ভালোবাসি প্রিয় তোমাকে পর্ব-১২ এবং শেষ পর্ব

0
1501

গল্পঃ #ভালোবাসি প্রিয় তোমাকে
পর্বঃ ১২ (শেষ পর্ব)
নিঝুম জামান (ছদ্মনাম)

.
নিরা নিষানদের বাড়িতে এসেছে আজকে দুইদিন হলো। লিজা বাড়িতে নেই তাই নিরাই নিষানের মায়ের বান্ধবী। সারাদিন তারা লুডো খেলে, একসাথে টিভি দেখে, আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে দেয়।
একসপ্তাহ পরেই ওদের বৌভাত। এজন্য নিরা আর নিষান পরিকল্পনার শেষ নেই। নিরা কীভাবে সাজবে? কীভাবে কাপল ছবি তুলবে আরও নানান পরিকল্পনা।
.
দেখতে দেখতে একসপ্তাহ কেটে গিয়ে অবশেষে ওদের বৌভাতের দিনটি এলো। নিরা মিষ্টি কালারের
একটা লেহেঙ্গা পড়ছে,সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি।
নিরাকে এতোই সুন্দর লাগছিল নিষান যেন চোখই ফিরাতে পারছিল না। নিষান হা করে নিরার দিকে তাকিয়ে আছে। নিষানের পেটে কনুই দিয়ে গুঁতা দিয়ে নিরা বলল,

‘এমন করে দেখছো যেন আমাকে জীবনে প্রথমবার দেখছো?’

‘তোমাকে ভয়ংকর সুন্দর লাগছে। যেটা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।’

‘ওমা তাই নাকি? ভাষায় প্রকাশ করতে না পারলে আমাকে দেখার দরকার নেই। ভাষাহীন মানুষকে তো বোবা বলে। আমাকে দেখে শুধু শুধু তোমার বোবা হওয়ার দরকার নেই।’

নিরার কথা শুনে নিষান হেসে দেয়। এরপর নিরা-নিষান বিভিন্ন ঢংয়ে, বিভিন্ন পোজে ফটোশুট
করে, ভিডিও করে। এভাবেই আনন্দে আনন্দে
কেটে যায় সারাদিন।
.
🥀
.
সময় কারো জন্য থেমে থাকে না। চলতে থাকতে নিরন্তর। দিনের পরে মাস, মাসের পরে বছর আসে।
এভাবেই কেটে গেছে নিরা-নিষানের দাম্পত্য জীবনের একটা বছর। আজ ওদের বিবাহবার্ষিকী।
নিরা লাল জামদানী পড়ছে, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দিয়েছে, চুলটা খোঁপা করে সেখানে নিরার ছোট্ট বাগানের তিনটে গন্ধরাজ ফুল লাগিয়েছি। ফুলের ঘ্রাণে রুমটা ভরে গেছে। প্রতিদিন সাতটা বাজলেই নিষান বাড়িতে চলে আসে। অথচ আজ তার ফিরার খবর নেই। আজ নাকি নিষানের অফিসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আছে। নিষান ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে আজ ফিরতে অনেক রাত হবে।নিষানের অপেক্ষায় নিরা বসে আছে। ঘড়িতে
রাত পৌনে বারোটা বেজে গেছে। নিরা মনে মনে ভাবছে, দেরী হবে বলে এতটা দেরী। আজকের স্পেশাল দিনটির কথা কি নিষান ভুলে গেছে? নিরা আজকের স্পেশাল দিনটির জন্য
ইউটিউব দেখে নিজের হাতে চকলেট কেক
বানিয়েছে।
.
এদিকে নিষান মোটেও ওদের বিবাহবার্ষিকীর কথা ভুলে যায় নি। তার ঠিকই মনে আছে। অফিসে
গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে কিছুই নেই। সে সবই মিথ্যা বলেছে নিরাকে। ওকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য
নিষান এমনটা করেছে। নিরার জন্য নিষান দুটো শাড়ি, ম্যাচিং জুয়েলারী কিনেছে স্পেশাল দিনে স্পেশাল সাজে দেখার জন্য। সাথে একশ গোলাপ আর একটা কেক নিল। সবকিছু কিনে সেই এগারোটা থেকে নিষান বাড়ির নিচে অপেক্ষা করছে। রাত ঠিক
বারোটায় গিয়ে নিরাকে সারপ্রাইজ দিবে।
নিষান মোবাইলে দেখল ১১.৪৮ বাজে। নিষান দীর্ঘশ্বাস ফেলল সময় যেনো যাচ্ছেই না। আজ যেন
.
.
ওদিকে নিষানের জন্য অপেক্ষা করতে করতে নিরার যেন কান্না চলে আসছে। আজকের দিনে তাড়াতাড়ি ছুটি নিয়ে চলে
আসলে কি হতো নিষানের! খুব বেশি কি ক্ষতি হয়ে যেত! মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখল ১১ টা বেজে
৫৯ মিনিট। বুক ভার হয়ে আসছে নিরার। ওয়াটসএ্যাপে ঢুকে নিরা যেই নিষানকে ভিডিওকল
দিবে তার আগেই নিষান ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে
ধরে বলল,
‘#খুব ভালোবাসি_প্রিয়_তোমাকে’
আজ বিবাহবাষির্কীর দিনে আবারও বলতে চাই সারাজনম তোমার সাথে থাকতে চাই।’

নিষানকে জড়িয়ে ধরে নিরা ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। নিষানকে ধরিয়ে ধরেই বলল,
‘তুমি অনেক পঁচা, অনেক খারাপ। তোমার জন্য অপেক্ষা করে কতক্ষণ ধরে বসে আছি। ‘

নিষান নিরার চোখের জল মুছে দিতে দিতে বলল,

‘থাক, সোনা। আর কাঁদে না। আজ আমার কোনো কাজই ছিল না। তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে আমি এমনটা করেছি। সেই এগারোটা বাসার নিচে অপেক্ষা করছি। সময় যেন যাচ্ছিলই না।’

নিরা মুখ ভেংচে বলল,
‘একদম ঠিক আছে! হুহ। আমি তো ভেবেছি তুমি
ভুলেই গেছো।
তা তুমি বাড়িতে ঢুকলে কি করে? দরজা তো লক করা ছিল।’

‘সারপ্রাইজ দেওয়ার প্ল্যান তো আগে থেকেই
ছিল। এখন কি কথাই বলবা নাকি শাড়ি
পড়ে আসবা?’

‘এখন কি পড়ে আছি তাহলে? শাড়িই তো পড়ে আছি।’

‘এখন যেই শাড়ি এনেছি, সেখান থেকে পড়বা।’

‘হুহ, পারব না। আমাকে ওয়েট করানোর শাস্তি এটা।’

‘এমন করে না নিরু। তুমি না আমার লক্ষ্মী বউ!’

‘কালকে পড়বো তাহলে। এখন চলো কেক কাটি।
সবাইকে ডাক দাও।’

নিষান দাঁত বের করে হেসে বলে,
‘বাড়িতে কেউ নাই। আম্মু-আব্বু একটু আগে খালামনিদের বাড়িতে গেছে। ভাইয়া-ভাবীও তাদের সাথে গেছে।’

নিরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কখন গেলো?’

‘ আমি যখন বাড়িতে এসেছি তখন তারা গেছে।
তাদের যাওয়ার প্ল্যান ছিল বিকালে কিন্তু
আমি বলেছি রাতে যেতে আর তোমাকেও না বলতে।
তুমিও সাজতে সাজতে হয়তো খেয়াল করো নি তারা যে বাড়িতে নেই।

নিরা নিষানের বুকে কিল দিয়ে বলল,
‘খা’রাপ। আমিও তাদের সাথে চলে যেতাম, তখন একদম ঠিক হতো। তোমার সারপ্রাইজ দেওয়ার বারোটা বাজতো। জানো, একবার আমার জন্মদিনের দিন বিকেলে
আমার বান্ধবীরা সারপ্রাইজ দিতে বাড়িতে এসেছিল
কিন্তু তখন আমি মায়ের শপিংয়ে গিয়েছিলাম। ওরা আমাকে সারপ্রাইজ দিতে এসে আমাকে না পেয়ে নিজেরাই সারপ্রাইজড হয়ে গেছিল। আজ তোমার সাথে এমন হলে একদম ঠিক হতো।

‘না, নিরু। তোমাকে যেতে দিলে না তুমি যাবে।’
.
.
ওরা দুজন মিলে কেক কাটল। দুজন দুজনকে কেক খাইয়ে দিল। দুজন দুজনকে আবারও কথা দিল জীবনে হাজার বাঁধা আসলেও কেউ কাউকে ছেড়ে যাবে না। ভালো থাকুক নিষান-নিরা।
ভালো থাকুক সবাই।
.
(সমাপ্ত)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে