ভালোবাসি পর্ব-১৩

0
1132

#ভালোবাসি
#পর্ব_১৩
#সুমাইয়া_জাহান

অর্কের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে অর্ককে হাসি মুখে বিদায় দিলো রেহান।অর্ক চলে যেতেই রেহান আমার হাতটা খপ করে ধরে বিদ্যুতের গতিতে একটা বড়ো গাছের কাছে এনে গাছটার সাথে আমাকে চেপে ধরে ঝাঁঝালো গালায় বলে উঠলেন,

—- ” ওই ছেলের সাথে হেসে হেসে বিয়ের কথা বলার সাহস কোথায় পেলে?আবার ওই ছেলে কে কি যেন বললে ওর ইচ্ছেই তোমার ইচ্ছা। খুব ডানা গজিয়েছে? শুধুমাত্র একটা কথার জন্য আমার ভালোবাসা কে মিথ্যে বলে ধরে নিলে?সত্যি টা জানার একটুও চেষ্টা করলে না!ওকে তুমি মনে করো তো আমি তোমায় সত্যিকারে ভালোবাসি না তাই তো?তবে শুনে রাখো আমি তোমায় ভালোবাসি আর নাই বাসি তোমাকে আমারই হতে হবে! আর কারোর না মাইন্ড ইট!”

কথাগুলো একনাগাড়ে বলেই আমাকে ছেড়ে দিয়ে হনহন করে চলে গেলো।এতোকিছু এতো তাড়াতাড়ি হওয়ায় আমি কিছুটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছিলাম।যতখনে আমার হুস আসলো ততোক্ষণে রেহান অনেক দূর চলে গেছে।উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম,

—- ” হ্যাঁ আমি জানি আপনি আমাকে সত্যি কারেই ভালোবাসেন!কিন্তু প্রথমে তো বন্ধুদের সাথে বাজি জেতার জন্যই আমাকে প্রপোজ করতে গিয়েছিলেন।সেদিন যদি সত্যি আমার জন্য ভালোবাসা কাজ না করে শুধু মাত্র বাজি জেতার নেশাটাই থাকতো তাহলে আমার কি হতো একবার ভেবে দেখেছেন?আর আপনার দ্বিতীয় অপরাধ টা হলো আমি আপনি আমাকে আগেই কেন এই সত্যি টা বলেন নি? কেন অন্যের মুখ থেকে সত্যি টা শুনতে হলো আমাকে?হ্যাঁ আমি আপনারই ছিলাম আর আপনারই থাকবো কিন্তু কয়েকটা দিন তো আপনাকে এই অপরাধ গুলোর জন্য শাস্তি পেতে হবে! তাই এখন সব সত্যি জেনেও না জানার ভান করে আমাকে জ্বালাবো!আর আপনাকে জ্বালানো সবচেয়ে ভালো পথ হচ্ছে অর্ক ভাইয়া! ”

কথা গুলো বলেই একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে বাড়ির ভিতরে ডুকলাম।

ফ্লাশব্যাক……..

—- ” মিহি আজ আমার কথাটা না শুনলে অনেক বড়ো ক্ষতি হয়ে যাবে অনেক গুলো জীবন শেষ হয়ে যাবে।আমাকে দুটো মিনিট সময় দেও প্লিজ!”

কথাটা বলেই রনিত মন খারাপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।তাহলে কি রেহান আর মিহির সম্পর্ক টা আর জোড়া লাগবে না?একটা ভুল বোঝাবুঝিই ওদের সম্পর্কের ইতি টানবে?আর রনিতেরও কি ওর বসন্ত পরিকে পাওয়া হবে না।সসব কি তাহলে এখানেই শেষ হয়ে যাবে?

রনিত ভাইয়া কথাগুলো শুনে সিড়ির দিকে পা বাড়াতে গিয়েও বাড়ালাম না।দু’মিনিটই তো চেয়েছে দু’টো মিনিট নাহয় কথা গুলো শুনেই যাতে তো ক্ষতি নেই। তাই আবার রনিত ভাইয়ার কাছে ফিরে আসলাম।

—- ” বলুন ভাইয়া কি বলবেন?তবে শুধু দু মিনিটই টাইম তারপর আমি আর আপনার একটা কথাও শুনবো না!”

মিহির কন্ঠ শুনে রনিতের মন খারাপ নিমিষেই মুছে গিয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। খুশিতে ওর চোখ চিকচিক করে উঠলো মিহির দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো,

—- হুম শুধু দু মিনিটই নিবো আর বেশি নিবো!

কথাটা বলেই পকেট থেকে ফোনটা বের করলো।আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তকাতেই রনিত ভাইয়া আমাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে শান্ত হতে বলে ফোনে একটা রেকডিং চালো করলেন।

রেকডিং……

একজন বলছে,

—- ” ভাই তোর সাথে আমি জীবনেও কোনোদিন কোনো বাজি জিততে পারলাম না!বাজি ধরে মিহির থেকে ঠিক ভালোবাসি কথাটা আদায় করে নিলি!মেয়েকে পুরো ভার্সিটির ছেলেরা প্রপোজ করে কোনো দিন হ্যা উত্তর আনতে পারলো না সেই মেয়ে এখন তোর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে! আমি ভাবতেই পারছি না।এটা শুধু তোর দ্বারাই সম্ভব! ”

হ্যাঁ এইটা সেই কন্ঠ যে কন্ঠটা আমি সেই দিন ভার্সিটিতে শুনেছি।আরেকজন বললো,

—- ” তো আর কয়দিন ওই মেয়ে কে নাকে দড়ি দিয়ে তোর পিছনে ঘুরাবি?যেইদিন ওই মেয়ে জানতে পারবে তুই ওকে ভালোবাসা টালোবাসা কিচ্ছু না শুধু মাত্র বাজি ধরে ওর সাথে প্রেমের নাটক করছোস সেই দিন ওর মুখ টা কেমন হবে আমার ভাবতেই আগাম হাসি পাচ্ছে। ”

তারপর অনেকগুলো হাসির আওয়াজ শোনা গেলো।

সেদিনের মতো আজও আর শুনতে পারলাম না।কানে দুই হাত চেপে চিৎকার দিয়ে বলে ওঠলাম,

—- ” ব্যাস বন্ধ করুন! আমাকে আবার এই কথাগুলো শুনিয়ে কি আনন্দ পাচ্ছেন আপনি? কেন শুনাচ্ছেন এগুলো? আমার কষ্ট টা আরো দ্বিগুণ করার জন্য? ”

আমাকে থামিয়ে রনিত ভাইয়া বললেন,

—- ” মিহি সেদিনও তুমি অর্ধেক কথা শুনে ভুল বুঝেছো আজও তাই করছো!পুরো রেকডিং টা একবার শোনো ! প্লিজ কর কোনো কথা বলো না এখনো কিন্তু তোমার দেওয়া দুই মিনিট শেষ হয়নি!”

আমি না চাইতেও চুপ করে রইলাম।তারপর রনিত ভাইয়া আবার রেকডিং টা চালু করলেন।

রেকডিং……..

অনেক গুলো হাসির শব্দের পর এক ধমক দিয়ে একজন ভিষণ রাগী গলায় বললেন,

—- ” চুপ একদম চুপ! আমি মিহিকে কোনো বাজি ধরে ভালোবাসিনি আমি ওকে সত্যি সত্যি ভালোবাসি।হ্যাঁ এটা সত্যি আমি ওকে বাজি ধরেই প্রপোজ করে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওকে দেখার পর আমি ওকে মন থেকে ভালোবেসে ফেলেছি।আর আমি ওর সাথে যা যা করেছি সব কিছু ভালোবেসেই করেছি!আমার মিহিকে নিয়ে যদি আর একটা বাজে কথা কেউ বলিস তাহলে তার জিভ টেনে ছিড়ে ফেলবো!আমাকে তো তোরা খুব ভালো করেই চিনিস আমি যা মুখে বলি তাই করে দেখাই!”

এই কথাগুলো আর কেউ নয় রেহানই বলেছে।কথাগুলো শুজনে আমার চোখ বেয়ে নোনা জল পরতে লাগলো।আমি আর একটু সেদিন দাড়ালে এতো বড়ো একটা ভুল হতো না।আমি পুরো কথা না শুনেই এভাবে উনাকে ভুল বুঝতে পারলাম?নিজের উপরই নিজের রাগ হচ্ছে! যে লোকটা আমাকে একমুহূর্ত না দেখে থাকতে পারে না পাগলের মতো হয়ে যায় সেই লোকটাকে আমি এতোগুলা দিন এভাবে কষ্ট দিতে পারলাম?

রনিত ভাইয়া রেকডিং টা বন্ধ করে মুচকি হেসে বললে লাগলেন,

—- ” সেদিন আমরা সব বন্ধুরা বারবার জোর করছিলাম রেহান কে একটা গান গাওয়ার জন্য। তুমি তো জানো রেহান খুব ভালো গান গায়। আমাদের সবার জোরাজুরিতে রেহান গান গাইতে রাজি হয়ে যায়।আর তখনই আমাদের মধ্যে কয়েটা বন্ধু এই এ কথা গুলো বলে। আর তুমি ওদের অর্ধেক কথা শুনেই রেহান কে ভুল বুঝেছো।আর ভাগ্যবশত আমি রেহানের গান রেকর্ড করার জন্য ফোনে রেকডিং টা চালো রেখেছিলাম।এতোদিন এই রেকডিং টার কথা আমার এক বিন্দুও মনে ছিলো না।তাই তোমার কাছে এসে কিছু বলতে পারিনি।তুমি আমার বা রেহান কারোই মুখের কথা বিশ্বাস করছিলে না!আজ হঠাৎ ফোনের দিকে তাকাতেই রেকডিং টার কথা মনে পড়লো! ”

আমি ছলছল চোখে মাথা নিচু করেই কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,

—- ” সরি ভাইয়া আমি আপনাদের না জেনেই অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি!আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দিন!”

—- ” এতে ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই। তোমার জায়গায় যে কেউ থাকলে এটাই করতো। তোমার জায়গায় তুমি ঠিক আর আমার জায়গায় আমাদের জায়গায় আমরা ঠিক ছিলাম।মাঝখানে ছিলো একটা ভুলবোঝাবুঝি! এখন সব কিছু ভুলে রেহান কে মেনে নিলেই সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে।”

আমি চোখের পানি মুছে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে কাঠ কাঠ গলায় বললাম,

—- ” নাহ এতো সহজে আমি উনাকে ক্ষমা করবো না।উনার উচিৎ ছিলো আমাকে সব কিছু আগেই বলে দেওয়া। তাহলে আর এতো কিছু হতো না।আর উনি তো সত্যি সত্যিই প্রথমে বাজি ধরেই প্রপোজ টা করে ছিলেন।তাই আরো কয়টা দিন উনাকে শাস্তি পেতে হবে।আর ভাইয়া আমি যে সব জেনে গেছি তা উনাকে বলবেন না।কয়দিন নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়ে তারপর শাস্তি শেষ হবে তার আগে না!”

—- ঠিক আছে আমি কিছু বলবো না।কিন্তু তার বিনিময়ে বসন্ত পরিকে আমার সাথে মিলিয়ে দিতে হবে!

বসন্ত পরি নামটা শুনে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।তারপর রনিত ভাইয়া আমাকে আমাকে উনার বসন্ত পরির সব কিছু বললেন।আমি সব শুনে হাসতে হাসতে বললাম,

—- ” ওকে ডান! ”

বর্তমানে…….

বাড়িতে ডুকতেই মাহি আমাকে নিয়ে আমার রুমে চলে গেলো।সেখানে আগে থেকেই মা আর তিহা আছে।আর আমার খাটের উপর অনেক গুলো শাড়ি আর জুয়েলারি। ওগুলোই ওরা দুজন দেখতেছে।আমাকে দেখেই মা জননী এক গাল হেসে হাত দিয়ে ইশারা করে ডেকে বললেন,

—- ” আয় আয় ভিতরে আয়!”

আমি ওদের কাছে আসতেই একটা শাড়ি নিয়ে আমার গায়ে পেচিয়ে মা জননী আবারও বললেন,

—- ” দেখ তো তিহা মা ওকে এই শাড়িটাতে কেমন লাগছে? ”

মায়ের কথা শুনে তিহা আমার কাছে এসে আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বললো,

—- ” আন্টি আপনার কোনো জবাব নেই! একটা পেত্নীকে আপানার পছন্দের জিনিস দিয়ে বিশ্ব সুন্দরী বানিয়ে দিলেন।আমি তো ভাবতেই পারছি না!”

তিহার কথা শুনে মা জননীও হেসে দিলেন।হাসতে হাসতেই বললেন,

—- তা যা বলেছিস!

এভাবে অপমান করলো? না মেনে নেওয়া যায় না!শাড়ি টা এক ঝটকায় গাঁ থেকে ফেলে দিয়ে রাগী গলায় বললাম,

—- ” আমার পিছনে না লাগলে তোমাদের পেটের ভাত হজম হয় না!আর এখানে শাড়ির দোকানই বা কেন খুলেছো?”

তিহা আমার কাঁধে দুই হাত রেখে বললো,

—- ” এগুলো তোর বিয়ে আর গায়ে হলুদের শাড়ি গয়না। আর তুই ঠিকই বলেছিস তোর সাথে না লাগলে আমাদের পেটের ভাত একটাও হজম হয় না।”

চেখের পলক ফেলে অভয় দিয়ে শেষের কথা টা বললো তিহা।আমি কনুই দিয়ে ওকে একটা গুঁতো দিয়ে সরিয়ে দিলাম।

চলবে,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে