ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

0
2849

গল্পর নাম :#ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_২০ : #অপূর্ণতাতে_পূর্ণতা
লেখিকা : #Lucky

“শাড়ি পড়িয়ে দিন।” আমি ইথানের সামনে শাড়ি ধরে বললাম।
উনি একটা নিঃশ্বাস ফেলে মৃদু হাসলেন।
“তুমি নিজে শিখবা না?”
“আপনি আছেন কি করতে?!” ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে বললাম।
“আমি না থাকলে? তখন?” শাড়ি গুছিয়ে নিতে নিতে বললেন উনি।
মুহুর্তেই আমার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল।

উনি কয়েক সেকেন্ড পরে খেয়াল করলেন।
“সিরিয়াসলি নিচ্ছো কেনো?” বলেই উনি মৃদু হাসলেন।
আমি রেগে গিয়ে বললাম,”ফালতু মজা কেন করেন আপনি?”
“আজ কিজন্য শাড়ি পড়বা? শাড়ি পড়ে ত উলটে উলটে পড়ো।” কথা ঘুরাতে বললেন উনি, তা আমি ভালই বুঝলাম।
“শাড়ি পড়ে নিরবের সাথে পালিয়ে যাব ত, তাই। উল্টে পড়বো না। নিরব ঠিক সামলে নেবে।” তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম আমি।
উনি কড়া নজরে আমার দিকে তাকিয়ে হুট করে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এলেন।
আমি একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম।
“ক..কি করছেন? ইভান এসে যাবে।”
“কার সাথে পালিয়ে যাবা?” কটাক্ষ করে বললেন উনি।
“নিরবের সাথে।” মুচকি হেসে বললাম আমি।
সাথে সাথে উনি আমাকে আরো কাছে টেনে নিলেন।
“পাগল হয়ে গেছেন? ছাড়ুন।” দরজার দিকে তাকিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম আমি।
“তোমাকে না মানা করেছিলাম ওই ছেলের কথা তুলতে? বিয়ের চার বছর হয়ে গেছে এখনো ওর কথা তোলো!” সরু চোখে তাকিয়ে বললেন উনি।
“কেনো? জেলাস আপনি?” পরপর দুইবার পলক ফেলে বললাম আমি।
উনি রেগে কিছু একটা বলতে গিয়েও বললেন না।
“আমি কি এভাবেই থাকবো? শাড়ি পড়াবেন না?” ভ্রুকুটি করে বললাম।
“নিজে পড়ো।” বলেই উনি শাড়ি নিয়ে উল্টো দিকে ঘুরলেন চলে যাওয়ার জন্য।
“আমি বরং নিরবকে ফোন দিই। ও ঠিক পড়িয়ে দিবে।” আমি অন্যদিকে তাকিয়ে ওনাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললাম।
উনি থেমে দাড়িয়ে কড়া নজরে তাকিয়ে আমার দিকে ঘুরলেন।
“কি বললা?”
“আপনার দোষ। আপনি আর জীবনেও যদি বলেন এমন কথা তাহলে আপনার খবর আছে।” আমিও কড়া নজরে তাকিয়ে বললাম।
উনি সরু চোখে আমার দিকে তাকালেন।
“তাড়াতাড়ি। এমনিই অনেক দেরি হয়ে গেল।” তাড়া দিয়ে বললাম আমি।
উনি ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে আসলেন।

আজ ওনার আমাদের ঘুড়তে নিয়ে যাওয়ার কথা। ইদানীং ওনার ব্যস্ততার কারণে হয়েও উঠেনা। কিন্তু আজ যেহেতু উনি নিজেই নিয়ে যেতে চেয়েছেন তাই দেরি করা চলবে না।
কিন্তু দেরি হয়েই গেল।

বিশেষ করে আমি দেরি করে আসার কারণে তারা, অর্থাৎ বাবা ছেলে দুইজনই কপাল কুচকে ফেলল।
আমি ইথানের পাশের সিটে বসে সিট বেল্ট বাধতে বাধতে কটাক্ষ করে বললাম, “এভাবে দেখার কি আছে?”
“আধা ঘন্টা বসে ছিলাম আমরা।” গাড়ির জালানায় হাত ভাজ করে রেখে বলল ইথান।
“yep. Always late.” হাত দুটো বুকে গুজে পিছন থেকে সুর মিলালো ইভান।
আমি একবার ইথান আর একবার ইভানের দিকে তাকাতে লাগলাম।
ইথান ত ছিলই সাথে এখন ইভানও যোগ হয়েছে। যবে থেকে ইভান কথা বলা শুরু করেছে আমার জীবন ভাজাভাজা হয়ে গেছে। তিন বছরের ছেলের এত ভাব!
যেমন বাপ তেমন ছেলে।
এরা দুই বাপ ছেলে মিলে আমাকে হেনস্তা করতে সর্বদা প্রস্তুত।
“অসহ্য।” মুখ ফুলিয়ে বললাম আমি।
তারা দুইজনেই হাসতে লাগল। ভালই মজা নিচ্ছে আমার!
তবে তাদের দেখে আমিও মুখ ফুলিয়ে রাখতে পারলাম না। কোনোদিনো পারিও না। তাই আমিও হেসে ফেললাম।

কিন্তু এই সুন্দর মুহুর্ত যে নিমেষে শেষ হয়ে যাবে তা আমি কল্পনাও করতে পারি নি।
সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরে আসার সময় আমি আইচক্রিম কেনার জন্য নামলাম।
ইথান নিজেই আনতে চাইলেও ওদের বসতে বলে আমিই রাস্তার ওপাড়ে গেলাম।
তবে কিনে ফিরে আসার সময় খেয়াল না করার কারণে একটা সি এন জি এর সামনে পরে গেলাম। এমন বেপরোয়া ভাবে চালাচ্ছিলো যে আরেকটু হলেই চাপা লেগে যেত। অল্পের জন্য বেঁচে গেলাম।

তবে আমার অবস্থা খেয়াল করে ওপাশ থেকে ইথান আর ইভান দুইজনই ঘাবড়ে গেল। আর ইথান দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে গেল।
আমি ইশারায় আসতে হবে না বুঝানোর আগেই সে রাস্তার দিকে খেয়াল না করেই আমার দিকে আসতে যেতেই উল্টোদিক থেকে দ্রুত গতিতে আসা একটা বাসের সাথে তার ধাক্কা লেগে গেল।
মুহুর্তের মধ্যে আমার সারা শরীর শিথিল হয়ে গেল। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। নিজের চোখের সামনে ঘটলেও তা বিশ্বাস করতেই পারলাম না।
.

.
সেই ঘটনার পর দশ বছর কেটে গেছে। কিন্তু এখনো মেনে নিতে পারি না। তাও মানিয়ে নিতে হয়।
মনে হয় যেন এইত সেদিনই সব ঠিক ছিলো। কিন্তু এভাবে কিভাবে সব শেষ হয়ে গেল?
এখনো সব আগের মতই আছে। তার শার্টগুলো, তার ঘড়ি, তার ব্যবহৃত সব জিনিস, এমনকি তার ফুলদানিটাও যত্নে নিজের কাছেই রাখা আছে। শুধু সে-ই নেই।
চিন্তা করেই চোখের কোনে জল চলে এলো।

“mom! এখনো হয়নি?” বলতে বলতে রুমে ঢুকল ইভান।
আমি হালকা চমকে ইভানের দিকে তাকালাম। আর সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে একহাতে চোখের জল মুছে নিলাম।
ইভান একটা নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে এসে হাটু ভাজ করে আমার কুচিটা ধরে ধরে ঠিক করে দিতে লাগলো।
আমি বেশ অবাক হয়ে গেলাম।
“তুই এসব কবে শিখলি!”
“ইউটিউব। তোমার কুচির কি যে অবস্থা!” বলতে বলতে সে কুচি করতে লাগলো।
আবার আমার চোখের কোনে জল চিকচিক করতে লাগলো, তবে সাথে ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসিও চলে এলো।
সে আমাকে কথা দিয়েছিলো আমাকে একা রেখে যাবেনা। সত্যিই তাই। সে আমাকে একদম একা রেখে যায়নি। একদম না।
এত সুন্দর একটা ছেলে আমাকে দিয়ে গেছে!
“Don’t cry.” আমার দিকে না তাকিয়েই বলল ইভান।
আমি দ্রুত চোখের জল মুছে নিলাম।
আজ ওর জন্মদিনের দিন আমার কারণে ওর মন খারাপ করাতে চাই না। তাই কাঁদলে চলবে না।

তবে এটা মানতেই হবে যে সেদিনের পর থেকে ইভান হঠাৎই বড় হয়ে গেছে। যেন আমার সব দায়িত্ব ইথান ওকেই দিয়ে গেছে। এত ছোটো থেকেই এত দায়িত্ব বোধ আমি জীবনেও দেখিনি। ইভান আছে বলেই মনে হয় আমি একেবারে একা হয়ে যাই নি।
“কি?” ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করল ইভান।
“কিছুনা।” মিষ্টি হাসির সাথে বলেই আমি কুচিটা গুজে নিলাম।
“নিচে চলো তাহলে।”
“তু যা আমি আসছি।”
“উহু, একা রেখে গেলে দেখা যাবে কেঁদে রুম ভাসিয়ে দিয়েছ। যেদিন প্রথম খাইয়ে দিয়েছিলাম সেদিনই কেমন হাউমাউ করে কাঁদছিলে! আজ না জানি আবার কি করো!” বাকা হাসির সাথে বলল ইভান।
আমি সরু চোখে তাকিয়ে ওর মাথায় আস্তে করে মেরে বললাম, “আমাকে জ্বালাচ্ছিস আবার!”
ইভান মাথা ঘষতে ঘষতে মুচকি হেসে বলল, “জ্বালাচ্ছি না। বুঝাতে চাচ্ছি যে আমি এখন আর বাচ্চা নেই। থার্টিন চলছে এখন।”
আমি হেসে ওর গাল টেনে দিয়ে বললাম, “হ্যা তাই-ই ত। থার্টিন চলছে, ফোর্টিন হয়ে যাবে আজ। কত বড় হয়ে গেছে ছেলে আমার।”
“এখন চলো। তোমার প্রিয় খাবার অপেক্ষা করছে।”
ইভান আমাকে হাতে ধরে নিয়ে বের হতে হতে বলল।

আমি চিন্তা করতে লাগলাম যে আজ ইথান থাকলে কেমন হত?
একটা সম্পুর্ন পরিবার হত, তাইনা?
কিন্তু হয়তো ভাগ্য তা চায় না। মাঝে মাঝে অপূর্ণতা-তেই পূর্ণতা খুঁজে নিতে হয়।
যেমন আমার অপূর্ণতার পূর্ণতা হলো আমার ইভান।
আর ইথান ত আমার মনের মধ্যেই আছে। সবসময় আছে।
সবসময়।
💕💕

দু’চোখের বরষ হয়ে মিশে আছো বলে তাই
তোমারে খুঁজিতে তাই নয়ন মেলিনা

জীবন মরুভূমে একাকী তরুর মত
অসহায় শাখা মেলে আকাশে চেয়েছি কত
বরষার মত এলে
ভরে দিলে ফুলে ফলে
শিকড়ে মিশেছো বলেই তাই চলিনা।

নদী কুলু কুলু জানে
বনানীও মর্মরে
হৃদি জানে স্পন্দনও
আঁখি ঝরঝর ঝরে
ভাষাহীন ভাষা দিয়ে
হৃদয়ে ভরেছো হিয়ে

কথার ছলনা দিয়ে তাই চলিনা …

ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা~
দু’চোখের বরষ হয়ে মিশে আছো তাই
তোমারে খুঁজিতে তাই নয়ন মেলিনা।

ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা

ভালোবাসি বলে তাই~
ভালোবাসি~
বলি~~~
না ~~

(সমাপ্ত)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে