ভালোবাসি বলেই ভালোবাসি বলিনা পর্ব-০১

0
5763

গল্পর নাম : #ভালোবাসি_বলেই_ভালোবাসি_বলিনা
#পর্ব_১ : #ভালোবাসতে_ভালোলাগে
লেখিকা : #Lucky

আমার ফুলসজ্জার ঘরটা এত সুন্দর সাজানো হয়েছে যা বলার মত না। দেখেই খুশি হয়ে গেলাম। যদিও বরটা রাক্ষস আর একটা অসহ্য।
কিন্তু বর মন মত হয়নি তাই বলে নিজের ফুলসজ্জাতে সেলফি তুলবো না!
যদিও এখনো বিরক্ত লাগছে। এই বিয়ে করাটা আমার অনেক বড় ভুল হয়েছে।

উফ যাই হোক। বিয়ে হয়ে যেহেতু গেছে এখন এত চিন্তা করে লাভ ত হবে না।
আমি বরং ওই রাক্ষস বর আসার আগে সেলফি তুলে নিই।
বিয়েতে কোনো সেলফিও তোলা হয়নি। সবাই জিজ্ঞেস করবে পিক দে।
আমি তাড়াতাড়ি নিজের ফোনটা বের করে ছবি তুলতে লাগলাম।
উফ কি কিউট পিক আসছে!
শুধু যদি বরটা একটু নিজের মন মত হত তাহলে ওর সাথেও সেল্ফি তোলা যেত! এই ছেলের সাথে আমি কিভাবে থাকবো!
যেভাবে আমাকে অপমান করতে থাকে! ভেবেই আমি রাগে ফুলে উঠতে লাগলাম। কিন্তু নিজেকে জোর করে শান্ত করে নিলাম। তারপর এক মুখ হাসি নিয়ে আবার সেলফি তুলতে লাগলাম।
ফুল দিয়ে সাজানো বিছানার সাথে অনেক ছবি তুলতে লাগলাম। বিভিন্ন পোজে।
খোমটা দিয়ে, খোমটা খুলে, পাউট করে।

হঠাৎই মনে হলো পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।
সেই কেউ, আর কেউ না, ইথান।
ও এসে গেছে?
আমার মুখ থেকে হাসি উবে গেল। আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পিছন ফিরে তাকালাম।
এথান আমার একটু পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে।
মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে সে অনেক রেগে আছে।
কিন্তু তাতে আমার কি!
আমি মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে আবার সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।
কিন্তু এখন সহজ ভাবে তুলতে পারছি না। হাত কাপছে।
ওকে দেখে হার্ট বিট বেড়ে গেছে। তাছাড়া অনেক সুন্দর লাগছে ওকে দেখতে। আরেকবার পিছন ফিরে দেখতে ইচ্ছে করছে।
এক মিনিট আমি এগুলো কি ভাবছি!
আমার কি মান সম্মান নেই? ওই ছেলের গায়ে পরব আমি? কোনো দিনো না।
আমারো মেলা ইগো।
কিন্তু যতই নিজেকে ভুলাই না কেনো, এটা ত সত্যি যে আমি এই অভদ্র ছেলেটাকে অল্প অল্প পছন্দ করি।
অল্প অল্পই, বেশি না।
“প্রথমে ত এত ভাব নিচ্ছিলা যে মাটিতে পা ই পরছিল না! কিন্তু শেষে বিয়ে পর্যন্ত করার জন্য এতটা প্লান করে নিলে!” ব্যঙ্গ করে বলল ইথান।
কথা শুনে আমার গা জ্বলে গেল।
দিলো মুডটা নষ্ট করে। এর মত ছেলের সাথে কিভাবে মানিয়ে নেব আমি? প্রথম দিন থেকে আমাকে অপমানের উপর অপমান করে যাচ্ছে।

আমি রেগে পিছন ফিরে তাকিয়ে বললাম, “আমাকে এত যে শোনাচ্ছেন,আপনি কি! আপনি কেন করলেন বিয়ে! তাছাড়া এই বিয়ে আমার বাসা থেকে ঠিক হয়েছিল।”
“আমি যদি জীবনেও জানতাম যে তোমার সাথে ঠিক হয়েছে সাথে সাথেই না করে দিতাম।” তাচ্ছিল্যের সাথে বলল ইথান।
“তাছাড়া আমি বিশ্বাস করিই না যে তুমি জানতে না। একটা ছেলেকে না দেখে বিয়েতে রাজি হবার মত টাইপের মেয়ে তুমি না। যেমন দেখো এতই আনন্দ তোমার যে তুমি এখন সেলফি তুলে বেড়াচ্ছ।” আরো বলল ইথান।
“নিজেকে কি মনে করেন?” রেগে বললাম আমি।
ইথান আমাকে পাত্তা না দিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেল।
আমি পিছন থেকে লাত্থি দেওয়ার ইশারা করলাম।
জঙ্গলী একটা।
আমি মুখ ফুলিয়ে বিছানায় বসলাম।
আমি ত মনে করেছিলাম উনি পছন্দ করেন আমাকে তাই বিয়েতে রাজি হয়েছেন! অথচ উনি জানতেনই না আমার সাথে বিয়ে! শুধুমাত্র তার মায়ের কথাতেই বিয়েতে রাজী হয়ে গেলেন? এ আবার কেমন?
যদি রানু মুখার্জির মত কারো সাথে বিয়ে দিয়ে দিত ওনার মা!
হ্যা এটা সত্যি যে আমি জেনে শুনেই বিয়েতে রাজি হয়েছি কারণ আমি ইথানের মায়ের নিয়ে আসা বিয়ের প্রস্তাব শুনে মনে করেছি ইথান আমাকে পছন্দ করে।
কিন্তু উনি ত আমাকে সহ্যই করতে পারেন না।
এখন কি হবে আমার!
সিরিয়ালে ত দেখায় যে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যায়। মিল হয়ে যায়। ভালোবাসা হয়। কিন্তু আমাদের টা কবে ঠিক হবে?
এই ঘাড় ত্যাড়া যদি ঠিকই না করে?
আমি হা করে অনেক সময় চিন্তায় পরে তাকিয়ে রইলাম।
তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলে মাথা থেকে সব ঝেড়ে ফেলতে চাইলাম।
কিন্তু এখন সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হলো আমি ঘুমাবো কোথায়?
সিরিয়ালের মত কোনো সোফা নেই। আর নিচে বিছানা পাতার মত কিছুও নেই।
সারারাত আমাকে বেলকনিতে বসিয়ে রাখলে?
তাই আগে আগে শুয়ে ঘুমিয়ে পরলেই ভাল।
আমি বিছানায় উঠে বসতে না বসতেই ইথান একটা বেগুনী রঙের শার্ট পরে বের হয়ে এল। আর আমার দিকে কয়েক সেকেন্ড বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল।
আমার হাত পা কিছুই নড়ছে না। আমি চুপ করে মেঝের দিকে তাকিয়ে বোকা হয়ে বসে রইলাম।
কেমন একটা পরিস্থিতি! শুয়ে পরতেও লজ্জা করছে।
উনি ত মনে করছেন আমি প্লান করে সব করেছি। এখন কিনা মনে করবেন যে আমি ওনার সাথে এক বিছানায় ঘুমাতে চাই!
আমার নিজের উপর নিজেরই রাগ লাগছে। কেনো যে ভুল বুঝলাম। ওইদিন উনি আমার জন্য যেটা করেছিলেন সেটাকে আমি ওনার ভালোলাগা ধরে নিয়েছিলাম। বেশি সিনেমা দেখলে যা হয় আরকি!

“এটাকে এখানে ফেলে রেখে দিয়েছ কিসের জন্য?” ইথান বলল।
ইথানের কথায় আমার ঘোর কাটলো।
আমার ল্যাগেজটা রুমের মধ্যে রাখা। যদিও সব জামাকাপড় ওনার আলমারিতে তুলে দিয়ে গেছেন ওনার মা।
আমি বিছানা থেকে উঠে ল্যাগেজটার কাছে এলাম। এটা কোথায় রাখা যায় সেটাই ভাবতে লাগলাম।
বুঝতে না পেরে ইথানের দিকে তাকালাম।
উনি তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে ব্যস্ত।
আমি আশেপাশে তাকিয়ে আলমারির উপরের ফাঁকা জায়গাতে এটা উঠিয়ে রাখার কথা চিন্তা করলাম।
আমি ল্যাগেজ নিয়ে এগিয়ে গেলাম আর উপরে ল্যাগেজটা তুলে রাখার জন্য এক হাত দিয়ে ল্যাগেজের হেন্ডেল ধরলাম ও অন্য হাত ল্যাগেজের নিচে রেখে ল্যাগেজটা তোলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু আলমারির উপরে উঠাতে পারছি না!
আমি তাও নিজের পায়ের পাতার উপর ভর রেখে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে চেষ্টা করতে লাগলাম।
কিন্তু পারছিই না। আমি চেষ্টা করতে থাকা অবস্থাতেই পিছন ফিরে তাকালাম।
ইথান আমার দিকে নির্বিকার ভঙিতে তাকিয়ে নিজের মাথা মুচ্ছে।
আমি বিরক্তির সাথে সামনে মুখ ঘুরালাম। আর আবার চেষ্টা করতে লাগলাম। তখনি হয়ে গেল আরেক কান্ড। আমার হাত ফসকে গেলো আর ল্যাগেজ আমার মাথায় এসে পরতে লাগল।
আমি ভয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিলাম। কিন্তু আমার মাথার উপর ল্যাগেজটা পড়লো না।
ব্যাপার কি?
আমি আস্তে আস্তে চোখ খুললাম আর অনুভব করতে পারলাম যে ইথান আমার পিছনে দাড়িয়ে আছে। অর্থাৎ ও ধরে নিয়েছে।
কিন্তু ইথানের এক হাত আমার হাতের উপর রেখে ল্যাগেজের হেন্ডেলটা ধরেছে। অন্য হাত দিয়ে ল্যাগেজের অপর প্রান্ত।
আমি থমকে সামনে তাকিয়ে রইলাম। আমার হার্টবিট অনেক গুন বেড়ে যেতে লাগল।
ইথান ওর হাত আলগা করতেই আমি সাথে সাথে হাত নামিয়ে নিলাম।
উনি ল্যাগেজটা উপরে উঠিয়ে দিলেন।
আমি ধুকধুক করা হার্ট নিয়ে থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম।
ইথান নিজের মত বিছানায় গিয়ে বসে পরল।
যেহেতু ইথান চলেই এসেছে তাই আমি এই ভারি শাড়ি চেঞ্জ করে তারপর দেখি কোথায় ঘুমানো যায়।

আমি আস্তে আস্তে আলমারির খুললাম আর একটা হালকা পাতলা শাড়ি নিয়ে ফ্রেস হতে গেলাম।
যদিও আমি জীবনেও একা শাড়ি পরিনি। সবসময় মা পরিয়ে দিত।
এখন কিছুই করার নেই। আমার শাড়ি পরা দেখে আমি নিজেই অসন্তুষ্ট। কুচি দিই নি। ছোটো বাচ্চারা যেমন পেচিয়ে পরে তেমন করে পরেছি। কিন্তু এর চেয়ে ভাল পারব না।
শাড়ি পরে ঘুমানোরও অভ্যেস নেই। কিন্তু আমার মা কড়াকড়ি ভাবে বলেই দিয়েছে বিয়ের পর থেকে শাড়িই পরতে। এটাই নাকি নিয়ম হয় শশুর বাড়ির।
যদিও শাশুড়ী এ বিষয় কিছু বলে নি।
তাও, পরেই থাকব। পরের টা পরে বুঝা যাবে।
এমনিও বিয়ের পর নিজের মত থাকা মেয়েদের পক্ষে সম্ভব হয়না।
তাছাড়া এমন ত না যে আমি নিজের মত কিছু করে বকা খেলে এই উল্লুক বরটা সবার বিপক্ষে গিয়ে আমাকে সাপোর্ট দিবে!
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বের হয়ে এলাম।

লাইট অফ করে টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে রাখা।
ইথানই করেছে।
ইথান বিছানায় এক সাইডে হেলান দিয়ে বসে মাথা পিছনে হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।
এক সাইডে যেহেতু আছে এর মানে আমি পাশে ঘুমাতে পারব?
মনে ত হয় পারব।
কিন্তু উনি শুয়ে না পরে হেলান দিয়ে বসে কেন আছেন?
আমার বুকের মধ্যে ত তোলপাড় হচ্ছে। অন্য মেয়েদের কেমন হয় জানিনা। আমার ত কেমন কেমন লাগছে কারণ প্রথমবার কোনো ছেলের সাথে ঘুমাব আজ।
আমি নিঃশব্দে এগিয়ে ত গেলাম কিন্তু হাতের অবাধ্য চুড়িগুলো শব্দ করে উঠল।
ইথান হেলান দিয়ে থাকা অবস্থাতেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।
আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
একটা ছেলে এত সুন্দর কেন হবে!
ইথান আবার মুখ ঘুরিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল।

ভাব? এত ভাবের কি আছে? অসহ্য। আমাকে ভাল লাগে না ওনার? আমি ওনার মত কত সুন্দর ছেলেকে রিজেক্ট করেছি উনি জানে!
হুহ যত্তসব।
কিন্তু এখন আমি কি করব? ঢ্যাং ঢ্যাং করে পাশে গিয়ে শুয়ে পরব!
এটা করতেও ত বাধছে। তাই আমি দাড়িয়েই রইলাম। আর এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে শাড়ির আঁচল হাতের আঙুলে প্যাচাতে লাগলাম। চোখ মুখে অনেক দ্বিধা আমার।
কিছুক্ষণের নীরবতার পরেই ইথান বলে উঠল, “তোমাকে কোলে করে আনবো, এমন কিছু এক্সপেক্ট করছ?”
আমি হতবুদ্ধি হয়ে তাকালাম।
ইথান মাথা তুলে বুকের কাছে দুই হাত গুজে আমার দিকে স্বাভাবিক চোখেই তাকিয়ে আছে।
যদিও এটা অপমান। কারণ ভাল কথা ত কখনই বলে নি।
“তোমার এসব চুড়ির আওয়াজ যেন আমার কানে না আসে।” বিরক্তির সাথে বলে ইথান বালিশ পাতিয়ে আমার দিকে পিঠ ফিরিয়ে শুয়ে পরল।
আমার ওনার এই ব্যবহারে বেশ খারাপ লাগল। উনি এত খারাপ কেনো?
আর এই খারাপ ছেলেটাকে আমি পছন্দ কেন করে ফেললাম! নিজের উপরই প্রচুর বিরক্ত লাগছে।
আমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে এগিয়ে গিয়ে হাতের চুড়িগুলো খুলতে লাগলাম। আর খোলার সময় অল্প আওয়াজ হলো।
“তোমার থেকে এগুলোই আশা করা যায়।” তাচ্ছিল্যের সাথে বলল ইথান।
আমি রেগে গেলেও চোখ বন্ধ করে রাগ দমন করে নিলাম। কারণ কথায় কথা বাড়বে। তা এত রাতে আমি চাচ্ছি না। পরে দেখে নিব।
ওর পাশে শুতেও ইচ্ছে করছে না। কিন্তু এছাড়া কোথায় যাব!
এদিকে হার্ট বিট থামার নাম নেই। হয়তো ঘুমানোর আগ অব্দি থামবে না।
আমি এগিয়ে গিয়ে গুটিশুটি হয়ে পাশে শুয়ে একটা কম্বল গায়ে টেনে নিলাম।
শুয়ে পরার একটু পরেই ইথান আমার দিকে ঘুরে একদম আমার কাছে চলে এলো।
আমি অনেক হকচকিয়ে গেলাম আর ভয়ে চোখ মুখ কুচকে বললাম, “এ..এক মিনিট… আমি…।”
ইথান আমার পাশে টেবিল ল্যাম্পটা বন্ধ করে আবার নিজের জায়গায় সরে গেল।
আমি বোকা সেজে গেলাম।
ইথান আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকালো।
নিজের উপর নিজেরই রাগ লাগছে আমার। কি লজ্জাজনক বিষয়। আমি দ্রুত উল্টোদিকে ঘুরে শুয়ে পরলাম।

আমার ত ঘুমই আসছে না।
শুয়ে এপাশ ওপাশ না ফিরলে কি আর ঘুম আসে?
নিরুপায় হয়ে ওভাবেই জেগে রইলাম।
অনেকক্ষণ পরে আমি আস্তে করে ঘাড় ঘুরিয়ে ইথানের দিকে তাকালাম।
সে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। আর অবশ্যই ঘুমন্ত অবস্থাতেও তাকে দেখতে ভালো লাগছে। আসলে কাউকে ভালোবাসলে তাকে সবসময়ই সুন্দরই লাগে।
আমি ইথানের দিকে ঘুরলাম। তারপর ইথানকে দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে গেলাম।

সকালে চোখ খুলে আশপাশ অচেনা মনে হলো।
পরক্ষনেই মনে পরলো আমি এখন আর নিজের বাড়িতে নেই।
তারপরই মনে হলো আমার শাড়ির আঁচল আমার গায়ে নেই। নিজের দিকে দেখার সাথে সাথে আমার চোখ গোলগোল হয়ে গেল।
আমি মুহুর্তে উঠে বসে শাড়ির আঁচল গায়ে দিলাম।
তারপর এক বিশাল লজ্জায় পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে নিলাম।
ইথান কোথাও নেই। কিন্তু দরজা ত বন্ধ করা। মানে উনি রুমেই আছেন! আমি বাথরুমের দিকে তাকালাম। বাথরুমে ত নেই। বেলকোনিতে? হতে পারে।
উনি কি দেখেছেন? ছি! দেখেছেন ত অবশ্যই!
আমি নাক মুখ কুচকে শাড়ির আঁচল দুই হাতের মুঠোয় চেপে ধরলাম।
জীবনেও শাড়ি না পরে ঘুমালে যা হয়।
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম। সকাল নয়টা প্রায়।
হায় হায়!
তাড়াতাড়ি ওঠা উচিত ছিল। আমি তাড়াতাড়ি উঠে কোনো রকম শব্দ না করার চেষ্টা করে শাড়ি নিয়ে গোসল করতে ঢুকে গেলাম।
বের হয়ে রুমের দরজা খোলা দেখলাম। অর্থাৎ ইথান বের হয়ে চলে গেছে।
ভাল করেছে। আমার নিজের উপর নিজেরই রাগ লাগছে।
আমি শাড়ি যা পরেছি তা দেখে কেউ হেসে না দেয়।আমি নীচে নেমে এলাম। সবাই খাবার টেবিলে হৈ চৈ শুরু করেছে।
আমাকে দেখা মাত্র দিবা বলে উঠল, অইত এসে গেছে আমাদের ভাবী।
সবাই আমার দিকে তাকালো।
আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম।
ইথান তাকাল না। সে চুপচাপ টেবিলে দুইহাত একসাথে ধরে বসে আছে।
ইথানের মা মিষ্টি হাসি দিয়ে আমাকে বললেন, “আসো, তোমাদের দুইজনের অপেক্ষাই করছিলাম।”
দিবা ইথানের পাশের চেয়ারটা দেখিয়ে দিয়ে বলল, বসে পরো।
আমি ইথানের দিকে তাকালাম। সে তার মতই বসে আছে।
আমি ইথানের মা কে বললাম, আমি পরে খাবো। আগে সবাইকে দিয়ে দিই।
ইথানের মা হেসে বলে উঠল, “এত ফর্মালিটির দরকার নেই। বাব্বা, সেই ছোট্ট এরিন কত বড় হয়ে গেছে! সেই ছোট বেলায় দেখেছিলাম।”
আমি শুধু একটু নিঃশব্দে হাসলাম।
“বসো, আজ বৌভাত অনেক লোকজন আসবে, খেয়ে রেডি হতে হবে।” দিবা বলল।
আমি এগিয়ে গিয়ে ইথানের পাশে বসলাম। যদিও এখন লজ্জায় তাকাতেও পারছিনা ওর দিকে।
(চলবে…)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে