#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৩
প্রেনা পূর্ণতা কে টেনে টেনে ৩০৫ নাম্বার কক্ষের দিকে ছুটছিল , কিন্তু তখনই হঠাৎ পূর্ণতা প্রেনাকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে বলল ,
– প্রেনা , কোথায় যাচ্ছিস !! তোর ফোনটা দিয়ে ভাইয়াকে কল দে । আর এই মূহুর্তে আর একটা প্রশ্ন ও করবি না , তোকে আমার দিব্যি ।
প্রেনা ওর কথা শুনে ঠায় দাঁড়িয়ে গেল । কিছু আর বলতে পারলো না । নিজের ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে পূর্ণতার দিকে বাড়িয়ে দিল । পূর্ণতা ফোনটা নিয়ে জিব্রানকে কল দিল । দুইবার রিং হতেই ওপাশ থেকে জিব্রান কল রিসিভ করল ,
– হ্যা , পুচকি । কোথায় আছিস ?
– ভাইয়া , আমার অনুষ্ঠান শেষ । আমি মেডিক্যাল এর মেইন গেইটে আছি । তোমার আসতে কতক্ষন লাগবে ?
– আমি শহীদ মিনারের সামনে আছি , ১০ মিনিট ওয়েট কর । I’m on my way …..
তারপর কলটা কেটে গেল ।
পূর্ণতা ফোনটা প্রেনার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,
– ভাইয়ার আসতে ১০ মিনিট লাগবে । তুই চাইলে চলে যেতে পারিস ।
– তুই পাগল ! তোকে এভাবে একলা ফেলে আমি চলে যাবো ?
– না , আমি তো ভাইয়ার সাথে যাবো । তোর একা যেতে হবে , তাই আর কি !
– আমার বাসা কাছে , তুই ই তো আজিমপুর থাকিস । দশ হাত দূরে ।
– আচ্ছা , তাহলে তুই স্কুটি নিয়ে উল্টো পথে আমাকে নিতে যাবি প্রতিদিন ?
– দরকার হলে যাবো ।
– এত কেন ভালোবাসিস আমাকে ?
– কারন তুই আমার সেই ছোট্ট বেলার বেষ্টি । তোর কিছু হলে আমিও …….
– হয়েছে , নেগেটিভ কথা বাদ দে …….
– আচ্ছা , একটা কথা বলি , রাগ করিস না ।
– আমি জানি , কি বলবি !! তা ও তুই ই বল ।
– তোকে আজ এভাবে অপমানিত হতে দেখে নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না , তাই তো ভাইয়ার কাছে বিচার দিতে চাইছিলাম ।
– বিচার দিলে লাভ নেই , তখন শুনলি না সে কি বলল ? সে ভাইয়ার হবু ফিওন্সে !! আমরা বিচার দিলে তো ভাইয়া বিলিভ করবে না । দরকার কি বাড়া বাড়ির । যেমন আছি থাক না ।
– তুই সব সময় ই এমন ম্যান্দা মার্কা । জিব্রান ভাইয়া ঠিকই বলে ..
এরই মধ্যে জিব্রান চলে এলো !!
ও প্রেনার কথা কিছুটা শুনতে পেয়ে বাইক থেকে নেমে বলল ,
– আমি কি ঠিক বলি রে প্রেনা ??
প্রেনা হেসে বলল ,
– এই যে , তোমার বোন একটা ম্যান্দা মার্কা ।
জিব্রান হেসে দিল । প্রেনা ও হাসতে শুরু করলো ।
পূর্ণ গাল ফুলিয়ে বলল ,
– হ্যা হ্যা , যত খুশি হাসো !!
জিব্রান বলল ,
– ঠিক আছে , চল এখন !
প্রেনা বলল ,
– আচ্ছা , তোমরা যাও । আমি আসছি ।
জিব্রান বলল ,
– তুই কোথায় যাচ্ছিস ? আমাদের সাথে চল , আমি ড্রপ করে দিচ্ছি ।তোর চেয়ে ভালোই পারি বাইক চালাতে ।
পূর্ণতা বলল ,
– হ্যা , চলনা । একসাথেই যাই ।
প্রেনা আর না করল না । এরপর জিব্রান বাইক স্টার্ট দিয়ে ওদের উঠতে বলল । পূর্ণতা প্রথমে উঠলো , তারপর প্রেনা উঠে বসল । তারপর রওনা হলো গন্তব্যের দিকে ।
……………………………………………..
আবরন বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে পাঞ্জাবি চেঞ্জ করে একটা ট্রাউজার আর টি শার্ট পড়ে নিল । বাহিরে গেলে আবরনের জাতীয় পোশাক পাজামা – পাঞ্জাবি আর শাল হলেও বাসায় সে টিশার্ট ট্রাউজারেই অভ্যস্ত ।
নিজের বিছানায় বসে নিজের মাকে ডাকতে লাগলো ,
– আম্মু , আম্মু …… ও আধিরা আনজুম …….
ছেলেকে এভাবে ডাকতে শুনে আধিরা আনজুম নিজের রুম থেকে এক প্রকার দৌড়েই ছেলের রুমের দিকে গেল ।
– কি হয়েছে ? এভাবে নাম ধরে ডাকিস কেন বলতো ??
– আম্মু বলে ডাকলে তো শোনো না , তাই বাবার মতো নাম ধরে ডাকলাম যেন জলদি জলদি হাজির হতে পারো ।
আধিরা আনজুম ছেলের কথায় হেসে বললেন ,
– তা কি এমন জরুরি তলব শুনি ?
আগে বসো এখানে । আধিরা আনজুম ছেলের বিছানায় বসে বললেন ,
– এখন বল !
আবরন নিজের মায়ের কোলে মাথা রেখে বললেন ,
– মাথাটা প্রচন্ড ব্যথা করছে ! একটু চুল গুলো টেনে দাও না ।
আধিরা আনজুম ছেলের কথা শুনে সিল্কি চুল গুলো বিলি করে করে চুল টেনে দিতে দিতে বললেন ,
– আর কত আমি চুল টেনে দেব বল ? কোথায় একটা বিয়ে করবি তা না , এখনো আমার আচল দিয়ে মুখ মুছিস , আমার গামছা দিয়ে চুল মুছিস , আমাকেই বলিস সব কিছু করে দিতে ।
আবরন চোখ বন্ধ করে মায়ের চুল টেনে দেওয়া অনুভব করছিল । মায়ের মুখে এসব কথা শুনে হঠাৎ বন্ধ চোখের মাঝেই যেন সকালের ঘটনা গুলো ছবির মতো ভেসে উঠছে । সেই কাজল কালো চোখ থেকে বেয়ে পরা পানি , কাপা কাপা ঠোঁট এসব কিছুই মনে আসতে লাগল । তারপর হঠাৎ করে জলের কথা মনে হতেই রাগে চোখ খুলে ফেলল ।
আধিরা আনজুম বললেন ,
– কি রে , কি হলো ?
আবরন বলল ,
– আম্মু , জানো আজকে কি হয়েছে ?
– না বললে কেমন করে জানবো ?
– জল আজকে অনেক গুলো অন্যায় করেছে । ও বরাবরই আমার সাথে ঘেষে ঘেষে চলে । বিলিভ মি , আমার ওকে আর সহ্য হচ্ছে না । প্লিজ , তুমি বিষয়টা বাবাকে জানিয়ে একটু হ্যান্ডেল করো না ।
– তোর বাবাকে এ বিষয়ে কোনো কথা বলা যায় ? বললেই তো সে বলবে , তার একমাত্র ছোট বোনের একমাত্র মেয়ে , তার নামে কোনো বাজে কথা সে শুনতে চায় না ।
আবরন মায়ের কোল থেকে মাথা উঠিয়ে বসে চিন্তিত ফেস করে বলল,
– বাবা কি চাচ্ছে জলকে এ বাড়ির বউ করে আনতে ??
-তা জানি না , কিন্তু জলকে তোর বাবা অনেক ভালোবাসে ।
– ধুর !! বাবা যদি কখনো এ কাজ করে তাহলে আমি সোজা এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো ।
আধিরা আনজুম কিছুটা রাগ করে বললেন ,
– চুপ কর তো । এসব কথা মুখে আনতে নেই ।
আর তোকে তো আমি সেই কবের থেকেই বলছি যে নিজের পছন্দ মতো একটা মেয়েকে বিয়ে করে এই বাড়ির বউ করে নিয়ে আয় , তাহলেই দেখবি সব সমস্যার সমাধান হবে । আর একথা বলছি কারন হচ্ছে , তোর উপর আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে যে তুই একজন পারফেক্ট গার্লকেই এ বাড়ির বউ করে আনবি ।
– তা বুঝলাম । কিন্তু এখনো তো নিজের পায়ে দাড়াই নি । আর একটা বছর , তারপর নিজের একটা চেম্বার খুললেই দেখবে বিয়ে করে নিব ।
আধিরা আনজুম মুচকি হেসে বললেন ,
– তা আমার ভবিষ্যত ডাক্তার ছেলে বুঝি কাউকে পছন্দ করে রেখেছে !!
আবরন আধিরা আনজুমের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– ধুর !! কি যে বলো না আম্মু !!
এই মা ছেলের দুষ্টু মিষ্টি গল্প চলতেই থাকবে সারাদিন ।
……………………………………………
সন্ধ্যা ৬ টার দিকে জিব্রান একটা বড় স্যুটকেস এনে পূর্ণতার খাটের উপর রাখলো । পূর্ণতা খাটে বসে বালিশের সাথে হেলান দিয়ে বই পড়ছিল । হঠাৎ খাট কেপে উঠতেই চোখের সামনে থেকে বইটা সরিয়ে দেখলো , জিব্রান ওর দিকেই তাকিয়ে ভ্রু নাচাচ্ছে আর খাটের উপর একটা বিশাল স্যুটকেস । পূর্ণতা বইটা পাশে রেখে স্যুটকেসের দিকে ইশারা করে জিব্রানকে জিজ্ঞেস করলো ,
– এর ভেতর কি আছে ভাইয়া ??
জিব্রান দাঁত কেলিয়ে বলল ,
– তোর জন্য কক্সবাজার থেকে এক স্যুটকেস শুটকি নিয়ে এসেছি ।
পূর্ণতা জিব্রানের কথা শুনেই চেহারা কুচকে বলল ,
– ছি , ইয়াক 🤢 , এটা আমার বিছানার উপর কেন রাখলে , জলদি রান্নাঘরে নিয়ে যাও ।
জিব্রান বলল ,
– কেন !এগুলো রান্না ঘরে রাখতে এনেছি নাকি ?? এগুলো তোর আলমারি তে , ড্রেসিং টেবিলে থাকবে ।
– ছি , গন্ধে তো মরেই যাবো । ভাইয়া প্লিজ , সরাও এগুলো । আমি আম্মুকে এখনি ডাকছি ।
জিব্রান বলল ,
– ডাক , আই ডোন্ট কেয়ার ।
পূর্ণতা মিলি রহমানকে ডাকতে শুরু করলো ,
– আম্মু , আম্মু । দেখো তোমার ছোলে আমার বিছানায় কিসব রেখেছে !!
মিলি রহমান বসার ঘর থেকে উঠে এসে পূর্ণতার রুমে এসে বলল ,
– কি হয়েছে ?
– দেখো , তোমার ছেলে কি এনেছে আমার জন্য ! ( কাদো কাদো ফেস করে )
জিব্রান ভ্রু কুচকে বলল ,
– কি এনেছি ?? তোর প্রিয় চকলেটস আর কিছু অলংকার এনেছি । কি সব আজে বাজে বকছিস তখন থেকে ?? এখন আবার আম্মুকেও ডেকে বিচার দিচ্ছিস !
জিব্রান কথাগুলো এমন ভাবে বলল যেন কিছুক্ষন আগের বলা কথাগুলো সম্বন্ধে ও কিছুই জানে না ।
মিলি রহমান পূর্ণতার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালেন । পূর্ণতা মিলি রহমানের এমন দৃষ্টি দেখে ঠোঁট উল্টে বলল ,
– বিশ্বাস করো আম্মু , ভাইয়া মিথ্যে বলছে । ও এটার ভিতর শুটকি এনেছে । বলে কিনা আমার আলমারি , ড্রেসিং টেবিলে এসব রাখতে ।
জিব্রান বলল ,
– এহহহ !! আমি কখন বললাম এ কথা ?? আম্মু তোমার বিশ্বাস না হলে আমি তোমাকে ব্যাগ খুলে দেখাচ্ছি !
মিলি রহমান বললেন ,
– খোল ।
পূর্ণতা ও আগ্ৰহ নিয়ে তাকালো । জিব্রান স্যুটকেস খুলতেই দেখা গেল , এত্ত এত্ত চকলেটস আর এত্ত এত্ত অলংকার আর কিছু স্যান্ডেলস ও আছে ।
এসব দেখে পূর্ণতার মুখ টা শুকিয়ে গেল ।
জিব্রান দাঁত কেলিয়ে বলল ,
– হুহ , নিজের চোখেই দেখে নাও ।
মিলি রহমান বিষয়টা বুঝতে পেরে বললেন ,
– উফফফফ !! তোরা এখনো সেই বাচ্চাদের মতো পাগলামি করিস !! আমি আর পারি না তোদের নিয়ে । তোদের বাবা তো ফ্রান্সে গিয়ে ই পড়ে থাকে , তোদের এসব কাহিনী আমারই দেখতে হয় !!
এসব বলতে বলতে পূর্ণতার রুম থেকে মিলি রহমান বেরিয়ে গেলেন ।
মিলি রহমান চলে যেতেই , জিব্রান হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খেতে লাগলো । পূর্ণতা গাল ফুলিয়ে ওকে বালিশ দিয়ে মারতে শুরু করলো । জিব্রান ও কম না , সে ও বালিশ হাতে নিয়ে পাল্টা মাইর দিতে শুরু করলো । এই পিলো ফাইট আর থামবে না ।
কিছুক্ষণ পর দুজনেই হরান হয়ে বসে হাসতে লাগলো । হাসতে হাসতে হঠাৎ পূর্ণতা হাসি থামিয়ে দিয়ে বলল ,
– ভাইয়া !! তুই সত্যিই চলে যাবি বাবার কাছে ফ্রান্সে ??
জিব্রান ও হাসি থামিয়ে দিয়ে বলল ,
– না গিয়ে উপায় আছে । বাপ দাদার ব্যবসা তো এখন আমাকেই ধরতে হবে । আমাদের তো আর কাকু নেই যে সে ব্যবসা ধরবে ।
পূর্ণতা বলল ,
– তুমি চলে গেলে আমি আরো একা হয়ে যাবো । তুমি ঠিক ই বলো , আমি ম্যান্দা , আমাকে কেউ কিছু বললে আমি পাল্টা জবাব দিতে জানি না । তুমি চলে গেলে আমাকে কে বাঁচাবে রাস্তা ঘাটে চলতে গেলে ।
– কেন ? নিজেকে রক্ষা করতে শিখবি ! সেল্ফ ডিফেন্স !!
– সেটা কিভাবে সম্ভব ! আমি তো আর মারা মারি জানি না তোমার মতো !
-কেন শিখবি ? কারাতি তে ভর্তি করিয়ে দেব !
-আমার মতো মেয়ে কারাতি শিখবে ?
– তোর চেয়ে বড় বড় মহিলারাও শিখে ! আর তুই তো পুচকি ! কালই ভর্তি করিয়ে দেব !! এখন এসব বাদ দে !!
– কিন্তু !!
– কোনো কিন্তু না ! এখন স্মাইল কর আর এসব গুছিয়ে রাখ ।
পূর্ণতা ভাইয়ের কথা মতো হেসে তারপর স্যুটকেস থেকে সব বের করে গুছাতে লাগল ।
………………………………………………..
আবরন সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হয়েছে । আয়মান , ফাহিম আর তাসিনকে বলেছে দেখা করতে ।
আয়মান , ফাহিম আর তাসিন ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় উপস্থিত হয়ে আবরনের জন্য অপেক্ষা করছে ।
ফাহিম বলল ,
– আজকের দিনটা একটা কুফা ছিল ।
– ঠিকই বলেছিস ! ( তাসিন )
আয়মান ভ্রু কুচকে বলল ,
-কেন ? কি হয়েছে ?
ফাহিম সকালের সব কাহিনী বর্ণনা করতেই আয়মান বলল ,
– জল তো আমার কাছে এসে জানতে চেয়েছিল আবরন কোথায় ! আমি তো ওকে বলি নি , তাও কি করে খুঁজে পেল ??
– আরে , ও তো লোহা , আর আবরন চুম্বক , তাইতো যেখানেই থাকুক না কেন এসে লেগে পড়ে !! ( তাসিন )
আয়মান বলল ,
– ও তাহলে ওই মেয়েটাই পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছিল যার কাছে আবরন আমাকে দিয়ে মলম পাঠিয়েছিল ।
ফাহিম বলল ,
– সিরিয়াসলি ! আবরন কবে থেকে মেয়েদের ব্যাপারে এতোটা কেয়ার নিতে শুরু করলো । তা নাহয় বুঝলাম , কোনো ছেলে কোনো মেয়ের সাথে বাজে ব্যবহার করলে তাকে ও ছেড়ে দেয় না , কিন্তু এসব ছোট খাটো বিষয়ে তো আগে কখনো এত কেয়ার করতো না । কতই মেয়েই তো কত ভাবে আঘাত পায় , ও কি তাদের গিয়ে মলম এগিয়ে দেয় ??
আয়মান বলল ,
– ধুর , নেগেটিভ চিন্তা করিস না তো ।
এরই মধ্যে আবরন কার নিয়ে হাজির ।
কারের গ্লাস নামিয়ে ওদের বলল ,
– ভিতরে আয় । ঘুরতে যাবো ।
ওরা একে একে গাড়িতে উঠে বসতেই আবরন ড্রাইভ করতে লাগলো ।
আয়মান বলল ,
-কিরে , কোথায় ঘুরতে যাচ্ছি ?
– এই যে কাছেই , ভিক্টোরিয়া পার্কে ( বর্তমানে বাহদুর শাহ পার্ক নামে পরিচিত )
– হঠাৎ !! ( তাসিন )
– এমনি , মন চাইলো । অনেক দিন যাই না ।
……………………………………………….
জিব্রান সন্ধ্যা ৭:৪৫ এর দিকে প্রেনাকে হঠাৎ আসতে বলে নিজে গিয়ে রেডি হয়ে পূর্ণতা কে রেডি হতে বলল ।
পূর্ণতা বলল ,
– এখন আবার কোথায় যাবো ?
– ৭ দিন পর ফিরলাম বাসায় , তাই চল তোদের ফুচকা খাওয়াবো ।
ফুচকার নাম শুনে প্রেনা যেমন ফোনে নিষেধ করে নি যে সে আসবে না , ঠিক তেমনি পূর্ণতা ও নাচতে নাচতে রেডি হতে শুরু করলো ।
৮ টা ৩০ এর দিকে জিব্রান , পূর্ণতা আর প্রেনা এসে উপস্থিত হলো ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে ।
অন্যদিকে আবরন তার দলবল নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে ……………..
#চলবে ♥️
#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৪
আবরন কার এক সাইডে পার্ক করে ফাহিম , আয়মান আর তাসিনকে নামতে বলে নিজেও নামলো কার থেকে । তারপর কারের ডিকি থেকে একটা গিটার বের করতেই আয়মান , ফাহিম আর তাসিনের চোখ উজ্জল হয়ে গেল । ওদের এমন দৃষ্টি আবরন আড় চোখে খেয়াল করে বলল ,
– ফলো মি !
আবরনের কথা মতো ওরাও খুশিতে আত্মহারা হয়ে এক প্রকার ছুটেই ওর পেছন পেছন গেল ।
আবরন ঝর্নার সামনের জায়গাটা তে গিয়ে বসলো । রাতেরবেলা কৃত্রিম আলো তে ঝর্নার পানি গুলো দেখতে খুব সুন্দর লাগে । আবরনকে বসতে দেখে ফাহিম , তাসিন আর আয়মান ও ওর সাথে গিয়ে বসলো ।
ফাহিম খুশি হয়ে বলল ,
– আবরন , শুরু কর ।
আবরন দাঁত কেলিয়ে বলল ,
– গান কি আমি গাইবো নাকি ?
– তাহলে আর কে গাইবে তুই ছাড়া ? ( আয়মান )
– গান গাইবে ফাহিম !! ( আবরন )
ফাহিম চোখ গোল গোল করে বলল ,
– লাইক সিরিয়াসলি ?
আবরন ওর দিকে গিটার বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,
– ইয়াহ , I’m serious ….
ফাহিম কাদো কাদো ফেস করে গিটার হাতে নিয়ে বসে কিছুক্ষণ চিন্তা করে একটা ৫০০ টাকা দামের হাসি দিল , এমন হাসি যে ওর উপর এবং নিচ উভয় পাটির দাঁত দেখা যাচ্ছে । তারপর গান ধরলো ,
……………………………………………
জিব্রান মাত্রই পূর্ণতা আর প্রেনাকে নিয়ে পার্কে পৌঁছালো । ওদের কে বলল ,
– চল , আগে ভিতরে গিয়ে একটা ভালো বসার প্লেস খুঁজি , তারপর তোদের বসিয়ে আমি ফুচকার অর্ডার দিই ।
এই বলে ওদের নিয়ে পার্কের ভিতরে ঢুকল । ভিতরে প্রবেশ করে কিছুটা এগোতেই শোনা গেল কেউ গান গাইছে ,
Sonu Meri Darling
Janu Meri Jane Man
Bachpan Ka Pyar Mera Bhul Nahi Jana Re
Sachha Mera Pyar Hai
Jaan Meri Jane Man
Bachpan Ka Pyar Mera Bhul Nahi Jana Re
এই গানটা শুনে পূর্ণতা আর প্রেনা হাসি থামিয়ে রাখতে পারলো না , এমনকি জিব্রান ও হাসতে শুরু করেছে ।গানটা কে গাইছে রহস্য উদঘাটন করতে আরেকটু এগিয়ে যেতেই দেখল ঝর্নার ধারে চারজন ছেলে বসে আছে । জায়গাটাতে আলো তুলনামূলক কম হওয়াতে পূর্ণতা ভালো করে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করল । ভালো করে তাকাতেই ওদের চিনতে কোনো সমস্যা হলো না । এমনকি মাঝখানে আবরন ও আছে । ওদেরকে অপর পাশের বেঞ্চিতে বসিয়ে জিব্রান গেল ফুচকা আনতে ।
ফাহিম এর গান শুনে সবাই হুহা করে হাসছিল , আবরন ও হাসি থামিয়ে নেই , হঠাৎ হাসির মাঝেই দেখল প্রেনা আর পূর্ণতা ওদের সামনেই কয়েক হাত দূরে থাকা বেঞ্চটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে , সাথে একটা ছেলেও আছে । আবরন খেয়াল করলো ওরা তিনজনই হাসছে আর একটু পর পর ওদের দিকেই দেখছে । ওদেরকে বসিয়ে রেখে ছেলেটা কোথায় যেন গেল । আবরন ফাহিম কে থামিয়ে দিয়ে বলল ,
– তোর এই গান শুনে শুধু আমরা না আশে পাশে থাকা সব লোকজনই হাসছে ।
কথাটা আবরন হেসে হেসে কিছুটা জোরেই বলল যেন কথাটা পূর্ণতা প্রেনার কান অবধি পৌছায় ।
পূর্ণতা আবরনকে হাসতে হাসতে কথা গুলো বলতে শুনে প্রেনাকে বলল ,
– বাব্বা , উনি তো রাগ দেখানোর পাশাপাশি হাসতেও জানেন দেখছি ।
প্রেনা হেসে বলল ,
– কেন ! ভাইয়া কি মানুষ না ? আর তখন তো ভাইয়া নিজেই বলল যে সে ভালো তে ভালো আবার খারাপে প্রচুর খারাপ ।
পূর্ণতা প্রেনার কথা শুনছে আর আড় চোখে ওদের কাহিনী ও দেখছে ।
আবরনের কথা শুনে ফাহিম দাঁত কেলিয়ে বলল ,
– সবাই যেন হাসে এই জন্যই তো এই গানটা গাইলাম ।
আয়মান বলল ,
– তোর গান শুনে কানের নাড়ি ভুরি একদম পচে গেছে ।
তাসিন বলল , তুই তো তা ও ঐ পাশে বসেছিস , আমি তো একদম ওর সাথে , আমি আদৌ কানে শুনবো কিনা সন্দেহ !!
ফাহিম বলল ,
– এহহহ , নিজেরা তো গানের গ ও জানিস না , আমি যে গাইলাম এত সুন্দর একটা গান , তাতেও তোদের ভালো লাগছে না ।
ওদের কথা গুলো শুনে পূর্ণতা আর জোড়ে না হেসে পারল না । ওর হাসির শব্দ শুনে আয়মান , ফাহিম , তাসিন , আবরন সবাই ওর দিকে তাকালো ।
প্রেনা বিষয়টা লক্ষ্য করতেই পূর্ণতার মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে আস্তে করে কানে কানে বলল ,
– পূর্ণ !! কন্ট্রোল ইউর সেল্ফ !! ওরা সবাই তোর হাসি শুনে তোকেই দেখছে । নিজে তো মাইর খাবি সাথে আমাকেও খাওয়াবি মনে হচ্ছে ।
প্রেনার কথা শুনে পূর্ণতা চোখ বন্ধ করেই ঢোক গিলে তারপর তাকিয়ে দেখল আসলেই ওরা সবাই এদিকেই তাকিয়ে আছে ।
আবরন পূর্ণতার রিয়েকশন দেখে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে ফাহিম , আয়মান আর তাসিনের দিকে তাকাতেই দেখল ওরাও পূর্ণতার কাহিনী দেখছে । তাই ও কিছুটা রাগ হয়ে আস্তে করে বলল ,
– ঐদিকে তাকানো বাদ দিয়ে তোরাও এখন হাসি দে , নাহলে ওই মিস ‘কান্নাপরী ‘ আবার ও ভয়ে কাদতে শুরু করে দিবে । আবরনের কথা মতো ওরা সব একসাথে হুহা করে হেসে উঠলো ।
ওদের এভাবে হাসতে দেখে পূর্ণতা আর প্রেনা ও খুশি হয়ে গেল এই ভেবে যে ,
– যাক , ওরাও আমাদের মতোই মজা করছে ।
এরই মধ্যে জিব্রান ফুচকার প্লেট হাতে নিয়ে পূর্ণতা এবং প্রেনার দিকে এগিয়ে এলো ।
জিব্রান জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়েই খাবে বলে সিদ্ধান্ত নিল কিন্তু তখন আবরন ওকে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– এক্সকিউজ মি ব্রো !
জিব্রান বলল ,
– আমি ??
আবরনের হঠাৎ এভাবে জিব্রানকে ডাক দেওয়া পূর্ণতা আর প্রেনার মনে আশংকার ঝড় তুললো ।
আবরন বলল ,
– হ্যা , আপনি । আপনি দাঁড়িয়ে না থেকে চাইলে আমাদের সাথে জয়েন হতে পারেন ।
আবরন চোখ দিয়ে ফাহিম , আয়মান আর তাসিনকে ইশারা করতেই ওরাও জিব্রানকে বলল ,
– ভাইয়া , আসেন ।
জিব্রান পূর্ণতা আর প্রেনার দিকে তাকিয়ে বলল ,
– ওদের কি ভালো মনে হচ্ছে ??
পূর্ণতা উত্তর দেওয়ার আগেই আবরন উঠে এসে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল ,
– ভাইয়া , আপনি পূর্ণতার কোনো রিলেটিভ !
ওর মুখে নিজের বোনের নাম শুনে ভ্রু কুচকে বলল ,
– আমি ওর আপন বড় ভাইয়া , আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না ! আর আমার বোনকে কি করে চিনেন ?
আবরন হেসে বিনয়ের সাথে বলল ,
– আমি আপনার বোনের ভার্সিটির ভিপি শাহরিদ আহনাফ আবরন । আপনি আমাকে আবরন বলেই ডাকতে পারেন , আর ভাইয়া আমি আপনার থেকে বয়সে ছোট হবো , তাই প্লিজ তুমি করেই বলবেন ।
জিব্রান বলল ,
– ও তাই নাকি ? তাহলে তো দেখা হয়ে ভালোই হলো । ঠিক আছে , চলো বসি একসাথে ।
আবরন খুশি হয়ে ওর পাশেই জিব্রানকে জায়গা করে দিল ।
প্রেনা আর পূর্ণতার কলিজা আরেকটু হলে লাফ দিয়ে ভেতর থেকে বেরই হয়ে যাচ্ছিল । তারপর ওদের কথোপকথন শুনে ওরা যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলো ।
জিব্রান বলল ,
– তোমরা তো ছোট ভাই তাহলে !! আমি একা একা খাচ্ছি , বিষয়টা ভালো দেখায় না । বলো কে কি খাবে ??
আবরন বলতে যাবে তার আগেই তাসিন বলল ,
– ভাইয়া , ফুচকাই খাবো ।
ফাহিম বলল ,
– আমি ও খাবো ।
আয়মান বলল ,
– আমি ফুচকা খাই না । বেশি করে ঝাল দিয়ে চটপটি খাবো ।
ওদের এমন ছোঁছামি দেখে আবরন মনে মনে ভাবছে ,
– এই গুলো কি ঘাস খেয়ে বড় হয়েছে এতদিন ? মাথায় ঘিলু নেই একটু ও !! মান সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিল ।
জিব্রান আবরনকে জিজ্ঞেস করল ,
– কি হলো তুমি চুপ করে রইলে কেন ? বলো কি খাবে ?
আবরন বলল ,
– না ভাইয়া , আমি কিছু খাবো না । আম্মু পই পই করে বলে দিয়েছে স্ট্রিট ফুড খেতে না যদিও আমার খুব পছন্দ । কিন্তু বুঝেনই তো মায়ের আদেশ বলে কথা !!
কিন্তু …….
জিব্রান বলল ,
– কিন্তু কি ?
– কিন্তু আপনি যদি আমাকে বাসায় দাওয়াত করে খাওয়ান আমি অবশ্যই যাবো ।
জিব্রান হেসে বলল ,
– তাহলে সে কথাই রইল ।
আবরনের কথা শুনে আয়মান , ফাহিম আর তাসিনের নিজেদের চুল টেনে নিজেদেরই ছিড়ে ফেলতে মন চাইছিল সেই মূহুর্তে । এই ভেবে যে , ” ব্যাটা একা বাসায় নেমন্তন্ন নিয়ে নিল , আর আমাদের স্ট্রিট ফুড খেতে হবে । ”
তারপর জিব্রান ফাহিম কে টাকা দিয়ে বলল ,
– যাও , গিয়ে নিয়ে এসো ।
ফাহিম চলে যেতেই জিব্রান পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– কি রে , কেমন খেতে ??
পূর্ণতা বেশি করে টক দিয়ে একটা আস্ত ফুচকা মুখে পুরে খেতে খেতে বলল ,
– ইয়ামিইইইই !!
আবরনের বুঝতে বাকি রইল না ওদের ভাই বোনের সম্পর্ক কতটা মধুর ! ও দুষ্টুমি করে পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– আস্তে খাও ! কেউ তো তোমার ভাগেরটা খেয়ে ফেলবে না , এভাবে খেলে তো গলায় আটকাবে !
পূর্ণতা সবেই একটা ফুচকা মুখে নিয়েছিল ঠিক তখন আবরনের এমন কথা শুনে আর ফুচকা গিলতে পারলো না । কাশি দিতে দিতে পানি চাইলো প্রেনার কাছে । প্রেনা ঝটপট পানি এগিয়ে দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগল ।
আবরন বলল ,
– দেখেছো , বলতে না বলতেই গলায় বাঁধলো !!
জিব্রান হেসে বলল ,
– ফুচকা পেলে ওর আর দুনিয়ার খবর থাকে না ।
ফাহিম ফুচকা আর চটপটি নিয়ে আসতেই আয়মান বলল ,
– আবরন , এখন তুই না করবি না । প্লিজ একটা গান ধর , আমরা খেতে খেতে এনজয় করি ।
আবরন গিটার টা হাতে নিয়ে সুর তুলে গান গাইতে শুরু করলো ,
Kehte hain khuda ne iss jahan mein sabhi ke liye ❤️
Kisi na kisi ko hai banaya har kisi ke liye ❤️
Tera milna hai uss rab ka ishaara maanu ❤️
Mujhko banaya tere jaise hi kisi ke liye ❤️
Kehte hain khuda ne iss jahan mein sabhi ke liye ❤️
Kisi na kisi ko hai banaya har kisi ke liye ❤️
Tera milna hai uss rab ka ishaara maanu ❤️
Mujhko banaya tere jaise hi kisi ke liye ❤️
Kuch toh hai tujhse raabta ❤️
Kuch toh hai tujhse raabta ❤️
Kaise hum jaane hume kya pata
Kuch toh hai tujhse raabta ❤️
Tu humsafar hai, phir kya fikar hai ❤️
Jeene ki wajah hi yahi marna issi ke liye ❤️
Kehte hain khuda ne iss jahan mein sabhi ke liye ❤️
Kisi na kisi ko hai banaya har kisi ke liye ❤️
Meharbaani jaate jaate mujh pe kar gaya ❤️
Guzarta sa lamha ek daaman bhar gaya ❤️
Tere nazara mila, roshan sitaara mila ❤️
Takdeer ki kashtiyon ko, kinara mila ❤️
Sadiyon se tarse hai jaisi zindagi ke liye ❤️
Teri sauhbat mein duaayein hain ussi ke liye ❤️
Tere milna hai uss rab ka ishaara
Maanu mujhko banaya tere hi jaise kisi ke liye ❤️
Kuch toh hai tujhse raabta ❤️
Kuch toh hai tujhse raabta ❤️
Kaise hum jaane hume kya pata
Kuch toh hai tujhse raabta ❤️
Tu humsafar hai, phir kya fikar hai ❤️
Jeene ki wajah hi yahi marna issi ke liye ❤️
Kehte hain khuda ne iss jahan mein sabhi ke liye ❤️
Kisi na kisi ko hai banaya har kisi ke liye ❤️
……………………………………………..
#চলবে ♥️