ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-১০

0
2664

গল্পর নাম :#ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_১০ : #moon_really_is_beautiful
লেখিকা : #Lucky

“আ…আমি…” আমার মুখ থেকে কিছুই বের হলো না।
“তোমার সাহস কি করে হয় ওই কথা উচ্চারণ করার।” ইথান রাগমিশ্রিত কন্ঠে বলল।
আমি চুপচাপ মাথা নিচু করে রইলাম।
“স্নিগ্ধার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে। আর তুমি যে কোনো কিছু ভেবে নিয়ে সন্দেহ ত করেছই, আবার অন্য একটা ছেলের কাছে যাওয়ার কথা বলছ!”
এখন কি হবে আমার!
কি করলাম এটা আমি।
আমি এখনো চোখে চোখ মিলাতে পারছি না।
“আর বলব না, সরি।” মিনমিনে গলায় বললাম আমি। তারপর ওনার চোখের দিকে তাকালাম।
রাগ ত কমে নি এখনো।
“সরো।” ঠান্ডা গলায় বলল ইথান।
আমি ঠোঁট উলটে বললাম, “আমাকে সেদিন শুধু কথা বলতে দেখেই মেজাজ দেখালেন। তাহলে আমি একই ফ্ল্যাটে আপনাদের দেখলে কি ঠান্ডা থাকব? এটা মনে হয় আপনার?”
“সরতে বলেছি।” বলল ইথান।
এখন আমারই মেজাজ বিঘড়ে যাচ্ছে।
“না সরব না। এভাবেই চিপকে থাকবো। কি করবেন? বেশি কথা বললে আবার কামড়ে দেব আমি।” রেগে বললাম আমি।
“সারারাত এভাবে থাকতে চাচ্ছ?” ইথান নির্বিকার চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করল।
“আমার কোনো সমস্যা নেই। আশা করি আপনারও কোনো সমস্যা নেই।” হাসিমুখে বললাম আমি।
“আমার আছে সমস্যা।” বলে উঠল ইথান।
“চুপচাপ থাকুন। আপনার কিসের সমস্যা?” চোখ পাকিয়ে বললাম আমি।
ইথান কিছু না বলে তাকিয়ে রইল।
“কেনো? আপনার কিছু করতে ইচ্ছে করছে?” সরু চোখে তাকিয়ে বললাম আমি।
সাথে সাথে ইথানের মুখটা দেখার মত হয়ে গেল। হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে রইল সে।
হয়তো নির্লজ্জ ভাবছে আমাকে।
তাতে আমার কি!
আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম, “যাই হোক, ইচ্ছে করলেই ত আর হবেনা। অনেক ভাব নিয়েছেন আপনি। এখন আগে স্বীকার করবেন ‘ভালোবাসি’ তারপর কাছে আসার ধান্দা করবেন। তার আগে যদি আসেন আমি চিৎকার করে লোক জড় করব বলে দিলাম। আমি এরিনও কম যাই না।” গড়গড় করে বললাম আমি।
ইথান শুনে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
“ওকে ঘুমাবো। আসেন ঘুমাই।” বলেই আমি ইথানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার উপরেই শুয়ে পরলাম।
|
|
সকাল সকাল ইথান আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিল।
আমি ঘুম ঘুম চোখে মুখ তুলে তাকিয়ে বললাম, “কি?”
“অফিস যাব আমি। দেরি হচ্ছে।” বলল ইথান।
মেজাজ বিঘড়ে গেল আমার আবার।
“কি হলো, সরো?” ভ্রুকুটি করে বলল ইথান।
এসব – ‘সরো, ছাড়ো, দেরি হচ্ছে’ এগুলো লাইন বলবে মেয়েরা। কিন্তু এখানে দেখো!
যত্তসব আন-রোম্যান্টিক।
“কি হলো?” বলল ইথান।
আমি একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে বললাম, “সরে যাব যদি আমার একটা প্রশ্নের উওর দেন তাহলে।”
ইথান প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো।
“আমার কানের দুল, যেটা আমি সেই বিয়ে বাড়িতে হারিয়ে ফেলেছিলাম, আপনার ড্রয়ারের মধ্যে কিভাবে এলো?” ভ্রু উঁচু করে বললাম আমি।
ইথান শোনার সাথে সাথে আমাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে উঠে গেল। আর আলমারির কাছে যেতে যেতে বলল,”জানিনা আমি।”
আমি মুখ বাকা করে বললাম, “ফালতু এক্সকিউজ দিয়েন না।”
“তো তোমার কি মনে হয় আমি নিজের কাছে রাখবো?” ঘাড় ঘুরিয়ে তাচ্ছিল্যের চোখে তাকিয়ে বলল ইথান। তারপর আলমারি থেকে নিজের কাপড় বের করতে ব্যস্ত হয়ে গেল।
আমি মনে মনে ফুসতে লাগলাম।
সে নিজের মত গোসল করতে চলে গেল।
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বালিশে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
.
সন্ধ্যার দিকে কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দিতেই আমি সেই ডাক্তারকে দেখলাম।
উনি আমাকে দেখেই বলে উঠলেন, “ভালো আছো এখন?”
আমি হাসিমুখে বললাম, হ্যা, ঠিক আছি। ভিতরে আসেন।
উনি ভিতরে এসে সোফায় বসতে বসতেই ইথানের মা রান্নাঘর থেকে বের হয়ে এলেন আর বললেন, নন্দিনীরাও নাকি আসবে?
“রাস্তায় আছে। আমি ত চেম্বার থেকে এসেছি। মেঘ করেছে বাহিরে। জানিনা বৃষ্টি হবে কিনা।” বললেন উনি।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,”বসো, মা এখানে। আর ইথানকে দেখছি না! সে কোথায়! দুই-তিন মাস দেখা হলোনা। ইন্ডিয়ায় ছিলাম তাই বিয়েতেও আসতে পারলাম না আমি।”
আমি মৃদু হেসে বসলাম আর বললাম, “আসেনি। আসবে।”
হঠাৎ এই ডাক্তারের লাস্ট দুই লাইন কথা আবার মনের মধ্যে রিপিট করলাম। কারণ শেষ কথাগুলো ঠিক বোধগম্য হলো না।
তাই আমি অনেক কৌতুহল নিয়ে বললাম,”আমাকে ট্রিটমেন্ট দিতে এসে ইথানের সাথে কথা হয়নি?”
“না। কেনো?” ডাক্তার আংকেল প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।
তাহলে কোলে বসিয়ে রাখলে পেটব্যথা চলে যাবে এটা আবার কোন ডাক্তার বলেছিল ইথানকে?
নাকি উনি মিথ্যা বলেছিলেন!
আমি চোখ ছোটো ছোটো করে বিড়বিড় করে বলে উঠলাম,”আসুক আজকে।”
ডাক্তারটা না বুঝে হা করেই তাকিয়ে রইল।
“কিছুনা। একটু আসছি।” বলে আমি নিজেদের রুমে চলে এলাম।
এসেই আমার পাইচারি শুরু হলো।
সবকিছু পাজেলের মত হয়ে যাচ্ছে।
এই দুল, ফুলদানি, জেলাসি, কোলে বসানো। এগুলো মিলিয়ে ত মনে হয়…। উফ না, কিচ্ছু মনে হয়না। গতদিন অনেক কিছু মনে করলাম। কিন্তু হলো কি??
কিছুই না।
আমি একটা বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে বিছানায় বসলাম।
তখনি কলিং বেলে চাপ পড়লো।
সাথে সাথে মনে হলো ইথান এসেছে। আমি চট করে নিজেকে আয়নায় দেখে নিলাম।
ঠোঁটটায় একটু লিপিস্টিক না দিলেই নয়। তাই দ্রুত লাল খয়েরী লিপিস্টিক টা নিয়ে নিলাম।
যাক এখন বেশি সুন্দর লাগছে।
আমি আয়নার কাছ থেকে সরে এসে বিছানায় বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
কিন্তু সে ত আসছেই না!
আমি বার বার দরজার দিকে তাকাতে লাগলাম।
খানিক বাদেই মনে পরল ডাক্তার আংকেলের সাথে হয়তো কথা বলছে।
তাই আমিও নিচে যাওয়ার জন্য রুম থেকে বের হলাম।
তখনি রুমের থেকে একটু দূরেই ইথান আর ওই দিশা মেয়েটাকে দেখলাম।
দিশা মাথা নিচু করে মিনমিন করে কি যেন বলছে।
আর সেটা শুনে ইথান শুধু একটা মৃদু হাসি দিলো।
আর সেটা দেখেই ত আমার গা জ্বলে গেল। দিশা মেয়েটাকে নিয়ে আমার সন্দেহ প্রথম থেকেই।
এই মেয়ে সুবিধার না।
তাছাড়া এমন হাসি ইথান শুধু আমাকে দিবে, আমাকে। আর কাউকে না।
আমি রেগে এদিক ওদিক তাকাতেই হাতের কাছে একটা কাঠের টুলের উপর কাচের হাঁস রাখা দেখলাম।
ওনাদের এসব খোশগল্প আমার সহ্য হচ্ছেনা। এতই গল্প যে আমাকে চোখে দেখতেই পাচ্ছে না। তাই এক ধাক্কা দিয়ে কাচের হাঁসটা মেঝেতে ফেলে দিলাম।
সশব্দে সেটা মেঝের টাইলসে পড়ে গুড়োগুড়ো হয়ে গেল।
তবে এর বিনিময়ে তাদের খোশগল্প গল্প বন্ধ হলো।
তারা দুইজনই চমকে আমার দিকে তাকালো।
আমি আর দাঁড়ালাম না। সোজা বাসার ছাদের দিকে হাটা শুরু করলাম।
অসহ্য লাগছে।
ইথানের আশেপাশে মেয়ের অভাব নেই!
আমার ত এখন সত্যিই মৃদুলের গলা জড়িয়ে ধরে গল্প করতে ইচ্ছে করছে।
.
আমি ছাদে এসে দাড়াতেই দেখলাম সত্যিই বৃষ্টি নামবে নামবে অবস্থা।
এখন কি করবো! ফিরে যাব?
অসম্ভব।
কি করছে উনি কে জানে? এত দেরি করছে আসতে?
নাকি ওই মেয়ের সাথে আবার গল্প জুড়ে দিলো!
আমি রাগে ফুলতে ফুলতে ছাদের রেলিং এ পিঠ ঠেকিয়ে বসে পড়লাম।
আর মনে মনে চিন্তা করতে লাগলাম, এটাও আবার কোনো স্টুডেন্ট!
দেখে ত বয়স ইথানের সমান মনে হয়।
উফ। চিন্তা করেই নিজের মাথার চুল দুইহাতে চেপে ধরে হাটুতে মাথা গুজে দিলাম।
সাথে সাথেই শুরু হলো বৃষ্টি। আমি মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকালাম।
ঘন কালো মেঘ করেছে।
মনে মনে ঠিক করলাম নীচে যাব। কারণ ওই মেয়েকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। আমার ইথানের সাথে কিছু করে দিলে?
ভালো এরিন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ছাদের রেলিং দিয়ে হাটতে হাটতে বলল, “সবাই কী তোর মত লুচ্চা!”
“এরিন তুই নিচে যা, আর ঠাটিয়ে দুই থাপ্পড় লাগাবি ওই মেয়েকে।” খারাপ এরিন বলল।
আমি মনে মনে তাই-ই করার জন্য ঠিক করে নিলাম।
কিন্তু উঠে দাড়ানোর আগেই ইথান ছাদে ঢুকলো।
আর ঢুকেই আমার দিকে গম্ভীর চোখে তাকালো।
তাকে দেখেই আমি মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকালাম। এত সময়ে এসেছে সে।
সে বৃষ্টির মধ্যে দিয়েই হেটে আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি কপাল কুচকে ফেললাম।
কোনো কিছু না বলেই সে আমার পাশে বসে পরল যেদিকে আমি মুখ ঘুরিয়ে ছিলাম।
তাই সাথে সাথে আমি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
কথা বলবই না আমি। দেরি করে এসেছে কেনো?
“ঠান্ডা লাগবে নীচে চলো।” বলল ইথান।
আমি কিছুই বললাম না। মুখ ফুলিয়েই রইলাম।
যদিও আরেকটু হলেই কিনা আমি গলে যাব।
এই ছেলের থেকে দূরে থাকাই যায় না।
কারণ বিশ্বাস আছে সে আমাকে ধোকা দেবে না।
আমাকে থম মেরে বসে থাকতে দেখে সে বলতে লাগল, “দিশা পছন্দ করত আমাকে।”
শুনেই আমি সরু চোখে ইথানের দিকে তাকালাম।
সে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।

“আমি না করে দিয়েছিলাম। তাও বিভিন্নভাবে আমাকে বোঝানোর জন্য চেষ্টা করত। বোঝানো থেকে তা এক পর্যায়ে পাগলামিতে চলে গেল। সুইসাইড করবে, নিজের হাত কাটবে, ব্লা ব্লা। তার মা-বাবা তার পাগলামি ভয় পেত। কিন্তু তারা এটা জানত না যে আমার জন্য এমন করছে। আমি ওকে অনেক ইগনোর করেই চলতাম। ওর মা বাবা ওকে অনেক বুঝানোর পর একটু ঠিক হলো। যদিও তারা এখনো জানেনা যে আমার জন্যই দিশা এমন করত। then তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেল।” কথা শেষ করে ইথান আমার দিকে তাকালো।
আমি চোখ সরিয়ে নিয়ে ঝাঝানো গলায় বলতে লাগলাম “তাহলে আজকে ওর সাথে কেন আপনি…?”
“সবকিছুর জন্য সরি বলছিল। আর করবে না এমন। আর আগের বিষয় ভুলে যেতে। এখন একজন ক্ষমা চাইলে কি করা উচিত?” কপাল কুচকে বলল ইথান।
আমি এবার কি বলব চিন্তা করতে লাগলাম। কিন্তু বলার মত কিছু না পেয়ে ওর মুখের দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকালাম।
দুজনেই ভিজে বিড়ালের মত ভিজে চুপসে যাচ্ছি। ঠান্ডাও লাগছে। হয়তো ইথানেরও লাগছে।
আমাদের ওঠা উচিত। নাহলে আমার জন্য ওর ঠান্ডা লেগে যাবে।
আমি আড়চোখে ইথানের দিকে তাকিয়ে বললাম, “নিচে চলুন। নাহলে ঠান্ডা লাগবে আ..আপনার।”
ইথান নিশ্চুপ হয়ে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, “The moon really is beautiful, Isn’t it?”
সাথে সাথে আমি চমকে ইথানের দিকে তাকালাম।
তার ঠোঁটের কোনে আবার সেই হাসি। যা সেদিন ছিলো।
এই ঠান্ডা বৃষ্টির জলে গা ভিজলেও এখন ঠান্ডা লাগছে না। এদিকে চোখের পলকও কয়েক সেকেন্ডের জন্য ফেলতে ভুলে গেছি। কারণ এটা সত্যিই অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল।
তবে নিজের মধ্যে হুস ফিরে আসার সাথে সাথে আমি উঠে দাড়িয়ে ছুট লাগালাম নিচে নামার জন্য।
তবে লজ্জার জন্য না। বিষয়টা হজম করার জন্য।

ছাদ থেকে রুম পর্যন্ত পানি পানি বানিয়ে ফেলেছি। শরীর শীতে কাঁপছে সেদিকে খেয়াল নেই।কারণ ইথানের বলা কথাটা এখনো কানে বাজছে।
হয়তো এখন আমি সব প্রশ্নের উওর মেলাতে পারব।
চিন্তা করেই মুখ ফুটে হাসি এলো।
আর সাথে সাথেই ইথান রুমে এসে ঢুকলো।
তখনি আমি মুখ থেকে হাসিটা সরিয়ে আড়চোখে ইথানের দিকে তাকালাম। তারপর পুরোপুরিই তাকালাম।
“এখনো চেঞ্জ করো নি?” ইথান স্বাভাবিক ভাবেই বলল।
আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে না সূচক মাথা নাড়লাম।
Hot শব্দের উপরে যদি কোনো শব্দ থাকে তাহলে সেটাই লাগছে ইথানকে। গাড় বেগুনি শার্টটা ভিজে গায়ে একদম লেগে আছে।
আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি ভ্রুকুচকে ফেললেন আর বললেন, “কি?”
“আপনাকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।” বিড়বিড় করে বলে ফেললাম আমি।

(চলবে…)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে