গল্পর নাম :#ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_১১ : #confession
লেখিকা : #Lucky
“আপনাকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।” বিড়বিড় করে বলে ফেললাম আমি।
বলার পরেই বুঝলাম কি বলে ফেলেছি।
আমি বিস্ফোরিত চোখে ইথানের দিকে তাকালাম।
“কি বিড়বিড় করছ?” ইথান এমনভাবে প্রশ্নটা করলো যেন শুনতেই পায়নি।
“কিছুনা।” বলেই আমি দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে গেলাম।
তারপর জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলাম।
আর হার্টবিটের কথা ত বাদই দিলাম!
যেমন হার্ট তেমন তার বিট।
ফালতু।
ভাগ্যিস বিড়বিড় করেই বলেছিলাম। শুনে নিলে কি হতো!
“কিছুই হত না, মজা হত।” মনের মধ্যের শয়তান এরিন বলল।
আমি ভালো এরিনের থেকে কিছু শোনার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
সে শুধু কাপতে কাপতে বলল, বুহিন ঠান্ডা লাগে, দয়া করে ড্রেস চেঞ্জ কর।
সাথে সাথেই মনে পরল।
এখন সত্যিই ঠান্ডা লাগছে।
কিন্তু জামাকাপড় ত আনলাম না। হায় হায়!
আর ইথানও ত ভিজে চুপসে আছে।
ওর ঠান্ডা লাগবে ত।
আমি চট করে বাথরুমের দরজা খুলে উঁকি দিলাম কিন্তু তাকে দেখতে পেলাম না। তাই গলার স্বর উঁচু করে বললাম, এইযে শুনছেন?
উনি বেলকোনি থেকে মাথা মুছতে মুছতে বের হয়ে এসে বিরক্ত হয়ে বললেন, “তুমি এখনো চেঞ্জ করোনি।”
আমি তার দিকে হা করে তাকিয়ে বললাম, “আপনার চেঞ্জ করাও শেষ?”
“তো তোমার মত বসে থাকবো?” উপহাসমূলক স্বরে বলল ইথান।
বেলকোনিতেই তিনি চেঞ্জ করে নিয়েছেন।
যাক ভাল।
আমি করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, “জামা দিন আমার। জলদি।”
উনি একটা নিঃশ্বাস ফেলে আলমারি খুললেন তারপর এগিয়ে গিয়ে একটা জামা নিয়ে আমার সামনে ধরলেন।
আমি নিতে নিতে ভ্রু উঁচু করে বললাম, সালোয়ার কে দেবে?
উনি বিরক্ত ভঙ্গিমায় তাকিয়ে আবার আলমারির দিকে এগিয়ে গেলেন আর সালোয়ার নিয়ে এসে সামনে ধরলেন।
আমি নিলাম। আর এবার বললাম, তোয়ালে দিন।
ইথান রাগে কটমট করে তাকিয়ে আবার গিয়ে তোয়ালে নিয়ে এলেন আর আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, হয়েছে এবার?
আমি দুষ্টু হাসি দিয়ে না সূচক মাথা নাড়লাম।
সাথে সাথে ইথান রেগে আমার দিকে এক পা এগিয়ে আসলো। আর আমি চমকে দরজা বন্ধ করে দিলাম।
।
ড্রেস চেঞ্জ করে বের হয়ে কাপতে কাপতে বিছানায় বসলাম।
এখন মনে হয় আমার অবস্থা বেহাল হবে। অনেক বেশিই ঠান্ডা লাগছে।
দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে মুখ দিয়ে বড়বড় নিঃশ্বাস বের করতে লাগলাম। কিন্তু গা কাপাকাপির কোনো থামাথামি নেই।
“ডিনার রেডি।” বলতে বলতে ইথান রুমে এসে ঢুকলো।
আমি শুধু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম।
আমার অবস্থা বুঝতে ওনার দেরি হলো না।
“তোমাকে আগেই বলেছিলাম।” চোখেমুখে একরাশ অসস্তি নিয়ে বলতে বলতে আমার কাছে এসে দাড়ালো ইথান। তারপর কম্বল খুলে গায়ে জড়িয়ে দিতে লাগল।
তাও যেন ঠান্ডা কমছেই না।
ইথান পাশে দাড়িয়ে আমার মাথায় প্যাচানো তোয়ালে খুলে, মাথা মুছে দিতে লাগল।
আমি স্থির দৃষ্টিতে ওনার কোমড়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। পাশে বসে নিলে হয়ত মুখটা দেখতে পেতাম।
উনি ভালোভাবে মাথা মুছে দিয়ে তোয়ালে নিয়ে বেলকোনিতে রাখতে গেলেন।
আমি এলোমেলো চুলে ওভাবেই বসে রইলাম।
গা এখনো অল্প অল্প কাপছে।
ইথান বেলকোনি থেকে বের হয়ে বেলকোনির দরজা বন্ধ করে দিল।
ঠান্ডা হাওয়া যেন না আসতে পারে সেজন্যই হয়তো।
তারপর উনি আলমারি খুলে আরেকটা কম্বল বের করে এনে আমার গায়ে জড়িয়ে দিলেন।
এতে আমার খুশি হওয়ার জায়গায় হচ্ছে রাগ।
একটু আগে বলল, the moon really is beautiful! কিন্তু কাজবাজ দেখে মনে হচ্ছে the moon really is sorrowful.
ভাই, আমি এত ডিসেন্ট ছেলে দিয়ে কি করব?
“আমাকে কি বাধা কপি বানাতে চান?” জোড়ালো গলায় বললাম আমি।
ইথান বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে বলল, মানে?
“মানে আপনি জীবনেও বুঝবেন না।” বলেই আমি রাগে ফুলতে ফুলতে গায়ের কম্বলগুলো সরাতে লাগলাম।
ইথান প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার মনোভাব বুঝতে চেষ্টা করতে লাগল।
তবে সে যে বুঝবে না এটা আমি কয়েক কোটি সিওর।
কারণ ছেলেরা গাধা হয়, গাধা। এসব জিনিস তাদের বোধগম্য হতে গেলে ওদের কয়েকশো বার জন্ম নিতে হবে।
হাতে গোনা দুই একটা ভালো গাধা থাকতে পারে বাংলাদেশে। তবে বিদেশে অভাব নেই।
আমি কম্বল সরিয়ে উঠে দাড়ায়ে ইথানকে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলাম। কিন্তু সে আমার একটা হাত ধরে নিয়ে বলল, কোথায় যাচ্ছ?
আমি কড়া হাসি মুখে টেনে বললাম, “বেলকোনিতে যাব। গরম লাগছে আমার।”
“হোয়াট! এখনো কাপছ। গাও ঠান্ডা হয়ে আছে তোমার।” সরু চোখে তাকিয়ে বলল ইথান।
“তাতে আপনার কি?” চোখ পাকিয়ে বললাম আমি।
“ফালতু কথা বন্ধ করো। আর শুয়ে পরো।” বলতে বলতে ইথান কম্বলটা হাতে তুলল।
আমি দাত কিড়মিড় করে এক টান দিয়ে ওনার হাত থেকে কম্বলটা নিয়ে নিলাম আর বিছানায় উঠে বসে গায়ে মুড়ো দিতে দিতে বললাম, “যান আপনি। যথেষ্ট করেছেন। এখন আমাকে শান্তিতে একা থাকতে দিন।”
আপাতত সে হয়ত হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। থাকুক। মুর্খ কোথাকার।
“ডিনার?” উনি প্রশ্ন করলেন।
“করেছি আমি। ঘুমাবো এখন।” থমথমে গলায় মিথ্যাটা বলে দিলাম আমি।
কম্বল মুড়ো দেওয়া অবস্থায় বুঝলাম উনি লাইট অফ করে টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।
বাহ!
কত বাধ্য!
ভাইসব একেই বলে নিরামিষ জীবনযাপন।
তাই moon তুমি নিরামিষফুল।
কিছুক্ষণ পর উনি আবার ফেরত এলেন আর আমার মাথার উপর থেকে কম্বলটা টেনে সরিয়ে দিলেন।
আমি অবাক হয়ে বললাম, কি করছেন?
সে আমার হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বসিয়ে দিয়ে বলল, “ডিনার করতে চলো।”
“করেছি বললাম না?” ঝাঝানো গলায় বললাম আমি।
ইথান গম্ভীরমুখে আমার দিকে ঝুকতেই আমি মাথাটা হালকা পিছিয়ে নিলাম।
“আমার সাথে এভাবে কথা বলার সাহস কে দিলো তোমাকে?”
“কেনো? কাউকে দিতে কেন হবে! আমার নিজেরই আছে।” টিটকারি মেরে বললাম আমি।
শুনেই ইথান আরেকটু ঝুকলো। সাথে সাথেই যেন আমি চুপসে গেলাম।
“চুপচাপ নিচে চলো।” ইথান বলল।
“না গেলে?” ভাব নিয়ে বললাম আমি।
“একটা বাচ্চাও হয়তো তোমার থেকে বেশি obedient.” ইথানের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হয়ে গেল।
“হ্যা জানেন না! আমি ত বাচ্চার চেয়েও বাচ্চা।” একটু রাগমিশ্রিত চোখ তাকিয়ে বললাম।
“তোমার মনে হয় না, একটা বাচ্চা হিসেবে তোমার এটা খুব বেশিই বড়?” উনি বাকা হাসির সাথে আমার বুকের দিকে ইশারা করে বললেন।
হঠাৎ উনি এমন কিছু বলতে পারে চিন্তাও করিনি। আমি অনেক চমকে গিয়েই নিজের দিকে তাকালাম।
ওড়নাও নেই গায়ে।
ওনার মুখে এখনো সেই হাসি বিদ্যমান।
আমি ঝড়ের বেগে কম্বলটা গায়ে টেনে নিলাম। আর কপাল কুচকে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
সত্যিই অসভ্য।
“জলদি নিচে আসো।” বলে উনি উঠে দাঁড়িয়ে রুমের বাহিরে চলে গেলেন।
আমি মুখ দিয়ে একটা নিঃশ্বাস বের করে দিয়ে জলদি বিছানা থেকে উঠে আলমারি থেকে ওড়না বের করলাম। আর সেটা ঠিকঠাক করে পরে নিচে নেমে এলাম।
বুকের মধ্যে এখন ধকধক শব্দ বিদ্যমান। থামাথামির নাম নেই।
সেই ডাক্তার এখনো আছে। সাথে ওই দিশা মেয়েটা আর সেদিনের সেই ভদ্রমহিলা যে বৌভাতে এসেছিলো।
তারমানে এরা সবাই এক পরিবারের! আমি ভদ্রমহিলার সাথে কুশল বিনিময় করে দিশার দিকে তাকালাম।
দিশা একটু শুকনো মুখই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়ত বেশি রিএক্ট করে ফেলেছি তখন।
তাতে অবশ্য আমার অনুশোচনা হচ্ছে না কারণ এই মেয়ে ইথানকে বহুত জ্বালিয়েছে। মেয়ের মতিগতি যখন তখন পালটে গেলে!
“বসো।” ইথান ওর পাশের চেয়ারটা দেখিয়ে দিল।
আমি এগিয়ে গিয়ে বসলাম।
।
ডিনার শেষে ওনাদের চলে যাওয়ার সময় এসে গেলো।
ভদ্রতা হিসেবে ইথান তাদের বাহির পর্যন্ত ছেড়ে দিতে যেতে চাইল।
যদিও ডাক্তার আংকেল বললেন দরকার নাই।
আমিও চাচ্ছিনা উনি যাক।
দিশা পেত্নিটা আছে যে। ওটার বিয়ে হলেও আমি ওকে ভরসা করি না। কারণ তার তাকানোর ধরণ আমার এখনো সুবিধাজনক লাগছে না।
ইথানের যাওয়া কিভাবে আটকাবো! আটকাতেই হবে আমার।
চিন্তা করতে করতেই আমি পেয়েও গেলাম।
দ্রুত সিঁড়ির কাছে এগিয়ে গিয়ে দুই সিড়ি উঠে ঝপ করে বসে পড়লাম। আর নাটক শুরু করে দিলাম, “উফ আমার পা।”
সাথে সাথে আমার দিকে সবাই ঘুরে তাকালো।
ইথান দ্রুত এগিয়ে এসে গম্ভীর গলায় বলল, “দেখে উঠবা না?”
ইথানের মাও এগিয়ে এসে বলল, “বেশি লেগেছে?”
“অল্প, বেশি না।” মিনিমিনে গলায় বললাম আমি।
ততক্ষণে ইথান এক হাটু ভাজ করে আমার পা স্পর্শ করল।
যাক নাটক সাকসেসফুল।
ডাক্তার আংকেল চিন্তিত হয়ে বললেন, “আমি দেখছি।”
এই ডাক্তারের কথা ত আমি ভুলেই গেছিলাম।
সাথে সাথে আমি ঘাবড়ে গেলাম আর বলে উঠলাম, “না। প্লিজ আমি কোনো ইনজেকশন নিব না। অল্প শুধু লেগেছে।”
ইথান বাদে সবাই শব্দ করে হেসে উঠল।
আর তার চোখের চাহনিই বলে দিচ্ছে সে আমার নাটক ধরে ফেলেছে। কারণ ইতিমধ্যে সে আমার পায়ে চাপ দিয়েছে। আমি তাতে ব্যথাই পাইনি।
এগুলো ভালই বুঝবে। কিন্তু যেগুলো বুঝার সেটাই বুঝবে না।
“আ…আমাকে উপরে নিয়ে যান প্লিজ।” ইথানকে অনুরোধের সুরে বললাম আমি।
“হ্যা নিয়ে যা। আমি ওনাদের ছেড়ে দিয়ে আসি।” বলতে বলতে ইথানের মা ওনাদের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন।
ইথান গম্ভীরমুখে তাকিয়ে একদম আস্তে আস্তে বলল, “আমি ভাল করেই জানি কিছু হয়নি। সোজা উপরে যাও।”
আমি তার কথায় কান না দিয়ে মোটামুটি আওয়াজে বললাম, “পা ব্যথা। প্লিজ ধরে ধরে নিয়ে চলুন।”
সবাই একটু মুচকি হেসে তাকালো আমাদের দিকে।
দিশা মেয়েটাই শুধু হাসছে না। ম্লানমুখে তাকিয়ে আছে। অর্থাৎ এই মেয়ের মতিগতি সত্যিই ভাল না।
ইথান বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে গলার আওয়াজ নামিয়ে বলল, “আমি জানি তুমি হেটে একাই যেতে পারবা।”
“পারব না। আপনিই নিয়ে যাবেন।” আমিও মুখ ফুলিয়ে ফিসফিস করে বললাম।
ইথান উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।
আমি বসে থেকেই অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালাম।
আমার আলাদা রকম খারাপ লাগছে। আমাকে নিয়ে যেতে ওনার কি সমস্যা!
যথেষ্ট হয়েছে। এখন আমার পালা। ভালোবাসি বলে ইগনোর গুলোও সহ্য করবো, এটা ভেবেছেন উনি?
আমি নিজের চোখ মুখ শক্ত করে ফেলে, সিঁড়ির রেলিং ধরে উঠে দাড়ালাম।
ওনার দিকে, বা পিছনের ব্যক্তিগুলোর কারো দিকে একবারো না তাকিয়ে সিড়ি দিয়ে ওঠার জন্য ঘুরলাম।
আর পা বাড়ানোর আগেই আচমকা ইথান আমাকে কোলে তুলে নিলো।
আমি চমকে ওনার মুখের দিকে তাকালাম।
সে ভ্রুকুচকে আমার দিকে একপলক তাকিয়ে তারপর সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যেতে লাগলো।
আমি হা হয়ে গেলাম কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। এত সহজে আমি ভুলছি না।
উনি আমাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন। হয়তো আমার মতিগতি দেখছেন।
কিন্তু আমি মুখ ঘুরিয়ে রেখেছি ত রেখেছি।
“শুয়ে পরো৷” উনি শান্ত গলায় বললেন।
আমি অন্যদিকে তাকিয়ে চোখ মুখ কুচকে রইলাম।
“আবার এইরকম শুরু করেছ?” ইথান অধৈর্য হয়ে বলল।
আমি একটা বিরক্তির নিঃশ্বাস বের করে দিয়ে গায়ে কম্বল টেনে নিলাম। আর তার মুখের দিকে না তাকিয়েই বললাম, “কালই আমি বাড়ি যাব।”
“What do you mean?” উনি আকাশ থেকে পড়ে বললেন।
“আটটার সংবাদ একবারই।” বলে আমি কম্বল দিয়ে মাথা ঢেকে নিলাম।
“কিজন্য?” থমথমে গলায় বলল ইথান।
আমি আর উওর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম না। এদিকে শরীর দিয়ে গরম ভাপ বের হচ্ছে।
জ্বর ত আসবেই। একে ত সিজন চেঞ্জের সময়, আর সেই সময়েই বৃষ্টিতে ভিজেছি।
নিঃশ্বাসও কেমন ঘন হয়ে আসছে।
“কিজন্য যাবা?” ইথান কিছুক্ষণ পরে আবার প্রশ্ন করল।
আমি চুপ করে কম্বলের মধ্যে গুটিশুটি হয়ে রইলাম।
ইথান রেগে বলে উঠল, ”শুনতে পাচ্ছ না?”
আমি এবার কম্বল সরিয়ে ঝট করে উঠে বসলাম। আর রাগমিশ্রিত গলায় বলতে লাগলাম, “পাচ্ছি শুনতে। শুধু এটাই বুঝতে পারছি না যে আপনি আমার সাথে এমন কেন করছেন! আমার ভালো লাগছে না। তখন আপনি আমাকে ছাদে ওগুলো বললেন তাই আমি মনে করলাম…।” বলতে বলতে আমার চোখে পানি চলে এলো। আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
সে আপাতত থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে।
বেশি রেগে গেলে চোখে পানি আসার বিষয়টা অনেক বিরক্ত লাগে আমার।
একে ত রাগ লাগছে।
অন্যদিকে জ্বর আসবে আসবে অবস্থা। তাই ঠোঁটটাও শুকিয়ে যাচ্ছে। শরীরটাও কেমন লাগছে। মাথাব্যথা ত শুরু হয়েই গেছে।
উনি আচমকা আমার হাত ধরে টান দিয়ে ওনার দিকে ঘুরালেন। কিন্তু যা বলতে চেয়েছিলেন সেটা বলতে পারলেন না। কারণ তার আগেই আমার শরীরে যে জ্বর চলে আসছে সেটা বুঝতে পেরে অস্থির হয়ে বলে উঠলেন, “তোমার ত গা গরম হয়ে যাচ্ছে।”
আমি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, “আপনি আপনার কাজ করেন। আমাকে টাচ করবেন না।”
সে আমার কথায় পাত্তাই দিল না। বরং ফোন বের করে কাকে যেন ফোন করার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেল।
আমার বুঝতে দেরি হলো না যে কোনো এক ডাক্তারকে ফোন দিচ্ছেন।
আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে অন্যদিকে তাকালাম।
ইথানের ফোন কাঙ্খিত ডাক্তার ধরলো না।
তাই ইথান বিরক্ত হয়ে নিজের ফোনটা রেখে, আমার কপালে হাত দিলো।
আমি ইথানের মুখের দিকে তাকালাম।
“বেশি খারাপ লাগছে?” ইথান ব্যস্ত হয়ে বলল।
আর আমার কি হলো জানিনা। আমি আর রাগ করে থাকতে পারলাম না।
আমি না সূচক মাথা নাড়লাম।
“শুয়ে পরো আমি মেডিসিন দিচ্ছি আপাতত। তারপর ডক্টরকে কল করছি।” বলতে বলতে উনি আমার গায়ে কম্বল টেনে দিতে চাইলেন।
কিন্তু আমি ওনার হাত ধরে নিয়ে সরু চোখে তাকিয়ে বললাম, “সামান্য জ্বরের জন্য এত রাতে দয়া করে ডাক্তার ডাকতে হবেনা।”
মুখ দেখেই বুঝলাম যে আমার কথাটা ইথানের পছন্দ হয় নি।
আমি অনুরোধের চোখে তাকিয়ে বললাম, “প্লিজ, সকাল অব্দি সুস্থ হয়েই যাব বিশ্বাস করুন।”
“বেশি কথা না বলে আগে ঔষধ খাও।” বলেই ইথান ড্রয়ার থেকে মেডিসিনের বক্স বের করতে ব্যস্ত হয়ে গেল।
তারপর বের করে আমার হাতে একটা ট্যাবলেট আর এক গ্লাস পামি ধরিয়ে দিল।
আমি বিরাট বিরক্তির সাথে গিলে নিলাম।
ইথান আমার হাত থেকে গ্লাস নিয়ে আমাকে শুয়ে পরার জন্য ইশারা করল আর লাইট অফ করে দিল।
আমি শুয়ে পরতে পরতে ইথান এসে আমার পাশে শুয়ে আমার দিকে ঘুরে আমার গায়ে ঠিকমতো কম্বলটা দিয়ে দিতে লাগল।
আমি শুধু মুদ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম। আর দেখতে দেখতে ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।
“কি করছ তুমি?” অবাক হয়ে গেল ইথান।
“এভাবে ঘুমাবো আমি।” বলেই আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আমি ইথানকে।
ইথান কিছু বলল না।
যদিও আমার গায়ের জ্বরের কারণে তার অনেক অসস্তি হবার কথা। তাও আমাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো।
“আপনি সেদিন বুঝতে পেরেছিলেন তারমানে?” আমি জড়িয়ে ধরেই প্রশ্ন করলাম।
“কি?” উনি না বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করলেন।
“ওইযে, চাঁদটা অনেক সুন্দর! ওইটা।” প্রশ্ন করলাম আমি।
“হুম।” উওর দিল ইথান।
“এখন বলেন আমার দুল কেনো রেখে দিয়েছিলেন। উওর দিতেই হবে।” আমি জেদ করে বললাম।
ইথান সিক্ত গলায় বলল “আমি বলতে বাধ্য না।”
আমি এবার চোখ তুলে ইথানের দিকে তাকালাম আর চোখ পাকিয়ে বললাম, “থাক, বলতে হবে না। আমি বুঝে গেছি। ফুলসজ্জা কি বললেন? আমি নাকি প্লানিং করেছি! আপনি ত আমারো আগে প্লানিং করেছেন। কিন্তু এটা বুঝলাম না যে এতদিন কেন এমন করলেন?”
আমি কড়া দৃষ্টিতে উওরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
ইথান কোমলভাবে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল।
আমি কিছুসময় তাকিয়ে থাকতে পারলাম। কিন্তু বেশি সময় পারলাম না। তাই চোখ সরিয়ে নিলাম।
“আমাকে এভাবে কোনো মেয়ে ইনসাল্ট করার সাহস পায়নি। তোমার মনে হয় সহজে ছেড়ে দিতাম আমি?” সরু চোখে তাকিয়ে বলল ইথান।
আমি হা হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম, “ত দুল?”
“ওটা রেখেছিলাম পরে তোমাকে শায়েস্তা করতে। বাট তার আগেই একটা কাজের জন্য ফিরে আসতে হলো। আর নিপার ভুল ব্যাখ্যার কারণে মাও ভুল বুঝে বসলো। কিন্তু সে যে বিয়ে অব্দি ঠিক করবে কে জানতো!” বলল ইথান।
আমি হতাশ চোখে তাকিয়ে বললাম, “তারমানে আপনি জানতেনই না? সত্যি?”
ইথান একটু চিন্তা করার ভান করে বলল, “মেবি।”
সাথে সাথে আমি সরু চোখে তাকিয়ে ওর বুকের উপর একটা কিল বসিয়ে দিলাম। আর অভিমানী সুরে বললাম, “মিথ্যুক আপনি। অনেক বড় মিথ্যুক। মনে যেটা আছে সেটা বলে দিলে কি হয়? অসহ্য লোক একটা!”
ইথান একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “বলে দিলেই ত শেষ। তাই কিছু জিনিস না বলা থাকলেই ভাল। বলা হয়ে গেলে কিছুই বাকি থাকে না।”
আমি চোখ পিটপিট করে তাকাতে লাগলাম। কারণ এমনভাবে আমি কোনোদিনো ভেবে দেখিনি!
“কি?” ইথান বলল।
আমি না সূচক মাথা নেড়ে ইথানের বুকে মাথা গুজে দিলাম।
সে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।
যদিও জ্বর কমছেই না তাও খারাপ লাগছে না। কারণ আমার প্রতিষেধক ত আমার খুব কাছেই আছে।
চলবে
সেই কবে থেকেই অপেক্ষা করছি বাকি পর্ব গুলোর। কবে দিবেন লাকি আপু বাকি পর্ব গুলো?
Ajke paben