গল্পর নাম :#ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_১৯ : #তুমি_আমি_আর_সে
লেখিকা : #Lucky
আমি আল্ট্রাসোনোর রিপোর্ট হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে নিজের পেটে হাত রাখলাম। মুখে আলতো হাসি চলে এলো।
তিন মাসের সময়ে একবার আল্ট্রাসোনো করিয়ে নেওয়ার জন্য আগে থেকেই বলা হয়েছিলো। সেটা করতেই আসা। আজকালের মধ্যেই তিনমাস হয়েই যাবে।
“সব ঠিক আছে কিন্তু…।” ডাক্তার এতটুকু কথা শুনেই আমি ঘাবড়ে তার দিকে তাকালাম।
“আপনাদের নিজেদের ফিলিংস কন্ট্রোল করা উচিত। তিন মাস অব্দি।” বলল মহিলা ডক্টর টা।
আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, মানে?
তবে প্রশ্ন করার পরো মুহুর্তে বুঝলাম উনি কি বলতে চাইছেন।
সাথে সাথে লজ্জায় মাথা নুয়ে নিলাম।
মহিলাটা স্বাভাবিক ভাবেই বলল, “বাচ্চা ঠিক আছে। তাছাড়া এখন আর সমস্যা নেই। তবে লাস্ট তিন মাস অবশ্যই…।”
আমি এত লজ্জা পাচ্ছি বলে উনিই মৃদু হেসে চুপ হয়ে গেলেন।
ভাগ্যিস ইথান একটু আগে ফোন রিসিভ করে বেরিয়ে গেছে। নাহলে কি একটা অবস্থা হত।
আমি সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে তার চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেলাম। সাথে সাথেই ইথানের সাথে ধাক্কাও খেলাম। আর উনি আমাকে দুই হাতে ধরে নিলেন।
“কি হয়েছে? এভাবে ছুটছ কেনো? পরে গেলে কি হতো?” আমাকে শাসিয়ে বলল সে।
“ক…কিছু হয়নি, সব ঠিক আছে। চলুন বাসায় যাব।” এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বললাম আমি।
উনি সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বললেন, “কি বলেছে? কোনো প্রবলেম?”
“উফ, সব নরমাল আছে। চলুন ত!” বলেই আমি ওনাকে ঠেলতে লাগলাম।
“কি লুকাচ্ছো?” গাড়িতে বসে তীক্ষ্ণ চাহনির সাথে বলল ইথান।
সে মনে করছে কি না কি হয়ে গেছে আবার।
“কি হবে?”
“তুমি বলবা নাকি আমি নিজে যাব ডক্টরের কাছ থেকে শুনতে?”
আমি এবার একটু মজা করার জন্য ঠোঁট উলটে বললাম, “আসলে…।”
“আসলে?” চিন্তার ছাপ চলে এলো তার মুখে।
আমি হাসি চেপে রেখে তার দিকে চুপ করে তাকিয়ে রইলাম।
উনি আমার দুই বাহু ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললেন,”এরিন প্লিজ বলো, you will be ok right?”
উনি অনেক বেশিই উদ্ধিগ্ন হয়ে গেলেন।
আমি হেসে তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, “হ্যা বাবা হ্যা। আমার কি হবে? সব ঠিকই আছে। আমি ত মজা করছিলাম।”
উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে সস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
“আপনি কি মনে করেছেন? আমার কিছু হয়ে যাবে?”
“তোমার কিছু হবে না।” বলতে বলতে উনি একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে আমার কাধে ঠোঁট ছুয়ে দিলেন।
.
আমি আয়নার ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখতে লাগলাম। নয়টা মাস শেষ হয়েও গেছে। আর এখন ত আমি অনেক মটু মটু লাগে। কিন্তু এতে কারো কিছু যায় আসেনা। আমাকে আরো মোটা কিভাবে বানাবে সেই ধান্ধায় থাকে সবাই।
“কি হয়েছে? মুখটা এমন করে রেখেছ কেনো?” আমার পিছনে দাড়িয়ে ভ্রু উঁচু করে বলল ইথান।
আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বিছানায় গিয়ে বসেলাম। কারণ তাকে অনেক বার, অনেক ভাবে বলেছি এতগুলা খাব না। তাও সে জোর করে।
বলেছিলো আর জোর করবো না। কিন্তু কাজের সময় উলটা।
ইথান আমার পাশে এসে বসে বলল, “মোটা হয়ে যাচ্ছি! এটাই বলতে চাও ত?”
আমি চোখ রাঙিয়ে তাকালাম।
উনি আমার কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বললেন, “আর মাত্র কয়েকদিন। তারপর ত তুমি, আমি আর সে।”
আমি প্রশান্তির হাসি দিয়ে ওনার বুকে মাথা গুজে দিলাম।
“আমাদের ছেলে হলে তার নাম ইভান দিব।” বললাম আমি।
“আর মেয়ে হলে?”
“মেয়ে হলে!…..ইভা?”
.
চোখের পলকে সেই দিনটাও চলে এলো। সবচেয়ে খুশির মুহূর্ত কিন্তু তার জন্য সবচেয়ে বড় কষ্টটাও সহ্য করতে হবে।
তবে এই কষ্ট পরবর্তী খুশির কাছে কিছুই না। কিন্তু অনেক ভয়ও লাগছে।
লেবার পেইন এর জন্য ব্যথায় কুকিয়ে যাচ্ছি আমি।
আমি তার হাতের কাছের শার্টটা নিজের হাতে খামচে ধরে বললাম, “আমার খুব ভয় লাগছে।”
“Don’t get nervous. সব ঠিক হয়ে যাবে।” আমার হাত নিজের দুইহাতে ধরে উদ্ধিগ্ন হয়ে বললেন উনি।
“রিল্যাক্স।” আমার অশান্ত চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন উনি।
আমার জন্য উনি নিজেই যেন কষ্ট পাচ্ছেন।
আমাদের দেশের সব নিয়মের মধ্যে এই একটা নিয়ম যা আমার একদমই পছন্দ না, তা হলো ডেলিভারির সময় স্বামী ওটিতে ঢুকতে পারবে না।
যদিও একমাত্র সে থাকলেই ত আরো সাহস পাওয়া যায়।
এজন্যই হয়তো উনি নিজের পরিচিত ডক্টরের হস্পিটালেই আমাকে ভর্তি করিয়েছেন। যাতে উনি নিজেও আমার সাথে এই মুহুর্তে আমার পাশে থাকতে পারেন।
কারণ স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক মানেই ত সবসময় সব কিছুতে পাশে থাকা। তাই নয় কি?
আর সত্যিই তাই। উনি পাশে আছেন বলেই আমার ভয় অনেকটা কম লাগছে।
.
.
অবশেষে আমাদের ছোট্ট একটা ইভান হলো। দেখতে হয়েছে পুরোই ওনার মত। সবাই ত তাই বলছে।
“আমার মত দেখতে হয়নি কেন?” ঠোঁট উলটে বললাম আমি।
ইথান মৃদু হেসে বলল, “সেটাই। এখন?”
“এখন তাহলে আমার মত হবে এমন একটা বাচ্চা লাগবে।” প্রফুল্লচিত্তে বললাম আমি।
শুনেই ওনার কাশি শুরু হয়ে গেল।
“কি হলো আপনার আবার?” ভ্রুকুটি করে বললাম আমি।
“পরে পরে।”
“না, এখন এখন। আমার মত দেখতে হবে সে।” বলতে বলতে কুঞ্চিত ভ্রু আরো কিঞ্চিৎ কুচকে নিলাম।
“আর সেও আমার মত দেখতে হলে?”
“তাই তো!” হতাশ হয়ে গেলাম আমি।
“তাহলে তোমার মত দেখতে না হওয়া অব্দি বেবি নিব আমরা।” মুচকি হেসে বললেন উনি।
শুনে আমার চোখ গোল হয়ে গেল। সাথে লজ্জাও পেলাম।
“এখন চুপ করে আছ কেনো?” বলেই উনি আমার দিকে ঝুকলেন।
আমি লজ্জায় ওনার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম।
তখনি ইভান কেদে উঠল।
আমরা দুইজনই চমকে তার দিকে তাকালাম।
“কাদছে। কোলে নিন।” আমি চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বললাম।
ইথান নিজের ঠোঁটের কোনা কামড়ে ধরে ইতস্তত করে বলল, “আসলে.. আমি জীবনেও কোনোদিনো বাচ্চা কোলে নিই নি।”
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম, “মানে? তাহলে এখন?”
“তুমি? তুমি নেও?”
“আমিও ত নেই নি জীবনেও!” ঠোঁট উলটে বললাম আমি।
তারপর দুইজনই ইভানের দিকে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে তাকালাম। আর পরক্ষণেই আমরা দুইজনেই হেসে উঠলাম।
.
ছেলে বড় করতে আমাদের দুইজনকেই অনেক কাঠ খড় পুড়তে হলো।কারণ…বলতে গেলে আমরা দুইজনেই এই বিষয় গমলেট।
তবে সব ঠিকই সামলে নিলাম। এতে করে সব অমলেটর মত সহজ হয়েও গেল।
অর্থাৎ ‘তুমি, আমি আর সে’ নামক সংসার ভালোবাসায় পূর্ণ হয়ে গেল৷
(চলবে…)