানিয়েছে।” বলল একটা মেয়ে।
আমি কিছু না বলে শুধু একটু হাসলাম।
“ত ভাবি, শেষমেশ বখাটে ছেলেটাকে বিয়ে করে ফেললা!” বলল এক ছেলে।
আমি কি বলব বুঝতে না পেরে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
সবাই হেসে দিল।
ইথান বিরক্ত হয়ে ওই ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইল।
“আরে রাগছিস কেন? আমি ত প্রথমেই বুঝেছিলাম এই মেয়ের প্রেমেই তুই পরবি। তোদের প্রেমের কাহিনীর নাম হওয়া উচিত ‘বখাটে at first sight’.” বলেই হাসতে লাগল ছেলেটা।
অন্যরাও হাসতে লাগল।
আমি দ্বিধায় পরে মাথা নিচু করে ফেললাম।
“ওকে তোরা কথা বল আমরা আগে পেট পূজা করে নিই।” বলেই ওরা সবাই চলে গেল।
তখন আবার আমি আর ইথান একা রয়ে গেলাম।
আমি ইথানের দিকে তাকালাম।
ইথানও গম্ভীর মুখে আমার দিকে তাকালো। আমি সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলাম।
তখনি এক মহিলা এসে আমাদের সামনে দাড়ালেন।
মহিলাটা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “অনেক সুন্দর।”
আমি ওনাকে ঠিক চিনলামও না। আরকি অনেক জনকেই চিনি না।
“ছোট্ট ইথান কত্ত বড় হয়ে গেছে, এখন বিয়েও হয়ে গেছে!” ইথানের দিকে তাকিয়ে বললেন ভদ্র মহিলা।
ইথান স্বাভাবিক হাস্য উজ্জ্বল চোখে তাকিয়ে আছে ওনার দিকে।
আর কি সবার দিকেই স্বাভাবিক ভাবে তাকায়, শুধু আমার দিকে বাদে।
“মা কোথায়?” বললেন ওই ভদ্র মহিলা।
“এখানেই কোথাও হয়ত। অনেক লোক ত, বিজি তাই।” ইথান ওনাকে বলল।
“যাই খুজে আসি।” মিষ্টি হাসি দিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে উনি চলে গেলেন।
উনি চলে যাওয়ার পরেই পিছনের মেয়েটার দিকে আমার নজর পরল।
মেয়েটাকে আমি খেয়াল করতাম না। কিন্তু করতে হলো।
কারণ ওই ভদ্র মহিলা সরে যাওয়ার পর মেয়েটার দিকে ইথানের চোখ পরতেই ওর মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেল।
সেইজন্যই আমি সামনের দিকে তাকালাম।
মেয়েটা একপ্রকার নিরাশ চোখে ইথানের দিকে তাকিয়ে আছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বোকা মেয়েও হয়তো আন্দাজ করে ফেলতে পারবে যে এদের দুইজনের মধ্যে কোনো সম্পর্ক হয়তো ছিল।
আমার ভিতরটা মুচড়ে উঠল। কারণ সম্পর্ক ছিল নাকি এখনো আছে!
আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসি দিল। সেই ম্লান হাসি আমার ভয়ের কারণ হয়ে উঠল।
মেয়েটা আমাদের দিকে এগিয়ে এলো।
“কেমন আছ?” মেয়েটা হাসার চেষ্টা করে ইথানকে বলল।
“I am good.” শক্ত মুখে বলে ইথান চলে গেল।
এতে আমি আরোই নিশ্চিত হয়ে গেলাম।
আমার চোখে জল চলে আসতে চাইল কিন্তু আমি জোর করে আটকে রাখলাম। কেন জল আসতে চাচ্ছে তাও বুঝতে পারছি না।
মেয়েটা ইথানের চলে যাওয়ার দিকে হতাশ চোখে তাকিয়ে তারপর আমার দিকে তাকালো। আমি একটু হাসার চেষ্টা করে মেয়েটার কাছ থেকে সরে আসার জন্য ঠিক করলাম। কেন জানিনা, কিন্তু ভালো লাগছে না।
“ইথান আর তোমার কি লাভ ম্যারেজ?” মেয়েটা প্রশ্ন করে উঠল।
আমি অপ্রস্তুত হয়ে মেয়েটার দিকে তাকালাম।
কি উওর দেব আমি?
“অহ আমার পরিচয়ই ত দিলাম না! আমি দিশা। ইথানের ফ্রেন্ড।” মেয়েটা ম্লান মুখে বলল।
“আমি এরিন।” স্বাভাবিক ভাবেই বললাম।
তখনি পিছন থেকে ডাক পরল আমার। আমার মা ফোন করেছে। আমি ফোন তুলতে গেলাম।
যদিও মনের মধ্যের চিন্তাটা থেকেই গেল।
যদি সত্যিই এই দিশার সাথে ইথানের সম্পর্কে থেকে থাকে! আর যদি এখনো উনি এই দিশা নামের মেয়েটাকে পছন্দ করে থাকেন!
কিন্তু এর চেয়েও বড় বিষয় হলো, যদি আমার সাথে ইথানের বিয়েটা ইথানের মা জোর করে দিয়ে থাকে! তাহলে ত বিষয়টা এমন দাঁড়াবে যে আমি ওনাদের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি। তাহলে আমার কি হবে!
সন্ধ্যার পরে অনুষ্ঠান শেষ হলো। খুবই ক্লান্ত লাগছে। শারীরিক ভাবেও আবার মানসিক ভাবেও। ওই দিশা মেয়েটার কি দরকার ছিল আসার?
আমি রাতের খাওয়া শেষ করে বিছানায় এসে বসলাম।
ইথান সেই মুহুর্তেই রুমে ঢুকল।
আমি ওর দিকে তাকালাম না। বরং আমার মত বালিশ ঠিক করে নিয়ে শুয়ে পরার জন্য তৈরি হতে লাগলাম।
কিন্তু যেই মুহুর্তে শুয়ে পরব সেই মুহুর্তেই ইথান বলে উঠল,”ওঠো।”
আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, “মানে!”
ইথান গম্ভীর মুখে তাকিয়ে বলল “মানে, ওঠো আর…”
আমি ইথানের কথার মাঝখানে বলে উঠলাম, “আমাকে আপনি নিচে ঘুমাতে বলছেন?”
আমার সত্যিই আশ্চর্য লাগছে! ওই মেয়ের জন্য উনি এখন আমাকে নিচে ঘুমাতে বলছেন? গতদিন ত এমন করেন নি!
ইথান একটা বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,”যেটা বলছি সেটা করো।”
আমি হতাশ চোখে ইথানের দিকে তাকালাম।
ইথান বলতে লাগল, “আর শাড়ি খোলো…।”
আমি চমকে গেলাম আর বলে উঠলাম, “ক..কি বলছেন এসব আপনি!”
“শাড়ি পরে ঘুমানোর কোনো দরকার নেই তোমার।” গম্ভীর গলায় বলল ইথান।
“কেনো?” আমি বুঝতে না পেরে বলে উঠলাম।
ইথান কপাল কুচকে আমার দিকে তাকালো।
কয়েক সেকেন্ডের মাথায় আমি বুঝলাম যে উনি কেন এই কথা বলেছেন।
সাথে সাথে আমি মাথা নিচু করে ফেললাম।
ইথান বেলকনিতে চলে গেল।
আমি জলদি বিছানা থেকে উঠে আলমারির থেকে একটা থ্রি পিচ নিয়ে বাথরুমে চেঞ্জ করে বেরিয়ে এলাম।
ইথান নিজের জায়গায় শুয়ে আছে। আমি এগিয়ে গিয়ে ওর পাশে শুয়ে পরলাম।
ইথান উল্টোদিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে আছে।
মনে ত হয়না এখনো ঘুমিয়েছে!
আমি যদি ওই মেয়ের বিষয় কিছু জিজ্ঞেস করি উনি কি উওর দিবে?
না দিলে নিজেরই ইনসাল্ট হবে। তাছাড়া উনি ত আমাকে ভালোই বাসে না।
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে অতীতে ডুব দিলাম, যেদিন আমার সাথে ইথানের প্রথম দেখা হয়েছিল। বলতে গেলে সেটা দ্বিতীয় দেখা ছিল।
(চলবে…)